প্রেমের পাঁচফোড়ন

প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 60

অথচ কয়েক মাস আগে যখন সে মোহনগঞ্জ থেকে চলে গিয়েছিলো তখন তারা দুজনেই মনের দিক দিয়ে অচেনা ছিল আর আজ তারা বিবাহিত
ভয় ভয় কাজ করছে,শান্তর বাড়িতে এই প্রথম সে যাচ্ছে,কি জানি তাদের সাথে খাপ খাওয়াতে পারা যাবে কিনা
শান্ত ২টো রিকসা নিলো একটাতে সে আর আহানা,আরেকটাতে নওশাদ আর রুপা
রাত তখন ১১টা বাজে
ঘুটঘুটে অন্ধকার,ব্যাঙ ডাক দিতেসে,কিছুক্ষন আগেই বৃষ্টি হয়েছিল,রাস্তাঘাট পিচ্ছিল,তার উপরে গাছের ঢালে জমে থাকা এক দু ফোটা পানিও পড়তেসে থেমে থেমে
আহানা মনের অজান্তেই শান্তর হাত মুঠো করে ধরে আছে
রিকসাআলার রিকসার নিচে হারিকেন জ্বলতেসে,সেটার আলোয় তিনি পথ চলতেসেন
পিছনের রিকসায় নওশাদ বসে দুঃখের একটা গান ধরেছে

দিল আমার কিছু বুঝে না গানটা
রুপা ধুমধাম করে কিল বসিয়ে চুপ করিয়েছে ওকে
রেগে রেগে বলতেসে বিয়ের দিন রাতে কেউ এই গান গায়?বেয়াদব একটা
আহানা হাসতেসে ওদের কথা শুনে,শান্ত ফোনে বাবাকে বলতেসে আর ২মিনিট লাগবে, এসে গেসি আমরা
বাসার সামনে এসে দুটো রিকসাই থামলো
আহানা নেমে বাসার দিকে তাকালো,দোতলা একটা বাসা,দোতলা বলতে নিচের তলা অনেক বড় আর উপরের তলায় ২/৩টে রুম দেখা যাচ্ছে
বাড়ির সামনে এত এত ফুল যে সবার আগে বাগানটাই চোখে পড়বে,বাড়ির উপরে একটা লাইট জ্বালানো আর বাগানে তো প্রতি কদমে কদমে লাইট,নিশ্চয় বাগানটাকে উজ্জল করে তুলার জন্য আর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য এত বাতির ব্যবস্থা করা
বাবা হেসে এগিয়ে আসতেসেন,দারোয়ান গেট খুলে দিয়েছে ততক্ষণে
শুধু বাবা এসেছেন,আহানা উনাকে সালাম দিয়ে এদিক ওদিক তাকালো,দূরে বাসার ভিতর সোফায় বসে থাকা দুজনকে দেখা যাচ্ছে তবে তারা এদিকে খেয়াল না দিয়ে টিভি দেখায় মগ্ন
আহানার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে একজন ভদ্র মহিলা এক গাল হাসি নিয়ে এগিয়ে এসে আহানাকে জড়িয়ে ধরলেন
.
আহানা চমকে উনাকে সালাম করে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো,চেহারা তো শান্তর বাবার মত,নিশ্চয় শান্তর ফুফু হবে
.
উনি হেসে বললেন আমি তোমার ফুফু শাশুড়ি, আসো ভিতরে আসো
.
এই যে পুরা শান্ত ব্যাটেলিয়ন!! আমি যে নওশাদ মোহনগঞ্জ এসেছি সেদিকে কি কারও নজর নেই?সাথে যে আমার নতুন বউ আছে সেটাও কারও নজরে নেই
শান্তর বাবা এগিয়ে এসে নওশাদের কান ধরে আলোতে দাঁড় করিয়ে হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন ওকে
.
রুপা এসে সবাইকে সালাম দিলো,তারপর সবাই একসাথে বাসার ভিতরে ঢুকলো,আহানা বাসার ভিতর পা রেখেই মিসেস রেনুর দিকে তাকালো
রেনু সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মুখটা ফুলিয়ে এগিয়ে এসে আহানার সামনে দাঁড়ালেন
আহানা মুচকি হেসে সালাম করলো উনাকে
উনি “সুখি হও” বলে চলে গেলেন বাসার ভিতর
আহানা শান্তর দিকে তাকালো,শান্ত “ইটস ওকে” বললো ইশারায়
.
কিরে তোর শাশুড়ি এমন ক্যা??তোকে প্রথম দেখায় কিছু দিলো না তো দিলো না আবার জড়িয়েও ধরলো না,উল্টে চলে গেলো??
.
জানি না
.
আজব তো
.
শান্ত আহানার হাত ধরে ভিতরে ঢুকলো

সায়ন সিঁড়ি দিয়ে নেমে ওদের দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসলো সামনে এসে হঠাৎ করে সবার সামনে নিচু হয়ে আহানার পা ধরে সালাম করতে গেলো
আহানা চমকে ভয় পেয়ে শান্তর পিছনে চলে গেলো
.
সায়ন!এসব কি?
.
ভাই তোমার কি আমার কিছুই ভাল্লাগে না?ভাবী আমার বড় ভাইয়ের বউ,তাকে সালাম করবো না??
.
এতই ইসলামিক হলে বাবাকে করো গিয়ে,পরে ভাবীর লাইন আসবে
.
শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে সবার সামনে দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে গেলো
আহানা কিছুটা ঘোরের মধ্যে আছে,এই ছেলেটা এমন কেন করলো,কি অসভ্য!!
শান্তর রুমে ঢুকতেই সে থ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো,রুমের অর্ধেকটা দেয়াল জুড়ে শুধু শান্তর মায়ের ছবি
আহানা এগিয়ে এসে একটা ছবি নিয়ে দেখতে লাগলো
উনি সেই যিনি আমাকে প্রথম খাবার তুলে দিয়েছিলেন,কি মিষ্টি চেহারা উনার
.
শান্ত দুম করে বিছানার উপর শুয়ে পড়েছে,আহানা ছবিটা রেখে পিছন ফিরে পুরো রুমটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলো,খাট একটা,একটা আলমারি,আর একটা টেবিল ও চেয়ার,জানালা খোলা সেটা দিয়ে বিরাট একটা ক্ষেত দেখা যায় যেটার মাঝখানে একটা পিলারে এখন আলো জ্বলতেসে
আহানা রুম থেকে বের হতেই দেখলো একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা ট্রে,যেটাতে ২গ্লাস পানি,,২কাপ চা আর বিসকিট
মেয়েটা হাসতে চাইছে কিন্তু কোনো এক বারণ এর কারণে সে হাসি আটকে মুখ ফুলিয়ে আহানার হাতে ট্রেটা দিয়ে বললো “আমার নাম মিতু”,ব্যস চলে গেলো সে
আহানা ট্রেটা নিয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় রাখলো,শান্ত চ্যাপটা হয়ে ঘুম দিসে
আহানা হাতটা নিয়ে ওর পিঠে রেখে দুবার নাড়া দিলো
শান্ত ঘুম ঘুম চোখে চেয়ে বললো “কি?”
.
চা খান,ঘুমের ভাব কমবে
.
চায়ের কথা শুনে শান্ত উঠে বসলো
.
আচ্ছা রুপা আর নওশাদ ভাইয়া কোথায়?
.
ওদেরকে বাবা এই করিডোর ধরে শেষ প্রান্তে যে রুমটা আছে ওটা দিয়েছে,ওখানে রেস্ট নিচ্ছে মেবি
.
ওহ,আপনার বোন ও কি বাকি সবার মতন?
.
না,ও একটু আলাদা,ও চাইলেও আমাকে ঘৃনা করতে পারে না,রক্ত তো,আলাদা একটা টান আছে,বাট কথা একটু কম বলে এই আর কি
.
আহানা চা খেয়ে উঠে দাঁড়ালো,মনটা ছটফট করতেসে পুরো বাড়িটা একবার ঘুরে দেখার
.
শান্ত চা খেয়ে উঠেই হাঁটা ধরলো আহানাকে নিয়ে
.
আরে আরে কই যান?
.
তোমাকে পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাবো
.
অনেক রাত হয়েছে,কাল দেখবো নাহয়
.
আরে আমরা সবাই ডিনার করি রাত ১২টায়,চলো তুমি
.
শান্ত আহানার হাত ধরে বেরিয়ে পড়লো,,
নিচে সোফায় সায়ন পায়ের উপর পা তুলে টিভিতে মুভি দেখতেসে
আহানাকে নামতে দেখে দাঁত কেলিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিলো,আহানা শান্তর হাত শক্ত করে ধরলো সায়নের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে
শান্ত রাগী চোখে সায়নের দিকে তাকিয়ে আহানাকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো
ফুফু আর খালা রান্না করতেসেন
ফুফু চুলায় মাংস নাড়তেসেন আর খালা নিচে বসে শশা কাটতেসেন সালাদ বানানোর জন্য
আহানা রান্নাঘরে ঢুকতেই খালা হেসে দাঁড়িয়ে পড়লেন
আহানা এগিয়ে এসে খালাকেও সালাম দিলো
খালা খুশি হয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললেন “”শান্ত বাবা একখান খাসা বউ পাইলা””
.
তোমার বোনের পছন্দে😁😎
.
হ,এখন বুঝতেসি শান্তি আপা কেন ওরে বেছে রেখেছিল,আমিও ওকে দেখেছিলাম আশ্রমে শান্তি আপার সাথে গিয়ে,তখন তো একদম পুচকি ছিল সারাদিন তোর হাঁটু জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো,তোকে ছাড়া কিছু বুঝতো না
.
আহানা লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো
.
আচ্ছা তাই নাকি খালা??আর কি কি করতো?
.
তোর ও তো সব মনে আছে আমাকে জিগাস কেন?শয়তান পোলা!!
আচ্ছা একটা কথা বল ওর কি শরীর খারাপ??
.
শান্ত ব্রুটা নাচিয়ে বললো “কেন?? কি করে জানলা?”
.
চোখ মুখ শুকিয়ে আছে তাই বললাম,কি হয়েছে ওর
.
শান্ত ফ্রিজের উপরের ঝুড়ি থেকে লিচু নিয়ে খেতে খেতে বললো “মায়ের মত রক্তশূন্যতা রোগ পাইসে”
.
কিহহ বলিস,আল্লাহ রক্ষা করুক

তখনই রেনু রুমে ঢুকলো,খালার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললেন “”কি ব্যাপার?কত কাজ পড়ে আছ সব রেখে কিনা কথা বলতে লেগে গেলা?কাজ সব কে করবে?””
.
খালা মুখটা ছোট করে আবারও শশা কাটায় মন দিলেন
আহানা বললো “আমাকে কি কাজ করতে হবে দিন করে দিচ্ছি”
.
রেনু মা ফুফুর থেকে চামচ নিয়ে মাংস নাড়তে নাড়তে বললেন “এখন থেকে কাজের প্রতি এত আগ্রহ দেখানো ভালো না!!
এমনিতেও তো বিয়ের পর এখানে থাকবে না তাহলে শুধু শুধু দু একদিনে বুড়ো শশুর শাশুড়ির সেবা যত্নের ভান ধরে কি লাভ??”
.
শান্ত রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহানা কথা বলা শুরু করলো
.
মা??আপনি বললে আপনার সাথে আজ রাতে ঘুমাই??
.
রেনু মা মাংস চামচ দিয়ে নাড়ানো বন্ধ করে চমকে পিছন ফিরে আহানার দিকে তাকালেন
স্পষ্ট মায়া প্রোজ্জ্বলিত হয়ে আছে আহানার সারা মুখে,রান্নাঘরের দেয়ালে বাম পাশে আর ডান পাশে দুটো বাতি,তাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আহানাকে,অথচ একটুখানি মেকআপ ও সে করেনি কিন্তু তার পরেও উনি কয়েক মিনিটের জন্য থম হয়ে গেলেন
এমন মায়ার চেহারা এর আগে তিনি দেখেন নি
ফকফকা ফর্সাও না আবার কালো ও না,এ কেমন রুপ!!
আমার সায়নের যদি এমন একটা বউ থাকতো,সারাদিনে একবার ওর মুখের দিকে তাকালেই সকল মনের কষ্ট দূর হয়ে যেতো,এই ভেবে উনি আবার মাংস নাড়ায় মন দিলেন
শান্ত আর ফুফু তো অবাক,আহানার প্রশ্নের উত্তর শুনে আর রেনুর চেহারার রিয়েকশান দেখে
.
ফুফু পোলাও বাটিতে নিতে নিতে বললেন “মা!!এখন তোমার কিছু করতে হবে না,আমরা আছি না?যাও বাসাটা ঘুরে দেখো”
শান্ত খালার থেকে ২পিস শশা নিয়ে আহানার হাত ধরে বেরিয়ে গেলো,এবার গেলো বাবার রুমে
বাবা রকিং চেয়ারে বসে পেপার পড়তেসেন,সকাল থেকে সারাদিন তিনি পেপার পড়ার সুযোগ সময় দুটোই পান না,, মাঝে মাঝে পান তবে তখন পড়তে ভালো লাগে না,ঐ যে রাতে পড়তে পড়তে একটা অভ্যাস তৈরি হয়ে গেসে তার
তাই এই রাতের বেলায় মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়তেসেন তিনি
শান্ত দরজায় দুটো টোকা দিতেই বাবা চমকে দরজার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বললেন “আয় ভিতরে আয়”

শান্ত ভিতরে ঢুকেই বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে বললো “বাবা??মায়ের গায়ের গন্ধটা আসতেসে,তুমি আবার মায়ের সেই পারফিউমটা দিয়েছো?”
.
হ্যাঁ রে,তোর মাকে আজ খুব মনে পড়তেসে,আজ থাকলে পুরো বাড়িটা মাথায় করে রাখতো সে,তার ছেলের বউ এসেছে,কতই না খুশি হতো সে,তাই পারফিউমটা দিয়ে তাকে অনুভব করতেসি,মনে হচ্ছে আমার আশেপাশেই আছে
.
পারফিউমটা শেষ হলে কিন্তু তোমাকে সেই আবার কুমিল্লা যেতে হবে
কারণ সেই পারফিউমটা কুমিল্লার একটা ছোটখাটো কারখানায় তৈরি হয়
মায়ের পছন্দ এত নিখুঁত যে মাঝে মাঝে অবাক হতাম আমি
.
হ্যাঁ রে সে নিজেই অানকমন একটা মানুষ ছিল যাকে আমি মৃত্যু পর্যন্ত ভুলতে পারবো না
.
বাবা! আহানা ও এসেছে আমার সাথে
.
তা বাইরে কেন ভিতরে আসতে বল
.
আহানা পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে ঢুকলো রুমে
বাবা হেসে বললেন “”কি মা?এই বাড়ি পছন্দ হয়েছে তোমার??তোমার এই শাশুড়িকে কেমন লাগলো?
.
আরে বাবা ও মাত্র কিছুক্ষণ আগে একটা মারাত্মক জবাব দিয়েছে মায়ের কথায়
.
কি বলেছে?
.
শান্ত বাবার বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে একটা কুশন জড়িয়ে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললো “আহানা বলেছে সে আজ রেনু মায়ের সাথে ঘুমাতে চায়”

বাবা রকিং চেয়ার থেকে পড়েই যাচ্ছিলেন কথাটা শুনে,উনিও হাসা শুরু করে দিলেন
আহানা দাঁত কেলিয়ে ওয়ারড্রোবের সাথে লেগে মুখ নিচু করে আছে
.
হাহহাহা,ব্রিলিয়েন্ট,সো মাচ ব্রিলিয়েন্ট!!
.
আচ্ছা বাবা তুমি পেপার পড়ো আমি ওকে বাকি রুম গুলো দেখিয়ে আসি
.
ওকে যা
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে সায়নের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় থেমে বললো বাইরে থেকে দেখতে,ভিতরে গিয়ে দেখলে মদের গন্ধে আর রুমের হাবিজাবি জিনিসের গন্ধে বমি আসবে
আহানা বললো তার এমনিতেও ইচ্ছা নাই
.
তারপর তারা গেলো মিতুর রুমে
পুরো পিংক কালারের রুমটা,কোণায় একটা সিঙ্গেল বেড,সেটার বেড কভার থেকে শুরু করে পর্দা,আলমারিও পিংক কালার,বাচ্চাদের রুমের মত,মিতু বাথরুম থেকে বেরিয়ে আহানা আর শান্তকে দেখে চুপ করে তাকিয়ে রইলো
শান্ত আর আহানা কিছু বললো না!সোজা হাঁটা ধরলো
.
এবার তারা এসেছে বাগানে,আহানা ফুলগুলোতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতেসে
শান্ত রিয়াজকে ফোন করলো
.
হ্যালো রিয়াজ শুন ভাই আমার রুমে গিয়ে আলমারির প্রথম তাকে কয়েকটা শপিং ব্যাগ দেখবি কাল আসার সময় ওগুলা নিয়ে আসিস
.
কেন বলতো?
.
আরে আমি আমার প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে তোদের সবাইকে শপিং করে দিয়েছি সাথে মা বাবা আর আমার পুরো ফ্যামিলির জন্য ও কিনেছিলাম আসার সময় এত ব্যস্ততায় আনতেই ভুলে গেসি
.
ওকে আমি নিয়ে আসবো
.
ওকে বাই

আহানা একটা গোলাপ হাতে নিয়ে ঘ্রান নিয়ে পিছনে তাকাতেই শান্তর সাথে ধাক্কা খেলো,পড়ে যেতে নিতেই শান্ত ওর কোমড়ে হাত নিয়ে ধরে ফেললো ওকে
.
তা কি খবর আমার পাতানো বউ??
.
আহানা মুচকি হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো
.
শান্ত আহানাকে টেনে বাসার বাইরের সেই সরু রাস্তাটায় নিয়ে গেলো,পুরো রাস্তা অন্ধকার,আশেপাশে ছোটখাটো টিনের ঘরের ভিতর থেকে আলো এসে রাস্তা টাকে কোনোরকম আলোকিত করে রেখেছে
দুজনে সেই আলো ধরেই হাঁটতেছে
.
জানো?তুমি সেদিন এই রাস্তায় আমাকে ধরে যেভাবে কেঁদেছিলে সেদিনই আমি শপথ নিয়েছিলাম আমি তোমার জীবনের দায়িত্ব নিবো
আর দেখো নিয়েও ফেলেছি এভাবে যে নিব তা একদমই ভাবিনি,তবে নিবো এটা ভেবেছিলাম আমি
.
আচ্ছা আমরা এখানে থেকে গেলে হয় না?বাবা মায়ের সাথে
.
শান্ত হাঁটতে হাঁটতে বড় একটা নিশ্বাস ফেলে বললো “”না এখানে থাকা পসিবল না,আমার মা হলে আমি বাধা দিতাম না তোমাকে, কিন্তু এখানে যারা আছে তারা তোমাকে আর আমাকে সুখে থাকতে দিবে না
ইস্পেশালি সায়ন,এক নাম্বারের কেরাক্টারলেস,আমাদের বাসায় একবার একজন বুয়ার মেয়ে আসতো,নাম রাইতা,সায়ন তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে মেয়েটাকে প্রেগন্যান্ট করেছিল,পরে রেনু মা কত টাকা খরচ করে ঐ মেয়েটাকে থেকে সায়নকে ছাড়িয়েছে,পুলিশ কেস হওয়ার আগেই সব solve করে ফেলসে
আজ দেখোনি তোমার দিকে কি নজরে তাকাচ্ছিলো?
.
আহানা শান্তর হাত মুঠো করে ধরে আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো,মুখ ফুটে একটা কথা বললো,আর সেটা হলো”আমার এই জীবনে আপনি ছাড়া আপন আর কেউ নেই”

শান্ত হালকা হেসে হাতটা আহানার কাঁধে রেখে হাঁটতে হাঁটতে বললো “আমার তো তুমি আর বাবা ছাড়া কেউ নেই!
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে “শান্তি নিবাসে” আসলো
মায়ের কবরটাতে গিয়ে বসে পড়লো সে
আহানা দূর থেকে চেয়ে আছে,শান্ত মাটি হাত দিয়ে ঘষে নিয়ে কপালে লাগিয়ে কেঁদে দিলো
যে ছেলে তার মায়ের মর্ম বুঝে তারই মা হারিয়ে যায়
আর যারা মর্ম বুঝে না তাদের এমন সময় হারিয়ে যায় যখন সে মর্ম বুঝতে শিখেছে
আহানা আশ্রম থেকে বেরিয়ে সেই ডোবাটার দিকে তাকিয়ে রইলো,,হোক না হোক এই ডোবাটার সাথে তার বাবা কিংবা মায়ের সম্পর্ক রয়েছে,তারা তো একদিন এখানে এসেছিল তাই না!!কোন জায়গা দিয়ে এসেছিল তারা,তারা হবে নাকি একজন হবে শুধু,আমাকে মা নাকি বাবা ফেলে গেসিলো সেদিন??
আহানা ডোবাটায় থাকা একটা পলিথিনের দিকে তাকিয়ে কেঁদে দিলো কাঁদতে কাঁদতে পিছিয়ে গিয়ে দেখলো শান্ত ওর দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে
আহানা শান্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো
“আমার মা বাবাকে একবার দেখতে চাই শান্ত!!”
চলবে♥