ভালোবাসার অন্যরুপ ! Part- 15
ইসমি পরলো ঠিকই কিন্তু সেটা মেঝেতে না অর্নিলের বুকের উপর, অর্নিল ইসমির কোমর জড়িয়ে ওকে ধরে নিলো শক্ত করে আর ইসমি অর্নিলের বুকের শার্ট চোখ বুজে খামচে ধরলো।
অর্নিল তো একদৃষ্টিতে ইসমির মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে ইসমি কান্না-কাটি করেছে, মুখটা লাল হয়ে রয়েছে, চোখ টাও সামান্য ফুলেছে, এসব দেখে অর্নিলের মনে একটু আশার আলো জাগলো।
অর্নিল– (মনে মনে– আমার করা ভুল টা আমি খুব শীঘ্রই সুধরে নেবো ইসমি, আমি জানি আমি যেটা করেছি তোমার সাথে সেটা অন্যায় তাই এর শাস্তি ও আমাকে পেতে হবে। আমি সব শাস্তি মাথা পেতে নেবো তোমার, কিন্তু সেটা তোমাকে নিজের কাছে রেখে। আমার কাছে থেকে তুমি আমাকে যা খুশি শাস্তি দিয়ো আমি মেনে নেবো, তোমাকে নিজের থেকে দুরে আমি কিছুতেই যেতে দেবো না।)
ইসমি– ছাড়ুন আমাকে।
অর্নিলের ইসমির কথায় ঘোর কাটলো আর সঙ্গে সঙ্গে হাতের বাঁধন আলগা করতেই ইসমি ঝট করে সরে গিয়ে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো, অর্নিল এখনো অসহায় দৃষ্টি নিয়ে ইসমির দিকে তাকিয়ে আছে। সে সময় আমান আর অর্নিলের আম্মু এসে দাঁড়ালো আর ইসমি বললো।
ইসমি– আন্টী কিছু কি হয়েছে?? নাহ মানে জিজু হঠাৎ ডাকলো আমায় তাই জিজ্ঞেস করছি।
আম্মু– হম অনেক কিছুই হয়েছে যা তুই আর অর্নিল মিস করে গেছিস। এতো লেট করলি কেনো আস্তে??
ইসমি– আব, একটু কাজ ছিলো আন্টী তাই।
আম্মু– অর্নিল কে তো ঘটনা ওর ভাই বলেছে, তোকে না হয় আমিই বলি কারণ আমান তো মার খেতে থুক্কু পালাতে ব্যস্ত।
আম্মুর কথা শুনে ইসমি হেসে দিলো ফিক করে, তারপর ইসমি কে পুরো ঘটনা বলতে শুরু করলো আম্মু।
অন্যদিকে,
মীরা– আমানননন!! খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম, দাঁড়ান বলছি। আপনার সাহস কি করে হলো আমার সাথে নাটক করার??
আমান– বউউউউ!! তোমার ভালোর জন্যই নাটক টা করেছি, এই বাচ্চা ছেলেটার উপর একটু রেহেম করো।
মীরা– আজ আমি আপনাকে নাটক করার শাস্তি দিয়েই ছাড়বো, মেরেই ফেলবো আপনাকে।
আমি বেডের একপাশে আর আমান বেডের একপাশে দাঁড়িয়ে আছি, আমার কথাটা শুনে আমানের মুখে একটা দুষ্টু হাসি খেলে গেলো উনি বললেন।
আমান– এতো দিন নীতার সাথে গেম খেললাম এখন না হয় তোমার সাথে একটু অন্য ধরণের গেম খেলি, ইউ নৌ আই অ্যাম আ গুড ক্রিকেটার। (বাঁকা হেসে)
মীরা– মানে?? এখন কি ক্রিকেট খেলার সময় নাকি?? আপনাকে তো আমি আজ..
আমান– আগে কাছে তো এসো তারপর না হয় মারবে, এমনিতেই অনেক আগেই তুমি আমায় ঘায়েল করে ফেলেছো, এখন আবার যখন মারতে চাও নো প্রব্লেম, আগে তুমি মারো তারপর না হয় আমি…
মীরা– আ..আ..আপনি ক..কি?? আর এগোচ্ছেন কেনো??
আমান– কেনো মীরু বেবস! তুমিই তো বললে তুমি আমাকে মারবে আর আমি গেম খেলব, কাছে না আসলে সেটা কি করে পসিবল হবে?? বায় দ্য ওয়ে আগের দিন তুমি নিজেই আমার কাছে এসে আমাকে পারমিশন দিয়ে দিয়েছো। (দুষ্টু হেসে বেডের উপরে উঠে আমার কাছে এগিয়ে আসছেন)
মীরা– (মনে মনে– উফফ ইনি এতো লাগাম ছাড়া কথা বলেন কেনো? ওটা তো, ওটা তো, উফ ওটা তো আমি এমনিই…কেনো যে গেছিলাম কে জানে, এখন কি করে ছাড়া পাবো?? কেটে পরি বরং।) আব, আ..আমি আসছি।
আমি চলে যেতে নিলেই আমান আমার ডান হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে যেতেই আমি চিৎকার করে উঠি।
মীরা– আহহহ!!
আমান– হোয়াট হ্যাপেন মীরু?? ক..কি হয়েছে?? দেখি!!
মীরা– (ওনার থেকে হাত ছাড়িয়ে) কিছু না ছাড়ুন আমায়।
ওনাকে ছাড়ার কথা বলতেই উনি আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন।
আমান– হাত টা দেখাও!! আই সেইড শো ইউর হ্যান্ড ড্যাম ইট!! (ধমকিয়ে)
আমি ধমক খেয়ে গুঁটিয়ে গেলাম আর উনি আলতো করে আমাকে নিজের কোলে বসিয়ে হাত টা নিজের হাতে নিতেই আমার হাতের লাল হয়ে যাওয়া জায়গা টা চোখে পরলো ওনার। উনি আমার হাতের দিকে তাকিয়েই বললেন।
আমান– ক..কি করে হ..হলো এটা??
মীরা– (নিশ্চুপ)
আমান– আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি?? (শান্ত ভাবে)
মীরা– তখন কফি টার অর্ধেকটাই আমার হাতে পরে গেছিলো।
আমান– তখন বলোনি কেনোওওওও?? (চিৎকার করে আমার হাতের দিকে তাকিয়েই)
মীরা– আ..আসলে আপনি নীতা কে নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত ছিলেন, ওখানে আমি কি আর বলতাম, নাটক করতে করতে আপনি আমাকে তো ভুলেই গেছিলেন। (অভিমান করে)
উনি কিছু বললেন না আমার কথাগুলো শুনে, আমার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো তখনের কথাটা মনে করে, যতই নাটক হোক, আমি মানতে পারি না ওনাকে নীতার সাথে। আমার ভাবার মাঝে আমার হাতে আমি তরল পদার্থ অনুভব করলাম, তাকিয়ে দেখি আমার হাতে পোড়া জায়গাটায় ফোঁটা ফোঁটা পানি আর উনি এখনও আমার হাতের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন। অর্থাৎ উনি কাঁদছেন আমি ওনার কাঁধে বাম হাত রেখে ওনাকে ডাকতেই উনি ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
মীরা– আমান!!
আমান– আ..আই অ্যাম স্যরি মীরু! ত..তখন আ..আমি খেয়াল করিনি কফি, কফিটা…
ওনাকে কাঁদতে দেখে আমি অবাক উনি ঠিক বাচ্চাদের মতো কাঁদছেন, আমি কি বলে সান্তোনা দেবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
মীরা– আমান! আমান আপনি এরম ভাবে কাঁদবেন না। আমি ঠিক আছি। ওষুধ লাগালেই ঠিক হয়ে যাবে।
আমান– ওয়েট।
হঠাৎ করেই উনি আমাকে বেডে বসিয়ে উঠে গেলেন আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এলেন, আর আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অয়েটমেন্ট লাগিয়ে দিতে লাগলেন, অয়েন্টমেন্ট লাগানোর কারণে আমার হাত জ্বলতে শুরু করলো, উনি সেটা বুঝতে পেরে ফুঁ দিতে লাগলেন আমার হাতে, কতটা যত্ন করে আমার হাতে উনি অয়েন্টমেন্ট লাগাচ্ছেন। অয়েন্টমেন্ট লাগানো শেষ হতেই উনি আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার ঘাড়ের পিছনে হাত দিয়ে আমার ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরলেন। আমি কি রিয়াক্ট করবো বুঝতে পারছি না। উনি আস্তে আস্তে আমার কোমর জড়িয়ে বেডে শুইয়ে দিলেন, আমিও রেসপন্স না করে পারলাম না, বাম হাত দিয়ে ওনার শার্টের কলার শক্ত করে ওনাকে আরো কাছে টেনে নিলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর,
উনি আমার ঠোঁট ছেড়ে আমার কপালে গভীর ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালেন, আমি তখনো চোখ বুঁজে রয়েছি। এর মধ্যেই উনি আমার গালে ঠোঁট ছোঁয়ালেন তারপর কোনো সাড়া না পাওয়ায় আমি চোখ খুলতেই উনি আমার ঠোঁটে গভীর ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে মুহুর্তে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। আমি হতবাক!
মীরা– এই লোকটার মতি গতি কি আমি কোনদিন বুঝতে পারবো না?? কি চায় উনি?? আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলো। ধুর ভালো লাগে না।
ইসমি– মীরা! আসবো??
মীরা– সুমি তুই?? আয়!
ইসমি– জিজু ওভাবে বেরিয়ে গেলো কেনো?? তোদের মধ্যে কি আবারও ঝগড়া হয়েছে নাকি??
মীরা– ধুর ঝগড়া কেনো হবে উনি তো আমায়..
ইসমি– উনি তো তোকে কি??
মীরা– আব, কিছু না। (মনে মনে– উফ মীরা কি যে বলতে যাচ্ছিলিস না তুই! ধ্যাত!) তখন ওভাবে ধাক্কা মারায় তুই পরে যাসনি তো??
ইসমি– বাহ বা! মনে আছে তাহলে আমাকে ধাক্কা মেরেছিলি??
মীরা– ওহ! বল না?? ঠিক আছিস তুই??
ইসমি– তখন আমি পরে যাইনি। অর্নিল আমাকে ধরে নিয়েছিল।
মীরা– সুমি??
ইসমি– হমম (আনমনে)
মীরা– অর্নিলের সাথে তোর কিছু হয়েছে?? তুই তো আগেরদিন আমায় জানালি যে তুই অর্নিল কে আর অর্নিল তোকে..
ইসমি– ভালোবাসে না!! অর্নিল আমাকে ভালোবাসে না মীরা। (বলেই কাঁদতে লাগলো)
মীরা– (মনে মনে– এই কারণেই সেদিন অর্নিল আমাকে বলেছিল যে চিন্তার অনেক কারণ আছে। অর্নিল ইচ্ছে করে সুমির মন নিয়ে খেললো?? এটা অর্নিল কি করে করতে পারলো?? একটা মেয়ের মন নিয়ে এভাবে খেলতে ওর একবারও বিবেকে বাঁধল না?? আমার উপর রাগের প্রতিশোধ এভাবে আমার বোনের উপর কেনো নিলো আমাকে জানতে হবে।) সুমি..কি হয়েছে পুরো টা বল।
আরেকদিকে,
ঘুটঘুটে অন্ধকার একটা ঘর আর সেখানে বড়ো করে আমানের ছবি টানানো। ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক ব্যক্তি, হাতে একটা রেড মার্কার পেন। মার্কার পেন টা নিয়ে সে এগিয়ে গেলো আমানের ছবির দিকে আর বড়ো করে ক্রস করে দিলো।
ব্যক্তি– খুব তারাতাড়ি তোমার সাম্রাজ্যের অবসান ঘটবে মিস্টার আমান খানননন!! হা হা হা হা! (লোকটি বিকট শব্দ করে হাসতে লাগলো।)