প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 02

চায়ের কাপ টা সামনে রেখে গালে হাত দিয়ে বললাম
– মন দিলাম। এবার বল।
– শুন, আমি একটা সিরিয়াস সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। তোর একটা পরামর্শ দরকার।
লাইফের খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত!!
– বুঝলাম। বল শুনি।।
– আনিষার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে!.
– কি বলিস? হুট করে!!
– হা। বুঝতে পারছিনা কি করবো। বাসায় জানাবো তার উপায় নেই। জব নাই, কিছু নাই। এখন যদি বাসায় বলি আব্বু আমাকে জুতাপেটা করে বাসা থেকে বের করবে।
– হিহিহিহি….
– হাসছিস কেন?.?
– কিছু না…. এমনি।
– না বল.. আমি কি বললাম হাসির?
– আরে কিছু না… বললি না আঙ্কেল জুতাপেটা করবে? আমার চোখের সামনে ভাসছে কিভাবে তোকে সাইজ করছে …
চিন্তা করিস না,তোর গন্ডারের চামড়া। জীবনে কম খেয়েছিস? বড় হয়ে আবার নাহয় খেলি, আনিষার জন্য!
– তোর সব কিছুতেই হেঁয়ালি! ধ্যাৎ!!
– আচ্ছা সরি….সরি।।
এবার বল তুই কি করবি ঠিক করেছিস?
– পালিয়ে যাবো।
-??? কিহ???? তাহসিনের কথা শুনে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে।
– হা পালিয়েই যাবো। তাছাড়া আর রাস্তা নেই।
– পালিয়ে যে যাবি বউকে কি খাওয়াবি? কই রাখবি?
– টিউশনির টাকা কিছু আছে, খরচ করা হয়নি।
৫/৬ মাস বাইরে বাসা নিয়ে থাকা যাবে। দরকার হলে বাইক বিক্রি করে দিবো।
আর এর মধ্যে আব্বুকে ম্যানেজ করতে পারলে ত… নো চিন্তা!
– তুই ফুপিকে চিনিস না?! তুই পালিয়ে গেলে তোকে জীবনে ঘরে তুলবে বলে মনে হয় তোর?
– এ ছাড়া আর কি করতে পারি বল? বুদ্ধি দে।আমার মাথায় আপাতত আর কিছু আসছে না। আনিষার বিয়ে হয়ে গেলে কি হবে!!
তাহসিন আমার কাজিন।আমরা সমবয়সী।একই ইউনিভার্সিটিতেও একই ডিপার্টমেন্টে। তাই ওর সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব।
আর আমার ভাই রিফাতের ধারণা আমাদের মধ্যে প্রেমের একটা সম্পর্ক আছে, যা আমরা কাউকে দেখাই না।
রিফাত মুখে কিছু না বললেও সেটা আমি জানি।
রিফাত এবার ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে।এখন এডমিশন টেষ্টের জন্য পড়াশোনা করছে।এটাই আপাতত ওর কাজ।।
ওহ না! আরও একটা কাজ আছে রিফাতের।।
আম্মুর কাছে আমার যত খবর আছে সব পৌঁছে দেয়া।
আমার স্পাই!!
কিন্তু রিফাত জানে না ওর স্পাই দিয়া।
তিন ভাইবোনের মধ্যে দিয়া ছোট। ছোট বললেও রিফাত আর ওর বয়সের ডিফারেন্স পাঁচ মিনিটের।
দিয়া রিফাতের পাঁচ মিনিটের ছোট। তাই সারাক্ষণ টম আর জেরির মতো একজন আরেকজনের পিছনে লেগেই থাকে।
আর এদিকে বেচারা তাহসিন আনিষার ডুবে আছে সেই খবর রিফাত জানে না, তবে দিয়া জানে।
আনিষা অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। কয়েকবার দেখেছি মেয়েটাকে।তাহসিন অনেক টেনশনে আছে বুঝতে পারছি।
– এতো তাড়াহুড়োর কি ছিলো? আনিষার গ্রেজুয়েশনই শেষ হয়নি।।
– কে বুঝাবে ওর বাবা-মাকে? রিলেশনের কথা ওর বাসায় জেনে গেছে। তাই আরও তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা করেছে।
– তুই একবার ফুপিকে বুঝিয়ে বল। দেখ ফুপি কি বলে। তারপর অন্য চিন্তা করা যাবে।
– বলবো?
– হা।বলা উচিত।
– কি ব্যাপার? খুব সিরিয়াস আলোচনা চলছে মনে হচ্ছে।
রেহানের গলা শুনে পিছনে ফিরে দেখি রেহান আর খুশবু দাঁড়িয়ে আছে।
– হা অনেক সিরিয়াস ইস্যু। আনিষাকে নিয়ে তাহসিন পালিয়ে যাবে।সেই প্ল্যান করছিলাম।
তোরা এতো সময় কই ছিলি?
– ক্যাম্পাসেই ছিলাম। কিরে দুস্ত আমাদের রেখেই প্ল্যান করে ফেললি? দেখিস এই প্ল্যানে পালিয়ে ধরা খাবি।
খুশবুর কথার সাথে রেহান যোগ করলো
– আরে শালা,পালাতে প্ল্যান করা লাগে? হাত ধরবি আর গাড়িতে উঠে সোজা চিটাগং চলে যাবি।বিয়ে আর হানিমুন একসাথে হয়ে যাবে।
সুযোগে আমরাও ক’দিন বেড়িয়ে আসবো।
অনি এসে একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো
– একদম না। হাত ধরবি আর পালাবি! বললেই হলো??
পালাতে হলে ফিল্মি স্টাইলে পালাবি।
ট্রেন স্টেশন ছেড়ে দিয়েছে। ধীরে ধীরে চলতে শুরু করেছে….
( অনি হাত দিয়ে দেখাচ্ছে) তুই আর আনিষা ছুটছিস ট্রেনের পিছনে। একটা সময় তুই উঠে যাবি।। আনিষা ছুটবে… ছুটছে… ছুটছে…
তুই হাত বাড়িয়ে রাখবি।
আমরা পিছনে থেকে উৎসাহ দিবো…
যাও আনিষা যাও…. আরও জোরে দৌড়াও… জি লো আপনা জিনদেগি!!
ওর বাপে তো বলবে না, আমরাই না হয় এই ডায়লগ দিয়ে দিলাম।
অনির কথা শুনে সবাই হাসতে হাসতে শেষ।।
– দুস্ত, জীবনে একবার ই তো পালাবি।তাই না?
আর ভবিষ্যতে নাতি- নাতনিকে পালানোর গল্প শুনাবি।তাই স্মরণীয় আর ফিল্মি স্টাইলেই করবি।( খুশবু)
– তোদের বুদ্ধি নিলে আর পালাতে হবে না। ( তাহসিন)
– যাহ বাবা! ভালো ভালো বুদ্ধি দিলাম আর উল্টো আমাদের?? ( রেহান)
– হা… তোদের যা বুদ্ধি!!( তাহসিন)
– হয়েছে.. হয়েছে , এখন ক্লাসে চল। পরে একটা বুদ্ধি বের করা যাবে। আপাতত ফুপিকে বলুক।দেখা যাক ফুপি কি বলে।
রেহান আমার সাথে মত দিলো
– হা, এটা ঠিক বলেছিস। সিরিয়াসলি দুস্ত,আগে আন্টিকে বল।এটাই সবচেয়ে ভালো হবে। তারপর অন্য চিন্তা।
চল… ক্লাসে যাই।
– তোরা যা, আমি আনিষার সঙ্গে দেখা করতে যাবো।
আমি, রেহান,খুশবু,তাহসিন, অনি।।
এই আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল। প্রায় পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব।
আর রেহানের সাথে বন্ধুত্বটা
অনেক পুরানো।
আমরা ছোটবেলা থেকেই এক সাথে পড়াশোনা করছি।একই স্কুল,একই কলেজ, শেষ পর্যন্ত একই ইউনিভার্সিটি!
রেহান আমার প্রতিবেশী। আমাদের বাসার ঠিক একটা বাসা পরেই রেহানের বাসা।
আন্টির চোখে রেহান একটা গাধা,
আঙ্কেলের চোখে গর্দভ।
ওর বোনের চোখে… আদরের ভাই।
আর আমাদের চোখে?
প্রতি পাঁচ মিনিটে একটা করে ক্রাশ খাওয়া ছেলে।।
যে উঠতে ক্রাশ খায়,বসতে ক্রাশ খায়।ইভেন রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েও ক্রাশ খায়।
খুশবু হচ্ছে ভেজা বিড়াল।
কিছুই বুঝেনা ভাব,কিন্তু কথা শুনলেই বুঝা যায় উনি কি?
অনি হাসি মুখে মিচকে শয়তান। হাসতে হাসতে সে অনেক কিছুই করতে পারে!
তাহসিন আপাতত গত দুই বছর উঠতে আনিষা।।
বসতে আনিষা।
আর আমি?
নিজের প্রশংসা কিভাবে করি?.?
নাহ থাক। আমি সাদাসিধে মানুষ!!
কত হাসি,আনন্দ, মান,অভিমান, খুনসুটির মধ্য দিয়ে আমাদের বন্ধুত্বের দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।
চলবে…..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *