ভালোবেসে তারে

ভালোবেসে তারে !! Part- 12

আমি আর কান্না না করে থাকতে পারলামনা।ফুপিয়ে কেদে দিলাম এবার।

আমার কান্না করা দেখে রাফিত আমার ঘাড় থেকে মুখ তুলে আমাকে তার দিকে ঘুরালো।তারপর দুই হাতে আমার গালে আলতো করে স্পর্শ করে আমার মুখটা একটু উচু করে ধরে বলল,

“দিশা প্লিজ এভাবে কেদোনা।দেখো আমি সত্যি সরি।আসলে আমি না বোঝে তোমার সাথে এতো অন্যায় করেছি।জানো আজকে…………..”

আমি তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তার হাত দুটো আমার গাল থেকে সরিয়ে দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে আসলাম।তার সামনে বেশিক্ষণ থাকলে নিজেকে ধরে রাখতে পারবোনা।চাইনা আমার তার সরি।আচ্ছা ওর হঠাৎ করে কি হলো?কান্না করছিলো আবার আমার কাছে ক্ষমা চাইছিলো।যা খুশি হোক।আমি তার সাথে কোনো কথা বলতে চাইনা আর না কিছু শুনতে চাই হারামীটার মুখ থেকে।সে কি আমার কোনো কথা শুনেছিলো তবে আমি কেনো শুনবো।



রাতে ড্রেসিংটেবিলের সামনের টুলে বসে চুল আচরাচ্ছি ও আড়চোখে আয়নায় রাফিতের দিকে তাকাচ্ছি।সেই কখন থেকে খাটের মধ্যে পায়ের উপর পা তুলে এক হাত কপালের সাইডে রেখে ভর দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ভাবসাব এমন যেনো আমি কোনো মঙ্গল গ্রহ থেকে আসা এলিয়েন।ব্যাপারটা খুবই অসস্তিকর। অন্তত আমার কাছেতো অবশ্যই।কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকলে কি আর কিছু করা যায়।আজ হলোটা কি এর।সরি বলছে আবার এইরকম রোমান্টিকভাবে তাকিয়ে আছে।তার উপর চুলের মধ্যেও মনে হয় দশ বছরের জটলা সব একসাথে বেধেছে।ছাড়ার নামই নিচ্ছেনা হতচ্ছাড়া।

আমি যখন চিরুনি দিয়ে আমার চুলের সাথে যুদ্ধ করতে ব্যাস্ত ঠিক তখনি কেউ পেছন থেকে এক টানে আমার হাত থেকে চিরুনিটা নিয়ে নিলো।আমি চোখেমুখে বিরক্তির আাভা নিয়ে ভ্রু কুচকে রাফিতের দিকে তাকিয়ে আছি।সে আমার এসব কোনো কিছুরই পাত্তা না দিয়ে মুচকি হেসে আমার সামনে থেকে চুলগুলো পিঠে ছড়িয়ে দিলো।তারপর আস্তে আস্তে আমার চুলের জট ছাড়াতে লাগলো।আমি অবাকের উপর অবাক তার উপর অবাক হচ্ছি আজ।সেই অবাকের উপর ভিত্তি করেই আয়নার মধ্যে পরা রাফিতের প্রতিবিম্ভের দিকে তাকিয়ে আছি।

প্রত্যেকটা মেয়েরই বিয়ের আগে তার স্বামীকে নিয়ে কিছু না কিছু আশা,আকাঙ্খা ও অনেক সপ্ন থাকে।আমারও ছিলো।বিয়ের পর স্বামীর কাছ থেকে আর কিছু পাক আর না পাক কিন্তুু অতিরিক্ত কেয়ারটা সবাই আশা করে।যার ছিটেফোটাও আমি রাফিতের কাছ থেকে পাইনি।যদি কিছু পেয়ে থাকি তা হলো কষ্ট,অবহেলা ও আমার প্রতি তার নিষ্ঠুর আচরন।

আমার এসকল ভাবনায় ছিদ্র করে রাফিত আমার চুলে চিরুনি চালাতে চলাতে বলে উঠলো,

“আমি জানি তুমি আমাকে নিয়েই ভাবছো।তা কি ভাবছো শুনি।নিশ্চয়ই আমার দেওয়া কষ্টের কথাগুলো মনে করছো তাইনা।”

আমি নিরবে তার কথাগুলো শুনছি শুধু।

“ওকে ফাইন কথা বলবেনাতো আমার সাথে।ঠিক আছে বলোনা।আমি জানি তোমার মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।তারপরও কিছু জিজ্ঞেস করছোনা।তুমি যেদিন আমাকে নিজের মুখে জিজ্ঞেস করবে আমিও সেদিনই তোমাকে তোমার প্রশ্নের উত্তর দিবো।আর হে কাল মা আসছে।আর উনি এখন থেকে এখানেই থাকবে।আমাদের সাথে।”

কথাটা শুনে আমি আমার চোখমুখ খুশিতে চকচক করে উঠলো।আমি একটু নড়েচড়ে বসে একটু জোরেই বলে উঠলাম,

“সত্যিইই।”

বলার সাথে সাথে আমার মুখে আমি নিজেই দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।ইসস বেশি খুশিতে হুশ হারিয়ে ফেলেছি।আসলে আমার শাশুড়ী আম্মু খুব ভালো।যখনই আসে আমাকে এত্তগুলা ভালোবাসা দিয়ে যায়।আমি ওনাকে অনেকবার বলেছিও আমাদের সাথে এখানে থাকতে।কিন্তুু উনি প্রতিবারই কোনো না কোনো বাহানা দিয়ে ব্যাপারটা এড়িয়ে যান।ছোট থেকে মায়ের আদর-স্নেহ পাইনি আমি।তাই ওনার অল্প ভালোবাসাও আমার কাছে অনেক মনে হয়।

আমার এইরকম বিহেভিয়ারে রাফিত হালকা হাসে।তারপর আমার সামনে এসে হাটু গেরে বসে আমার দুই হাত তার দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

“সেই তো কথা বলেই ফেললে।তা পুরোপুরিভাবেই বলো না।”

আমি আমার মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম।

“আচ্ছা আমিও আর সরি বলবোনা।আমার সরি ওতোটাও সস্তা না ওকে।যখন আমার সরির মূল্য দিবে তখনই বলবো।খামোখা ঐ টিভি সিরিয়ালের মতো ওসব ফালতু সরিটরি বলে বউয়ের পিছে ঘুরঘুর করার মতো ছেলে আমি নই।এসব করে আমি আমার টাইম ওয়েস্ট করতে চাইনা।আফটার অল আমি আমার জায়গায় ঠিকই ছিলাম।বাকিটা এজ ইউর উইস।তুমিতো আমার কথাই শুনতে চাইছোনা।তবে এটা ভেবোনা আমি তোমাকে আর টর্চার করবোনা।করবো তবে অন্যরকমভাবে।(চোখ টিপে মুখে বাকা হাসি)”

আমি তার দিকে চোখ দুটো রসগুল্লার মতো করে তার দিকে তাকিয়ে আছি।কি বজ্জাতরে বাবা।মাগো মা ভাবা যায় এতো পুরো গিরগিটির থেকেও ফাস্ট রং পাল্টাচ্ছে।বলে কি এ লোক আমাকে সরি বলাটা ফালতু।এতোগুলো অন্যায় করার পর তার এখন এসব ফালতু মনে হয়।আই হেভ এ্যা বিগ কনফিউশান এর মাথায় চলছেটা কি?ধ্যাত ঘোড়ার ডিম কেনো যে ওই সময় পুরো কথা না শুনে ঠ্যাংঠ্যাঙিয়ে চলে আসলাম।ধুর যা এখনতো জিজ্ঞেসও করতে পারবোনা।কথা যে বলিনা।বাহ দিশা বাহ এগুলোই তোর কামকাজ।তোর মুখ বন্ধ রাখবি বলে কানও কি বন্ধ রাখার প্রতিজ্ঞা করেছিলি।সে আবারও বলল,

“কি হলো কি ভাবছো এতো।বাই দা ওয়ে তুমি সারারাত ভাবো আমি যাই।খুব ঘুম পেয়েছে(দুই হাত উপরে উঠিয়ে হাই তুলে)।আজ অনেকদিন পর একটা শান্তির ঘুম দিবো।টাটা।(এক হাতের আঙুল নাচিয়ে)”

বলেই বেডে গিয়ে ধপাস করে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পরলো।তার সবকিছুই আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।নিজেকে কেমন যেনো বেক্কল বেক্কল লাগছে আমার।এ আবার আজকে ড্রিংক ট্রিংক করে আসেনিতো।কই আমিতো কোনো বাজে গন্ধ পেলামনা।গরবরতো কিছু একটা আছেই।না চেক করতে হবে।
ভেবেই আমি তার কাছে চলে গেলাম।যাহ বাবা এতো দেখি ট্রেনের থেকেও ফাস্ট ঘুমায়।আল্লাহ তুমি এই লোকের চোখ থেকে কিছু ঘুম আমাকেও ধার দেও আমিন(দুই হাত তুলে)।

আমি ওর চোখের সামনে অনেকবার হাত নাড়াচাড়া করলাম।না এই ব্যাটার ঘুম জমে পুরো ক্ষীর।তারপর দুই হাতে বেডে ভর দিয়ে আমি ওর মুখের কাছে আমার মুখটা নিয়ে গেলাম।না কোনো উল্টাপাল্টা কিছু খেয়েছে বলোতো মনে হয় না।তারমানে ব্যাটা খাটাস মার্কাটা পুরো হুশেই আছে।আহা ব্যাটার সরি বলার কি ছিড়িগো।আমিতো পুরো ফিদা হয়ে গেছি হাহহ।

আমি যেই উঠতে যাবো ওমনি আমার হাতের মধ্যে কেউ আচমকা টান মারলো।আমিও টাল সামলাতে না পেরে তার উপর পরে যাই।ওমা এতো দেখি পুরো সজাগ।তাহলে ব্যাটা এতক্ষণ ডং করছিলো।সে আমার হাত দুটো শক্ত করে ধরে আমার দিকে কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে।আমি তার থেকে ছোটার চেষ্টা করেও পারছিনা।আমি রাগী চোখে তার দিকে তাকাতেই সে বলল,

“ইসস আমার বউটা কত্ত রোমান্টিকগো।ঘুমের মাঝে স্বামীকে আদর করে।কি সৌভাগ্য আমার।এমন বউ যেনো বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে হয়।”

এহহ সখ কতো খচ্চরের।আমি রোমান্স করবো তাও এই হাতি মার্কা গন্ডারের সাথে।জাস্ট ইম্পসিবল।আসছে ফকিরের আবার তল বিছানা।শালা লুইচ্চা,ইতর,বদমাইশ।

সে এবার আমার মাথাটা তার বুকের সাথে লাগিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।আমি যেনো পুরো ফ্রিজড হয়ে গিয়েছি।আমার বুকের ভিতর কেউ যেনো তাকঢুম তাকঢুম করে ঢুল পিটাচ্ছে।নাড়াচাড়া করার শক্তিটুকুও পাচ্ছিনা।আমিও অন্যসবার মতো করে চাইতাম আমার স্বামীও আমাকে এভাবে জোর করে তার বুকে নিয়ে ঘুমাক।তবে কেনো এমন হলো আমার সাথে।আজ কিছু না করেও অপরাধীর খাতায় আমার নাম।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমার চোখ দিয়ে অশ্রুর বন্যা বইতে লাগলো।যার ফলে রাফিতের বুকে জড়িয়ে থাকা টি শার্টের কাপড়টুকুও ভিজে যাচ্ছে।সে হয়তো বোঝতে পেরেছে আমি কান্না করছি।তাই সে তার বুক থেকে আমাকে কিছুটা আলগা করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ব্যাস্ত হয়ে বলল,

“কি হয়েছে দিশা?কাদছো কেনো?আমিকি আবারও তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম?কিন্তুু এখনতো আমি কিছুই করিনি।তাহলে কাদছো কেনো?দিশা প্লিজ……”

আমি তার কথার মাঝেই খুব শক্ত করে দুই হাতে তাকে জরিয়ে ধরে শব্দ করো কাদতে লাগলাম।সেও আমাকে জরিয়ে ধরে এক হাতে আমার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল,

“আমি বোঝতে পারছি দিশা তুমি কেনো কান্না করছো।তোমার যতক্ষণ খুশি আমার বুকে কাদতে পারো।হয়তো তোমার ভালো লাগবে ও মনটাও একটু হালকা হবে।আমি পুরোটাই তোমার আর তুমি শুধুমাত্র এই রাফিতের।আর কারোনা।”

আমার এতোক্ষণে হুশ হলো আমি তাকে জড়িয়ে ধরেছি।তাই আমি চট করে তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পরি।দরকার নেই আমার তার কোনো সহানুভূতির।সে এখনো হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে আাছে।থাকুকনা মানা করছে কে।
,
,
,
,
,
,
পরেরদিন দুপুরে,,,,,,,,,,

আমাকে পরম যত্নে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আমার শ্বাশুমা খাইয়ে দিচ্ছে।উনি আজ সকালেই এসেছেন।আর আজ রান্নাও আম্মাই করেছেন।আমিও ওনাকে টুকটাক হেল্প করেছি।আমিতো বাচ্চাদের মতো সোফার উপর আসাম করে বসে খাচ্ছি আর টিভির মধ্যে ডুবে আছি।আর রাফিত সেই কখন থেকে সামনের সোফায় বসে ভ্যাবলাকান্তের মতো গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তার দিকে না তাকিয়েও বেশ ভালোই বোঝতে পারছি ও আমাকেই দেখছে।যদিও মাঝে দু একবার আড়চোখে তাকিয়েছিলাম।সে আজও অফিসে যায়নি।হয়তো আম্মা এসেছে বলে।

আমি বোঝিনা এর সমস্যা কি।এখন কি শান্তিতে একটু খেতেও পারবোনা এর জ্বালায়।এভাবে তাকিয়ে থাকলেতো আমার পেট খারাপ করবে।যত্তসব ছোচা বিড়াল কোথাকার।এমন করে তাকিয়ে আছে যেনো বাপের জন্মে খায়নি।ইচ্ছেতো করছে ঘরের সব খাবার এর মুখের ভিতর পুরে দেই।তাও যদি আমার খাবারের প্রতি নজর না দেয়।এরই মধ্যে আমার শ্বাশুরী বলল,

“কিরে সেই কখন থেকে কোন ধ্যানে আছিস।মুখের সামনে খাবার ধরে বসে আছি কোনো খবরই নেই তোর।”

ওনার কথায় আমি আমার চিন্তার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরি।আমি কিছু বলবো তার আগেই রাফিত বলে,

“আরে মা বোঝনা কেনো তোমার পুত্রবধু এখন তোমার সোনার টুকরো পুত্রের ভাবনায় মশগুল।বেচারি কি করবে বলোতো আমিতো সারাদিনে ওকে তেমন টাইম দিতে পারিনা তাই আমাকে ভেবেই ও সময় কাটায়।”

ছি ছি এর কি একটুও লজ্জাসরম নেই।কার সামনে কি বলতে হয় এটাও জানেনা।যদি লজ্জাসরমের ঔষধ পাওয়া যেতো তাহলে এই মুহূর্তে যেখান থেকে পারতাম এই বেশরমাটাকে এনে খাওয়াতাম।আমার শ্বাশুরীও কিছু কম যায়না।ছেলের কথায় উনিও ভেটকি মাছের মতো শব্দ করে হাসছেন।কি একটা পরিস্থিতি।এবার আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।ইচ্ছে করছে এখনি এখান থেকে দৌড়ে পালাই।কিন্তুু আহা কি সোনায় সোহাগা কপাল আমার এটাও এখন করা সম্ভব না।এখন খাওয়া ছেড়ে এভাবে দৌড়ে পালালে লোকে আমাকে পাগল ছাড়া আর কিছু বলবেনা।………………….

to be continued……………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *