মিঃ নিরামিষ

মিঃ নিরামিষ !! Part- 26

নিবিড় চুপ হয়ে আছে
তুমু-যা হয়েছে! হয়েছে,তুমি আর তুলিকে কষ্ট দিবে না,,
আমার মুখে হাসি দেখতে হলে আগে তুলির মুখে হাসি ফুটাও,
নিবিড় চুপচাপ উঠে বাথরুমে ঝর্না ছেড়ে দিয়ে নিচে বসলো,,
কিছুক্ষন পর গা মুছে তুলির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো নিবিড়,,নির্ঘাত জ্বর আসতেসে,হাত পা অবশ হয়ে আসতেছে,,
ভোর ৪:০৫বাজে
প্রতিদিনের মত তুলির ঘুম ভেঙে গেলো,কিন্তু মনে হচ্ছে ওর গা পুড়ে যাচ্ছে,, একটা হাত ওর পেটের উপর,সবকিছু মাথায় আসতেই তুলি হকচকিয়ে উঠে বসলো,,
নিবিড়ের হাত,নিবিড়??
তুলি পিছনে তাকিয়ে দেখলো নিবিড় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন,,
কিন্তু এ সময়ে তো নিবিড় ঘুমায় না,,তাহলে?
তুলি আরও একবার তাকালো নিবিড়ের মুখের দিকে,,নিষ্পাপ একটা চেহারা নিবিড়ের,,যে কেউ ভালোবেসে ফেলবে,,
তুলি হাত বাড়িয়ে ওর কপালে রাখলো,,হুম অনেক জ্বর,,আগে জানতাম আমি রাগ হলে ঝর্নায় ভিজে জ্বর করি, এখন দেখি মিঃ নিরামিষের ও এমন স্বভাব,
তুলি উঠে গিয়ে ব্যাগ থেকে রুমাল নিয়ে ভিজিয়ে নিবিড়ের কপালে দিলো,,ইস এখন কি করবো,আগে তো কারো জ্বরের treatment করিনি আমি,
তুলি ড্রয়ার থেকে ঔষুধ বের করে আনলো,কিন্তু কিছু তো খাওয়াতে হবে
তুলি ফোন হাতে নিলো,,খাবার অর্ডার দিল,,
নিবিড়ের পাশে বসে তুলি তাকিয়ে ভাবতেসে,কি করা উচিত,যতই হোক স্বামী তো,,কি হলো?আপনার তুমু এসে আপনার সেবা করতেসে?নাকি তুলি করতেসে??আজব একটা লোক,
খাবার আসলো,তুলি খাবার রেখে নিবিড়কে ধাক্কা দিলো,
নিবিড় উঠতেসে না
শেষে তুলি একটা চিমটি দিলো নিবিড়কে
নিবিড়-আহহ,কি হইসে
তুলি-যাক হুস আসলো তাহলে
নিবিড়-কি?
তুলি-খাবার খেয়ে নেন,then ঔষুধ
নিবিড়-কেন?
তুলি-কেন জানেন না,আপনার অসুখ,জ্বর,তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নিন,আশা করি টিচারকে কোনো কিছু খাওয়াতে জোর করতে হয় না??
নিবিড় plate নিয়ে এক চামচ খেয়ে রেখে দিতেই তুলি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে plate নিয়ে নিলো
তুলি-এক চামচ খেয়ে ঔষুধ খেলে হিতের বিপরীত হবে,আরেক ভেজাল
তুলি জোর করে আরেও কয়েক চামচ খাওয়ালো,ঔষুধটাও খাইয়ে দিলো,,কিছুক্ষন পর এক কাপ চা আসলো,
নিবিড় মুখে দিয়ে তুলির দিকে তাকালো,চায়ে এলাচি দেওয়া
তুলি-আমি বলসি দিতে
নিবিড়-গুড
তুলি-হুম,
তুলি কাঁথা টেনে শুয়ে পড়লো আবার,,
নিবিড়-আজ আমরা চলে যাব
তুলি কিছু বললো না
সকাল হতেই তুলি ব্যাগ গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো,,নিবিড় উঠে বসে আছে
তুলি-আপনার ব্যাগ ও গুছিয়ে দিসি,চলেন এবার
নিবিড় শার্ট পরে নিয়ে আসলো,,
নিবিড় খেয়াল করলো তুলির মনে আগের সেই আনন্দটা নেই,অবশ্য থাকার ও কথা না,,
বিমানে তুলি একটা কথাও বলেনি,, ওরা দেশে ফিরেছে আজ ২দিন হলো,তুলি কোনো কথা বলেনি নিবিড়ের সাথে
মা নিবিড়কে ডেকে বললো তুলির কি হয়েছে
নিবিড় বললো এমনিতেই,কিছু না
তুলি বিকালে নাস্তা করে রুমে এসে দেখলো খাটে একটা শাড়ী রাখা,লাল শাড়ী,তুলি সেটা হাতে নিয়ে দেখলো,চয়েস ভালো
নিবিড়-কি পছন্দ হয়েছে?
তুলি-তো?এটা দিয়ে কি বুঝাতে চান,কি করবো?
নিবিড়-পরবা
তুলি -এরপর এটা আমি পরবো,আপনার চোখে আর মনে তুমু ভাসবে,হয়ত আমাকে তুমু ভেবে আদর করবেন
কথাটা নিবিড়ের গায়ে সইলো না,এত বড় কথা বললো তুলি,
নিবিড় এবার খুব জোরেই মারলো তুলিকে,,
তুলি নিচে বসে আছে,,এতদিন ব্যাথা পেলেও টু শব্দ করতো না,আর আজ তার চোখের থেকে বয়ে যাওয়া পানি বলতেসে সে কতটা ব্যাথা পেয়েছে
নিবিড় নিজের হাতের দিকে চেয়ে চলে গেলো,
তুলি সারা সন্ধ্যা কেঁদে ঘুমিয়ে গেসে ফ্লোরে,,
নিবিড় বাসায় ফেরেনি,মা সকাল সকাল তুলিকে ডাকলো,বললো নিবিড় বাসায় ফেরেনি,,
তুলি উনার উত্তর দিলো না,সোজা ওর বাবার বাড়ি চলে গেলো,বাবাকে সব বললো,তুলি তার বাবার সামনে কখনও তার চোখের পানি দেখায়নি,আজ দেখালো,,
বাবা নিজেই নিজেকে দোষারোপ করতেসে,কারন বিয়েটা উনি জোর করেই দিয়েছেন,হয়ত এমন জানলে দিতেন না,,
বাবা ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে দিলেন,,
নিবিড় বাসায় ফিরেছে,,মায়ের থেকে শুনেছে তুলি চলে গেছে
বাবা কাগজ তুলির হাতে দিলেন
বাবা-মা,তুই চাইলে এখনও ফিরতে পারিস,না চাইলে সাইন করে দে,আমি আর কোনো কিছুতেই জোর করব না
তুলি সাইন করে দিলো,,কাগজটা তুলির ভাইয়া নিবিড়দের বাসায় পাঠিয়ে দিলো
নিবিড় কাগজটা দেখে ছুড়ে ফেলে দিলো,,
২মাস হয়ে গেছে,,
তুলির রেসাল্ট দিয়েছে,,গোল্ডেন এ+
তুলির মুখে হাসি নেই,,হঠাৎ কলিং বেল বাজলো,,
নিবিড়ের মা বাবা নিরব আর নিবিড় এসেছে,মা বাবা ব্যস্ত হয়ে গেসে উনাদের নিয়ে,,কথা বলে বুঝা গেলো ডিভোর্সে সাইন করেনি নিবিড়,,
নিবিড়ের চোখ তুলিকে খুঁজতেসে বারবার
বাবা-আমার মেয়ের গায়ে হাত না তুললেও পারতা
নিবিড় নিচু হয়ে তাকিয়ে আছে ফ্লোরের দিকে,,
মা-তুলি ওর রুমে,যাও গিয়ে কথা বলো,,
নিবিড় তুলির বাবার দিকে তাকালো,,বাবা সম্মতি দিলেন
নিবিড় উঠে গেলো
তুলি বারান্দার এক কোণে নিচে বসে আকাশের দিকে চেয়ে আছে
নিবিড়-আসবো?
অনেকদিন পর নিবিড়ের গলারর আওয়াজে তুলি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো
নিবিড়-আসবো?
তুলি এখনও তাকিয়ে আছে,,নিবিড় কি সত্যি এসেছে??
নিবিড় এসে নিচে ফ্লোরে বসলো,,
নিবিড়-কেমন আছো??
তুলি উত্তর দিলো না
নিবিড় তুলির হাতটা টেনে ধরলো,
আচমকা তুলির চোখ গেলো নিবিড়ের ডান হাতের তালুতে,,যে হাত দিয়ে নিবিড় তুলিকে চড় দিয়েছিলো,পোড়া দাগ,,এটা তো আগে ছিল না,নিশ্চয় হাত পুড়িয়েছে?উনিতো এমন কাজ করে না,তাহলে
নিবিড়-মাফ চাইব না আমি,,কারন জানি তুমি মাফ করবে না,ভেবে দেখো তুমি কি বলেছিলে আমাকে,আমার জায়গায় তুমি হলে কি করতে,২মাসে আমি আসতে পারতাম তোমাকে নেওয়ার জন্য,তোমাকে সময় দিতে চেয়েছিলাম,কিন্তু না তুমি এখনও ভুললে না,,আমি ডিভোর্স লেটারে সাইন করিনি,, আজ আমার সাথে আমার বাড়ি যাবে??তোমাকে শুধু একবার একটা জিনিস দেখাতে চাই,,তখন তুমি চাইলে চলে এসো,,
তুলি কিছু বললো না
নিবিড় চলে গেলো,,
পরেরদিন তুলি সকাল ১০টায় নিবিড়দের বাসায় গেলো,,নিবিড় নেই,ভার্সিটিতে গেসে,
তুলি রুমটা দেখলো হেঁটে হেঁটে, কি দেখাবে বলেছেন উনি?
বারান্দার দিকে চোখ গেলো তুলির
চলবে♥

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *