ভালোবাসব যে তোকে

ভালোবাসব যে তোকে !! Part- 05

মৌ কলেজে আসার পথে অহনাকে আজকের সব ঘটনা বলে।অহনা তো সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ।
“দোস্ত ইউ আর দা বেস্ট।তোর সাহস আছে বলতে হবে তুই ভাইয়ার সামনে ওভাবে ছিলি কেমনে!! আমি হলে আমার হাত পা কাঁপতে কাঁপতে শেষ হয়ে যেতো।”
“আর বলিস না।যখন তোর ভাইয়ার সামনে ছিলাম তখন বেশি ভয় লাগেনি।কিন্তু রুম থেকে বের হয়ে আসার পর এমন ভয় লাগছিলো… কি আর বলবো।বুঝলাম না এমন কেনো হলো।”
“কিন্তু যাই বলিস না কেনো। ভাইয়ার মাথা থেকে যে এই ঘটনা সহজে যাবে না তাই জানি।”
“তা তো অবশ্যই। এই জন্য তো এমন করলাম। এখন শুধু তার মনে মাথায় আমিই ঘুরবো। ঐ মনা না।আহ কি যে ভালো লাগছে।…..”
“আচ্ছা ক্লাস এ চল।দেরি হয়ে যাবে নে।”
পদার্থবিজ্ঞান ক্লাস চলছে।মৌ আর অহনা মাঝের সারির বেন্ঞ্চ এ বসেছে।
ক্লাস এর মাঝে হঠাৎ অহনা হেসে উঠে।একটু আস্তে হাসার ফলে শুধু মৌ আর আশেপাশের কয়েকটা মেয়ে শুনে।
মৌ একটু রেগে গিয়ে বলে,
“ঐ অহনা এভাবে পাগলের মতো হঠাৎ করে একা হাসছিস কেনো??”
“আর বলিস না রে দোস্ত।আমার না হঠাৎ করে তোর আর ভাইয়ার আজকের সকালের সিচুয়েশনটা মনে এসে গেলো।যাস্ট ইমাজেন করছিলাম আমি তাই ই এতো হাসি পাচ্ছে আমার।”
“ইয়া আল্লাহ।এই মেয়েটা আস্ত পাগল।আর এভাবে হাসি দিস না রে।।স্যার বুজতে পারলে ক্লাস থেকে শিউর বের করে দিবে।”
অহনা ঠোঁটের উপর আঙুল দিয়ে বললো।,”এই নে চুপ হলাম।”
৫মিনিট পর আবারো অহনা হেসে উঠলো।এবার একটু জোরেই সে হেসে ফেলেছে।যা স্যার এর কান পর্যন্ত পৌঁছে যায়।স্যার রাগি দৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকায়।কিন্তু অহনা সে দিকে খেয়াল করেনি।সে তো হেসেই চলছে।
মৌ মনে মনে বলছে,
“আজকে আমি গিয়েছি একেবারে।স্যার যে কি রেগে আছে। আর এই মেয়ের মাথা গেছে নাকি!!!”
স্যার রেগে বললেন,
“এই যে অহনা,স্ট্যান্ড আপ।এখানে কি কোনে কৌতুক চলছে নাকি যে তুমি এতে হাসছো!!নাকি আমি বিয়ের কোনে মজার লাইন বলেছি??”
অহনা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
“না স্যার তেমন কিছু না।আসলে মৌ একটা ফানি কথা বলেছিলো তো তাই হাসছি।”
মৌ তো এ কথা শুনে পুরাই থ বনে গেলো।স্যার মৌ কে এবার দাঁড়া করালো।
“মৌ,ক্লাস এ এসব বলো কোন সাহসে তুমি!! এসব ক্লাসের বাইরে বলে জানো না তুৃমি??”
মৌ করুন সুরে বললো,
“স্যার আমি এমন কিছুই বলি নি।”
এদিকে অহনা তো এসব দেখে মুখ টিপে হেসে যাচ্ছে।
“তোমার সাহস তো কম না!! ভুল করেও স্বীকার করছো না!! যাও দুজনেই ক্লাস থেকে বের হয়ে যাও।
মৌ বললো, “কিন্তু স্যার,…”
“নো মোর ওয়ার্ডস। এখনি বের হয়ে যাও।”
মৌ আর অহনা মাথা নিচু করে বের হয়ে যায়।
“ফাজিল, বেয়াদপ মহিলা।তের জন্য আজকে এমন অপমানিত হতে হলো।আর এতো মিথ্যা বললি কেনো??”
“ওমা মিথ্যা বললাম কই। ঠিকই তো বলেছি।ভাইয়া আর তোর মধ্যে যা হলো তা ফানি নয়তো আর কি। ”
“উফ উফ কি চিন্তা করে যে আমি তোকে ঐসব বলতে গিয়েছিলাম।নিজের মাথায় নিজেই বারি দিতে ইচ্ছা করছে।”
“আরে আমার বান্ধবীরে।।যাস্ট চিল ইয়ার। জীবনে কিছু কিছু ঘটনার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। আমাদের আজকে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিজ্ঞতা হলো।
এতো কিছু না ভেবে চল ক্যান্টিনে গিয়ে বসি।”
“হুম চল।কি আর করার। অকাম যখন করছিস ভুগতে তো হবেই।”
এরপর তারা দুজন গিয়ে ক্যান্টিনে বসে।
এদিকে আয়ান অফিসে আসার পথে,অফিসে বসে শুধু মৌ এর কথা চিন্তা করছে। আজকের সকালের ঘটনার কথা চিন্তা করে আনমনে তার মুখে হাসি ফুটলো।তার চোখের সামনে শুধু মৌ এর চেহারার ভাসছে। সে নিজের কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না।
হঠাৎ আয়ানের ফোন বেজে উঠলো।ফোনের স্ক্রিনে মনার নাম ভেসে উঠলো।আয়ান তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করলো।
“আয়ান বেবি,তুমি তো আমাকে ভুলেই গিয়েছো।আজ ২/৩ দিন আমাকে ফোনই দেওনি তুমি।কেনো?”
“আসলে মনা।কাজের কিছু প্রেশার ছিলো। তাই আরকি ফোন দেয়া হয়নি।”
“ওহ এখন আমার চেয়ে কাজ বড় হয়ে গেলো!আমাকে তো তুমি ধীরে ধীরে ভুলেই যাচ্ছো।”
“আরে না তেমন কিছু না।”
“তো তেমন কি হুম? আমি কিছু জানি না। তুমি এখনই আমার সাথে রেস্টুরেন্ট এ দেখা করবে।আমি ঠিকানা মেসেজ করে দিচ্ছি।”
“আচ্ছা আচ্ছা দেখা করবো। অল্প কিছু কাজ আছে।শেষ হলেই রওনা দিচ্ছি।”
“আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসবা।”
বলে মনা ফোন রেখে দিলো।আর আয়ান কাজ সেরে রেস্টুরেন্ট এর উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলো।
মৌ আর অহনা ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য হাঁটছে।কিন্তু তাদের পথ আগলে দাড়াঁলো তুহিন।
“হাই মৌ।কেমন আছো??”তুহিন তার সাঙ্গপাঙ্গদের বললো,আরে তোরা হাবার মতো দাঁড়ীয়ে আছিস কেনো? ভাবিকে সালাম দে।”
এরপর তুহিন এর সাঙ্গপাঙ্গ মৌ কে সালাম দিলো।
মৌ সলামের জবাব দিলো।অহনা বলে উঠলো,
“এই হচ্ছেটা কি হুম??এটা আমার ভাবি বুঝছেন আপনি?”
তুহিন অবাক হয়ে বললো,
“তোমার ভাবি মানে??”
“আমার ভাবি মানে আমার ভাইয়ের স্ত্রী মৌ।”
“কি বলছ এসব!!!কবে বিয়ে হলো মৌ এর???”
“সেটা আপনার জানতে হবে না। যেহুতু জেনেছেন যে মৌ বিবাহিত তাই তার থেকে দুরে থাকবেন আপনি।”
তুহিন মৌ এর হাত ধরে বললো,”বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে।ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করবে।”
এদিকে মৌ এর হাত তুহিন ধরায় ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে যায়।
অহনা আর মৌ দুজনেই চেষ্টা করছে তুহিনের থেকে মৌ এর হাত ছাড়ানোর।কিন্তু পারছে না।
তখনই আয়ান এসে তুহিন এর হাত জোরে চেপে ধরলো।ব্যাথায় সে মৌ এর হাত ছেড়ে দিলে।
আয়ান মনার সাথে দেখা করার জন্য রেস্টুরেন্ট এ যাচ্ছিলো তখনই মৌ আর অহনাকে দেখে সে।তাই গাড়ী থেকে নেমে পরে।
আয়ান প্রচ্ন্ড রেগে আছে।সে তুহিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“তুই কোন সাহসে মৌ এর হাত ধরেছিস??”
“এই তুই কে রে??আমি আমার হবু বউ এর হাত ধরবো তাতে তের এতে জ্বলে কেনো?”
“আমি কে হুম??আমি হলাম মৌ এর হাসবেন্ড। আর তোর হবু বউ কিসের হুম? এটা আমার বউ বুঝছিস?? আর কোনেদিনও যদি ওর আশেপাশে দেখেছি তোদের তাহলে অবস্থা খুব খারাপ হবে।আজকের মতো ছেড়প দিলাম।”
তুহিন আয়ানের এভাবে ধমকানো দেখে সেখান থেকে চলে গেলো।
আয়ান মৌ এর অহনাকে ধমক দিয়ে বললো,
“তোদের কি গাড়ীতে উঠার জন্য ইনভেটিশন দিতে হবে?”
তারপর মৌ আর অহনা গিয়ে গাড়ীতে বসলো।
আয়ান রেগে গিয়ে গাড়ীতে বসে গাড়ী স্টার্ট দিলো।সে চরম রেগে আছে।
“তোরা চুপ ছিলি কেনো হুম?”
অহনা বললো,
“আমি তো বলেছিলাম তুহিনকে হাত ছাড়তে কিন্তু কথা
শুনলে তো।”
মৌ চুপ করে আছে।আয়ান মৌ কে ধমক দিয়ে বললো,”তুই চুপ ছিলি কেনো?? পরপুরুষের স্পর্শ ভালো লাগে তোর?আমার সামনে তো মুখ দিয়ে খই ফুটে।কিন্তু যেখানে বলার দরকার সেখানে কেনো বলিসনি?”
মৌ কিছুটা সাহস জুগিয়ে বলে,
“আমি আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আমার মাথা তখন কাজ করছিলো না।”
আয়ান আবার এক ধমক দেয়।বলে যে,”রাখ তোর ভয়। যেখানে ভয় পাওয়া দরকার সেখানে তো বীরপুরুষ সাজিস।”
এ কথা শুনে অহনা বলে,”আরে ভাইয়া জেন্ডার ভুল হলো তো।বীরমহিলা হবে।”
“আরে রাখ তোর জেন্ডার মিসটেক।এসব বলে আমাকে আর রাগাবিনা।”
এরপর মৌ আর অহনা দুজনে চুপ হয়ে যায়।
বাড়ীতে এসেও অহনা আর মৌ কে অনেক ঝাড়ি দিয়েছে আয়ান।বিশেষ করে মৌ কে।আয়ানের আম্মু থামাতে আসলে তাকে বলে যে,
“প্লিজ আম্মু, এসব বিষয়ে ্আমাকে থামাতে আসবে না।”
আয়ানের আম্মু এটা শুনে চুপ হয়ে যায়।
রুমে এসেও মৌকে বকেই চলছে।রাগ য়েন তার কমছেই না।মৌ বিছানায় বসে ছিলো।আর আয়ান মৌ এর সামনে দাঁড়ীয়ে বকছেই।
হঠাৎ করে মৌ আয়ানের একদম কাছে চলে যায় আর তার হাত দিয়ে আয়ানের মুখ চেপে ধরে। আয়ান ঘটনার আকস্মিকতায় চুপ হয়ে যায়।আর তার চোখ দুটো বড় হয়ে যায়।আর মৌ একদম স্বাভাবিক আছে।যেন এমন কাছে আসা তার জন্য সাধারন।
চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *