প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 22 (Last-Part)
🌺 শেষ পর্ব
🌸 Taslima Munni
রেহানের কথা শুনে একটু কেঁপে উঠলাম।
সেটা রেহানের চোখে পড়েনি।
রেহান হয়তো অন্য সময়ের মতো দুষ্টুমি করেই কথাটা বলেছে। অন্য সময় হলে এটা নিয়ে অনেক মজা করতাম। ওকে পচাতাম।
কিন্তু এখন একদম অন্যরকম লাগছে।
ভেতরে চিনচিন ব্যথা করছে।
– আচ্ছা সবতো জানতে পারবি।তোদের কে বলবো না??
তুই এখন কোথায়?
একটু আসতে পারবি?( রেহান)
– তাহলে এক কাজ কর।তুই হিয়ার ওখানেই থাক। আমি বাহিরেই আছি। আধা ঘণ্টার মধ্যে চলে আসতে পারবো। ( খুশবু)
– ওকে, তাড়াতাড়ি চলে আয়। আমরা অপেক্ষা করছি।
এটা বলে রেহান ফোন রেখে দিলো।
প্রায় চল্লিশ মিনিট পরে খুশবু আসলো।
এতোক্ষণ রেহান, আমি আর দিয়া গল্প করছিলাম। খুশবু আসার একটু পরে দিয়া চলে গেছে।
– দুস্ত… তুই প্রপোজ করবি! আমি খুব এক্সাইটেড হয়ে আছি।
খুশবুর উত্তেজনা দেখে আমি রেহান দুজনেই হাসছি।
তুই কি ডিরেক্ট বিয়ের জন্য প্রপোজ করতে পারবি? এটাই তো ভালো হবে। ( খুশবু)
– হে… করা যায়। ( রেহান)
– তাহলে চল প্ল্যান করে ফেলি।
– প্ল্যান করার জন্যই তোকে এনেছি।
আমাদের মাথায় কিছু আসছে না।
– শোন সবার আগে একটা ডায়মন্ড রিং কিনতে হবে।
– তারপর?
– তারপর যেখানে প্রপোজ করবি সেখানে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন একবার তাকিয়েই মুগ্ধ হয়ে যায়। হতে পারে কোনো ক্যাফে অথবা অন্য কোথাও সেটা তোর চয়েস।
তারপর একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলবি- Will you marry me??
বলে ফুলগুলো অফার করবি। ফুলগুলো গ্রহণ করা মানে তোর প্রপোজাল একসেপ্ট করে নেয়া।
তখন ডায়মন্ড রিং টা পরিয়ে দিবি।
হিহিহিহি….. হাউ রোমান্টিক! একটা ফিল্মি ফিল্মি ব্যাপার!
আমি আর রেহান হা হয়ে শুনলাম।
– তোর কয় নাম্বার প্রেম চলে রে??
খুশবু একটু অবাক হয়ে বললো – কয় নাম্বার প্রেম মানে??
– না মানে… এমন ভাবে ডিটেইলস বললি যেন তোর কত দিনের অভিজ্ঞতা!
রেহান শুধু মুখ টিপে হাসছে।
– ধুর! কারো ভালো করতে নেই। আসলাম হেল্প করতে আর এখন উল্টো…
ধুর.. ভাল্লাগে না।
– আরে শুন,শুন রাগ করিস না। আমাদের মাথায় কিছু আসছিলো না। তুই তো কিছু আইডিয়া দিলি।( রেহান)
– হুহ! এবার হিয়া কিছু বল??( খুশবু)
– আমি? আমি কি বলবো?
– কিছু চেঞ্জ বা এড কর!
– আমার মনে হয় সবকিছু ঠিক আছে শুধু একটু চেঞ্জ করলেই হবে।
– কি চেঞ্জ?( রেহান)
আমি বললাম – প্রপোজ করবি একদম খোলা আকাশের নিচে। যেখানে মাথার উপর খোলা আকাশ থাকবে। চারদিকে সবুজ থাকবে। মানুষের খুব একটা কোলাহল থাকবে না।
এমন একটা যায়গায়।
রিং তোর কাছেই রাখবি। ওকে দেখাবি না।
একগুচ্ছ শুভ্র সাদা গোলাপ হাতে সামনে গিয়ে ফুল গুলো ওর হাতে দিবি।
তারপর ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে রিং অফার করে বলবি?
” I offer to you my Heart!
Will you marry me?
Will you be mine? ”
মাথার উপর খোলা আকাশ আর সবুজ প্রকৃতিতে, শুভ্র সাদা গোলাপ আর ডায়মন্ড রিং অনেক বেশি হাইলাইট হবে। অনেক ডিফারেন্ট মনে হবে।
আমি একমনে বলে গেলাম, যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি রেহান আমাকে প্রপোজ করছে! বলা শেষ করে ওদের দিকে দেখি দুজনেই ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে আছে।
একটু বিব্রত বোধ করলাম। কিছু ভুল বলেছি?
– খুব বাজে আইডিয়া তাই না?
– এই আইডিয়া একেবারে ইউনিক দুস্ত। ইসস… কেউ যদি আমাকে এভাবে প্রপোজ করতো! ( খুশবু)
– এই আইডিয়া বেস্ট। ইয়েস… এটাই করবো।
– কাকে করবি এটা তো বল এবার ।( খুশবু)
– তুই গেইস কর কাকে করতে পারি?
খুশবু কিছুতেই পারলো না।
রেহান অনেক ভাবে সাহায্য করলো। কিন্তু তবুও খুশবু গেইস করতে পারলো না।
– এই তোর চিন্তার দৌড় এইটুকু কেন?? হিয়াকে জিজ্ঞেস কর। সত্যিই আমি অনেক অবাক হয়ে গেছি।আমি কিছুই বলিনি,অথচ ও আমার মনের কথা পড়ে নিয়েছে!
– তাই নাকি? আর পারবেই না কেন? ছোটবেলার বন্ধু তারপর বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা! কে রে হিয়া?
রেহান কাকে প্রপোজ করবে?
– তানিশাকে।
– আমি কখনোই তানিশাকে নিয়ে এমন কিছুই বলিনি তোর কাছে, কিন্তু তুই আমি বলার আগেই কিভাবে বুঝলি!
আমি শুধু হাসলাম। কিছু বললাম না।
কিছুদিন পর।
রেহান তানিশাকে প্রপোজ করবে। আর মাত্র তিনদিন বাকি। রেহান যায়গা সিলেক্ট করেছে।শহরের সবচেয়ে শৌখিন, সবচেয়ে সুন্দর লেকের পাশে প্রপোজ করবে ।
শুধু রিং টা কেনা হয়নি।
রেহান আমাকে নিয়ে রিং কিনতে গেলো।
রেহান কিছুতেই রিং পছন্দ করবে না। আমাকেই পছন্দ করতে হবে।
আমি রিং পছন্দ করলাম। রেহান বললো
– বাহ! এটাতো অনেক সুন্দর। কিন্তু হবে তো?
তানিশার হাতে রিং হবে কিনা সেটা বুঝতে ওকে তো আনতে পারবে না। তাহলে সারপ্রাইজ থাকবে না।
– তোর হাতে দেখতো। তোর হাতে হলে ওর হাতেও হবে।
আমার হাত সামনেই ছিলো। রেহান আমার হাতে নিয়ে পড়িয়ে দেখলো।রেহান যখন আমার হাতে রিং পড়াচ্ছে, তখন আমার অদ্ভুত একটা শিহরণ অনুভব করলাম। সেই সাথে ভেতর টা ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
আমরা প্রায়ই কারো হাতে রিং হবে কিনা সেটা পরখ করার জন্য তার মতো কারো হাতে দিয়ে পরখ করি। রেহানও সেটা করছে!
এটা অস্বাভাবিক কিছু না।
কিন্তু এটা আমার কাছে বড় যন্ত্রণার।
– এইতো, হয়েছে তোর হাতে। তাহলে এটা ওর হবে।
রেহান রিং টা খুলে নিলো।
আমার দুনিয়া ভেঙে কান্না পাচ্ছে।
এটা বড় কষ্টের, বড় অপমানের। রেহান রেহানের যায়গায় ঠিক,ও স্বাভাবিক ব্যবহার করছে। কিন্তু আমার মনে তো অন্য কিছু!
তাই আমি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি। এমন তো হতে পারতো রিং টা রেহান আমাকেই পড়াবে বলে কিনেছে। কিন্তু সেটা হবার নয়।
এটা অন্যকারো।এটা শুধু রিং নয় একটা অঙ্গীকার। সারাজীবন পাশে থাকার।
আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে আমার ভেতর টা ফালাফালা করে দিচ্ছে।
তবু্ও মুখ শক্ত করে বাকিটা সময় রয়ে গেলাম।
তিনটা দিন কেটে গেছে।
আজ সেই কাঙ্ক্ষিত দিন রেহানের জীবনের। আজ রেহান ওর পছন্দের মানুষটার সাথে বিয়ের জন্য প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হবে।
আজকে আমার সব অনুভূতি গুলো থমকে গেছে। মাত্র কিছু সময় পরে রেহানের জীবনে কেউ আনুষ্ঠানিক ভাবেই প্রবেশ করবে।
সকাল থেকে কিছু ভালো লাগছে না। আজ সকালটা কেমন নিষ্প্রাণ মনে হচ্ছে। বিষন্ন দুপুরে ভেতরটা যেমন খাঁ খাঁ করে,এই সকালেও তেমন খাঁ খাঁ করছে।
রেহান ফোন করছে। কিন্তু ওর ফোন ধরতে ইচ্ছে করছে না।
তিনটা মিসড কল হয়ে গেছে।
না, আর না।আমার ইমোশন,আমার কষ্ট এভাবে প্রকাশ করবো না। রেহান আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। সেই হিসেবে তার জন্য আজ পর্যন্ত যেমন করে এসেছি, আজও করবো।
ভালোবাসা? সেটা বুকের ভেতর কলি হয়েই থাকুক।
সব কলির ফুল হয়ে ফোঁটার সৌভাগ্য হয় না।
কিছু কলি অকালেই শুকিয়ে যায়।
রেহানের ফোন ধরলাম।
ওর সাথে যেতে বলেছিলো, কিন্তু আমি রাজি হয়নি।তাই বারবার ফোন করছে।
– হে রেহান, বল।
– তুই সত্যিই যাবি না?
– বেকুবের মতো কথা বলিস না। তুই একজনকে প্রপোজ করতে যাচ্ছিস আর সেখানে আমি যাবো? তার উপর ও উল্টো পাল্টা ভাবতো আমাকে নিয়ে। এখন আমাকে দেখলে ওর মন খারাপ হবে, কষ্ট পাবে।
তুই বুঝতে পারছিস?
– হিয়া… আমি অনেক নার্ভাস ফিল করছি।তুই আমাকে এভাবে, এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়ে চলে যাবি?
আচ্ছা, তাহলে একটা কাজ কর, ও যখন আসবে আমরা ওর সামনে যাবো না আড়ালে থাকবো।।
আমি যখন ওর কাছে যাবো,তুই চলে আসিস।
অনেক কাতর হয়ে রেহান কথাগুলো বললো। আমার পক্ষে আর না করা সম্ভব হলো না।
আমি গেলাম সে যায়গায়। ঠিক ১১ টায় তানিশা আসবে। আমি আর রেহান পাশাপাশি লেকের পাড়ে বসে আছি।
কেউ কোনো কথা বলছিনা। রেহান খুব টেনশনে আছে বুঝতে পারছি।
আমার কথা বলতে ভালো লাগছে না।
– হিয়া?
– বল।
– আমি কি ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি?
– তোর মন যদি সায় দেয়, যদি মনে করিস ওকে তোর চাই,যদি ওকে অন্যকারো হতে দেখলে কষ্ট পাবি মনে করিস ; তবে তোর সিদ্ধান্ত সঠিক। আর এই সঠিক সিদ্ধান্ত সারাজীবন সঠিক রাখা তোদের দুজনের দায়িত্ব।
রেহান আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিলো।
১০ঃ৫০ বাজে।
রেহানের ফোনে একটা কল আসলো।
– ও চলে এসেছে।
তাকিয়ে দেখি তানিশা দূরে সেই যায়গায় দাঁড়িয়ে রেহানের অপেক্ষা করছে।
– তুই যা।ও অপেক্ষা করছে।
– আর তুই?
একটু হেসে বললাম – বুদ্ধু! এখন সময় টা শুধু তোদের দুজনের। আমি কাবাবে হাড্ডি হতে চাইনা। চললাম।
রেহান কিছু বলার আগেই আমি হাঁটতে শুরু করলাম।
পিছনে তাকাইনি।
একটু এগিয়ে তাকালাম।রেহান তানিশার কাছে যাচ্ছে।
আর দেখার সাহস আমার নেই। আমার ভেতর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। চোখ ফেটে পানি পড়ছে।
রেহান কোনো দিন জানতেও পারবে না ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হিয়া ওকে অনেক বেশিই ভালোবাসতো।
আমি তোর বন্ধু হয়েই সারাজীবন পাশে থাকবো রেহান। তোর বন্ধুত্ব আজীবন বেঁচে থাকুক।
বন্ধুত্ব থেকে সবসময় প্রেম হয়না। কিছু ভালোবাসা একতরফা হয়। সেই ভালোবাসা গুলো জল না পেয়ে শুকিয়ে যায় অঙ্কুরেই।
রেহানের প্রেমে পড়তে নেই।
প্রেমে পড়া বারণ। কারণ কিছু সম্পর্ক বন্ধুত্বেই স্থানী হয়।
এতো কিছু মনকে বুঝাতে চাইছি, তবুও ভীষণ করে মন পুড়ে যাচ্ছে।
চোখ মুছতে মুছতে আমি ফিরে আসছি।
মনে পড়ছে রেহানের সাথে কাটানো সময়গুলো।
আজ একজনের কথা মনে পড়ছে। জয়িতা আর ছোট বাবু তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছে, কিন্তু শীতল কতটা কষ্ট সহ্য করে পাগল হয়ে গেছে।
আমি শীতলের মতো পাগল হবো না। কারণ এখন নিজের মনের উপর কন্ট্রোল রাখতে জানি।
তবুও আমি রক্তে মাংসের মানুষ। কষ্ট কাউকে দেখাই না বলে কষ্ট হয় না?.
হচ্ছে তো। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
রেহান তুই কেন বুঝলি না একবার? কি এমন ক্ষতি হতো একটা বার আমার কথাটা বিশ্বাস করলে?
ভীষণ অভিমান নিয়ে আমি রেহানের বিপরীতে হেঁটে চলে যাচ্ছি রেহান থেকে দূরে।
……………………….
প্রেমে পড়া বারণ
কারণে অকারণ
আঙুলে আঙুল রাখলেও
হাত ধরা বারণ
প্রেমে পড়া বারণ
তোমায় যত গল্প বলার ছিল
সব পাপড়ি হয়ে গাছের পাশে
ছড়িয়ে রয়ে ছিল
দাওনি তুমি আমায় সেসব
কুড়িয়ে নেওয়ার কোনো কারণ।
প্রেমে পড়া বারণ
কারণে অকারণ
ওই মায়া চোখে চোখ রাখলেও
ফিরে তাকানো বারণ
প্রেমে পড়া বারণ
শূন্যে ভাসি, রাত্রি এখনো গুনি
তোমার আমার নৌকা বাওয়ার
শব্দ এখনো শুনি
তাই মুখ লুকিয়ে,
ঠোঁট ফুলিয়ে,
বসন্তের এই স্মৃতিচারণ।।
…….……………….
হা রেহান।
তোর প্রেমে পড়া বারণ।
তোর দিকে ফিরে তাকানো ও বারণ।
তোর হাত ধরা বারণ।
তোকে না বলা গল্পটা না বলাই থাক।
# সমাপ্ত #