ভালোবেসে মরেছি – Part- 10
পিয়াসের মৃত্যুর খবরটা পুরো ভার্সিটিতে শোকের ছায়া নামিয়ে দিয়েছে বলা চলে।যেহেতু পিয়াস পলিটিকস করতো তাই সেখানকার অনেক ছেলেপেলেরা পিয়াসের মৃত্যুর ব্যাপারের রহস্য উদঘাটন করার পদক্ষেপ নেয়।পিয়াসের মৃত্যৃুটার রহস্য কেউই বের করতে পারছেনা।কেননা এটাকে মার্ডার বলা চলে নাকি আত্মহত্যা কিছুই কেউ বুঝতে পারছেনা।
পিয়াসের শরীরের কোথাও আঘাত করার কোন চিন্হ পাওয়া যায়নি। যে কোন মানুষ ব্রিজ থেকে পড়লে যতটুকু ক্ষতি হবে ঠিক ততটুকুই আঘাত লেগেছে বলে ডাক্তাররা বলেছেন।
মিহু ও বাকিরা সবাই খুবই ভেঙ্গে পড়েছে। ওরা ভাবতেই পারেনি পিয়াস ওদের ছেড়ে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে। নিজেদের এতটা কাছের বন্ধুকে হারানোর ব্যথা অনেকটা ঘায়েল করে দিয়েছে ওদের।
___________________
কিছুদিন হলো অর্নব মিহুকে অনেকটা চুপচাপ দেখছে।আগের সেই মিহুকে অনেকটা মিস করছে অর্নব। সবসময় যে মিহুর মুখে হাসি দেখতো তার মুখটা এ ক’দিন বিষন্নতায় ঘেরা।যা দেখতে অর্নবের কাছে একদমই ভালোলাগছেনা।অর্নব ভালো করেই যানেন পিয়াসের মৃত্যুটা মিহুর কাছে অপ্রীতিকর। তাই ওর এমন অবস্থা।ক্লাসের শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় মিহুকে বলে ক্লাস শেষে দেখা করতে।
মিহু মাতা নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক উত্তর দেয়।
ক্লাস শেষে মিহু অর্নবের সাথে দেখা করতে যায়।অর্নব মিহুকে দেখে নরম গলায় বলে,
-এখন তোমায় একটু আমার সাথে যেতে হবে।
মিহুর কপালে ভাজের রেখা পরে। কনফিউজড ভাবে উত্তর দেয়,
-কোথায় যেতে হবে স্যার?আমার আজ সময় নেই।
-দেখো মিহু,আমার কথার ওপর দিয়ে কথা বলোনা।যখন বলেছি আমার সাথে যাবে তখন যাবেই।
-কিন্তু স্যার আ…
অর্নব নিজের হাতের আঙ্গুল দিয়ে মিহুর ঠোট চেপে ধরে বলে,
-আমি কিছু জানতে চেয়েছি?
মিহু মাথা নাড়ায়।অর্নব ভ্রু নাচিয়ে বলে,
-তাহলে?আমি যখন বলেছি, তোমার যেতেি হবে, বুঝলে?
এবার মিহু অর্নবের চোখের দিকে ভালোকরে তাকায়।কি একটা মায়াবি চোখ।যেন ওই চোখদুটো শুধু নেশাই ধরায়।
মিহুর মুখের ওপর থেকে হাতটা সরিয়ে চেয়ারের ওপর থাকা কোট হাতে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায় অর্নব।
গাড়িতে উঠার পর অর্নব মিহুকে জিজ্ঞেস করে,
-আচ্ছা তোমার কাছে প্রাকৃতিক সবচেয়ে কোন বিষয়টি প্রিয়?এই ধর,পাহাড়,সমুদ্র, নদী,গাছপালা?কোনটা?আজকে আমরা সেখানেই যাব।
মিহুর এমনিতেই অনেকটা বিরক্তি লাগছে।এমনিতেও আজ কটা দিন মনটা ভালো নেই,তারওপর এই স্যারের ঘোরার শখ জেগেছে।আচ্ছা এত মেয়েরা আছে, তাহলে আমার সাথেই কেন যেতে হল।আমিই কি একমাত্র বলির পশু।
-কি হলো মিহু?বলো?
মিহু খানিকটা অসস্তি নিয়েই বলে,
-স্যার আপনার যেখানে ভালোলাগে সেখানেই যেতে পারেন।
-মিহু আমি চাই তোমার পছন্দের একটা জায়গায় যেতে।
-কিন্তু কেন?আমার তো ঘুরাঘুরির কোন শখ একন নেই স্যার।
-মিহু!তোমায় যেটা বলেছি শুধু সেটার আন্সার দাও, বাকিটুকু আমি দেখে নেব।
মিহুর মনটা খারাপ থাকলেও একটু খোলামেলা পরিবেশের আশা করতো।তবে এসব চিন্তায় কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। জানালার বাইরে একবার তাকিয়ে নরম গলায় উত্তর দেয় সে,
-সমুদ্র
মিহু দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট করে পাড়ি দেয় এক দূরের পথে।
প্রায় দেড় কি দু ঘন্টার মাথায় গিয়ে একটা জায়গায় পৌঁছে ওরা।
গাড়ি থেকে নামার পর মিহুর মুখে একটা প্রশান্তির হাসির ছাপ দেখা যায়।যেটা দেখার জন্য অর্নব একদিন ছটফট করছিল।পায়ের জুতো খুলে নরম ঘাসের ওপর পায়ের ধাপ ফেলে মিহু। এতে ঘাসগুলি দেবে যায়।কয়েক পা হেটে গিয়ে নদীর তীরে গিয়ে পানিতে পা ডোবায় সে। এতোটা হাওয়ায় নদীর স্রোত এমনভাবে বইছে,এতে করে কিছুসময় পর পর পানির ঢেউ এসে তীরে আছড়ে পরছে।পানিতে পা থাকা অবস্থায় পায়ে যখন পানির ঢেউ এসে লাগছিল,সে সময় মিহু এমনভাবে হেসে উঠছিল যেন ওর কতদিনের আশা পূরন হলো আজ।
তীরের ওপরেই পকেটে দু হাত দিয়ে অর্নব দাড়িয়ে আছে।ঠোটের কোনে এক ফোটা হাসির রেখা।যা দেখতে অসাধারণ। সে তো নিজের হাসির দিকে খেয়াল না করে সামনেই দাড়িয়ে নদীর ওই অবাক করে দেয়া ঢেউগুলোর সাথে খেলা করা মেয়েটিকে দেখছে।মেয়েটির চোখে একটা অদ্ভুত ভাষা রয়েছে যা যে কেউ পড়তে পারবেনা।ওর চোখের ভাষা সেই পড়তে পারবে যে ওর মাঝে ডুব দিতে পারবে।
অর্নবের ভীষন ইচ্ছা মিহুর চোখের সেই ভাষাগুলো পড়ার।ওর মাঝে ডুব দেওয়ার।তবে একা একা নয়,মিহুর সাথেই ডুব দেয়ার ইচ্ছে ওর।
পেছনে ফিরে দেখে অর্নব ওর দিকে তাকিয়ে এমনভাবে হাসছে যেন মনে হবে,মিহুর মাঝে একটা অমায়িক সুখ বিরাজমান।নিজেকে এখন অনেকটা মুক্ত পাখির মতো লাগছে মিহুর। দৌড়ে গিয়ে কোনকিছু না ভেবে অর্নবের হাত ধরে ফেলে সে।এরপর টানতে টানতে পানির কাছে নিয়ে আসে। পায়ে জুতো থাকায় পানির মাঝের প্রায় অনেকটা বালু অর্নবের জুতোয় ঢুকে পড়ে।এ ব্যাপারটায় খুবই আনকমফর্টেবল লাগলেও মিহুর হাত ওর হাত ধরে থাকায় অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।
মিহুর এতক্ষণে হুশ ফেরে যে, স্যারের হাত ধরে আছে সে।এতে ওর গালদুটো লজ্জায় লাল হয়ে যায়।মিহুকে লজ্জা পেতে দেখে অর্নব ফিসফিস করে বলে,
-গালদুটোয় কি হাতটা ছুঁতে দেবে?
কথাগুলো আবছা আবছা মিহুর কান অব্দি পৌঁছোয়। সাথে সাথে অর্নবের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
-কি বললেন?আবার বলুন?
অর্নব খানিকটা ঘাবরে যায়।কাশতে কাশতে বলে,
-ক্ ক কই, কিছুই তো বলিনি।
-ওহহ,আমার মনে হলো কিছু বললেন।ছোয়া টাইপ কিছু?
-আরেহ না, হয়তো ভুল শুনেছ।
-হুম হতেও পারে।
-হ্যা হ্যা।
-স্যার!
-হ্যা বলো
-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
-কেন?তোমায় নিয়ে ঘুরতে এসেছি বলে?
-নাহ সে কারনে নয়,
-তাহলে?
-ঘুরতে তো ইচ্ছে করলে আসাই যেত। তবে কি, মন অনেক খারাপ ছিল।কেউ যে মন ভালো করার জন্য এবাবে একটা গিফ্ট দেবে ভাবতে পারিনি।নিজের কাছেই অনপকটা খারাপ লাগছে।আপনার সম্পর্কে অনেকটা ভুল ধারনা করতাম জানেন।নিজের ভালে মন্দের বিষয়টা আমি নিজেই ডিসাইড করি। তাই বেশিরভগ সময়ই বিষন্নতায় কাটে আমার। আজকে এখানে এসে এই খোলা হাওয়া ও নদীর জলে কি ছিল আমি জানিনা তবে একটা জিনিস অবশ্যই ছিল,সেটা হলো প্রশান্তি।অনেকে নিজের এতটুকু দুঃখ নিয়ে এতটাই ব্যাস্ত তাকে যে এমনকিছুর থেকে আলাদা হয়ে যায়।এতে করে নিজের জীবনটাকে একটু সুকের ছোয়াও দিতে পারেনা। কিছু কিছু হাওয়া এমন আছে যা শরীরে একটা আনন্দের অনুভূতি দেয়। সেটা আমি এখানে এসে পেয়েছি। এবং তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার।
মিহুর বলা কথাগুলো অর্নবকে বিমোহিত করে তোলে। মিহুর প্রতি যেটুকু অনুবুতি ছিল তা যেন আরও কয়েক ইঞ্চি বেরে যায়।
নদীর পানি খানিকটা তুলে মুখের পুরোটা ভিজিয়ে নেয় মিহু এবং অর্নবকেও করতে বলে।পানি দিয়ে মুখটা হালকটা ভিজিয়ে নেওয়াতে একটা শীতল হাওয়া চোখে মুখে ছেয়ে পড়ে।যা অর্নবকে জীবনের এই প্রথমবার এতটা সুন্দর প্রকৃতির কাছাকাছি টানে।
.
সন্ধ্যা নামার কিছুক্ষণ আগে অর্নব মিহুকে ওর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়।
_____________
“ম্যাম আর কতদিন ওই হারামজাদাকে এভাবে ছেড়ে দিয়ে রাখবেন?”
যতদিন মুক্তভাবে থাকবে ঠিক তত কষ্টই পাবে ও।কাউকে ছাড়িনি, তাহলে ওকে তো ছাড়ার প্রশ্নই আসেনা।যদি ওকে ছেড়েই দেই তাহলে বাকিদের মারার কি প্রয়োজন ছিল?
আচ্ছা ম্যাম ওই শায়েখ অর্নবই কি আসল ভিলেন?
“হতে পারে আমিই আসল ভিলেন”
হা হা হা হা বলেই হাসিতে লুটিয়ে পড়ে অর্নি।রাত বারোটা বাজতে চলেছে কিন্তু ওর কাছে এ সময়টা রাতের শুরু…………..
.
. চলবে……