মিশে আছো আমার অস্তিত্বে

মিশে আছো আমার অস্তিত্বে !! Part-07

আকাশ অফিসে চলে যাওয়ার পর তৃষা বাসার সমস্ত কাজ সেড়ে,,শাশুড়ি মায়ের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে নিজের রুমে গেল ফ্রেস হতে। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই তৃষার ফোন বেজে উঠলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো একটা আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছে,,ফোন ধরবে কি না এই নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ফোনটা কেটে গেল।তৃষা‌ ফোনটা বেডে রাখতে যাবে ঠিক এমন সময় ফোনটা আবার বেজে উঠলো।তৃষা এইবারে ফোনটা রিসিভ করেই ফেলল।ফোনটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একজন বলে উঠলো-;
-:এত সময় লাগে ফোনটা রিসিভ করতে??
-:কে??
-:বাহ্ আমাকেই চিন্তে পারছিস না।এত তাড়াতাড়ি তুই আমাকে ভুলে গেলি??
-:রিনা আপু তুমি??
-:হুম তাহলে শেষমেষ চিন্তে পারলি আমাকে।
-:কি জন্য তুমি আমাকে ফোন করেছো??
-:তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।তুই আজ আমার সাথে দেখা কর।
-:কিন্তু আমি কীভাবে যাবো??
-:আমি জানিনা,,প্লিজ বোন আমার একটি বার দেখা কর আমার সাথে।
-:কোথায় দেখা করতে যেতে হবে??
-:তুই আগে যে স্কুলে পড়তিস সেই স্কুলের সামনে যে রেস্টুরেন্টটা আছে সেখানে চলে আয় তাড়াতাড়ি।
-:আচ্ছা।
ফোনটা রেখে দিয়ে তৃষা ভাবতে লাগলো তার যাওয়া উচিত হচ্ছে কি না কারণ এটা রিনার কোন ষড়যন্ত্র‌ও হতে পারে।কিন্তু তাকে একবার রিনার সাথে দেখা করাটা অত্যন্ত জরুরী,,কিছু জিনিস ক্লিয়ার করার আছে আবার কিছু প্রশ্নের উত্তর ও জানার আছে।আর সেটা শুধুমাত্র রিনার কাছে গেল‌ই সম্ভব হবে।তাই আর কোন কিছু না ভেবে মায়ের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে তৃষা বেরিয়ে গেল রিনার বলে দাওয়া রেস্টুরেন্টে।
তৃষা অনেকক্ষণ যাবৎ বসে আছে কিন্তু রিনা এখনো আসছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর রিনা এসে তৃষার ঠিক অপজিট চেয়ারে বসলো,,তৃষা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলো-;
-:কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো আপু।
রিনা বলে উঠলো-;
-:আকাশের লাইফ থেকে সরে যেতে কত টাকা নিবি।
-:মানে!!
-:মানেটা খুবই সিম্পল,আমি এটা খুব ভালোভাবেই জানি যে আকাশের ভালোবাসার মানুষ আমি,,এটা জানার পর তুই কখনোই ওর লাইফ থেকে যাবি না।
-:এটাই কি স্বাভাবিক নয় আপু??
-:শোন আমি এখানে তোর সাথে তর্ক করতে আসিনি,,,তোকে একটা কথা পরিস্কার ভাবে বলে দিচ্ছি আকাশ যেন কোনদিনও জানতে না পারে যে তুই আমার চাচাতো বোন।তাহলে সেটা তোর জন্য বা তোর ফ্যামিলির কারো জন্যই ভালো হবে না।
-:কী করবে তুমি??আমার বাবাকে তো পথে নামিয়েই দিয়েছে তোমার বাবা।ভাবতেই ঘৃণা লাগছে,,চাচা কিভাবে পারলো নিজের ভাইয়ের সাথে প্রতারণা করতে।
-:নিজের ভাই নয় সৎ ভাই।আর শোন আমি এখানে আমার আব্বুর নিন্দা শুনতে আসিনি। তোকে যেটা বলছি সেটা শোন মন দিয়ে তুই যদি আমার আর আকাশের মাঝখানে আসিস তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
-:তুমি কি সত্যিই আকাশকে ভালোবাসো??
-:তোর কি মনে হয়??
-:আমার তো মনে হয় না।এতে কোনো একটা স্বার্থ নিশ্চয় আছে,,কারন তুমি কখন‌ই কাউকে ভালোবাসতেই পারো না।এই নিয়ে কম ছেলের জীবন তুমি নষ্ট করোনি।
-:বাহ্ আমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো এখনও তোর মনে আছে??
-:আপু সবে তো তিনবছরের একটু বেশি হলো তোমাদের থেকে আলাদা হয়েছি।আর এমনিতেও মানব‌ মস্তিষ্কের স্মৃতি ধরে রাখার ক্যাপাসিটি অনেক বেশি,,সেই জায়গায় নিজের চাচার বিশ্বাসঘাতকতা আর চাচাতো বোনের অন্যায় কাজগুলোর কথা এত সহজে কীভাবে ভুলে যায় বলো আপু??
-:মুখ সামলে কথা বল।(রেগে)
-:আমি আমার মুখ সামলেই কথা বলি,,লজ্জা করে না তোমার আকাশকে মতোন একটা ভালো মানুষকে ঠকাতে??এতে তোমার কি স্বার্থ আছে??যদি তুমি সত্যিই আকাশকে ভালোবাসতে তাহলে আমি তোমাদের দুজনের জীবন থেকে সারা জীবনের মতো চলে যেতাম কিন্তু আমি এটা নিশ্চিত যে তুমি কোন উদ্দেশ্য নিয়েই আকাশের জীবনে আসেছ।
রিনা কিছুটা তাচ্ছিল্য সুরে বলে উঠল-;
-:ছোটবেলা থেকেই তুই খুব বুদ্ধিমান আর এখন‌ও তাই আছিস।ঠিক বলেছিস এমনি এমনি আকাশের জীবনে আমি আসিনি।
এমনিতেই আকাশের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই,,একটা বোকা হাঁদারাম সারাক্ষণ কানের কাছে মা মা করতে থাকে।আমি তো শুধুমাত্র আব্বুর জন্য এত কিছু করছি।
-:চাচার জন্য??
-:হ্যা আব্বু সব সময় স্বপ্ন দেখতো টপ বিজনেসম্যান হ‌ওয়ার কিন্তু তিনি কখনোই তা হতে পারেনি শুধুমাত্র দুজন মানুষের জন্য।তাই লাইফে আব্বুর শুধুমাত্র দুজন‌ শত্রু ছিল এক নিজের সৎ ভাই নাজমুল শেখ(তৃষার বাবা)থাকেতো তিনি ছোটো বেলা থেকেই ঘৃণা করতেন আর একজন হলো রাহাত খান যে
আকাশের বাবা।
আকাশের বাবা ছিল টপ বিজনেসম্যান আর তার ঠিক পরেই ছিল তোর বাবার নাম।তাই আব্বু প্রথমে চাচাকে রাস্তা থেকে সরানো প্ল্যান করলো আর কিছুদিনের মধ্যেই সফল ও হয়ে গেল।চাচা অবশ্যই পড়ে সব সত্যি জানতে পেরেছিল কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
আব্বুর সেকেন্ড টার্গেট ছিল রাহাত খান।খান ইন্ডাস্ট্রির একমাত্র মালিক,, রাহাত খানের পর খান ইন্ডাস্ট্রির একমাত্র মালিক হবে তার একমাত্র ছেলে আকাশ খান।আব্বু খোঁজ নিয়ে জানতে পারল আকাশ বিদেশে গিয়েছে তার স্টাডি কমপ্লিট করতে।আব্বু আবার প্লান সাজালো আমাকে পাঠিয়ে দিল বিদেশে,,আকাশ যেখানে স্টাডি কমপ্লিট করছিল আমাকেও সেই একই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিল।
তারপর আস্তে আস্তে সেখানে আকাশের সাথে আমার পরিচয় হয়,,তারপর বন্ধুত্ব এবং পরে ভালোবাসার অভিনয়।এইসব শুধুমাত্র আমার আব্বুর জন্য,,বিকস্ আই লাভ মাই আব্বু। ছোটবেলা থেকে আমার আব্বু অনেক কষ্ট পেয়েছে শুধুমাত্র তোর বাবার জন্য।তাই তোর ভালোর জন্যই বলছি আকাশের জীবন থেকে সরে যা নইলে এর ফল ভালো হবে না।চাচার সবেমাত্র অপারেশন হয়েছে এর মধ্যে যদি তিনি জানতে পারেন যে তার একমাত্র আদরের মেয়ে যে বিয়েটা করেছে সেটা আসলে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ,,তাহলে চাচার কি হবে ভেবে দেখেছিস??তাই বলছি সাবধান!!!
এই বলে রিনা চলে গেল সেখান থেকে।। তৃষা রিনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-;
-:আপু তুমি আর চাচা সবসময় আমাদেরকে ভুল‌ই ভেবে এসেছো।যদি চাচা কোনদিন বাবাকে নিজের সৎ ভাই না ভেবে আপন ভাই ভাবতো তাহলে হয়তো এই দিনটা দেখতে হতো না।
তৃষা বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবছে কি করা যেতে পারে,,কারণ সে বেঁচে থাকতে কখন‌ই চাচার এই অসৎ উদ্দেশ্য সফল হতে দেবে না কিন্তু আকাশকে কীভাবে বোঝাবে যে রিনা ভালো মেয়ে নয়।
বাসায় ফিরে তৃষা যা দেখলো তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না,,এটা কিভাবে সম্ভব!!!….
.
.
.
.
(বাকিটা নেক্সট পর্বে)