প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 55
কিছু কিছু মেয়ে জেলাস হতে হতে শেষ হয়ে যাচ্ছে,আহানাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে যাচ্ছে তারা
তবে এই আহানার আর কয়েক মাস আগের আহানার আকাশ পাতাল তফাৎ
এখনকার আহানার গায়ে নতুন জামা,ঠোঁটে হাসি,সাথে নতুন সাইড ব্যাগ,পায়ে নতুন জুতা,সব মিলিয়ে এখন মনে হচ্ছে আসলেই সে শান্তর ওয়াইফ
শান্ত আহানার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো ক্লাসরুমের দিকে যেতে
আহানা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো,আজ ক্লাসে এসে বসতেই সবাই মিলে ঘিরে ধরলো ওকে যে কিভাবে শান্তকে ইম্প্রেস করেছে সে
আর এতদিনে কেউ ওর দিকে ফিরেও তাকাতো না
এখন মনে হচ্ছে আহানা কোন বিশিষ্ট ব্যাক্তি!
দুম করে মাথায় বাড়ি খেলো আহানা তাও রুপার হাতে
আহানা মাথা ঘষতে ঘষতে বললো “কিরে এত জোরে মারলি কেন তুই?”
তোর মাথা ফাটাই ফেলবো,জোরে মারছি না?বেয়াদব কোথাকার!!আমাকে জীবনে আপন ভাবিসনি তুই
তুই এত বড় একটা কথা কিনা আমার থেকে লুকালি,তোর মতো বেস্টফ্রেন্ড যেনো আর কারও না হয়,আমি এই দোয়া করবো এখন থেকে
.
আমার কথা তো শুনবি!
.
আর কি শুনাবি?এবার বলবি তুই গর্ভবতী?
.
আরে না,আসলে আমি
.
চুপ করো,অসভ্য মাইয়া!!আমার বিয়ের আগেই উনি বিয়ে করে বসে আছেন সেই বাসি খবর আজ জানাতে এসেছে তাও উনি জানাননি সয়ং উনার হাসবেন্ড জানিয়েছেন
তোর বিয়েতে কি আমি বেশি খেয়ে নিতাম?
নাহয় লেগ পিস ৪টা খেতাম এর বেশি তো খেতাম না?? তাই বলে তুই আমাকে দাওয়াত দিলি না
দাওয়াতের কথা বাদই দিলাম একবার জানালি ও না
আবার আমাকে বলিস তোরা প্রেমের পাঁচফোড়ন টেস্ট ও করিসনি,এখন তো মনে হচ্ছে টেস্টের সাথে সাথে সেই পাঁচফোড়ন দিয়ে আমের- জামের,বরইয়ের,চালতার আচার ও বানানো হয়ে গেসে,খাওয়াও হয়ে গেসে এখন আসছিস খালি আচারের বোয়াম দেখাতে!!
তোরে কাইট্টা ফালাইলেও আমার রাগ কমবে না,মোহনগঞ্জে গেলে যে বিয়ে হবে তোদের সেখানে যদি তুই আমাকে ৪+৪=৮টা লেগ পিস না দিছোস তো তোর খবর আছে!!
.
আচ্ছা আচ্ছা এবার একটু ঠাণ্ডা হ প্লিস
.
রুপা রেগে রেগে বললো “এখন আমার কিছু খেতে হবে তা না হলে মাথা ঠাণ্ডা হবে না আমি ক্যানটিন থেকে আসতেসি”
.
একটা মেয়ে পাশে এসে বললো “তো বলো না আহানা কিভাবে শান্তকে ইম্প্রেস করলা??”
.
এলিনা এসে দাঁড়ালো তখনই,চোখ মুখ তার ফুলে অজগর হয়ে আছে
গাল ফুলিয়ে বললো “আমি জানি কিভাবে সে শান্তকে ইম্প্রেস করেছে”
.
সবাই এলিনার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো বলো তাহলে কিভাবে করেছে
.
এলিনা দাঁত কেলিয়ে বললো “ওর মতো রাস্তার মেয়েরা দেহ বিক্রি করে কোটিপতি ছেলেদের বশে আনতে পারে জাস্ট ২মিনিটেই”
.
সবাই আহানার দিকে তাকালো,আহানা হতভম্ব হয়ে গেসে এলিনার কথা শুনে
এলিনা একটু এগিয়ে এসে একটা বেঞ্চে উঠে বসে বললো “তোমরা জানো ওর মা বাবা নাই?এতদিন একা একা থাকতো,তোমাদের কি মনে হয় শান্তই ওর জীবনের প্রথম পুরুষ??”
.
সবাই এবার বলাবলি শুরু করে দিয়েছে
আহানার কানে আসলো একজন বলতেসে “তাই তো,একা একটা মেয়ে এতদিন একা তো থাকতে পারে না নিশ্চয় কিছু একটা ৭/৫ আছে”
.
একটা মেয়ে এসে তো বলেই দিলো যে সত্যি কি তুমি একা একা থাকতা এই শহরে??
শান্ত ভাইয়া জানে তোমার চরিত্রের কথা??
আহানা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বললো “আমি ২টা আপুর সাথে বাসায় ভাড়া থাকতাম
আর সব রাস্তার মেয়েরা চরিত্রহীন হয় না,কেউ কেউ সতী ও হয়”
আর কিছু বললো না সে চুপচাপ ব্যাগ নিয়ে উঠে চলে গেলো ক্লাসরুম থেকে
ঐদিকে শান্তকে নওশাদ গলা টিপে মেরেই ফেলতেসে
কারণ হলো সে বিয়ে করেছে তাদের অগোচরে,আর আজ এতদিন পর জানালো
শান্ত ওদের বুঝানোর চেষ্টা করতেসে কিন্তু তারা বুঝার চেষ্টাই করছে না
মারামারি লেগে গেছে,নওশাদ তো রাগ করে চলেই যাচ্ছিলো ভার্সিটি থেকে যে তার কলিজার দোস্ত কিনা তাকে বিয়ের কথা জানাইনি?
শান্ত নওশাদকে জড়িয়ে ধরে আটকে রেখেছে
এদিকে রিয়াজ আর সূর্য পাশেই দাঁড়িয়ে গাল ফুলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত নওশাদকে থামিয়ে কানে হাত দিয়ে বললো”আই এম সরি,তোরা প্লিস আমাকে মাফ করে দে,আমি বিপদে পড়ে বিয়ের খবর এতদিন জানাইনি,প্লিস ভুল বুঝিস না
তোরা আমার ভাইয়ের চেয়েও বেশি এটা তোরা জানিস তাহলে এখন কেন ভুল বুঝতেছিস,আমি সত্যি পরিস্থিতির শিকার হয়ে কথাটা চাপা রেখেছি
.
নওশাদ ব্রু কুঁচকে বললো “হইসে যা!!মোহনগঞ্জ যে বিয়ে হবে সেটাতে আমরা যেন ঘোড়ার গাড়ীতে করে রেলস্টেশন থেকে তোদের বাসা পর্যন্ত যেতে পারি এমন ব্যবস্থা করে দে তাহলে তোকে মাফ করবো”
.
মানে?
.
মানেটা সহজ,ইন্ডিয়ায় বেশিরভাগ বিয়েতেই বরের বেস্টফ্রেন্ডরা বিয়ের দিন ঘোড়ার গাড়ী করে স্টেজ পর্যন্ত যায়,যা জাক্কাস লাগে না সবাই তাকাই থাকবে তখন
.
তোর কাল বিয়ে হয়ে যাবে এরপর তোর দিকে কেউ তাকালেও কি না তাকালেও কি
.
অবশ্যই কারণ আছে,যেসব মেয়েরা আমাকে দেখে জেলাস ফিল করবে তারা মনে মনে ভাববে ইস আগে কেন এই ছেলেটাকে দেখলাম না
ছেলেটার বিয়ে হয়ে গেলো ধুর ধুর!!
.
রিয়াজ দাঁত কেলিয়ে বললো আর আমরা তো এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করছি না হুহ😎আমাদের ও স্কোয়াদ হবে
দ্যা শান্ত গ্যাং🤘🤙
রিয়াজ নওশাদ তোরা চুপ কর,রিয়াজের তো তাও জিএফ আছে মনিরা!!
আমার তো গফ ও নাই,আমি যত পারবো সেদিন তত মাইয়ার লগে flirt করেই যাবো
.
রুপা দৌড়ে দৌড়ে আসলো ক্লাসরুম থেকে
হাঁপাতে হাঁপাতে শান্তকে বললো আহানাকে আটকাতে,সে চলে যাচ্ছে
.
শান্ত চমকে বললো “কেন কি হইসে?আর ও কোথায়?”
.
আরে শান্ত ভাইয়া আমি গেসিলাম ক্যানটিনে,তাই আমি ব্যাপারটা জানতাম না পরে এসে শুনলাম এলিনা নাকি আহানাকে অনেক কথা শুনাইসে
বলছে যে আহানা রাস্তার মেয়ে,আর!!
.
আর কি?
.
আর ও আপনার কাছে দেহ বিক্রি করে আপনার মন জোগাইছে
.
শান্তর হাতে কাঁচের কোকাকোলার বোতল ছিলো,ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সোজা এলিনার কাছে গেলো,সেকেন্ড ফ্লোরে
এলিনা তার বান্ধুবীদের সাথে কথা বলতেসে
শান্ত হাত উঠালো ওকে চড় মার জন্য সাথেসাথে আহানা এসে আটকে ফেললো ওকে
.
আহানা হাত ছাড়ো আমার!!
.
না প্লিস
.
এলিনা চোখ বড়বড় করে বললো” শান্ত তুমি আমাকে মারবে?”
হাউ ডেয়ার ইউ!!!
তোমার এত বড় সাহস তুমি আহানার সাথে-
আমার স্ত্রীর সাথে এতটা চিপ বিহেভ করো
আহানা হাত ছাড়ো আমার আমি রাগ কনট্রোল করতে পারছি না
.
না,আমার কসম আপনি হাত তুলবেন না!
.
শান্ত থেমে গেলো,আহানার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে চলে গেলো সে
আহানা ও চুপচাপ তার পিছু পিছু আসলো
♣
দুজনেই বাইকে বসে আছে,শান্ত এক রাশ রাগ নিয়ে বাইক চালাচ্ছে আর আহানা শান্তর জ্যাকেটের একটু খানি ধরে রেখেছে,পুরোটা ধরে রাখার সাহস পায়নি,ভয় করছে শান্তকে
শান্ত কোনো কথা বলতেসে না ওর সাথে
সোজা আহানার বাসার সামনে এসে বাইক থামালো
কিন্তু নিজে বাইক থেকে নামলো না
আহানা ভয়ে ভয়ে বাইক থেকে নামলো,শান্ত বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যেতে নিতেই দাদা ডাক দিলো বাসার ভিতরে থেকে
বাধ্য হয়ে থামলো সে,দাদা বললেন আজ তাদের বাসায় মিলাদ,শান্ত যেন এসে সবার সাথে জয়েন করে
শান্ত গাল ফুলিয়ে উনার সাথে চলে গেলেন বাসার ভেতর
.
আহানা দোতলায় এসে ব্যাগটা রেখে ঘড়িতে চেয়ে দেখলো সবে সকাল ১০:৩০বাজে
সকাল থেকে শরীরটা দূর্বল লাগতেসে,কি জন্যে এমন হচ্ছে তা বুঝার বা জানার চেষ্টা করলো না সে,কারণ এরকম তার কয়েকবছর ধরে হচ্ছে
রান্নাঘরে এসে ভাত বসালো সে,তারপর ওড়না খুলে ডাইনিংয়ের চেয়ারে রাখতে এসে দেখলো শান্ত সোফায় বসে আছে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে
.
আহানা ভয়ার্ত গলায় বললো “চা খাবেন?”
না!
.
আহানা শান্তর সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকলো
কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে শান্তর হাতটা ধরলো সে তারপর বললো “শান্ত আমি চাই না আপনি আমার জন্য কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুলেন,এটা ভালো দেখায় না”
.
শান্ত হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আহানার ২হাত শক্ত করে চেপে ঝাঁকিয়ে বললো”আমি কাউরে মেরে ফেললেও তুমি কে সেটা বলার??তোমার সাহস হয় কি করে নিজের কসম দেওয়ার??এত বড় সাহসিকতা তোমাকে দেখাতে বলছে কে?”
.
আহানা চুপ করে থেকে বললো “এলিনার আপুর জায়গায় উনি ঠিক আছেন,কোনো মেয়েই এটা সয্য করতে পারবে না তার ভালোবাসার মানুষ অন্য কাউকে বিয়ে করলে,তাই আপনি যদি আজ উনাকে মারতেন তা উনার সাথে অন্যায় হতো”
.
সে যে বলছে তুমি রাস্তার মেয়ে সেটা?
.
আহানা হালকা হেসে বললো “ঠিকই তো বলছে”
.
শান্তর রাগ অনেক বেড়ে গেলো আহানাকে আরও জোরে চেপে কাছে টেনে বললো “তুমি রাস্তার মেয়ে না,তুমি আমার মায়ের হাতে জীবনের প্রথম খাবার গ্রহন করা সেই মেয়ে
আর সেই মেয়ে কখনও রাস্তার মেয়ে হতে পারে না,তোমার বাবা মা নাই তো কি হয়েছে,তোমার স্বামী আছে,এটা তোমার পরিচয়,তোমার তুমি আছো এটা তোমার পরিচয়
আর সে আবার কি বললো,তুমি নাকি নিজেকে আমার কাছে বিক্রি করেছো??আমি এলিনাকে ছাড়বো না,তুমি তোমার কসম উঠাও,ওরে শাস্তি না দিলে আমার রাগ কমবে না
.
শান্ত প্লিস মাথা ঠাণ্ডা করেন,আমি ভুলে গেসি না?আপনিও ভুলে যান
.
আমি ভুলবো না,duffer!আর কোনোদিন কসম দিবা না আমাকে
আমার মা ও কসম দিতো এরকম,কথায় কথায় কসম দিয়ে বসে থাকতেন
আর আজ উনি!!
আমার একটা কাটা কথা তুমি আর কসম দিতে পারবা না আমাকে!ব্যস!
শান্ত আহানাকে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে কথা বলতেসে
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলো শান্ত ধরে ফেললো ওকে
আহানা??!আহানা!
.
আহানা মাথা ধরে বললো “হুম”
.
কি হইসে তোমার?শরীর খারাপ?
.
শান্ত আহানাকে সোফায় এনে বসালো,আহানা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে
আহানাকে এক গ্লাস পানি এনে দিলো সে,তারপর ওর পাশে বসে কপাল চেক করলো
নাহ জ্বর তো নেই তাহলে কি হইসে,চলো আমার সাথে হসপিটালে যাবা
.
না,আমি ঠিক আছি,সকাল থেকে দূর্বল লাগছিলো কম খেয়েছি হয়ত তাই,ঠিক হয়ে যাবে
.
আর কসম দিবা না কোনোদিন
কথাটা বলে শান্ত উঠে বারান্দায় চলে গেলো
আহানা চুপ করে থেকে রান্নাঘরে চলে আসলো
ভাত তো খেয়েছিলাম ঠিকমত তাহলে এভাবে দূর্বলতার কারণটা কি,যদি হয় মৃত্যু তাহলে বেশ হবে,শান্ত বেঁচে যাবে,আমার সাথে জড়ালে ওর জীবনটা নষ্ট হবে আর আমি সেটা চাই না
আমি যদি মরে যাই তাহলে কারোর কিছু যায় আসবে না
শান্ত হয়ত কদিন কাঁদবে তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে,কিন্তু আমার মায়ায় জড়ালে ও নিজেকে সামলাতে অনেক কষ্ট পাবে আর আমি সেটা চাই না,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঝামেলা চুকে গেলেই ভালো হবে,আমি আজই হসপিটালে যাবো,কতদিন বাঁচব জেনে আসবো,সে অনুযায়ী শান্ত থেকে দূরে থাকবো,ওকে কাছে আসতে দিব না
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আহানা খেয়াল করলো দুটো হাত তার কোমড় ছুঁয়েছে পিছন থেকে এসে,হাতগুলো শান্তর,ছোঁয়াতেই টের পেলো সে
তারপর তার পিঠে মাথা ঠেকিয়েছে শান্ত
আহানা রোবটের মত দাঁড়িয়ে আছে,যার থেকে দূরে থাকার প্ল্যানিং করতেসিলাম এখন সে আমার খুব কাছে আসতে চাইছে
আহানা চোখ বন্ধ করে কোমড় থেকে শান্তর হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে গেলো
কোমড় থেকে কাগজটা নিয়ে বললো “ছুঁবেন না আমাকে”
শান্ত ব্রু কুঁচকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে চলে গেলো
.
আহানা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বেরিয়ে দেখলো শান্ত নেই,যাক বাবা তার মানে চলে গেছে,শান্তিতে নিজের রুমে ঢুকতেই দেখলো শান্ত ওর বিছানায় শুয়ে আছে চুপ পরে ছাদের দিকে তাকিয়ে
বিরক্তি নিয়ে আহানা বললো “কি হলো বাসায় যাবেন না?”
.
ছাদটা দেখতে দেখতে ঠাণ্ডা গলায় সে বললো
“তুমি অসুস্থ,আমি তোমাকে একা রেখে কি করে যাই?”
.
আহানা বিরক্তি নিয়ে বললো “আমি ঠিক আছি যান এখন”
তাও শান্ত উঠতেসে না দেখে আহানা শান্তর হাত ধরে টেনে বাসা থেকে বের করে দিলো,দরজা লাগিয়ে ওড়না খুঁজে কিছুকক্ষন অপেক্ষা করে বাসা থেকে চুপিচুপি বের হলো সে,হসপিটালে যেতে হবে তাই
হসপিটালে এসে একজন মহিলা ডাক্তারের সাথে দেখা করলো সে
উনি ৭/৮টা টেস্ট দিসেন,সব মিলিয়ে ৪হাজার টাকা,এত টাকা তো নেই,আহানা তাই অনেক গুলো টেস্ট ডেনি করলো
টেস্ট করিয়ে এসে চুপ করে হসপিটালের সিটে বসে আছে সে,টেস্টের রিপোর্টের অপেক্ষাই
শান্ত কল করলো,ওর কল দেখে আহানা ভয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে তারপর রিসিভ করলো
শান্ত বললো ১২:৩০এ রেডি হয়ে থাকতে,একসাথে অফিস যাবে,আহানা ঠিক আছে বলে ফোনটা রাখলো,ভাগ্যিস বলেনি আমি কোথায়?তাহলে কি জবাব দিতাম
টেস্ট আসতে ১ঘন্টার বেশি সময় লাগলো,বেশিরভাগ টেস্টই আহানা কেটে দিসে বলে তেমন সময় লাগেনি
ডাক্তার রিপোর্ট দেখে মুখটা ফ্যাকাসে করে বললেন “আপনার তো শরীরে রক্তই নেই!আপনাকে তো এখনই হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে,আপনার জন্য বিপদজনক এই সিচুয়েশনটা
আপনার রক্তের পয়েন্ট অনেক কম,৪ আর ৫ এর মাঝামাঝি,আপনি এখনও দাঁড়িয়ে আছেন কি করে সেটাই ভাবতেসি আমি,জলদি করে ৩ব্যাগ রক্ত দিতেই হবে,একদিন পর একদিন করে দিবেন,আমাদের হসপিটালে “এ পজিটিভ” রক্ত আছে,কিনে দিয়ে ফেলেন
আহানা ঠিক আছে বলে বের হলো
রক্ত কেনার টাকা নেই আমার কাছে,আর রক্ত দেওয়ার সময়টাও নেই,শান্ত তো আমাকে এক মিনিটের জন্য ও ছাড়তে চায় না আর ওকে জানানো একদমই ঠিক হবে না
সামান্য এ ব্যাপারে জানলে সব মাথায় তুলবে সে,তার উপর সে নিজের পকেট থেকে খরচ দিতে চাইবে
আর আমি তার দেওয়া টাকা নিতে পারবো না কিছুতেই
তারউপর কাল রুপার গায়ে হলুদ,,আমি এখন শান্তকে রিপোর্টের ব্যাপারে বললে সে নির্ঘাত রুপা আর নওশাদ ভাইয়ার বিয়েতে এটেন্ড করবে না
পরে নওশাদ ভাইয়া মন খারাপ করবেন সাথে রুপাও,আমি এটা হতে দিতে পারি না
সকাল থেকে ভার্সিটি তারপর দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস তারপর রাত ১০টা পর্যন্ত গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান
কাল তো সময় পাবোই না,পরশু ও না,তার পরেরদিন ও না
তাহলে কি করবো,অবশ্য ৩/৪দিনে তো আর মরে যাবো না আমি
হ্যাঁ রুপার বিয়ের ঝামেলা মিটে গেলেই আমি সময় করে রক্ত দিব,কিন্তু বেতন পেয়েছি ১০হাজার টাকা,বাসা ভাড়া দেওয়ার পর আর তরিতরকারি কিনার পর ওগুলা থেকে ১টাকাও থাকবে না আর
অবশ্য মিষ্টির মা ৫/৬দিন পর ২হাজার দিবেন,আর শান্ত ৩হাজার দিবে নোটসের জন্য
৭হাজার বাসা ভাড়া,তরকারি মাসকাবারি সব কিনতে ৩হাজার গেসে আমার,বাকি ৫হাজার দিয়ে দেখি এই রক্তের ভেজাল মিটাবো
চেয়েছিলাম এই টাকাগুলো সঞ্চয় করবো তা আর হলো না
কোথা থেকে এই রোগ আসলো,আমাকেই সব বিপদ ধরতে আসে
ভাবলাম এবার হয়ত মরবো কিন্তু নাহহহ আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখবে আমাকে!!
ভাবতে ভাবতে বাসায় এসে ঢুকতেই আহানা দেখলো শান্ত সোফায় বসে টিভি দেখতেসে
আহানা হাতের রিপোর্টটা ওড়নার পিছনে লুকিয়ে ফেললো
.
কি হয়েছে?কোথায় গেসিলে?আমি বাসায় এসে তোমাকে পেলাম না
চলবে♥