প্রেমের পাঁচফোড়ন

প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 12

শান্তর পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে আহানা
.
দাঁড়াও!
.
কি?
.
কিছু না যাও
.
আপনি একটা!!!!
.
আহানা হাঁটতে হাঁটতে হাত থেকে কাঁটা ধরে টান দিয়ে খুলে ফেললো,ইস আমি এখন খাবার খাবো কি করে,ডান হাতেই কাঁটা ঢুকতে গেলো,২/৩বছর পর ভালো খাবার খাবো আর সেদিনই হাতে কাঁটা ঢুকতে গেলো,ফুটা কপাল আমার👿
সব হয়েছে বেয়াদবটার জন্য

আহানা একটু হাঁটতেই সামনে রুপা আর নওশাদের সাথে দেখা হয়ে গেলো তার
নওশাদ শান্তর কাছে চলে গেসে
রুপা আর আহানা হেঁটে বাসার দিকে ফিরে গেলো
তারপর সেই ফুল মিরাকে পরিয়ে দিলো
বিয়ে পড়ানো শেষ
আহানা খাবারের দিকে তাকিয়ে বসে আছে,শেষে বাবুর্চিকে বলে একটা চামচ দিয়ে যা পেরেছে খেয়েছে,তবে তেমনটা খেতে পারে নি
.
আহানা আর রুপা বিকালের দিকে রিকসা ধরে বাসায় ফিরে আসলো,আহানা এর আগে আর শান্তর মুখোমুখি হয় নি
.
বাসায় এসে কোনো কাজই করতে পারছে না হাতের ব্যাথার জন্য,টনটন করতেসে কেমন যেন,উফ কি যন্ত্রনা!
.
পরেরদিন সকালে উঠে আহানা রেডি হতে যাবে তখনই মিষ্টির মায়ের ফোন আসলো,তিনি বললেন কাল মিষ্টি তার নানু বাসায় গেসিলো,আসে নাই,তাই আজকে পড়াতে হবে না
আহানা ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলো,আবার গিয়ে একটু শুতেই ঘুমিয়ে পড়লো সে

কিরে ভাই তুই এমন উদাস হয়ে আছিস কেন?কি হয়েছে তোর?
.
না কিছু না
.
রুপা বললো আজ আহানা আসে নাই ভার্সিটিতে
.
আমি আহানার কথা জিজ্ঞেস করসি তোকে নওশাদ?
.
নাহ ভাবলাম হয়ত ওকে মিস করতেছিস

না,আমি ওকে মিস কেন করবো,ওর প্রতি কোনো interest নেই আমার

ইস রে!!দুপুর ১টা বেজে গেলো?আমি এতক্ষন ঘুমালাম,ভার্সিটিতেও যেতে পারিনি ধুর!
আহানা তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো,টিউশনি করাতেও যেতে হবে
হেঁটে যাচ্ছে আহানা,ভার্সিটির পিছনের রোড দিয়ে যাওয়া সহজ বলে আগে ভার্সিটিতে আসলো আহানা,এখন তো ২টা বাজে মনে হয়
৩টা বাজতে ১ঘন্টা বাকি,আহানা ভার্সিটির ক্যামপাসে দাঁড়িয়ে ক্লাসরুমের দিকে একবার তাকালো,রুপা আছে কিনা দেখার জন্য
নাহ দেখা তো যাচ্ছে না,থাক আমি বরং টিউশনির দিকে যাই
আহানা টিউশনির দিকে গেলো কিছুদূর যেতেই শান্তর মুখোমুখি হলো সে,শান্ত চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
.
আজ ভার্সিটিতে আসলে না কেন?
.
আপনার কি তাতে?
.
আহানা চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাত মুঠো করে ধরে টান দিলো
.
কিই?হাত ছাড়ুন,এটা কোনো ধরনের বেয়াদবি?কথায় কথায় আমার হাত ধরেন কেন?
.
শান্ত আহানার হাত টেনে ধরে ওকে কাছে নিয়ে আসলো
.
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো ছাড়ুন আমার হাত,ছাড়ুন,এমন করতেসেন কেন!
.
শান্ত তার আরেকহাত উঁচু করে ধরলো আহানার সামনে,তার হাতে কানের দুলগুলো যেগুলো আহানা বিক্রি করে দিয়েছিল
.
আহানা অবাক চোখে কানের দুলের দিকে তাকিয়ে আছে
.
এই দুলটা তোমার না?

আমার দুল আপনি পেলেন কই?
.
নিবে নাকি?
আহানা হাত বাড়িয়ে ধরতে যেতেই শান্ত তার হাতটা সরিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে ফেললো
.
কি হলো দিন আমার দুল!
.
২০টাকা দিতে হবে তাহলে দিব
.
আহানা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো এরকম করেন কেন,আমার দুল আমাকে দিন
.
কেন?তুমি তো হারিয়ে ফেলছিলে,তো আমি যখন পেয়েছি তখন এটা নেওয়ার সময় তোমার উচিত আমাকে টাকা দেওয়া হাদিয়া হিসেবে
.
আহানার চোখে পানি এসে গেলো,শান্তর হাতটা ছাড়ানোর জন্য হাত মুছড়াতে লাগলো সে
.
কি হলো বলো?নিবা নাকি নিবা না?নিতে হলে ২০টাকা দিতে হবে
.
থাক.আপনি রেখে দেন,লাগবে না আমার
আহানা তার হাতটা ছাড়িয়ে পিছিয়ে গেলো,তারপর চলে যেতে নিতেই শান্ত বলে উঠলো ২০টাকা নেই তোমার কাছে?তোমার হারিয়ে যাওয়া দুল কিনার জন্য?
.
না থাক,লাগবে না আমার
কথাটা বলে আহানা হেঁটে চলে গেলো
শান্ত দুলটা মুঠো করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে
আহানা ভাবতেসে শান্ত পেলো কই আমার দুলটা,ওটা তো আমি বিক্রি করে দিয়েছিলাম
.
আহানা বাসায় ফিরে বুঝার চেষ্টা করেই যাচ্ছে শান্ত দুলটা পেলো কই
ঘর ঝাড়ু দিতেসে সে, হঠাৎ একটা পোকা দেখলো সে,সম্ভবত চ্যালা হবে
আহানা ভয়ে পিছনে গিয়েই দুম করে দরজার সাথে একটা বাড়ি খেলো কপালে

উফ,!পোকার কামড় খাওয়ায় ভালো ছিল,কে জানত এই পোকার ভয়ে মাথায় ব্যাথা পাবো আমি
মাথা ঘষতে ঘষতে বিছানার উপর পা তুলে বসে পড়লো আহানা,ভয় করতেসে,এসব পোকা অনেক ভয় পায় সে,তার উপর বাসায় একা একা কি করবো এখন,না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো সে,ভয়ে আর বিছানা থেকে নামেনি সে,মিষ্টির আম্মু বলেছে ও এখনও নানু বাসা থেকে আসেনি
.
পরেরদিন রেডি হয়ে ভার্সিটিতে এসে বেশ ব্যস্ত সময় কাটছে আহানার
রুপা একটা assignment ধরিয়ে দিসে,ও কাল রাতে করতে পারেনি,আহানা সেটায় করতেসে
.
চল কাজ শেষ এবার ক্যামপাসে ঘুরবো
এক মিনিট তোর কপালে এটা কিসের দাগ?লাল লাল
.
নাহ কিছু না,রঙ লেগেছে মনে হয়
.
ওহহ,চল যাই
রুপা আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো ক্যামপাসের দিকে
.
তোর Assignment করে দিয়েছি আমি
.
থ্যাংক ইউ বনু
ক্যামপাসে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে আবারও ক্লাসে ফিরে আসলো দুজনে
ক্যামপাসে আজ শান্তকে আহানা দেখেনি একবারও
.
শুন তোর জামাটা আমি ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে এসেছি,দাঁড়া প্যাকেটটা আমার ব্যাগেই
আহানা তার ব্যাগ থেকে জামার প্যাকেটটা টান দিতেই ব্যাগ থেকে বেরিয়ে ফ্লোরে তার কানের দুল জোড়া পড়ে গেলো
.
আরেহহহহ আহানা তোর কানের দুল,দেখেছিস হারায়নি এটা,তোর ব্যাগের ভিতরেই ছিল এটা

কিন্তু এটা তো!
আহানা ভাবতেসে শান্ত তো ওকে এটা দেই নি,তাহলে এটা তার ব্যাগে আসলো কি করে
আহানা ভাবতেসে ব্যাপারটা
.
ধুর,কি এমন ভাবিস তুই,দে আমি পরিয়ে দিই
রুপা দুলগুলো নিয়ে আহানার কানে পরিয়ে দিলো
.
দেখ কেমন চকচক করতেসে তোর কান,তোর কান খালি মানায় না একদম
ভার্সিটিতে থেকে বের হওয়ার সময় শান্ত আহানাকে দেখে মুচকি হাসলো ওর কানে দুলটা দেখে তারপর আবার আরেকদিকে মন দিলো
আহানা শান্তর দিকে তাকাতে তাকাতে চলে যাচ্ছে টিউশনির দিকে
গুনে গুনে কদম ফেলতেসে আহানা,প্রতিদিন ২৩কদম হাঁটার পর শান্ত সামনে এসে দাঁড়ায়
২১…২২..২৩
সামনে শান্ত দাঁড়িয়ে আছে,তবে চোখ আহানার দিকে থাকলেও মন ফোনে,কার সাথে যেনন কথা বলতেসে সে
.
হুম বাবা,আমি ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছি,হুম!ওকে ডান
আহানা রোবটের মত দাঁড়িয়ে আছে শান্তর দিকে তাকিয়ে
.
শান্ত আহানাকে পেরিয়ে চলে যাচ্ছিলো,হঠাৎ থেমে গিয়ে পিছিয়ে আবার আহানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো
আহানা মাত্রই হাঁপ ছাড়তেসিলো,শান্তকে দেখে আবারও দম বন্ধ হয়ে গেলো তার
.
শান্ত আহানার কানের দিকে তাকিয়ে তারপর কপালের দিকে তাকালো
.
কিই?
.
তোমার কপালে কি হয়েছে.?
.
রররররঙ লেগেছে
.
সবাইকে ধোকা দাও,আমাকে দিতে আসিও না,আমি ধোয়া তুলসি পাতা না,দুনিয়ার সব প্যাঁচ বুঝি
শান্ত হাত উঠিয়ে আহানার কপালে চাপ দিয়ে দিলো
.
উহহহ!
.
কি?রঙে ব্যাথা লাগে?
.
আপনি একটা বেয়াদব,জগন্যতম বেয়াদব!!!
আহানা রেগে হনহনিয়ে চলে গেলো
শান্ত হাসতেসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
.
আচ্ছা কে রাখলো দুলটা?
শান্ত?কিন্তু ও যদি ক্লাসরুমে ঢুকতো কেউ না কেউ তো দেখে ফেলতো তখন সারা ভার্সিটি হতো ব্যাপারটা,নিশ্চয় অন্য কাউকে দিয়ে আমার ব্যাগে রেখেছে,এত ঢং না করে তখন দিয়ে দিলেই ঝামেলা চুকে যেতো
.
তুমি হয়ত ভাবছো তখন কেন দিই নাই,এর কারন হলো আমি রহস্য একটার উত্তর বের করার জন্য আমি তোমার থেকে ২০টাকা চেয়েছি,তুমি বললা ২০টাকা দিবে না দুল আমার কাছেই থাক এর মানে তোমার হাতে টাকা নেই,এবার তোমার বাসা পর্যন্ত আমি পৌঁছে যাবো,রহস্য ভেদ করতে বেশ লাগে😎
.
আহানা খাটে বসে কানের দুলগুলো হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছে,বিক্রি করা জিনিস আবার ফেরত এসে গেলো,লাভ কি,আমার চাল দরকার হলে আবার বিক্রি করে দিব আমি😒
.
শান্ত একটা বলপয়েন্ট নিয়ে বসে আছে,এই মেয়েটার বাবা কি চাকরি করে না??মেয়ের একটা কানের দুল কেনার সামর্থ্য ও তার নেই?মেয়েকে এতগুলো টিউশনি করে টাকা ইনকাম করতে হয়
ধুর আমিও না,কার জন্য এত ভাবতেসি,যে কিনা আমাকে চড় মেরেছিল?!!উফ শান্ত এসব ভাবা বাদ দে
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে বসে আছে,পিউর মায়ের একটা রেসিপি আজ সে ফলো করেছে,কাঁচামরিচ বেটে পেঁয়াজ দিয়ে মেখে ভাজবে,তারপর সেটা ২দিন ধরে খাবে,এটা ভেবে তার মন আজ খুশির আলমারি হয়ে আছে
পেঁয়াজকে কেটে কুচিকুচি করে কাঁচামরিচ বেটে সেটার সাথে মিশিয়ে বসে রইলো,পিউর মাকে দেখলাম সাথে রসুন ও দিচ্ছিলো,এখন আমি রসুন পাবো কই

আহানা সারা বাসা তন্নতন্ন করে খুঁজে খাটের নিচ থেকে রসুনের একটা কোয়া পেয়ে লাফাতে লাফাতে রান্নাঘরে গিয়ে সেটা কুচিকুচি করে কাটলো তারপর মেখে নিলো,পিউর মা তো তেল দিয়ে ভেজেছিল,আমি তেল দিয়ে ভাজবো?না না,তেল শেষ দেওয়া ঠিক না,আচ্ছা একটুখানি তেল দিই
তেল দিয়ে না ভাজলে গন্ধ আসবে ঝাঁঝ ও আসবে পরে পানি খেয়েই পেট পুরাতে হবে,তেল একটু দিয়ে ভেজে ২ভাগ করে নিলো সে
এক ভাগ কালকের জন্য রেখে বাকিটা নিয়ে বসলো,খেতে ঝাল তবে বেশ লেগেছে,রোজ রোজ একি খাবারের চেয়ে এটা বেটার
পরেরদিন আবার ভোরে রেডি হয়ে ছুটলো আহানা,গন্তব্য মিষ্টিদের বাসা,ওদের বাসায় এসে লিফটে উঠে ভাবতে লাগলো ঐ বাঁদরটার সাথে যেনো দেখা না হয়
লিফট থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে এগোনোর জন্য এক পা রাখতেই শান্ত সামনে এসে পড়লো,পরনে জগিং স্যুট
শান্ত আহানাকে না চেনার ভান করে চলে গেলো
.
ওমা!এই ছেলেটার মাঝে মাঝে কি হয় কে জানে
আহানা ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে শান্তর চলে যাওয়া দেখতেসে
চলবে♥