বিবাহ শঙ্কা !! লেখাঃ শারমিন আক্তার (সাথী)
বিবাহ শঙ্কা
-লাবিবাঃ সোহান আমরা কবে বিয়ে করছি?
সোহানঃ কেন আমি কি কখনো বলেছি যে তোমাকে বিয়ে করবো?
লাবিবাঃ তুমি না আমায় ভালোবাসো?
সোহানঃ হ্যা তো? ভালোবাসার সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক?
লাবিবাঃ খুন করে ফেলবো তোমায় ভালোবাসবে অথচ বিয়ে করবে না? একবছর যাবত যে প্রেম করছো তার কি হবে?
সোহানঃ আজব তো তুমি! এক বছর নামের প্রেম করছি কাজের কি করছি?
লাবিবাঃ মানে?
সোহানঃ মানে এক বছরে তোমার সাথে কোন নোংড়ামি, কিস, বা তোমার অনুমোতি ছাড়া হাত ধরেছি কি?
লাবিবাঃ না।
সোহানঃ তাহলে বিয়ে কেন করবো?
লাবিবাঃ তাড়ছিড়া মাথা মোটা হনুমান তাহলে এক বছর ধরে আমার সাথে রিলেশন কেন রাখলে?
সোহানঃ কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি।
লাবিবাঃ হে খোদা এ পাগলের হাত থেকে তুমি আমায় রক্ষা করো । আমি মুক্তি পেতে চাই। সোহান হয় আমায় বিয়ে করো নাহয় আমায় ছেড়ে দাও, আমি নিজের মত করে নিজের জীবনটা সাজাই।
সোহানঃ সেটা সম্ভব নয়। আমি না তো তোমায় বিয়ে করবো না তো তোমায় ছেড়ে দিবো!
লাবিবা রাগের চোটে সোহানের চুল ধরে কতক্ষন ঝাঁকি দিয়ে, কান ধরে টেনে কোন কথা না বলে রাগে ফোস ফোস করতে করতে চলে গেলো। সোহান লাবিবার যাবার পথে তাকিয়ে রইল। রেস্টুরেন্টের ওয়েটার বিল দিতে এসে বললো
——স্যারের উপর দিয়ে মনে হয় ছোট খাটো সুনামি গেছে। বকসিস দেবার দরকার নাই স্যার, বিল দিয়ে বাড়ি গিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে, গরম ভাত খেয়ে ঘুম দিন, সব ঠিক হয়ে যাবে। এমন সুনামির সম্মুখীন পৃথিবীর সব পুরুষই হয়।
সোহানঃ হ্যা রে ভাই আজ আমারা নির্যাতিত নিরীহ পুরুষ জাতি।
সোহান রেস্তরার বিল দিয়ে রিকশা করে যাচ্ছে আর ভাবছে সত্যি কি লাবিবার সাথে ঠিক করছি? ঠিক দেড় বছর আগে লাবিবার সাথে দেখা হয় এই রেস্তরাই। লাবিবা খাবার ট্রে নিয়ে যাবার সময় ট্রে উল্টে জুট, মিল্কশেক, নুডুলস সব সোহানের গায়ে পরে। সোহানকে তখন দেখতে অসম্ভব ফানি লাগছিলো মাথার উপর নুডুলস আর মুখ সব জুস আর মিল্কশেক দিয়ে ঢাকা। লাবিবা স্যরি বলবে কিন্তু সোহানের অবস্থা দেখে খুব জোড়ে হেসে দিলো। সেটা দেখে সোহানের এত রাগ হলো যে, পাশে থাকা ওর টেবিলের পেস্ট্রি লাবিবার মুখে ডুকিয়ে দিয়ে রাগ করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। লাবিবাও ওয়াশ রুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে এসে সোহানকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু সোহান ততক্ষনে চলে গেছে। লাবিবার খুব খারাপ লাগছিলো কারন ছেলেটাকে একবার স্যরিও বলতে পারলো না। না জানি ওকে কতটা বেয়াদব ভেবেছে।
পরে লাবিবার সাথে সোহানের আবার দেখা হলো লাবিবার বান্ধবি নেহা আর লাবিবার বড় ভাই লিমন এ এনগেজমেন্ড এ। সোহান লাবিবাকে দেখে চিনলেও লাবিবা চিনতে পারে নি। কারন ঐ দিন মুখে নুডলস আর মিল্কশেক এ ভুত হয়ে ছিলো, কিন্তু তারপরও লাবিবার কেন যেনো সোহানকে পরিচিতো মনে হচ্ছে। লাবিবা সোহানকে প্রশ্ন করলো।
লাবিবাঃ কিছু মনে করবেন না আমার মনে হচ্ছে আমি আপনাকে চিনি। কোথাও কি দেখেছি আপনাকে?
সোহানঃ সেদিন জুস , মিল্কশেক দিয়ে গোসল করিয়ে আজ ভুলে গেছেন। আজব মেয়ে!
লাবিবাঃ আরে আপনি সে? সেদিনের জন্য অনেক স্যরি। আসলে সেদিন মাফ চাইবার জন্য আপনাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। প্লিজ মাফ করে দিন।
সোহানঃ ইট’স ওকে।
লাবিবাঃ ধন্যবাদ। আমি লাবিবা আপনি?
সোহানঃ আমি সোহান। তা এখানে?
লাবিবাঃ দুটো কারনে?
সোহানঃ মানে?
লাবিবাঃ যে মেয়ের এনগেজমেন্ট হচ্ছে সে আমার বান্ধবী আর যার সাথে হচ্ছে মানে ছেলেটা আমার বড় ভাইয়া। আপনি?
সোহানঃ যে মেয়েটা আপনার বান্ধবী সে মেয়েটা আমার ছোট বোন।
লাবিবাঃ কি? কি করে সম্ভব না মানে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে নেহাকে চিনি কৈ আপনাকে তো কখনো ওর সাথে দেখিনি।
সোহানঃ প্রথমত আমি এখানে তেমন থাকতাম না, মাস ছয় হলো এ শহরে শিফট হয়েছি। আর দ্বিতীয়ত নেহার সাথে আমার সম্পর্ক আর পাঁচটা ভাইবোনের মত না।
লাবিবাঃ কেন?
সোহানঃ আমি নেহার সৎ ভাই। নেহা আমায় ভালোবাসলেও আমি ওকে হেট করি। এখানে এসেছি কেবল আমার দাদির কথায়।
সোহানের কথা শুনে লাবিবার খুব খারাপ লাগলো। কারন নেহা সবসময় ওর বড় ভাইয়ের প্রশংসা করতো। নেহার কথায় বোঝা যেতো নেহা সোহানকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু নেহার ভাইয়াতো নেহাকে হেট করে। কিন্তু কেন? কারন আমার জানা মনে নেহাদের পরিবারের সবাই খুব ভালো! তাহলে কি আমি ভুল জেনেছি? না কি সোহানের কোন প্রবলেম আছে? ধূর ফালতু কথা ভেবে সময় নষ্ট না করে সবার সাথে মজা করি।
সবাই যে যার মত মজা করছে। লাবিবাও নেহা আর ওর ভাইয়ার সাথে খুনশুটি করছে। এক কোনায় দাড়িয়ে সব দেখছে সোহান। খুব মন চাইছে ওদের সবার সাথে মিলে আড্ডা দিতে কিন্তু সোহান নিজেই যে সবার মাঝে বড় দেয়াল তৈরী করে রেখেছে। লাবিবার সাথেও কিন্তু সোহানের সম্পর্কটা অল্পতে তৈরী হয়নি। তারজন্য লাবিবাবে অনেক কাঁঠখড় পুড়াতে হয়েছে।
সোহানের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালো রিকশাওয়ালা।
——-স্যার এসে পড়ছি নামেন।
সোহান রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে ঘরে যায়। গিয়ে দেখে ওর সৎ মা (তাইফা বেগম) ঘর ঘুচাচ্ছে। তিনি অনেক ভালো মহিলা, কখনো সোহানকে সৎ ছেলে বলে ভাবেন নি বরং নিজের মেয়ের থেকে বেশি ভালোবেসেছিলেন। কিন্তু সোহানই সবসময় তাদের থেকে দূরে থেকেছে। কিন্তু এখন সোহান আর তাদের মাঝে দূরত্ব অনেক কমেছে আর সবই লাবিবার জন্য। সোহান এখনো তাকে মা বলে ডাকে না। অথচ মহিলা আজ প্রায় ২৪ বছর ধরে সোহানের মুখ থেকে মা ডাক শোনার জন্য পাগল হয়ে রয়েছেন। সোহান তাকে বলল
সোহানঃ খিদে পেয়েছে!
সোহান মুখ ফুটে কিছু চাইলে তাইফা বেগমের মন খুশিতে ভরে যায়। তিনি জিগেস করে
তাইফা বেগমঃ কি খাবে বলো? এখনই বানিয়ে দিচ্ছি!
সোহানঃ গরম ভাত, আলু ভর্তা আর বেগুন ভাজা।
তাইফা বেগমঃ তুমি ফ্রেস হয়ে আসো সব রেডি করে দিচ্ছি।
সোহান অনেকক্ষন ধরে গোসল করলো। গোসল সেরে রুমে আসতেই ইলিশ মাছ ভাজার গন্ধে ঘর মোঁ মোঁ করছে। ইলিশ মাছ কড়া করে ভাজা ওর খুব পছন্দের। সোহান টেবিলে এসে দেখে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত, সাথে ইলিশ মাছ ভাজা, বেগুন ভাজা, আলু ভর্তা, মুগের ডাল ঘন করে রান্না করা। সোহান ভাবছে আমি বলায় এতটুকু সময় এত কিছু রেডি করে ফেললো? মহিলা জাদু জানে নাকি?
সোহান তৃপ্তি সহকারে পেট পুরে খেলো, দূর থেকে সেটা দেখে তাইফা বেগমের মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। ভাত খেয়ে সোহান ঘুম দিলো। ঘুম ভাঙলো লাবিবার কলে।
সোহানঃ হ্যা লাবু বলো!
লাবিবাঃ আমাকে অভিনন্দন করো!
সোহানঃ কেনো? তোমার প্রেগনেন্ট হবার তো চান্স নাই কারন আমিতো তেমন কিছু করি নাই।
লাবিবাঃ জাস্ট সেটাপ। আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে। বাবা তোমাদের বাসায় যাবে বিয়ের দাওয়াত দিতে। আজ থেকে আমাকে বিয়ে করা নিয়ে তোমার কোন শঙ্কা থাকবে না। বাই ভালো থেকো।
সোহানঃ শোন শোন কথা শোন!
লাবিবাঃ বলো?
সোহানঃ সত্যিই কি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?
লাবিবাঃ না মিথ্যা। ছেলের ছবিসহ বায়োডাটা তোমায় মেইল করে দিবো। আর তাছাড়া বাবা তো কাল বিয়ের কার্ড দিতে যাচ্ছেই তখন নাহয় শিওর হয়ে নিও। দেখো তোমার বয়স ৩০ বছরের বেশি হয়ে গেছে তুমি বুড়ো হয়ে বিয়ে করতে পারো আমি আর বুড়ি হতে পারবো না।
সোহানঃ তোমার বয়স মাত্র ২২ বছর এত তারাতাড়ি বুড়ি কিভাবে হলে?
লাবিবাঃ জাস্ট সেটাপ। বাই।
লাবিবা ফোনটা কাটতেই সোহান কিছুক্ষন ফোনের দিকে তাবিয়ে রইলো তারপর ফোনের গ্যালারি থেকে লাবিবার ছবিগুলো দেখতে লাগলো। লাবিবা নিজে থেকেই সোহানকে প্রপোজ করছিলো। সোহান প্রথমে না করে দিছিলো কিন্তু নিজের অজান্তে কবে যে লাবিবাকে ভালোবেসে ফেলে তা সোহান নিজেও জানে না। পরে লাবিবার ভালোবাসার জাঁলে নিজেও জড়িয়ে পরে। সোহান বরাবরই বিবাহ বিমুখ, ও নিজেকে নিজে কথা দিয়েছে ও কখনোই বিয়ে করবে না। কিন্তু মনের বেখেয়ালে লাবিবাকে পাগলের মত ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু এখন লাবিবার পরিবার লাবিবাকে বিয়ের জন্য প্রেশার দিচ্ছে। লাবিবার প্রবলেম সোহান বুঝতে পারলেও বিয়ে করার মত সাহস সোহান করতে পারছে না। বিয়ে মানেই ঝগরা, ফ্যাসাদ, দ্বন্দ আরো অনেক কিছু। অনেক বছর ধরে বিবাহ শঙ্কায় মনে নিয়ে দিন কাটাচ্ছে সোহান। কিন্তু এখন ভাবছে সত্যি কি লাবিবাকে ছাড়া বাঁচা সম্ভব?
আর এদিকে লাবিবা কান্না করছে আর নিজের কপাল চাপড়াচ্ছে কেন এমন বিবাহ বিমুখ একটা মানুষকে ভালোবাসতে গেলাম। সোহান নিজে থেকে তো আমাকে প্রপোজ করেনি! আমিই বেহায়ার মত নিজের ভালোবাসার কথা ওকে বলেছিলাম ও না বলার পরও জোঁকের মত ওর পিছে পরে ছিলাম। কেন যে ওকে ভালোবাসতে গেলাম! ওর কথা শুনতে শুনতে ওর কষ্ট গুলো অনুভব করতে করতে কবে যে ওকেই মনের অন্তরালে জায়গা দিয়ে ফেলছি নিজেই জানিনা। পাগলের মত ভালোবেসে ফেলেছি মাথা মোটাটাকে। কিন্তু ও তো বিবাহ বিমুখ। আচ্ছা ওর বিষয় সব জানলেও আজ পর্যন্ত ঠিক করে এটা জানতে পারিনি ও কেন বিয়ে করতে নারাজ? কেন বিয়ের সম্পর্কটাকে ভয় পায়? কেন?
চলবে——— বিবাহ শঙ্কা বিবাহ শঙ্কা বিবাহ শঙ্কা বিবাহ শঙ্কা
বিঃ দ্রঃ একটু নিচে ভালো করে লক্ষ করুন পরবর্তী পর্বের লিংক দেয়া আছে