ভালোবেসে মরেছি

ভালোবেসে মরেছি – Part- 22

কালো কাপড়ে মোড়ানো চোখ খুলে দিতেই অর্নি সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে স্তব্ধ। অর্নবের কাছে শিওর হওয়ার জন্য জানতে চাইলে বলে,
–ইনিই সেই ব্যক্তি যে তোমায় শ্যুট করার জন্য বলেছিলেন। এবং আমার বাবা।
–বাবা?
অর্নব ভাঙ্গা গলায় জবাব দেয়,
–হ্যা, আমার বাবা। যে সম্পত্তির লোভে নিজের ছেলের ভালোবাসাকে মেরে দিতে চেয়েছিল।
…..
চার বছর পূর্বে,,
আজ বাংলাদেশের অন্যতম রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক আবরার আনাফ এর জন্মদিন। আজ অর্নি ম্যানশন এ এতটা শোরগোল আনন্দ হলেও আনাফ সাহেবের মনটা ভার হয়ে আছে। আজ এ খুশির দিনে ওনার মেয়ে পাশে নেই৷ কারন সে লন্ডনে নিজের গ্র্যাজুয়েশন করছে। তবে আজকে মেয়ের আসার কথা ছিল তবে এখনও এসে পৌছলো না।
আবরার আনাফ ছুড়ি হাতে দাড়িয়ে আছেন বিশাল একটা কেকের সামনে। ওনার পাশেই দূ বছরের ছোট ভাই আশরাফ আহমেদ দাড়িয়ে আছেন।কেক কাটার কথা বললে,আনাফ সাহেব বারবার মাথা নিচু করছেন।
আর কোন উপায় না পেয়ে কেকটা কাটলেন উনি।
মেয়ে অর্নির ফোন আসলো সে নাকি রাত দূটোর আগে আসতে পারবেনা।কারন বৃষ্টির কারনে ফ্লাইট কিছু সময় পিছিয়ে দিয়েছে।
কেক কাটার পর নিজের বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে টেবিলে বসলেন আনাফ সাহেব। যেখানে ছিলেন,
ওনার ছোট ভাই আশরাফ,

নিজের মেয়ের বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন যার সাথে ফাতিন আদনান।,
রাজনৈতিক ভাবে জড়িত ও আনাফ সাহেবের কাছের একজন মানুষ ও গার্ড বলা চলে, পিয়াস আহমেদ।
খুব অল্প বয়সেই সাকসেসফুল একজন বিজনেসওম্যান জেরিন সরকার।
ও আনাফ সাহেবের পার্সোনাল তিনজন গার্ড।
..
আনাফ সাহেব এদের সবাইকে মনেপ্রানে বিশ্বাস করেন, তবে আজ যে ওনার মৃত্যু এরাই হাতে করে নিয়ে এসেছে তা আনাফ সাহেব জানেন না।
সবাই মিলে বাড়ির পেছনে গার্ডেনে বসে সবাই ড্রিংক করছে।
জেরিনঃস্যার আপনার মেয়ে আসলো না যে?
আনাফঃওর ফ্লাইট টা কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে গেছে। তাই আসতে একটু লেইট হবে ওর।
আশরাফঃমেয়ে নেই তো কি হয়েছে,হবু জামাই তো আছে। তাইনা?আলাপ করুন সবাই।
আদনানঃ(একটা কল আসায় আদনান উঠে যায়,)আমি আসছি বাবা।
পিয়াসঃআংকেল অর্নি আজ কখন আসবে?
আনাফঃও তো বললো,রাত দূটো বাজবে।
পিয়াসঃওহ তাহলে তো আমাদের কাজটা বেশ সহজেই হয়ে যাবে,কি বলেন ছোট আংকেল?(আশরাফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে)
আনাফঃ(হালকা ভ্রু কুচকে হাসিমুখে পিয়াসকে বলে)কি কাজ পিয়াস?
জেরিনঃসেটা এখনই বুঝে যাবেন।
বলার সাথে সাথে আনাফ সাহেবের পেছনে দাড়িয়ে থাকা গার্ড একটা লাঠির সাহায্য ওনার মাথায় বারি মারে। তৎক্ষনাৎ উনি আহ্ বলে চিতকার দিয়ে ওঠেন। আনাফ সাহেবের এমন চিৎকার করায় ফোনে কথা বলতে থাকা আদনান দৌড়ে চলে আসে৷ এসে দেখে নাফ সাহেব মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। আদনান ওদেরকে থামাতে গেলে দূর থেকে একজন ওর বুকে গুলি করে।। সামনের দিকে তাকিয়ে দেকেন ছোট চাচা আশরাফ সাহেব পিস্তল হাতে দাড়িয়ে আছেন। সেই মূহুর্তেই আদনান গোঙরাতে গোঙরাতে মারা যায়।

ওদিকে সবাই মিলে আনাফ সাহেবকে ইচ্ছেমত মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেন। আনাফ সাহেব ও আদনান সেদিন সেখানেই মারা যায়।
যারা এ দূজনকে মেরেছে তাদের মূল উদ্দেশ্য আনাপ সাহেবের কোম্পানির মালিক হওয়া। এবং সেটা আনাফ সাহেব বেচে থাকলে সম্ভব নয়। তাই তো অনেকদিনের প্লানটা আজকে পূরন করলেন।এসব মারার প্লান আশরাফ সাহেবের ছেলে শায়েখ অর্নব করেছিল।
আশরাফ সাহেব অনেক আগে একজন মেয়েকে প্রেমের জালে ফাসিয়ে মিথ্যা বিয়ে করেছিলেন।যার ফলে ছেলে সন্তান হিসেবে অর্নব হয়েছিল। আশরাফ সাহেব কখনোই অর্নবের ভালো চাননি। আজও চান না।তাই তো মূল প্লানের জায়গায় অর্নবকে রেখেছেন।
কাজ হয়ে গেলে আশরাফ সাহেব সবাইকে বলেন কয়েক মাসের জন্য অন্য কোথাও চলে যেতে।কারন অর্নি আসার পর অন্য ড্রামা শুরু করতে হবে।
আশরাফ সাহেবের কথায় সায় দিয়ে সবাই চলে যান। এরপর নিজেই নিকের শরীরে আগাত করেন। এবং অজ্ঞান অবস্থায় পরে থাকেন আদনান ও আনাফ সাহেবের পাশে৷
..
পরের দিন হাসপাতালের বেডে নিজেকে আবিষ্কার করেন আশরাপ সাহেব।পাশেই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে অর্নি।
চাচার জ্ঞান ফিরেছে দেখে ওনার কাছে গিয়ে বসে জিজ্ঞেস করল অর্নি,
–ছোট আব্বু?এক রাতের মাঝে কি থেকে কি হয়ে গেল?কিভাবে হলো?কারা করল এমন?(চোখমুখ শক্ত করে)
আশরাফ সাহেব এবার বুদ্ধি খাটায়। নিজের নাম বাদে বাকি সবার নাম এই ঘটনায় যুক্ত করেন। কারন উনি জানেন অর্নি কতটা ভয়ংকর৷ সহজে ওদের ছারবে না।তাই সবার ব্যাপারেই কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে দেয়।
অর্নি নিজের ছোট আব্বুকে প্রচুর বিশ্বাস করে। তাই এবারও দেরি না করে সব কটাকে মাটিতে পোতার ব্যবস্থা করে। নিজের পার্সোনাল গার্ড শাফিনকে দিয়ে সকল খবরাখবর বের করে।
সবাইকে খতম করার উদ্দেশ্য ঢাকায় আসে৷ এরপর থেকে একটা একটা করে সবাইকে মারে।
চাচা বলেছিল শায়েখ অর্নব নামে একজন আছে যে পুরো প্লানটার সাথে যুক্ত। তাকে অন্যভাবে ফাসানোর জন্য মিহু রুপে ভার্সিটিতে ভর্তি হয় অর্নি।
ওদিকে আশরাফ সাহেব অর্নবকে বলেছিলেন, ওনাকে অর্নিই মেরে জখম করেছিল। তাইতো অর্নির ওপর অতটা রাগ অর্নবের।

…..বর্তমান….
নিজের চাচাকে সামনে দেখে অবাক অর্নি। তারমানে ছোটআব্বু ই এসব কিছু করেছেন?কি করে করতে পারলেন উনি এতবড় বিশ্বাসঘাতকতা?
অবশ্য টাকার কাছে বড় বড় মানুষ এমন। আর যেখানে অর্নির বাবার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।
অর্নবও জেনে গেছে নিজের বাবার কুকর্মের ব্যাপারে। আশরাফ সাহেব অর্নবের ভালোবাসার ব্যাপারে জানার পর বলেছিলেন,
–অর্নিকে হয় তুই নিজের হাতে শেষ করবি। না হয় আমি।
অর্নব ভেবেছিল যদি ওর বাবা যদি অর্নিকে আসলেই মেরে ফেলে?তাইতো অর্নিকে নিজের হাতে শ্যুট করেছিল সেদিন এবং এমনভাবে শ্যুট করেছিল যাতে অর্নিও ঠিক থাকে এবং আশরাফ সাহেবও ওকে কিছু না করতে পারে।

অর্নিকে দেখে আশরাফ সাহেব বললেন,
-কিরে মা, তুই এখানে এ ভাবে?আর এ ই ছেলেটি কে?
–আর কত নাটক করবে মিস্টার আশরাফ আহমেদ?তোমার সব নাটক শেষ আজ।
–কি বলছিস মা?আমি নাটক করছি মানে?(ন্যাকামি করে)।
–আমি সব জেনে গেছি, তুমি যে কত্ত বড় বেঈমান, আমার জানা হয়ে গেছে। এবার আমি তোমাকেও ছাড়বো না।
বলেই চাচার দিকে এগোতে লাগলো অর্নি। তখনিই নিজের বুকপকেট থেকে ছোট্ট পিস্তলটি বের করলেন আশরাফ সাহেব।। অর্নি মাঝপথেই থেমে গেল।
–থেমে গেলি কেন?আয়? এগিয়ে আয়, যাতে তোকে আরও কাছ থেকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারি। আমার এই অপদার্থ ছেলেটা যে কেন সেদিন তোকে মারলো না।আমার তো আগে এই ছেলেকেই মেরে দেয়া উচিত ছিল।
..
একটা গুলির আওয়াজ অর্নির বাংলোর সমস্ত দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
গুলিটা বুকে লাগতেই রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে……
.
.
#চলবে___
.