সে কি জানে

সে কি জানে Season 2 ! Part- 25

২১.
— “মিরু তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না? উনি মিথ্যা বলছেন?”
চুপ করে রইলাম আমি। কি বলব তাকে? আমি তো নিজেই জানি না আমার বিয়ে হবে! এই মাত্র জানলাম। হুট করে কিভাবে বলব এটা সত্য নাকি মিথ্যা? উত্তরের আশায় ফের একই প্রশ্ন করল দিহান। তবে এবারও আমার জবাব শূণ্য। এতে মারাত্ত্বক ভাবে বিরক্ত রেয়ান। দিহানে অগচড়ে আমার কোমড়ে জোড়ে একটা চিনটি দেন উনি। খানিকটা লাফিয়ে উঠলাম এতে৷ পরক্ষনেই নিজেকে স্বাভাবিক রেখে রেয়ানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম। উনি চোখের ইশারায় কি যেন বলতে বলছেন আমায়। যা বুঝতে পেরে কেন যেন দিহানের দিকে তাকিয়ে বললাম…
— “উনি যা বলছেন সত্য বলছেন দিহান।”
দিহান হয়তো এমন উত্তর আশা করে নি। ইতোমধ্যে তার চোখে পানি জমাট বাঁধা শুরু করে দিয়েছে৷ হাসার চেষ্টা করল সে। রেয়ানের দিকে হাত বাড়িয়ে কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল….
— “কংগ্রেচুলেশন!”
দিহানের হাতের সাথে হাত মিলালেন রেয়ান। প্রতিউত্তরে বললেন…
— “থ্যাংকিউ!”
আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না দিহান৷ আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো সে। একবারও পিছনে ফিরে তাকালো না। হয়তো চোখের পানি দেখাতে চাচ্ছে না সে। আমি রুদ্ধবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না৷ ভালো বন্ধু ছাড়া কখনও কিছু ভাবি নি তাকে। আমি ভাবতাম সেও তাই! কিন্তু না। ও বোধ হয় বন্ধু থেকেও বেশি কিছু ভেবেছিলো আমায়৷ হয়তো ভালোবেসে ছিলো। ভাবতেই বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো। যেমনই হোক, বন্ধু হিসেবে দিহানের জন্য একটু হলেও মনে জায়গা আছে আমার। হয়তো তার জন্যই তার কষ্টে কষ্ট পাচ্ছি আমি!
দিহান যেতেই আমার থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়ালেন রেয়ান। শান্ত সরে বললেন…
— “তাহলে যাওয়া যাক?”
বলেই আমার দিকে নিজের হাত-টা বাড়িয়ে দিলেন উনি। একবার তার দিকে তাকিয়ে তার হাতের দিকে তাকালাম আবার। কিছু একটা ভেবে নির্দিধায় ধরে ফেললাম হাত। এতে মুখের হাসি আরও প্রসস্ত হয়ে গেল রেয়ানের। হাত টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললেন….
— “চলো।”

চোখের পানি মুছে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে দিহান। মাঠের একটা বেঞ্চে বসে হাত দু’টোতে মুখ লুকিয়ে রেখেছে সে। হয়তো কাঁদছে! একটু পরই সেখানে উপস্থিত হয় জেনি! সকালে সে যে বেঞ্চে বসে ছিল ঠিক সেই বেঞ্চেই বসে আছে দিহান। জেনির কেনো যেন মনে হলো দিহানের মন খারাপ। তাকে সঙ্গ দিতে মন চাইলে তার। হুট করে দিহানের পাশে বসে পরল সে। শান্ত কণ্ঠে বলল…
— “মন খারাপ?”
চরম বিরক্তি নিয়ে মাথা তুলে পাশের মেয়েটির দিকে তাকালো দিহান৷ যখন দেখলো মেয়েটি জেনি, বিরক্তিটা যেন আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেল। তবে কিছু বলল না। আগের নেয় বসে রইল। জেনি আবারও বলল….
— “কি হলো কিছু বলছেন না যে?”
— “তোমার সমস্যা কি মিস? সবসময় ন্যাকামি করার আর জায়গা পাও না? আমার সাথেই করতে হবে?”
দিহানের কথায় রাগ করল না জেনি। বরং হাসলো। হেসে হেসে বলল….
— “ভার্সিটির একটু দূরেই একটা লেক আছে। আমার মনে হয় আপনার মন খারাপ। সেখানে গেলে আপনার ভালো লাগতে পারে। যাবেন?”
প্রথমে মনে হলো গেলে মন্দ হয় না। পরক্ষনেই ভাবলো জেনির সাথে যেতে হবে তার। যা সে মোটেও চায় না। পরে দেখা যাবে ন্যাকামি করে করে মেয়েটা তার মাথা খেয়ে ফেলেছে। তখন মন ভালো হওয়ার থেকে খারাপই হবে বেশি। তাই দিহান সিধান্ত নিলো সে যাবে না। তবে মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই জেনি বলে উঠে…
— “চিন্তা করবেন না, ন্যাকামি করব না একদম। তবে একটা গল্প শোনাবো। আপনি নির্দিধায় যেতে পারেন আমার সাথে।”
ভ্রুঁ কুঁচকে এলো দিহানের। প্রথমত সে জানলো কিভাবে দিহান কি ভাবছে। দ্বিতীয়ত তাকে গল্প কেন শোনাবে জেনি? কিন্তু কোথাও যেন একটা কৌতূহল জেগে উঠে দিহানের। না চাইতেও বলে উঠে….
— “কি গল্প শোনাবে? আর কেনই বা শোনাতে চাইছো?”
— “লেকে গিয়ে বলব। এখন চলুন আমার সাথে।”
প্রতিউত্তরে দিহানকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না জেনি। হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো ভার্সিটির বাইরে।
২২.
দীঘিকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে আবদ্ধ। ঠিক খাইয়ে দিচ্ছে না রিতিমতো যুদ্ধ করছে। খাবার নিয়ে যুদ্ধ। একের পর এক খাবার ঠেসেঠুসে দীঘির মুখে পুড়ে দিচ্ছে সে। এতে যেন দীঘির কান্না করে দেওয়ার মতো অবস্থা। খাওয়া শেষে এক রকম কাঁদো কাঁদো ভাবে দীঘি আবদ্ধকে বলল….
— “আপনি একটা নির্দয় মানুষ। একটুও দয়া হলো না আপনার? আমাকে এভাবে নাকে-মুখে ঠুসেঠুসে খাবার খাওয়ানো উচিত হলো আপনার?”
— “যা করেছি ভালো করেছি। আমার কথা না শুনলে এমনই হয়। পরেরবার খাবার নিয়ে ন্যাকামি করবি তো এর চেয়েও কঠিন শাস্তি পেতে হবে তোর।”
— “আপনার এসব শাস্তি পেতে পেতে একদিন আমি মরেই যাবো…”
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই হুট করে আবদ্ধ দীঘির গালে চড় দিয়ে বসলো। আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠলো দীঘি। পরক্ষনে কি হয়েছে বুঝতে পেরে কেঁদে দিলো সে। এতে ভ্রুঁক্ষেপ নেই আবদ্ধের, সে তো রাগে ফুঁসছে। আবদ্ধের এমন রাগ দেখে কান্নাটা আরও বেড়ে গেলো দীঘির। মনে মনে ভয় লাগছে তার। আবদ্ধ কি তাকে আবার চড় মারবে? আচ্ছা এমন মারার কারন কি? সে কি করেছে? দীঘিকে অবাক করে দিয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আবদ্ধ। আচমকা জড়িয়ে ধরায় দীঘির হাতের স্যালাইনে টান পড়ে যায়। অনেকটা ব্যথা পেল সে। তবে কিছু বলল না। শুধু বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো আবদ্ধকে।
কিছুক্ষন পরে বুঝতে পারলো আবদ্ধ কাঁদছে। চমকে উঠে দীঘি। আবদ্ধের এমন ব্যবহারের কারন সে মোটেও বুঝতে পারছে না। এসময় আবদ্ধ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে উঠে….
— “আমাকে ছেঁড়ে যাস না পিচ্চি। আমি থাকতে পারবো না। তোর মৃত্যুতে জেন্ত লাশ হয়ে পড়ব। প্লিজ এমন কথা আর বলবি না।”
— “আআমি তো এমনি দুষ্টামী করে বলেছিলাম আবদ্ধ।”
— “আর এমন দুষ্টামী করিস না পিচ্চি। নিজেকে সামলাতে পারছি না।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার, খুব!”
আবদ্ধের এরুপ কথায় বারংবার অবাক হচ্ছে দীঘি। বিস্ময় ভরা কন্ঠে সে আবদ্ধকে বলে…
— “এভাবে কেন বলছেন আবদ্ধ? সত্যি করে বলুন তো কি হয়েছে?”
জবাব দিলো না আবদ্ধ। আগের চেয়ে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল দীঘিকে। কিছুক্ষন পর আযানের প্রতিধ্বনি আবদ্ধের কানে বেজে ওঠে। সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায় সে। ডান হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে এগিয়ে যায় দরজার দিকে। কয়েক কদম গিয়েই আবার থেমে দাঁড়ায় আবদ্ধ। গম্ভীর কণ্ঠে বলে…
— “মিরাপুকে পাঠাচ্ছি কেবিনে। চিন্তা করিস না।”
চলে গেল আবদ্ধ। তবে একঝুলি প্রশ্ন দিয়ে গেল দীঘির কাছে। মস্তিষ্কে বারবার হানা দিচ্ছে সেগুলো। বারবার মনে হচ্ছে আবদ্ধ তার কাছে কিছু লুকাচ্ছে। সামান্য মাথা ঘুরানোর জন্য হাসপাতালে আনা, আবার হাসপাতালে এতদিন থাকতে বলা, হাসপাতাল বদল করা, আবদ্ধের এমন আচরণ, সবকিছু গুলিয়ে ফেলছে দীঘি। সামান্য মাথা ঘুরানোর জন্যই কি এসব? নাকি সত্যিই আবদ্ধ কিছু লুকাচ্ছে তার কাছ থেকে? ভাবতে ভাবতে একসময় দীঘির মাথায় প্রচন্ড রকমের ব্যথা শুরু হয়ে যায়। যে ব্যথা সহ্য করার নয়। মাথার দু’দিকে চেপে ধরে নিচু হয়ে বসে আছে সে।
এমনসময় কেবিনে ঢুকলাম আমি। দীঘিকে এভাবে দেখে অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম। কেবিন থেকে বের হয়ে রেয়ানকে যতদ্রুত সম্ভব খোঁজা শুরু করি। খানিক সময়বাদ পেয়েও যাই। তাকে দীঘির কথা বলতেই উনি একটা নার্সকে নিয়ে এগুতে লাগলেন কেবিনের দিকে।
দীঘিকে এমন অবস্থায় দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালেন রেয়ান। পরক্ষনেই দীঘিকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। দীঘিও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে সেগুলোর উত্তর দিচ্ছে৷ রেয়ান কথা বলার এক পর্যায়ে কৌশলে দীঘির হাতে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে দেন।
ইঞ্জেকশন দেওয়া মাত্রই দীঘির ঝাপসা চোখ যেন আরও ঝাপসা হয়ে গেল। সাথে ধীরে ধীরে কমতে লাগলো দীঘির মাথা ব্যথা। চোখে নেমে আসলো রাজ্যের ঘুম। যেন কত বছর ঘুমায় না সে।
দীঘি জ্ঞান হারাতেই রেয়ান নার্সের দিকে তাকালেন। চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করতেই নার্স দীঘিকে বিছানায় ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। নার্স বের হতেই রেয়ান হামি দিতে দিতে আড়মোড়া ভাঙ্গলেন। পড়নের সাদা এপ্রোন-টা খুলে পাশের চেয়ারে রাখতে রাখতে বলে উঠলেন….
— “কালকে রাতে তোমাকে দেখতে দেখতে আর ঘুমাতে পারি নি আমি। ঘুমানো প্রয়োজন খুব। মাথা ব্যথা করছে। এভাবে কাজ করা সম্ভব না।”
বলতে বলতেই আমার হাত টেনে সোফায় বসিয়ে দিলেন উনি। কোলে মাথা রেখে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন শক্ত ভাবে। ঘুমু ঘুমু ভাবে বললেন….
— “বরাবর ৩ঘন্টা ঘুমাবো আমি। এ-র আগে ডাকবে না আমায়। আবদ্ধ আসলেও না। ও সকালে দেখেছে আমাদের এভাবে। তাই লজ্জা পেয়ে যদি কোনো টাল-বাহানা করো, তাহলে খবর আছে তোমার।”
থামলেন রেয়ান। আমাকে আরেকটু শক্ত জড়িয়ে ধরে আবেগী কণ্ঠে বলে উঠলেন….
— “তুমি এত নরম কেন মরুভূমি। একদম তুলার মতো তুলতুলে৷ ইচ্ছে করে তোমাকে একদম বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলতে।”
দেওয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। তার এসব লাগামহীন আর অর্থহীন কথাবার্তার কোনো প্রতিউত্তর নেই আমার কাছে। তাই প্রতিবারের মতো এখনও চুপ করে আছি। নিজের অজান্তেই বাম হাত-টা আলতো করে রেয়ানের মাথায় রেখে হাত বুলাতে লাগলাম। এতে যেন সে আরও আরাম পেল। তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে!
২৩.
লেকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে দিহান আর জেনি। প্রায় আধাঘন্টা হয়ে গেছে তাও জেনির মুখ থেকে একটা “টু” শব্দও বের হয় নি। এতে চরম বিরক্ত দিহান। বিরক্তি নিয়ে জেনিকে সে বলল….
— “তুমি কি এখানে বোবা থাকার জন্য এসেছো? কথা বলছ না কেন? আমি কিন্তু বিরক্ত হচ্ছি। এতক্ষন এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না আমি।”
হাসলো জেনি। একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল…
— “জানেন দিহান, ছোট বেলায় মা-বাবার সঙ্গ খুব কম পেয়েছি আমি। বলতে গেলে একদমই পাই নি। কিন্তু আমি যখন যা চাইতাম তখনই তারা আমাকে সেসব এনে দিত। সেটা যদি অন্য কারো জিনিস হতো তাহলে ছিনিয়ে নিয়ে হলেও নিজের কাছে রাখতে চাইতাম। এমন বহু জিনিস আছে আমার কাছে। যেগুলো অন্যের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছি আমি। যখন ক্লাস 7 কিংবা 8-এ পড়তাম তখন হিন্দি আর ইংরেজি মুভির অনেক নেশা ছিল আমার। নায়িকাদের ছোট ছোট পোশাক আমার অনেক ভালো লাগতে। বাবা মাকে একদিন বললাম আমাকে ওসব জামা কিনে দিতে, তারাও কিনে দিলো। তখন থেকে এমন পোশাক পড়ি। আপনাদের ভাষায় অশ্লীল পোশাক!”
থামলো জেনি। দিহানের দিকে তাকিয়ে হাসলো একবার। দিহান বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে জেনির দিকে। কৌতূহল নিয়ে বলল….
— “তারপর?”
— “তারপর আবার কি। জেদ,রাগ আর ইগো নিয়ে একরকম এটেটিউটের সাথে বড় হতে লাগলাম আমি। এরপর একদিন এক হাসপাতালে রেয়ানের সাথে প্রথম দেখা। রেয়ানকে চিনেন তো? আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের বিএফ! ওকে প্রথম দেখাতেই আমি ক্রাশড। আর সেদিন থেকে নানাভাবে রেয়ানকে ইম্প্রেস করার চেষ্টা শুরু করি। আগে থেকেও আরও ছোট ছোট জামা পড়ে ওর সামনে যেতাম, এমনকি রুমডেটের অফারও করি। বাট ও সেসবে পাত্তা দিতো না একদম। আমার দিকে ফিরেও তাকাতো না। অনেক সময় বোঝাতো যে সে আমাকে ভালোবাসে না,পছন্দ করে না। আমি যখন বুঝতে চাইতাম না তখন ধমক দিয়ে বোঝাতো। তাও আমি ওর পিছু পিছু ঘুরতাম। তার কোনো মেয়ে ফেন্ড্রকে ওর সাথে সহ্য করতে পারতাম না। রাগ লাগতো অনেক। বিভিন্নভাবে অপমান করার চেষ্টা করতাম মেয়েগুলোকে। তেমনি মিরাকেও অপমান করি। আপনার সামনেই তো একদিন করেছিলাম। মনে আছে?”
মাথা ঝাঁকালো দিহান। জেনি আবার বলল…
— “কালকে আবার দেখা হয়েছিল মিরার সাথে আমার। তখন ওকে পতিতা বলেছিল আমি।”
টনক নড়ল দিহানের। মুহুর্তেই রেগে গেল সে। জেনির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বলল….
— “সাহস কিভাবে হয় তোমার ওকে পতিতা বলার? ওকে চিনো তুমি? ও কেমন ধারণা আছে তোমার? বাজে ব্যবহারের একটা লিমিট আছে। এত বাজে মানুষ কেমনে হয়?”

চোখ থেকে কয়েকফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল জেনির। আসলেই সে খারাপ। অনেক খারাপ! কষ্টের মাঝেও হাসার চেষ্টা করল জেনি। বলল…
— “আমার এমন কথা শোনার পর আপনার থেকেও বেশি রেগে গিয়েছিলো রেয়ান। কাল রাতে আমার বাসায় এসে আমাকে অনেক অপমান করে। চড়ও মারে। জীবনে প্রথম কেউ চড় মারে। এরপরও যখন রেয়ান শান্ত হয় নি, তখন ড্রইংরুমের সব জিনিস ভেঙ্গে ফেলে সে। জানেন, খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তখন। আমার দাদুর শেষ স্মৃতি ড্রইংরুমে সাজিয়ে রেখেছিলাম। সেটা ভেঙ্গে ফেলে রেয়ান। বিশ্বাস করেন, তখন বুঝে ছিলাম আসল কষ্ট কাকে বলে৷ আমার দাদু! শুধু সেই আমাকে ভালোবাসত, আদর করত,শাষণ করত। তার শেষ স্মৃতিটাও হারিয়ে ফেলেছি আমি। আমিও তো মানুষ। সত্যিই কষ্ট পেয়েছি আমি। তবে কালকে রাতের থেকে কেন যেন মনে হচ্ছে রেয়ান কখনও আমাকে ভালোবাসবে না।”
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দিহানের দিকে ঘুড়ে দাঁড়ালো জেনি। শান্ত সরে বলল…
— “আপনাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করব। উত্তর দিবেন কি?”
— “কি প্রশ্ন?”

— “আমি যা করেছি তা কি ভুল করেছি? আমার কি ক্ষমা চাওয়া উচিত? আচ্ছা রেয়ানকে কি আমি কখনও ভালোবেসেছিলাম? নাকি সেটা শুধুই আমার আবেগ?”
দিহান একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বলল…
— “প্রথমত তুমি যা করেছো সেটা অবশ্যই ভুল। কারো সম্পর্কে না জেনে না বুঝছে এমনটা বলা মোটেও ঠিক হয় নি তোমার। দ্বিতীয়ত তোমার ক্ষমা চাওয়া উচিত। আর সবশেষে বলব তুমি রেয়ানকে কখনও ভালোই বাসোনি। আর না রেয়ানের প্রতি তোমার কোনো আবেগ ছিল। যেটা ছিল সেটা শুধুই আকর্ষণ, যা সময়ের সাথে সাথে চলে যেত। ভালোবাসা কখনও জোর করে হয় না মিস। তবে তুমি চেষ্টা করতে পারো। নিজের সবটুকু দিয়ে ওর মন জয় করার চেষ্টা করো। কিন্তু তোমার ভালোবাসার মানুষের জীবনে যদি অন্য কেউ এসে যায়। সে যদি তাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসে এবং তোমার ভালোবাসার মানুষও যদি তাকে ভালোবাসে তাহলে সেখান থেকে সরে যাওয়াই উত্তম। কেননা সে কখনই তোমার হবে। তাছাড়া তুমি যদি তাকে সত্যিই ভালোবাসো তাহলে সেক্রিফাইস জিনিসটা তোমার মধ্যে থাকতে হবে। তার খুশিতেই তুমি খুশি, আর তার দুঃখেই তুমি দুঃখী।”
থামলো দিহান। সম্পূর্ণ কথাগুলো বুকের বাম পাশে এক হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলেছে সে। তার চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে মিরার মুখশ্রী। সত্যিই ভালোবেসেছিল সে তাকে। তবে হয়তো ভাগ্য চায় না তারা এক হোক। যা কষ্ট হলেও মেনে নিয়েছে দিহান।
এদিকে দিহানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জেনি। দিহানের প্রত্যেকটা কথা খুব মন দিয়ে শুনেছে। তার প্রশ্নের উত্তরও পেয়েছে সে। রেয়ানকে কখনও ভালোবাসে নি জেনি। তবে বাইরে থেকে সে যতই ভালো হওয়ার চেষ্টা করুক না কেন তার ভেতরে কি চলছে সেটা শুধু সে-ই জানে। খুব করে চাইছে জেনি যেন মিরার সাথে রেয়ানকে আর কখনও না দেখুক। নাহলে খুব বড় ধরণের কিছু করে ফেলতে পারে সে। খুবই ভয়ংকর কিছু!
.
.
#চলবে🍁