ভালোবাসার প্রতারণা ! সিজন 2 ! Part- 02
শপিংমল থেকে বের হওয়ার সময় কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে তারা পড়ে যেত নিল তখনিই কেউ তাকে ধরে ফেলল।
সামনে তাঁকিয়ে দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। তারা আকাশকে দেখে হেঁসে দিল।
—-আপনি !
—-হুম।
—-এখানে কি করছেন?
—-শপিংমলে মানুষ কেন আসে!
—-অনেক কারণ থাকতে পারে তবে প্রধান কারণটি হলো শপিং করা।
—-হুম। আমি সেই প্রধান কারণটার জন্যই এসেছি।
—-ওহ।
—-আপনার উপর আমি কিন্তু খুব রাগ করেছি।(অভিমানি ভাব নিয়ে)
—-কেন! আমি আবার কি করলাম?
—-কি করেন নি?
—-আপনি ক্লিয়ার করে বললেই তো হয়।
—-আপনার জন্য কালকে কোল্ড ড্রিংক্স এনে দেখি আপনি নেই সব জায়গায় খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। তারপর বুঝতে পারলাম আপনি হয়তো বাড়িতে চলে গেছেন। আপনি যাবেন তা ঠিক আছে আমাকে বলে যাবেন না!
—-আপনাকে বলে যেতে হবে কেন?
—-সে কি! আমি আপনার জন্য কত কষ্ট করে কোল্ড ড্রিংকস আনতে গিয়েছিলাম। আপনি যদি বলতেন তাহলে আমি আনতাম না আর আপনাকে পাগলের মতো খুঁজতামও না। আমার পা টাও আর ব্যাথা হতো না।
তারা বুঝতে পারলো কতোটা বাঁচাল এই ছেলে। তাঁছাড়া কালকের পার্টির কথা মনে করানোর ফলে তারার প্রভাতের কথা মনে পড়ে গেল। মুহূর্তেই মুখটা কালো হয়ে গেল।
—কি হলো মিস !
—না কিছু হয়নি।
—-তাহলে এমন চুপ করে গেলেন যে!
—-ভাবছি আপনার ক্ষতি পূরণ করবো কিভাবে?
—-হুম। তা তো করতেই হবে।
—-আচ্ছা চলুন।
—কোথায়?
—-আপনার ক্ষতি পূরণ করতে আপনাকে এখন একটা ট্রিট দিব। আসেন।
—-সত্যি?
—-হুম আসেন।
—-আমি কিন্তু কখনো ট্রিট হাত ছাড়া করিনা।
—তা আপনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।(বিড়বিড় করে।)
—-কিছু কি বললেন ?
—-না। চলেন সামনেই একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে আপনাকে ঐখানেই নিয়ে যাবো।
—-ওকে।
তারা আর আকাশ রেস্টুরেন্টে গেল। ওরা দুজন যেখানে বসেছে ঠিক তার বাম পাশেই প্রভাতও বসে আছে। তবে প্রভাত তাঁদের ফলো করে আসেনি। তার একটা মিটিং ছিল তাই এসেছে। ওরা কেউই এখনো কাউকে দেখেনি। প্রভাত তার মিটিং করাতেই ব্যস্ত আর তারা আকাশের বকবক শুনতে শুনতে অসহ্য হয়ে গেছে তাই মাথা নিচু করে রেখেছে। তার একদমই ভালো লাগছেনা। তারা স্বভাবতই একটু চুপচাপ। কথা কম বলে আর বেশি কথা বলা মানুষের থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করে কিন্তু আজব ব্যাপার আজ একটা ঘন্টা ধরে একটা বাঁচালের সাথে বসে আছে। আকাশ যে সবসময় বকবক করে তা নয়। কিন্তু আজ বকবক করতে তার ভালোই লাগছে কারণ আকাশ স্পষ্ট বুঝতে পারছে তারা বিরক্ত হচ্ছে। তাই আরো বেশি বিরক্ত করার জন্য এমন করছে। ওর কাছে তারাকে রাগাতে , বিরক্ত করতে খুব মজা লাগে।
হঠাৎ করে আকাশ এমন কথা বলে যা শুনে তারা হাঁসতে হাঁসতে লুটোপুটি খায়। প্রভাত হঠাৎ কোনো মেয়ের হাঁসির শব্দ শুনে সামনে তাঁকায়।
প্রভাত দেখে তারা হাঁসছে আর তারার গালে পড়া টোল দেখে প্রভাতের বুকে কেউ বোধ হয় ঢোল পিটাচ্ছে। একদৃষ্টিতে তারার দিকে তাঁকিয়ে রইল। হঠাৎ এত হাঁসার কারণ কি তা দেখার জন্য সে আরেকটু ঝুকে তখনিই মাথায় রক্ত চড়ে যায়। আকাশ এখানে তারার সাথে কি করছে। ভাবতেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। কোনোমতে মিটিংটা শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়ে কারণ ও এখানে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চায় না।
প্রভাত ড্রাইভ করছে আর মাঝে মাঝে নিজের মাথায় হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবার চেষ্টা করছে।
তখনিই একটা কথা মনে পড়ে যায়। তার বাবা আরমান সাহেব তাকে বলেছিল যে কায়েস হাসানের মেয়েকে বিয়ে করার কথা। প্রভাত তখন কোনো কথা বলেনি। উল্টা বাবার উপর রাগ দেখিয়েছিল। যাক তাহলে এখন এইটাই বেটার হবে। তার বাবার কাছে গিয়ে বলবে যে সে তারাকে বিয়ে করতে চায়। তাহলেই তো হয় তারার সাথে ওর বিয়ে হয়ে গেলে ওকে উচিত শিক্ষাও দিতে পারবে আর আকাশের থেকে সারাজীবনের মতো দূরে সরাতে পারবে।
অফিসের দিকে না গিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যায় প্রভাত। বাড়িতে ঢুকেই সে এক চিৎকার দিয়ে তার বাবাকে ডাকে।
—-ড্যাড!
—-কি হয়েছে?
—-তোমার সাথে একটা জরুরী কথা ছিল।
—-বলে ফেল।
—-আমি বিয়ে করতে চাই।
—-হোয়াট!
—-অবাক হচ্ছো?
—-অবাক হওয়ার কথা বললে তো অবাকই হবো।
—-ড্যাড বি সিরিয়াস।
—-ঠিক আছে বলো।
—-আমি বিয়ে করতে চাই।
—-সেটা তো বললেই। কিন্তু কাকে?
—-ঐ যে কায়েস আঙ্কেলের মেয়েকে।
—-আর ইউ শিউর?
—-ইয়েস আই এম।
—-ঠিক আছে।
—-কিন্তু ড্যাড বিয়েটা এক সপ্তাহের মধ্যে যেন হয়।
—-আরে এত তাড়াতাড়ি!
—-হুম।
—–আরে অনেক আয়োজন করতে হবে তো সময় লাগবে।
—-সময় লাগলে নাও কিন্তু সামনের সপ্তাহে আমি বিয়ে করতে চাই।
বলেই প্রভাত সেখান থেকে চলে আসলো। আরমান সাহেব কায়েস সাহেবকে ফোনে সব বলল। উনি খুব খুশি হয়ে গেল তারা দুইজন এখন বেয়াই হবে। তাঁদের সম্পর্ক আরো গাঢ় হবে।
সেদিন আকাশের সাথে সময় টা খুব ভালোই কাটালো তারার। আকাশকে এখন তার ভালোই লাগে। বারবার ফোন দেয় মিনিটে মিনিটে মনে হয় ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে
কি করছো! তারার রাগ আগে হলেও এখন হয় না।
আজ চারদিন হয়ে গেল তাঁদের বন্ধুত্ব হয়েছে।
তারাকে এখনো তার বাবা কিছু জানায়নি। তিনি জানে তারা রাজি হবে না। রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। তাই চুপচাপ সব কাজ করছে আরমান সাহেব আর কায়েস সাহেব।
চলবে।