প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 50
আহানা গালে হাত দিয়ে মাথা দেয়ালে লাগিয়ে চেয়ারে বসা অবস্থায় ঘুমাচ্ছে
শান্ত আহানার কাছে এসে হাতের ওড়নাটা নিয়ে ওর গায়ে পরিয়ে দিলো
আহানা সাথে সাথে চোখ খুলে শান্তকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
“আপনি উঠতে গেছেন কেন?”
.
নাহ ঠিক আছে,এখন পায়ের ব্যাথা কমে গেছে,হাঁটা চলা করতে পারি
তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো,আহানা বললো সে গিয়ে দেখবে
আহানা গিয়ে দরজা খুলতেই এক এক করে রিয়াজ,নওশাদ আর সূর্য মিলে বড় বড় বক্স হাতে নিয়ে ঢুকতেসে বাসার ভেতর
আহানা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো এগুলা কি??
নওশাদ থেমে মুখে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললো চুপ থাকতে
আহানা ওদের চলে যাওয়া দেখছে
কি করবে ওরা,আর আমাকেই বা কেন চুপ হতে বললো?
শান্ত তার রুম থেকে এসে বললো আহানা তুমি এখন চাইলে যেতে পারো
নওশাদেরা সবাই এসেছে যখন
তুমি বরং বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও,আর যদি মন চায় তাহলে আমার রুমেও থাকতে পারো,আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই
আহানা “না ঠিক আছে” বলে চলে গেলো
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে,সকাল থেকে অনেক খেটেছে মেয়েটা এখন একটু রেস্ট নিক আর তাই ওকে যেতে বললো সে
.
নওশাদ রিয়াজের রুম থেকে ঠুসঠাস সাউন্ড আসতেসে,সকাল থেকে ওরা কি পাকাচ্ছে সেটাই বুঝতেসে না শান্ত
কিরে তোরা কি করিস?দরজা খোল বলতেসি
.
শান্ত,যা এখন,আমরা একটা কাজ করতেসি
.
কি কাজ করিস তোরা আমাকে না জানিয়ে?খোল দরজা নাহলে ভেঙ্গে ফেলবো
.
যা! পরে জানতে পারবি
.
শান্ত গাল ফুলিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো,বিকালের শেষ দৃশ্য চারপাশটায়
এই বিকালবেলাটা শান্তর খুব খুব প্রিয়,মনের ভেতরটা কফি কফি করতেসে,কফির ঘ্রান ও আসতেসে,বুয়া মনে হয় কফি বানাচ্ছে
চোখ বন্ধ করে বড় একটা শ্বাস নিলো সে,মায়ের কথা মনে পড়লো সাথে সাথে
বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে ল্যাম্পশ্যাডের টেবিলটার উপরে মায়ের একটা ছবি রাখা আছে,সেটার দিকে তাকিয়ে রইলো সে
মা যেনো হেসে তাকিয়ে বললো অগ্রিম শুভ জন্মদিন আমার শান্ত
শান্ত চমকে আবারও তাকালো ছবিটার দিকে
নাহ এটা কল্পনা তবে হয়ত সত্যি,কাল আমার জন্মদিন এই কথা শুধু মায়ের মনে আছে,আর সবার আগে মা উইস করে,আমি তো ভুলেই গেসিলাম
শান্ত হেসে দিয়ে আহানাদের বাসার দিকে তাকালো,মনে হয় আহানাকে দেখা যাচ্ছে,রুম থেকে দূরবীনটা এনে সেদিকে দেখতে থাকলো সে
আহানা ওড়না কোমড়ে পেঁচিয়ে রান্না করতেসে
কফি নিয়ে তাড়াতাড়ি শেষ করে সে বেরিয়ে পড়লো আহানার বাসার দিকে
♣
কে??
.
তোমার বর
.
আহানা মুচকি হেসে গিয়ে দরজা খুললো,ওপারে শান্ত হেসে দাঁড়িয়ে আছে
.
কিছু খাবেন?
.
নাহ,কফি খেয়ে এসেছি,ভাল্লাগতেসিলো না বলে এখানে চলে এসেছি
.
বিছানায় গিয়ে রেস্ট নেন,এভাবে হাঁটাহাঁটি করলে পায়ে ব্যাথা বেড়ে যাবে
কাজ করতে করতে আহানা কথাটা বলে চেয়ে দেখলো তার বলার আগেই শান্ত বিছানায় শুয়ে মরার মত ঘুমাচ্ছে
তখনই দরজায় কে যেন নক করলো
আহানা শান্ত থেকে চোখ সরিয়ে গিয়ে দরজা খুললো,ওপারে ২জন লোক দাঁড়িয়ে আছে,পরনে তাদের নরমাল শার্ট আর প্যান্ট,মুখের গড়নে বয়সের ছাপ,এক গাল হাসি দিয়ে আহানার দিকে চেয়ে আছেন তারা
আহানা চমকে সালাম দিলো,উনারা সালাম নিয়ে বললেন শান্তর বাবার অফিসের কর্মচারী তারা
আহানা ব্যস্ত হয়ে তাদের ভিতরে আসতে বললো
তারা সাথে সাথে না করে বললো তারা অন্য কাজে এসেছে
আহানা শান্তকে ডাক দিলো
শান্ত হেলিয়ে দুলিয়ে বেড থেকে নেমে এগিয়ে আসলো,তাদের দেখে মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো
আহানা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে
আচ্ছা শান্ত! উনারা কারা?
.
উনি আমার শফিক কাকা আর উনি হচ্ছেন রফিক কাকা
বাবার অফিসে জব করে,তা হঠাৎ আপনারা এখানে আসলেন,কোনো সমস্যা হয়নি তো?বাবা ঠিক আছে?
.
হুম ঠিক আছে,আসলে স্যার আহানা মায়ের জন্য কিছু গিফট পাঠিয়েছেন
.
গিফট?
.
হ্যাঁ ওগুলা দিতেই আমরা এসেছি এখন,দিয়ে চলে যাব হাতে সময় নেই,মোহনগঞ্জ যেতে আবার ট্রেন ধরতে হবে
.
শফিক আঙ্কেল আহানাকে একটু সরে দাঁড়াতে বললেন,আহানা সরে দাঁড়াতেই নিচ থেকে ৩জন লোক মিলে ধরে একটা আলমারি ঢুকালো বাসার ভেতর
আহানা হা করে তাকিয়ে আছে,শান্ত হাসতেসে,কারণ তার বাবা যখন জেনেছে ছেলে বিয়ে করেছে তার উপর বউরে কিছু দেওয়া হয়নি তাহলে তো মাস্ট কিছু না কিছু দিতেই হবে
আলমারি রাখা শেষ এবার ৩জন লোক চলে গিয়ে নিচ থেকে লাগেজ আনতেসে এক এক করে,প্রায়ই ৫টার মতন লাগেজ এনেছেন,আবারও গেলেন এবার কি আনতে গেলো!
শান্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচে তাকালো,একটা বিরাট ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে,সেটা থেকে জিনিসপাতি নামিয়ে উনারা আনতেসেন দোতলায়
শান্ত বিস্মিত হয়ে বাবাকে কল করলো
বাবা রিসিভ করেই বললেন সব পেয়েছিস?
.
বাবা এসব কি,এত কিছু কেন?তোমাকে বললাম না আমার বিয়ের কথাটা আপাতত চাপা রাখো
.
আমি গিফট দিলে বুঝি সবাই জেনে যাবে তুই ম্যারিড?বলদ কোথাকার,তোকে তো দিচ্ছি না
দিচ্ছি আমার স্ত্রী শান্তির পুত্রবধূকে,তোর কি রে?চুপচাপ এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাক,আর আহানাকে ফোন দে,ওর সাথে কথা বলবো আমি
শান্ত আহানাকে ফোন দিয়ে বললো বাবা কল করেছে
.
আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন?
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম,ভালো আছি মা,সব এক এক করে দেখে বলিও তোমার পছন্দ হয়েছে কিনা,কেমন?
.
এসবের কি দরকার ছিল,আমার ইচ্ছে আমি আমার বেতনের টাকা দিয়ে কিনবো সব ধীরে ধীরে
.
সেটা কিনলে কিনিও,এখন আমার যে দায়িত্ব সেটা আমি পালন করতেসি,নাহলে স্বপ্নে তোমার শাশুড়ি এসে আমাকে বকা দিবে,কাল রাতে আমার স্বপ্নে এসে আমাকে মনে করিয়ে দিসে তোমাকে উপহার দেওয়ার কথা,তাই তো দিচ্ছি,সয়ং শান্তির এই ইচ্ছা তাই তুমি না করিও না,শান্তিকে তো চিনো,ও তোমাকে খুব ভালোবাসতো
.
আচ্ছা
আহানা ফোনটা শান্তর হাতে দিয়ে দরজার দিকে তাকালো,ঐ লোকেরা এবার সোফা আনতেসে আরও কজন মিলে ধরে টেনেটুনে
২ঘন্টার ভেতর পুরো বাসা তারা সাজিয়ে দিয়ে চলে গেলো
আহানা মাথায় হাত দিয়ে ডাইনিং টেবিলের পাশে একটা চেয়ারে বসে আছে
আর শান্ত সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে গেমস খেলে যাচ্ছে
বাবার চয়েস এত ভালো,এসব কবে কিনলো কে জানে,এখন আমার মন চাচ্ছে এখানে থাকি,টিভি দেখবো আসো আহানা,বসো এখানে
.
চুপ করেন তো,এসব নিয়ে আপনার বাসায় নিয়ে যান আমার লাগবে না
.
আমার বাসায় এসব আছে,আর তুমি এমন করো কেন,মায়ের ইচ্ছা পূরন হচ্ছে,মা তোমার কষ্ট দেখেই বাবাকে দিয়ে সব আনিয়ে দিয়েছে,আহা,বেডরুম,ড্রয়িং রুম,গেস্ট রুম,কিচেন,সব সাজিয়ে দিয়েছে,আই এম ইম্প্রেসড!!
বাট আলু পেঁয়াজ,রুসন আদা,ওগুলো দিলো না কেন?
.
আহানা সোফার থেকে কুশন নিয়ে শান্তর গায়ে ছুঁড়ে মারলো
.
সরি সরি,দেখিও আজকে মা বাবার স্বপ্নে এসে ঝাড়ি দিবে ভালো করে,তোমাকে শুধু ফার্নিচার দিয়েছে সে কারণে,কারণ মাসকাবারি জিনিসও অনেক ইম্পরট্যান্ট!
আপনি একটু চুপ থাকবেন?এমনিতেও কত টাকা খরচ হয়ে গেছে
.
বেশি না,মাত্র সাড়ে ৩লাখ টাকার ফার্নিচার
.
দাম শুনে আহানা চোখ কপালে তুলে পানি নিয়ে খেতে লাগলো বারবার
এত টাকার ফার্নিচার কিনা তার হয়ে গেলো?
♣
রাত ৮টার দিকে আহানা রান্না শেষ করে এসে দেখলো শান্ত সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে,তাই কাগজ কলম নিয়ে আরেকরুমে চলে গেলো সে
কাল সে তার চাকরির বেতন পাবে,মাসের ১তারিখ কাল
যা যা কিনবে সব লিস্ট করতেসে সে,এরপর ঐ লাগেজ গুলোর দিকে তাকালো
পা টিপে টিপে সেখানে গিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে লাগেজ খুললো
একটাতে জর্জেট শাড়ী,একটাতে সেলোয়ার কামিজ,একটাতে সুতির শাড়ী,একটাতে সাজগোজের জিনিসপাতি একটাতে শেম্পু,ক্রিম,সাবান,হেয়ার ওয়েল,ব্রাশ,টুথপেস্ট,জুতা,চুড়ি,কানের গলার সেট
আহানা হা করে বসে চেয়ে আছে,এসব তার??
একটা কালো রঙের শাড়ী নিয়ে পরে ফেললো সে
কিন্তু আয়না তো নেই,পরে মনে পড়লো তাকে তো ড্রেসিং টেবিল ও দিসে আজকে,দৌড়ে নিজের রুমে নিজেকে দেখতে যেতেই শাড়ীতে পা পেঁচিয়ে দুম করে পড়ে গেলো
হঠাৎ এমন শব্দ শুনে শান্ত ঘুম থেকে উঠে গিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো আহানা ফ্লোরে পা ধরে বসে আছে
একি!কি হইসে তোমার!!
.
না কিছু না,জলদিতে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেসি
.
শান্ত কাছে এসে আহানার হাত ধরে ওকে উঠাতে যেতেই দেখলো কালো রঙের শাড়ী পরে আছে আহানা
ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিয়ে শান্ত মুচকি হেসে ওকে তুললো নিচ থেকে
“পছন্দ হয়েছে সব?”
.
হুম,অনেক কিছু দিয়েছে আজ
কথাটা বলে আহানা নিজের রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো,ড্রেসিং টেবিলটার আয়না ফ্লোর থেকে উপর পর্যন্ত
এতদিন আয়নায় পাইনি নিজেকে দেখার জন্য আর আজ কিনা পায়ের নখ থেকে মাথার উপর পর্যন্ত সব দেখতে পারতেসি
খুশিতে আহানার চোখে পানি এসে গেলো
শান্ত দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সেন্টার ফ্রেশ খেতে খেতে বললো কাল একটা শাড়ী পরে অফিসের জন্য বের হইও
.
কেন?
.
আমি বলছি তাই
.
আহানা ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু চোখে ওর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত সেদিকে খেয়াল না করে লাগেজ থেকে একটা শাড়ী খুঁজে আহানার হাতে ধরিয়ে দিলো,লাল গোলাপি একটা শাড়ী,ঘাড়ো রঙ
আহানা শাড়ীটার দিকে চেয়ে বললো কাল পরবো কেন?
.
আমি বলছি তাই পরবা এত কথা বলো কেন তুমি?
যাও চা বানাও
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে
শান্ত সোফায় বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে
পরনে সুতার কালো শাড়ী,খোঁপা করা,কি সুন্দর লাগতেসে ওকে,কেমন যেন এই অল্পতেই শান্তর কাছে অনেক মনে হয়
আহানা চা এনে সোফার সামনে টি- টেবিলে রাখলো অথচ কাল এসময়ে সে ফ্লোরে বসে চা খেয়েছে
পুরো বাসার ভাবই পাল্টে দিয়েছে শান্তর বাবা,এর মাঝে দাদা এসে সব দেখে গেছেন,আর বলছেন বেশ ভালো সব ফার্নিচার
শান্ত চা খেয়ে বসে আছে বলে আহানা ওকে ঠেলে বের করেছে বাসা থেকে,বেশি রাত হয়ে গেলে আবার দাদা বাসা থেকে বের হতে দিবে না
শান্ত বাসায় গিয়ে নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো
জাস্ট ১২টা বাজার ২মিনিট আগে নওশাদ আর রিয়াজ,সূর্য পা টিপে টিপে রুমে ঢুকলো,শান্ত গভীর ঘুমে
টর্চ জ্বালিয়ে নওশাদ ওর পাশে এসে দাঁড়ালো
সূর্য ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো আর ১০সেকেন্ড
রিয়াজ স্প্রে নিয়ে আরও কাছে এসে দাঁড়ালো শান্তর
!
রেডি!!ওয়ান—-টু—-থ্রি!!!
হ্যাপি বার্থ ডে শান্ত!!!
নওশাদ রুমের বাতি জ্বালিয়ে দিলো সাথে সাথে আর রিয়াজ পার্টি স্প্রে দিয়ে শান্তকে সাদা ভূত বানিয়ে দিলো
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,ওরা সবাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো তোরা তাহলে এই জন্য আজ সারাদিন বাসায় ছিলি না?
আরে না আমরা তো তোর জন্য সারপ্রাইজ রেখেছি সেটা কাল সন্ধ্যায় “রক এন্ড রোল” ক্লাবে,ওখানে তোর বার্থডে সেলিব্রেট হবে,সেগুলোর ডেকোরেশনের জিনিস কিনতে গেসি বলেই আমরা আজ বাসায় ছিলাম না
.
এত টাকা খরচ করার কি দরকার?
.
আমাদের বার্থডে তেও তুই টাকা খরচ করিস তাহলে আমরা কেন নয়??এখন চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে সোফার রুমে আয় বিয়ার খাবো
.
না আমার ঘুম আসতেসে তোরা যা ইঞ্জয় কর
.
না তোকে ছাড়া চলবে না,তুই সহ চল,বার্থডে বয় হলি তুই!
৩জনে মিলে টেনে হিঁচড়ে শান্তকে সোফার রুমে নিয়ে আসলো
♣
পরেরদিন সকালে আহানা মিষ্টিকে পড়ানো শেষ করে শান্তর বাসার কলিংবেলে চাপ দিলো কয়েকবার,শান্ত কেমন আছে দেখার জন্য
শান্ত অনেক কষ্টে বিছানা থেকে উঠলো,কাল অনেক বেশি ড্রিংক করা হয়ে গেসিলো বলে দেরি করে ঘুমিয়েছে সবাই
দরজা খুলতেই হুমড়ি খেয়ে আহানার গায়ে গিয়ে পড়লো সে
এখনও মাথা ঘুরতেসে তার
আহানা চমকে ওকে ধরে বললো “পায়ে এখনও ব্যাথা হয় আপনার?”
.
না পায়ে ব্যাথা না আমার,কাল আসলে…. কিছু না,আসো ভিতরে আসো
আহানা ভেতরে ঢুকতেই দেখলো টেবিলে ৫/৬টা খালি মদের বোতল
আহানা চোখ বড় করে বললো আপনি কাল মদ খেয়েছিলেন?
হুম,বেশি না, একটা বোতল অনলি
.
কি দরকার ছিল শরীর খারাপের ভিতর এত খাওয়ার
আহানা শান্তকে বকতে বকতে ওড়না কোমড়ে পেঁচিয়ে রান্নাঘরের দিকে গিয়ে চা পাতা ২চামচ বেশি দিয়ে কড়া করে চা বানালো শান্তর জন্য
শান্ত বিছানায় পা রেখে মাথা ফ্লোরে রেখে ঘুমাচ্ছে
আহানা চা নিয়ে ওর রুমে ঢুকে দেখলো ছোট ছোট ঝকমকে কুচি করা কাগজ সারা রুমে,টেবিলের উপর পার্টি স্প্রে তবে এটা আহানা চিনতে পারলো না
শান্তর পাশে বসে ওর হাত ধরে নাড়িয়ে ওকে ডাকলো,কিন্তু সে তো মরার মত ঘুমাচ্ছে
শেষে চুল ধরে টান দিতেই উঠে পড়লো,ব্রু কুঁচকে চা নিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো” বরকে কেউ এমন করে ঘুম থেকে উঠায়??”
আহানা সেদিকে মন না দিয়ে টেবিল থেকে স্প্রে বোতলটা নিয়ে বললো “এটা এমন কেন,বাচ্চাদের কার্টুনের ফ্রিন্ট করা পারফিউমের বোতলটার উপর”
শান্ত চায়ে চুমুক দিয়ে বলতে যাবে এটা সেই পারফিউম স্প্রে না এটা পার্টি স্প্রে তার আগেই আহানা ফুসস ফুস করে তার সারা গায়ে মুখে স্প্রে করে দিয়েছে
ফেনা দেখে সে ভয়ে,চমকে ছুঁড়ে মারলো স্প্রে বোতলটা
শান্ত হাসতে হাসতে উঠে এসে ওকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরালো
আহানা সাদা ভূত হয়ে শান্তর দিকে চেয়ে আছে
শান্ত হাত দিয়ে ওর মুখ আর গলা থেকে ফেনা গুলো মুছে দিয়ে বিছানায় এসে বসে হাসতে হাসতে বললো তুমি সত্যি এই স্প্রে চিনো না?হাহাহা!!
.
চুপ করুন,ফাইজলামির জায়গা পায় না হুহ!
আহানা মুখ মুছতে মুছতে চলে গেলো বাসা থেকে
♣
চা খেয়ে ভালো লাগতেসে,মনে হচ্ছে মাথা ধরা কমেছে,আজ ভার্সিটিতে যাব নাকি যাব না?গেলে রক্ষা থাকবে না,গতবছর এই দিনে ১১টা প্রোপোজ পেয়েছিলাম এবার কয়টা পাবো কে জানে,আমি বুঝি না আমার বার্থডে তে সবাই প্রোপোজ কেন করে!
ভাবতে ভাবতে শান্ত জ্যাকেট চুজ করতে গিয়ে আলমারি খুললো,ওমা সব দেখি গোছানো,আহানার কাজ এটা,যাক ভালো হয়েছে
একটা খয়েরী রঙের জ্যাকেট নিয়ে সেটা পরে রেডি হয়ে নাস্তা করে নিলো সে
আহানা বাসায় এসে ভাত খেয়ে রেডি হয়ে বের হতেই দেখলো শান্ত বাইক নিয়ে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে
.
আহানা রেগে নিচে নেমে বললো আপনাকে কি ভূতে কিলায়?এক্সিডেন্ট হয়েছে ২দিনও হয়নি আর উনি আজ আবার বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলেন!
.
আই এম ফাইন,এখন উঠো বাইকে,ভার্সিটিতে লেট হচ্ছে
.
আহানা উঠে বসতেই শান্ত গাল ফুলিয়ে পিছন ফিরে ওর দিকে তাকালো
আহানা ঢোক গিলে বললো কি হয়েছে?
.
কি হয়েছে মানে?তোমাকে বলসি না সেই শাড়ীটা আজ পরতে?
.
আরে আজ আমার জাস্ট ২টো ক্লাস,আমি বাসায় ফিরে সেটা পরবো তারপর অফিস যাবো
ওহ,ঠিক আছে তাহলে!
ভার্সিটিতে ঢুকতেই আহানাকে সবাই পিছনে ফেলে শান্তকে ঘিরে ফেলেছে
আহানা রোবটের মত এক কোণায় দাঁড়িয়ে সবার কাণ্ডকারখানা দেখে যাচ্ছে,ভিড়ের মধ্যে যারা আছে তাদের কারোর হাতে ফুল,কারোর হাতে ফুলের তোড়া,কারোর হাতে গিফট বক্স
আহানা ভাবতেসে শান্ত কি কোনো ম্যাচ জিতেসে নাকি সবাই এমন ঘিরে ধরেছে কেন!
কান পেতে শোনার চেষ্টা করলো সে
অবশেষে সে জানতে পারলো আজ শান্তর জন্মদিন
আহানা অবাক হয়ে গেলো এটা শুনে,সে তো জানতো ও না এটার কথা,শান্ত একবারও বলেনি,বেয়াদব একটা!হুহ!
আমি গিফট দিতে পারবো না বলে আমাকে জানায় নি!👿
চলবে♥