মায়াবিনী

® মায়াবিনী—– পর্ব- ২

লেখাঃ নিলয় রসূল
অয়নী: মা আপনি নাস্তা বানাতে গেলেন কে…..বাকী কথা আর বলতে পারলনা রাজীব স্বজোড়ে একটা থাপ্পড় মেরে মেঝেতে ফেলে দিলো..!
হীম শীতল রাতে সারারাত মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকার পর সকালে জ্ঞান আসে অয়নীর। কপাল ফেটে রক্ত পড়ছেনা আর তবে ওগুলো কালো হয়ে গেছে। হাফাতে হাফাতে বাইরে এসেছিলো ও আর এসেই স্বীকার হলো ভয়াবাহ অত্যাচারের।
রাজীব: ফকিন্নি কোথাকার তোর জন্য অপেক্ষা করে থাকবো আমরা..!
রাজীবের মা: এই খোকা বাদ দে বড়োলোকের বিটি সকাল দশটায়ই তো ঘুম থেকে উঠবে। নিজেকে যে কি মনে করে ও আল্লাহ্ ই জানে..আমাদের মনে হয় মানুষই ভাবেনা।
রাজীব: কিই..! ওকে আজ শিখিয়ে দেবো কিভাবে মানুষ ভাবতে হয়…!
এই বলে রাজীব একটা বেত এনে আবারও সর্বাঙ্গে আঘাত করতে লাগলো অয়নীর তবে এবার সবার সামনেই..
অয়নীর পিঠের হাতের চামড়া ফেটে রক্ত পড়ছে এদিকে রাজীব নামে নরপশুটার ভ্রুক্ষেপই নেই। উপস্থিৎ সবাই যেনো এ বিষয় টা দেখে মজা নিচ্ছিলো। শুধু রাজীবের বাবা ছাড়া। তিনি নীরবে চোখের জল ফেলছেন। শত ইচ্ছে থাকলেও কিছুই বলতে পারছেননা কারন গত এক বছর ধরে তিনি প্যারালাইজড.!
ডাইনিং রুমে এমন হট্টোগোল শুনে দৌড়ে ঘর থেকে আসলো টিনা, অয়নীর ছেটো ননদ। অয়নীকে বড্ড ভালোবাসে সে…!
টিনা: ভাইয়া ছাড়,ছাড়… কি শুরু করলি এসব.. বলেই রাজীবের হাত থেকে বেত কেড়ে নিলো আর রাজীবকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো। অয়নীকে জড়িয়ে ধরলো। দেখলো অয়নী কোনো কথা বলতে পারছেনা শুধু পুরো শরীর কাপছে,,,! কাঁদতেও পারছেনা চোখদুটে শুধু জলে যাচ্ছে। আর মাথাটা যন্ত্রনায় ফেটে যাচ্ছে।।
টিনা বাড়ির সব থেকে ছোটো মেয়ে। তাই স্বভাবতই তেজ বেশি।
টিনা: আম্মা দিন দিন জানোয়ারটাকে তো আরো কুলাঙ্গার বানাচ্ছো নিজ হাতে…লজ্জা লাগেনা। আমি শুধু ভাবি কোন কুলক্ষণে আমার জন্ম হয়েছিলো বাড়িতে…!
রাজীবের মা: টিনা…!
টিনা: চুপ করে..চিল্লাবানা…!
টিনা অয়নীকে নিজ ঘরে এনে বসালো। অয়নী হাটতে পারছিলোনা, হাতও নাড়াতে পারছিলনা। হাতের চামড়াগুলো ফেটে কালো রক্ত পড়ছে..কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নাই তার।
অয়নী: বোন সুপ্তকে এনে দে না আমার কাছে…!
টিনা: হু..
টিনা সুপ্তকে অয়নীর কাছে এনে দিলো। তারপর অয়নীর হাতের ও পিঠের যে জায়গাগুলো ফেটে রক্ত পড়েছে সেগুলো ডেটল দিয়ে মুছে স্যাভলন ক্রিম লাগাই দিলো। আর ওই জায়গাগুলো ব্যান্ডেজ করে দিলো।
অয়নী: (মনে মনে) আচ্ছা সবাই বলে রাতের আধার পেরিয়ে আলো আসে কিন্তু আমার জীবনেতো আলো আসেনা। তাহলে কি আমার জীবনটই আধারে পরিপূর্ণ..
টিনা: আসবে ভাবি তোমার জীবনেও একদিন আলোকবন্যা বয়ে যাবে সেদিন তোমার আর কোনো কষ্ট থাকবে না দেখো….!
অয়নী : (হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে)
টিনা: ওভাবে দেখার কিছু নাই ভাবি আমি একজন ভাবি ডাক্তার সো আমি এটুকুতো বলতে পারবো..!
টিনা: ভাবি তুমি বসে থাকো এখানে তোমার জন্য খাবার আনছি। তারপর ঔষধ খাইয়ে দিবো। সুপ্তকে নিয়ে বসে থাকো যেনো নড়বেনা বলে দিলাম।
অয়নী: না বোন খাবনা, খিদে নেই..
টিনা: চুপ..একদম চুপ।
টিনা কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে আসলো। অয়নীকে প্রায় জোর করেই খাইয়ে দিলো তারপর ঔষধ খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়ালো।
টিনা সুপ্তকে নিয়ে খেলছে বয়সে বড় হলেও বাচ্চাদের সাথে যখন মিশে যায় তখন কোনটা টিনা আর কোনটা বাচ্চা বোঝা মুশকিল…!
টিনা অয়নীকে না বলে ঘুমের ঔষধ দিয়েছে। তাই মধ্যাহ্ন পেরিয়ে অপরাহ্ণে শেষ ভাগে অয়নীর ঘুম ভাঙ্গলো। অয়নী বুঝতে পারছেনা তার এতো ঘুম এলো কেনো..!তাকিয়ে দেখে বিকেল প্রায় শেষ। যদি রাজীব এসে আবার..! গা টা শিউরে উঠলো অয়নীর। টিনা সুপ্তকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ওর জন্য আনা ভিডিও গেইমস নিজেই খেলছে তাই প্রথমে টের পায়নি। কিছুক্ষন পর দেখে অয়নী ভয়ার্ত চোখে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে…!
টিনা: ভাবি..ভাবি কি হয়েছে, ভয় পাচ্ছো কেনো..?
অয়নী: বি,,বিকেল হয়ে গেছে। রা,,রাজীব যদি..
টিনা: বাদ দেও। তুমি যাও গোসল সেরে আসো। একসাথে খাবো। তোমার জন্য না খেয়ে বসে আছি দুপুর থেকে..!
অয়নী: সুপ্ত…!
টিনা: আমি ওকে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি। তুমি কি যাবে…! আমার খিদে পেয়েছে তো…!
অয়নী গোসল করে আসার পর একসাথে ঘরে খেতে বসলো। অয়নীর মাথা ব্যাথা খুব খেতে পারছিলনা। তারপরও টিনার জন্য খেতে বাধ্য হলো।
কিন্তু আগত সময়ে তার জন্য যে আরে ভয়ানক কিছু ঘটতে চলেছে তা অয়নীর কল্পনাতীত।
অয়নীকে জোর করে বারান্দায় বসালো আর দুজনের জন্য চা বিস্কিট আনলো। অপরাহ্ণের শেষভাগে রোয়াকে বসে চা পান করার মজাই আলাদা। আর সাথে যদি থাকে বিস্কুট তা হলে তো কথায় নেই। কিন্তু অয়নীর জীবনে সুখ হাসি আনন্দ বলে বস্তুটার অস্তিত্ব মৃত প্রায়..!
টিনা অয়নীর দিকে তাকিয়ে বললো
: ভাবি এখন কেমন লাগছে..?
: ভালো রে..
: ভাবি বিস্কিট খাও.
: নারে,,মাথা খুব ব্যাথা করছে.
:সমস্যা নায়। আমি তেমাকে বিকেলে ঔষুধ খাইয়ে দিয়েছি। সব সেরে যাবে..
অয়নী বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো..
: ভাবি
: হু.
: একটা কথা বলবে
: কি
: তুমি কোন দুঃখে আমার এই জানোয়ার, নরপশু ভাইটাকে ভালবেসেছিলে বলতে পারো। একটি বারও কি বুঝতে পারনি ও একটা নরপশু নিকৃষ্ট জীব।
:(দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে) বোন রে ওই বয়সটা বড্ড চঞ্চল। চোখে সামনে যা দেখবি তাই রঙ্গিন লাগে। মানুষের বাইরে রূপ দেখে তার স্বভাব চরিত্র বোঝা যায় না রে। প্রেম করা, এক সাথে বাইরে ঘুরতে যাওয়া, রেস্টুরেন্ট এ যাওয়া, রাতের পর রাত ফোনে কথা বলা মানেই কাছাকাছি আসা নয়। বিয়ের পরই তো মানুষ সত্যিকারের কাছে আসে আর সেটা মনের দিক থেকেও।,,,বাদ দে তোর খবর বল…
অয়নী আর টিনা চা – বিস্কিট খাচ্ছিলো আর কথা বলছিলো মাঝে মাঝে অয়নী গোপনে চোখ মোছার বৃথা চেষ্টা করছিলো।
এমন সময় পোস্ট ম্যান আসলো। টিনা চিঠি গ্রহন করে দেখলো অয়নীর চিঠি।
অয়নী চা পান করছিলো আর চিঠি খুলছিলো।
চিঠি দেখার পর অয়নীর চোখের সামনে সব মুহূর্তেই অন্ধকার হয়ে গেলো। হাত থেকে চায়ের কাপটা মেঝেতে পড়ে গেলো। টিনা চমকে উঠে দেখে অয়নীর দেহ বারান্দার মেঝে তে লুটিয়ে পড়লো…..!
অয়নীর কল্পনার বাইরে ছিলো এমন কিছু একটা হবে…..!
< <<চলবে>>>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *