প্রেমাতাল

#প্রেমাতাল পর্ব ১৩

লেখা – মৌরি মরিয়ম
ওদের সম্পর্ক তখন ৪ মাস চলছিল। তিতির পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে চান্স পায়নি। প্রাইভেটেই ভর্তি হয়েছে। ওদিকে মুগ্ধর মাস্টার্স কম্পলিট হয়ে গেছে। তখনই মুগ্ধ আগের চাকরিটা ছেড়ে এখনকার চাকরিটায় জয়েন করেছিল। আগের অফিস ধানমন্ডিতেই ছিল। এখনকারটা বনানী। ধানমন্ডি থেকে বনানী অফিস করাটা ডিফিকাল্ট লাগলেও মুগ্ধ বাসা চেঞ্জ করেনি কারন এখানে তিতির আছে। এখান থেকে চলে গেলে যখন তখন তিতিরের সাথে দেখা করাটা এতটাও ইজি হবে না।
তখনকারই একটা দিন মুগ্ধ কেবল অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়েছে। এমন সময় তিতিরের ফোন,
-“হ্যালো।”
-“হ্যা তিতিরপাখি বলো।”
-“বাসায় ফিরেছো?”
-“হ্যা, একটু আগেই। তুমি কোথায়?”
-“ভার্সিটিতে।”
-“এখনো? সন্ধ্যা হয়ে গেল তো। আবার বৃষ্টিও তো নামলো।”
-“হ্যা, একটা ফ্রেন্ডের বার্থডে ছিল। সবাই মিলে একটু সেলিব্রেট করছিলাম।”
-“ও।”
-“এই শোনোনা, তুমি কি অনেক টায়ার্ড?”
-“না তো। কেন তুমি জানোনা তোমার বাচ্চাদের বাবা একটুতেই টায়ার্ড হয়না?”
-“উফ আবার শুরু হয়ে গেছে!”
-“রেগে যাচ্ছো কেন? বাচ্চাদের বাবা অন্য কাউকে বানানোর ইচ্ছে আছে নাকি?”
তিতির হেসে বলল,
-“কামড় দিব কিন্তু।”
-“দাওনা প্লিজ। তোমার কামড়ে অন্তত তোমার ঠোঁটের ছোঁয়াটা পাওয়া যায়। চুমু তো আর দাওনা।”
-“এই রাখলাম। কি বলতে ফোন করেছি তা শোনার নাম নেই যত হাংকিপাংকি কথা বলে চলেছে।”
-“আচ্ছা সরি সরি। বলোনা কি বলবে।”
-“বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে।”
-“ভেজো। তবে বাসায় এসে। রাস্তা দিয়ে একা একা ভিজতে ভিজতে এসোনা।”
-“উঁহু। তোমার সাথে ভিজতে ইচ্ছে করছে।”
-“ও। তুমি তাহলে ভার্সিটিতেই থাকো। আমি আসছি।”
মুগ্ধ একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো। মুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছে এখন। ১০ মিনিটে রিক্সা তিতিরের ভার্সিটির সামনে গিয়ে থামতেই তিতির দৌড়ে এল। মুগ্ধ সরে বসলো। তিতির রিক্সায় উঠতেই মুগ্ধ রিক্সাওয়ালাকে বলল,
-“মামা চালাও। ১১ নাম্বার রোডে খালি যাইয়ো না। আর যেদিকে তোমার মন চায় যাও।”
রিক্সা চলতে শুরু করলো। সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত নেমে এসেছে। ভিজে দুজনে চুপচুপে হয়ে গেছে। মুগ্ধ তিতিরের কোমড় জড়িয়ে ধরলো। তিতির লাফিয়ে উঠলো। পড়েই যাচ্ছিল, মুগ্ধ ধরে ফেলল,
-“এত লাফালাফির কি আছে?”
-“সুড়সুড়ি লাগে। ধুরো ছাড়ো না।”
-“সিরিয়াসলি? ছাড়লে খুশি হবে? সত্যি তো?”
তিতির মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“না, কিন্তু ওভাবেও জড়িয়ে ধরোনা প্লিজ। নরমালি ধরে রাখো।”
মুগ্ধ ওর কথামত আলগাভাবে ধরলো। তারপর তিতিরের কানের কাছে মুখ এনে বলল,
-“আই লাভ ইউ।”
-“হুম, জানি।”
-“আমি আজও উত্তরটা পেলাম না।”
-“সময় হলেই পাবে।”
মুগ্ধ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আল্লাহ সেই দিনটা আমি জীবিত থাকতেই দেখিও।”
তিতির মুগ্ধর হাতটা নিয়ে একটা কামড় দিল। মুগ্ধ ফিসফিস করে বলল,
-“একদিন তো একটা চুমু দিলেও পারো। সবসময় কামড়ই দিতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।”
তিতির সেকথায় পাত্তা না দিয়ে বলল,
-“তোমাকে না আমি একদিন নিষেধ করেছি থ্রি-কোয়ার্টার পড়ে আমার সামনে আসবেনা।”
-“পড়ে দেখেছি। কিছুই হয়না তাই আবার পড়েছি। আর তুমিই বলো বৃষ্টিতে ভিজে একটা ফুল প্যান্ট নষ্ট করা কি ঠিক?”
-“তোমার সাথে কথা বলাটাই বৃথা।”
মুগ্ধ আর এই অহেতুক বিষয়ে কথা বাড়ালো না। বলল,
-“তোমাকে কি এখন কিছুতেই বিয়ে দেবে না?”
-“না। স্টাডি শেষ হওয়ার আগে তো অসম্ভব।”
-“মা আজও বিয়ে কর বিয়ে কর বলছিল। আমার এক কাজিন আমাকে অনেক পছন্দ করে। ও এমনভাবে মায়ের মাথা খেয়েছে যে মা ওকেই বিয়ে করতে বলছে।”
তিতির আতঙ্কিত স্বরে বলল,
-“মানে?”
মুগ্ধ দেখল তিতিরের চোখে পানি এসে পড়েছে। সেকেন্ডের মধ্যে মুখটা লাল হয়ে গেল। মুগ্ধ ওকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“এই পাগলী! কাঁদছ কেন? বললেই কি আমি বিয়ে করছি নাকি? আমার উপর বিশ্বাস নেই?”
তিতির একটা কথাও বলল না। মুগ্ধ বলল,
-“আমি এমনিতেই ওকে পছন্দ করিনা। ইভেন হেট করি। তুমি না থাকলেও আমি আর যাই হোক ওকে বিয়ে করতাম না।”
-“ওর নাম কি?”
-“ইকরা।”
-“কেমন কাজিন তোমার?”
-“ফুপাতো বোন।”
-“ওর নাম্বার কি তোমার মোবাইলে ‘প্যারা’ লিখে সেভ করা?”
-“হ্যা। তুমি কি করে জানলে?”
-“সরি আমি তোমার পারমিশন ছাড়া তোমার মোবাইল ধরেছিলাম আর মেসেজ পড়েছিলাম।”
-“আরে ধুর পাগলী। কিসের সরি? যা আমার তা তোমারও। আমার কোনো জিনিস ধরার জন্য তোমার পারমিশন নিতে হবে না। তাছাড়া, আমার জীবনে সিক্রেট বলে কিছু নেই যা তোমার কাছে লুকাতে হবে।”
তিতির চুপ করে রইল। মুগ্ধ বলল,
-“যাই হোক, বাদ দাও ওর কথা। আসল কথা বলি। মা যখন ওকে বিয়ে করার কথা বলছিল তখন আমি মাকে তোমার কথা বলে দিয়েছি।”
তিতির অবাক হয়ে তাকালো মুগ্ধর দিকে। মুগ্ধ তিতিরের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করলো,
-“বলার পর মা বলল, ‘তাহলে তো হলোই। চল বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে যাই।’ আমি বললাম, ‘মা তিতির খুব বাবু একটা মেয়ে। ওর ফ্যামিলি এখনই ওকে বিয়ে দেবে না।’ তারপর মা কতক্ষণ আফসোস করলো এতদিন পর মেয়ে একটা পছন্দ করেছি তাও এত ছোট! আরো কত কি! তারপর বুচ্ছো পিউকে ফেসবুকে তোমার ছবি পাঠিয়ে বলেছি মাকে দেখাতে। তোমার ছবি দেখে মা পুরো পাল্টি খেল।”
তিতির মন খারাপ করে বলল,
-“পছন্দ করেনি না? তুমি যে কেন ছবি পাঠাতে গেলে? ছবিতে আমাকে আরো ছোট ছোট লাগে। কোন ছবিটা পাঠিয়েছো?”
যেই ছবিই পাঠাই না কেন মা ছবি দেখে বলেছে, ‘মুগ্ধ তুই এতদিনে একটা কাজের কাজ করেছিস বাপ। ছোট হয়েছে তো কি হয়েছে? ওর বিয়ের বয়স হতে হতে হয়তো তোর ৩০/৩২ বছর হয়ে যাবে তাতে কি! পুরুষ মানুষের বয়সে কি আসে যায়?”
কথা শেষ হতেই মুগ্ধ হো হো করে হেসে দিল। তিতিরের আতঙ্ক কমেছে, ও তাকিয়ে আছে। মুগ্ধ বলল,
-“আমার মা বুচ্ছো পুরা একটা সিনেমার ক্যারেকটার। তার ব্যাবহারে তোমার মনে হবে যে সে তোমারই বয়সী। একদম বাচ্চাদের মত করে। মা আরো কি বলেছে জানো? বলেছে, ‘আগে তোর পছন্দ করা একটা মেয়েকেও আমার ভাল লাগেনি। এই মেয়েটা একদম হিরার টুকরা। কোথায় পেলি?’ হা হা হা মা পারেও।”
-“সত্যি আন্টি আমাকে পছন্দ করেছে?”
-“কি বললে?”
-“কি বলেছি?”
-“আমার মা তোমার আন্টি হয়? এক থাপ্পড় মারবো, মা বলো।”
তিতির মুগ্ধর আরো কাছে এসে ওর একটা হাত জড়িয়ে ধরে বলল,
-“এই বলোনা, মা আমাকে পছন্দ করেছে?”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“হুম, খুব।”
তিতির হাসলো। মুগ্ধ বলল,
-“এত পছন্দ করেছে যে তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে। সামনাসামনি দেখতে চায়।”
-“মা যেন কবে ঢাকায় আসবে?”
-“সামনের মাসেই তো পিউ এর পরীক্ষা। পরীক্ষা হয়ে গেলে পিউকে নিয়ে সবাই আসবে। আমাকে আর পিউকে নতুন বাসায় তুলে দিয়ে মা-বাবা স্নিগ্ধকে নিয়ে চলে যাবে। স্নিগ্ধর পরীক্ষা পর্যন্ত বাবা-মা ওখানেই থাকবে। পরীক্ষা শেষ হতেই মা স্নিগ্ধকে নিয়ে পার্মানেন্টলি চলে আসবে। বাবা ট্রান্সফার পেলে আসবে নাহলে ওখানেই থাকবে।”
-“ও। তখন তুমি ধানমন্ডি ছেড়ে চলে যাবে না?”
-“তো কি? যখন বলবে তখনই বান্দা হাজির হয়ে যাবে।”
তিতির হেসে বলল,
-“আমি জানি।”
-“তিতির জানো মা বলছিল তোমাকে চিটাগাং নিয়ে যেতে। যদি সম্ভব হতো সত্যি তোমাকে নিয়ে যেতাম। ইশ! নাভাল রোডের কাঁকড়া ফ্রাই! পতেঙ্গা রোডের বাইকরাইড সবকিছু যেন তোমার জন্য অপেক্ষা করছে!”
-“সম্ভব না কেন?”
-“মানে? সম্ভব না কেন তুমি জানো না?”
-“কেন?”
-“বাসায় কি বলে যাবে তুমি?”
-“বলবো ট্যুরে যাচ্ছি।”
-“সিরিয়াসলি?”
-“হ্যা! কিন্তু এভাবে বিয়ের আগেই তোমাদের বাসায় চলে গেলে কেউ আমাকে খারাপ ভাববে না তো?”
-“কে খারাপ ভাববে? আমার মা? বললাম না আমার মা কেমন? একটু বোকাসোকা। কিন্তু পাগল একটা। তোমাকে ভাল লাগলে তোমার জন্য জান দিয়ে দেবে।”
-“আর বাবা?”
-“বাবার সময় কোথায় কিছু ভাবার? আর আমি বাবার সাথেও ফ্রি। নো প্রব্লেম তিতিরপাখি। তাছাড়া তুমি তো আর আমার সাথে থাকবে না। পিউ এর সাথে থাকবে। কিন্তু তুমি কি সত্যি যেতে পারবে?”
-“পারবো।”
-“তাহলে পরশুই চলো। আমিতো এমনিতেই পরশু যাব বলেছিলাম না তোমাকে?”
-“ও হ্যা। আচ্ছা, আমি আজ রাতেই তোমাকে কনফার্ম করছি।”
-“ওকে। ওই মামা রিক্সা এইখানেই থামাও।”
তিতির বলল,
-“এটা তো ১০ নাম্বার।”
মুগ্ধ ভাড়া দিতে দিতে বলল,
-“এত পাক্নামি করো কেন? নামো রিক্সা থেকে।”
তিতির নামলো। মুগ্ধ তিতিরের হাত ধরে ১০ নাম্বার রোডে ঢুকলো। তিতির পানিতে হাটবে বলে স্যান্ডেল খুলে ফেলল। তারপর স্যান্ডেলের ফিতাটা আঙুলের সাথে ঝুলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
-“দেখেছো বৃষ্টি আরো বেড়েছে। আজ বাসায় ফিরতেই ইচ্ছে করছে না।”
-“রাস্তাঘাটে মানুষজন এত কম কেন জানো? বৃষ্টির জন্য! আর তুমি কিনা বৃষ্টির জন্য বাসায় যেতে চাচ্ছো না?”
তিতির মুগ্ধর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল,
-“হুম আমার তো বৃষ্টি আর মুগ্ধকে একসাথে খুব ভাল লাগে।”
-“রিয়েলি? আমার এক্স গার্লফ্রেন্ডের নাম কিন্তু বৃষ্টি ছিল।”
তিতির অবাক চোখে তাকালো মুগ্ধর দিকে। বলল,
-“তোমাকে বলেছিনা তুমি তোমার এক্স হিস্ট্রি আমাকে শোনাতে আসবে না?”
-“আমি কোথায় বললাম? তুমিই তো বললে!”
তিতিরের এক হাতে স্যান্ডেল আরেক হাতে ব্যাগ থাকায় মারতে পারলো না। কিন্তু ঠিকই তেড়ে এসে কামড়ে দিল মুগ্ধর হাতে। মুগ্ধ তাড়াতাড়ি তিতিরকে কোলে নিয়ে হাঁটা ধরলো। কয়েক পা হেঁটেই মুগ্ধ বলল,
-“আমি তোমাকে কোলে নিব বলেই রিক্সা ছেড়ে দিয়েছি। বুঝেছ তিতিরপাখি?”
তিতির কিছু না বলে শুধু হাসলো। কিছুদূর যেতেই একটা পুলিশের গাড়ি দেখা গেল। ভেতর থেকে একটা পুলিশ ডাক দিল,
-“এইযে হিরো? এটা কি সিনেমা করার যায়গা? দিস ইজ পাবলিক প্লেস!”
তিতির আস্তে আস্তে বলল,
-“এই আমাকে নামিয়ে দাও।”
মুগ্ধ বলল,
-“চুপ করে খালি দেখে যাও। প্রয়োজনে আমার কথায় তাল মেলাবে।”
মুগ্ধ গাড়িটার কাছে গিয়ে বলল,
-“সরি স্যার। ও বৃষ্টিতে পা পিছলে পড়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে, হাটতে পারছে না। তাই কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি। সামনেই আমাদের বাসা।”
পুলিশ বলল,
-“ও, আচ্ছা যান তাহলে।”
-“থ্যাংকস।”
মুগ্ধ তিতিরকে কোলে নিয়েই আবার ব্যাক করলো। গাড়িটা স্পীডে চালিয়ে চলে যেতেই ওরা দুজনে হেসে দিল। তিতির বলল,
-“ইউ আর জিনিয়াস!”
-“তো কি? ওদের ভয়ে আমি তোমাকে কোল থেকে নামাবো নাকি? ধুর ওদের পাত্তা দেয় কে?”
-“বাহ রে! এখন পার্ট নেয়া হচ্ছে? খুব তো স্যার স্যার করছিলে!”
-“স্যার স্যার করিনি। স্যার বলে সম্বোধন করেছি। ওটা ভদ্রলোকেরা করে।”
১০ নাম্বার রোড শেষ হতেই মুগ্ধ তিতিরকে নামিয়ে বলল,
-“কিন্তু এবার নামাতেই হবে। বাকিটা আমাদের আলাদা যাওয়া উচিৎ।”
তিতির কোল থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলল,
-“ধরা পড়লে খবর আছে। অনেক বেশি সাহস দেখাই আমরা। আসলে আমাদের ধানমন্ডির মধ্যেই দেখা করা উচিৎ না।”
-“হুম, বাসায় যাও এখন তাহলে। এত বেশি বৃষ্টিতে ভিজলে আবার ঠান্ডা লাগবে।”
তিতির মুগ্ধকে বিদায় জানিয়ে হাটতে শুরু করলো। মুগ্ধ তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। তিতির ৭/৮ পা গিয়েই দৌড়ে ফিরে আসলো। মুগ্ধ বলল,
-“কি?”
তিতির মুখে কিছু বলল না, আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো লোকজন নেই। স্যান্ডেল আর ব্যাগ হাত থেকে ফেলে দিল। তারপর আচমকা মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরলো। মুগ্ধ প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও পরে সামলে নিল। তারপর নিজেও জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষণ পর তিতির ওকে ছেড়ে নিচু হয়ে ব্যাগ আর স্যান্ডেল তুলে হাঁটা শুরু করলো। একবারও আর মুগ্ধর দিকে তাকালো না। মুগ্ধ পেছনে দাঁড়িয়ে দেখছিল তিতির ব্যাগটা কাধের উপর ফেলে পেনসিল হিলের চিকন ফিতাগুলো আঙুলে ঝুলিয়ে হেলেদুলে হাঁটতে লাগলো। যেন ওর মত সুখী মানুষ এই পৃথিবীতে আর একজনও নেই।
মুগ্ধ কলাবাগান বাস কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছে। ১০:৩০ এ বাস ছাড়বে। সামনেই সাফি আর দোলা বসে আছে। ওরা এসেছে হেল্প করার জন্য। কারন তিতিরকে পৌঁছে দিতে আসবে ওর বাবা এবং ভাইয়া। তিতির বাসায় বলেছে এবারও টিওবি থেকেই যাচ্ছে খাগড়াছড়ি ট্রিপে। যেহেতু তিতিরের বাবা, ভাইয়া সাফি-দোলাদের চেনে তাই ওদেরকে নিয়ে এসেছে মুগ্ধ। ১০:২৫ বাজে, এখনো তিতির আসছে না দেখে মুগ্ধ দোলাকে দিয়ে ফোন করালো। তিতির জানালো ও প্রায় এসে গেছে।
মুগ্ধ আগে থেকেই বাসে উঠে থাকলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিতির এসে পড়লো ওর বাবার সাথে। বাবা তিতিরকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো বাস না ছাড়া পর্যন্ত। অগত্যা দোলা সাফিকেও বাসে উঠতে হলো। বাস ছেড়ে দেয়ার পরও তিতিরের বাবা দাঁড়িয়ে ছিল। তিতির জানালা দিয়ে মুখ বের করে বলল,
-“বাবা, তুমি রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে যাও।”
-“হ্যা যাচ্ছি।”
তারপর হাত নেড়ে টা টা বলল তিতির। বাবা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সাটায় উঠলো। বাস ততক্ষণে অনেক দূরে চলে এসেছে। বাস যেদিকে যাচ্ছে রিক্সা যাচ্ছে তার উলটো দিকে তাই বাবাকে এখন আর দেখা যাচ্ছে না তবে রিক্সাটা দেখা যাচ্ছে। তবু তিতির তাকিয়েই আছে। মুগ্ধ বলল,
-“বাস তো ছেড়ে দিয়েছে, এবার মুখটা ভেতরে আনো। হুট করে আরেকটা বাস চলে আসতে পারে।”
তিতির শুনলো না। মুগ্ধ তিতিরের হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে আসলো। তিতিরের চোখভর্তি পানি। মুগ্ধ অবাক,
-“সেকি! কাঁদছ কেন?”
এতক্ষণ চোখে জমে থাকা পানিটা একফোঁটা পড়লো গাল বেয়ে। বলল,
-“আমি কখনো বাবাকে মিথ্যে বলে কোথাও যাইনি। খুব ভালবাসি বাবাকে। সব থেকে বেশি। আর আজ সেই আমি বাবাকে মিথ্যে বলে এতদূর যাচ্ছি। আমার খুব খারাপ লাগছে।”
মুগ্ধ কি বলবে বুঝতে পারলো না। নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে। তিতিরের চোখ মুছে দিয়ে হাত ধরে বলল,
-“চলো আমরা নেমে যাই। যাওয়া লাগবে না। আমি তোমাকে দিয়ে আসছি।”
-“না আমি যাব।”
-“আরে পাগলী! আমি রাগ করে বলছি না। সত্যি বলছি এরকম খারাপ লাগা নিয়ে গেলে কি তোমারও ভাল লাগবে বলো?”
-“আমি জানি তুমি রাগ করে বলোনি। কিন্তু আমি যাব।”
-“কেন জেদ করছো?”
তিতির মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“কারন, আমার লাইফে বাবা যতটা ইম্পরট্যান্ট তুমিও ঠিক সমান ইম্পরট্যান্ট!”
মুগ্ধ কিছু বললনা শুধু মনে মনে ভাবলো, হুমায়ুন আহমেদ স্যার বলে গেছেন “কিশোরী মন বড়ই রহস্যময়।”
বাস শাহবাগ পৌঁছতেই দোলা আর সাফি বিদায় নিয়ে নেমে গেল। যাত্রাবাড়ী থেকে প্যাসেঞ্জার উঠানোর পর বাসের লাইট অফ করে দিল। আবছা আলোয় মুগ্ধ দেখলো তিতির সিটে হেলান দিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। অনেকক্ষণ ধরে চুপ! মুগ্ধ ওকে ঘাঁটালো না। থাকুক কিছুক্ষণ নিজের মত। বাস যখন কাঁচপুর ব্রিজে উঠলো তিতির তখন বাসের জানালা দিয়ে মুখ বের করে রাখলো। মুগ্ধ আবার ওকে টেনে ভেতরে নিয়ে এসে বলল,
-“এটা করো না। রিস্কি খুব।”
তিতির হেসে বলল,
-“সবসময় তো করছি না। এখন একটু নদীর গন্ধ নিলাম। আবার যখন নদী পড়নে তখন একটু নেব। নিতে দেবে না?”
তিতিরের মুখে হাসি দেখে মুগ্ধ একটু স্বস্তি পেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুগ্ধর ফোন এল। পিউ ফোন করেছে,
-“হ্যালো, ভাইয়া?”
-“হুম বল।”
-“তোরা রওনা হয়েছিস?”
-“হ্যা, মাত্রই কাঁচপুর ব্রিজ পার হলাম।”
-“ওহ! তিতির আপু তোর পাশেই না?”
-“না পিছনে।”
-“পিছনে মানে? তোরা পাশাপাশি সিট পাসনি?”
-“যেমন প্রশ্ন ছিল তেমনই উত্তর ছিল।”
-“উফফ! বাদ দে। আপুকে দে না একটু কথা বলি?”
-“কাল সকালেই তো জলজ্যান্ত পেয়ে যাবি। এখন আবার কথা বলে কি করবি?”
-“দে না। শুধু আমি না, আম্মুও কথা বলবে।”
মুগ্ধ ফোনটা কানের কাছ থেকে সরিয়ে বলল,
-“একটু কথা বলবে? পিউ খুব চাইছে।”
তিতির বলল,
-“দাও, আবার জিজ্ঞেস করা লাগে?”
তিতির ফোনে ধরে বলল,
-“হ্যালো..”
পিউ ওপাশ থেকে বলল,
-“ওমা কি মিষ্টি ভয়েস গো তোমার! আমার ভাইটার আবার ডায়াবেটিস না হয়ে যায়।”
তিতির হাসলো। পিউ বলল,
-“হাসিটাও সুন্দর। উফ কখন যে তোমাকে দেখবো আমার আর তর সইছে না।”
তিতির বলল,
-“তোমাদের সবাইকে দেখার জন্যও আমার মনটা অস্থির হয়ে আছে। তোমার ভাইয়া তো সবসময় তোমাদের গল্প করে।”
-“তাই?”
-“হুম।”
-“এই শোনো আপু… মা তোমার সাথে কথা বলবে, নাও।”
তারপর হুট করেই পিউ ফোনটা মায়ের হাতে দিয়ে দিল। মা ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই তিতির সালাম দিল। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
-“কেমন আছেন আন্টি?”
মা বলল,
-“এইতো আম্মু ভাল আছি। কিন্তু বড্ড অস্থির লাগছে। তোমরা সেফলি আসবে তারপর আমি শান্তি পাব।”
আহা কী অবলীলায় কথা বলছে! যেন হাজার বছরের চেনা। খুব ভাল লাগছিল তিতিরের। কথা শেষ হতেই মুগ্ধ বলল,
-“আমার মা তোমাকে দেখার আগেই মানে শুধু ছবি দেখেই পটে গেছে। শুধু তোমার সাথে কথা বলেই ফোন রেখে দিল। আমার সাথে কথাই বলতে চাইলো না।”
তিতির হেসে বলল,
-“জেলাস?”
-“নাহ! মা যত তোমাকে পছন্দ করবে আমার তো ততই ভাল লাগবে তাই না?”
তিতির আচমকা মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরলো। মুগ্ধও ধরলো। পুরো বাস অন্ধকার। তিতির মুগ্ধর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,
-“আমি খুউউউব হ্যাপি।”
মুগ্ধও তিতিরের মত ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো,
-“কেন?”
-“তোমাকে পেয়ে।”
মুগ্ধ তিতিরের কপালে চুমু দিয়ে বলল,
-“আমিও খুব হ্যাপি! লাকি অলসো.. তোমাকে পেয়ে।”
তারপর তিতির আর কোনো কথা বলল না। কিছুক্ষণ পর মুগ্ধ আবিস্কার করলো তিতির ঘুমিয়ে পড়েছে। নিজের মনেই হাসলো মুগ্ধ। প্রায় এক ঘন্টা পর একটা স্পিড ব্রেকার পার হওয়ার সময় বাসটা নড়ে উঠতেই তিতিরের ঘুমটা ভাঙলো। ঘুম ভাঙতেই হেসে দিল তিতির। তারপর মুগ্ধকে ছেড়ে দুই পা উঠিয়ে গুটিসুটি হয়ে নিজের সিটে মাথা রেখে মুগ্ধর দিকে ফিরে বসলো। তারপর মুগ্ধর হাত ধরে বলল,
-“একটা কথা বলবে?”
ইশ! তিতিরের ঘুমু ঘুমু ভেজা ভেজা ভয়েসটা কাছ থেকে কি যে সুন্দর লাগছে। ভয়েস যদি খাওয়া যেত মুগ্ধ এক্ষুনি খেয়ে ফেলতো। তিতির আবার হাতে নাড়া দিয়ে বলল,
-“বলোনা, বলবে?”
মুগ্ধ বলল,
-“হুম, বলো কি?”
-“ইকরা কিসে পড়ে?”
-“ভার্সিটিতে।”
-“আমার সমান?”
-“না তোমার চেয়ে অনেক বড়। ও আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে। এখন বোধহয় সেকেন্ড ইয়ার।”
-“ও। আচ্ছা ও কক্সবাজারে কি করেছিল? যার জন্য তোমার কাছে মাফ চাইছিল?”
-“অনেক খারাপ একটা কাজ করেছিল।”
-“সেটা তো তোমাদের মেসেজ দেখে আমি বুঝেছি। কিন্তু কি করেছে বলোনা? তুমি তো বলেছ বলবে।”
-“আমি তো বলতেই পারি কিন্তু তুমি তো সহ্য করতে পারবে না। আর লজ্জাও পাবে।”
-“সহ্য করতে না পারার কি হলো? পারব, বলোতো।”
-“আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুমের মধ্যেই ও আমাকে কিস করেছে।”
-“কোথায়?”
-“ঠোঁটে।”
-“মানে?”
-“বোঝোনি?”
-“তুমি করতে দিলে কেন?”
-“আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম রে বাবা। যখন টের পেয়েছি তখন তো উঠে চড় মেরেছি একটা।”
-“কিন্তু ততক্ষণে তো ও যা করার করেই ফেলেছে।”
-“নাহ, এর পরেও করেছে।”
-“কি করেছে?”
তিতিরের চোখেমুখে আতঙ্ক। মুগ্ধ বলল,
-“ও শার্ট পড়া ছিল। হঠাৎ শার্টের বাটনগুলো সব খুলে ফেলেছিল।”
-“কিহ?”
আবছা আলোয় মুগ্ধর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে তিতিরের মুখটা লাল হয়ে গেছে। চোখে পানিও এসে গেছে, পড়ার অপেক্ষা শুধু। মুগ্ধ বলল,
-“কাঁদলে কিন্তু একটা থাপ্পড় মারবো। আমি কি তাকিয়েছিলাম নাকি ওর দিকে? আমি তো ওকে চড় মেরে ঘর থেকে বের করেই দিয়েছিলাম।”
-“কক্সবাজারে এটা কি করে সম্ভব? আর কেউ ছিলনা?”
-“সবাই মহেশখালী গিয়েছিল। আমার পা কেটে যাওয়ার আমি যাইনি। আর ও যে যায়নি কিকরে বলবো বলো? আমি তো ঘুমিয়েই ছিলাম।”
তিতির আর কিছু বলল না। মন খারাপ করে বসে রইলো। মুগ্ধ বলল,
-“তোমার কি মনে হয় তোমার মুগ্ধ বিলিয়ে দেয়া অর্ডিনারি জিনিস হাত পেতে নেয়?”
-“না।”
-“তাহলে মন খারাপ করছো কেন?”
-“জানিনা।”
মুগ্ধ তিতিরের কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে আনলো। তারপর বলল,
-“তোমার মুগ্ধর তো শুধু তার তিতিরপাখির উপর লোভ! অনেক লোভ জানো?”
তিতির মিটিমিটি হাসলো। কোনো উত্তর দিল না। কিছুক্ষণ পর বলল,
-“তোমাকে আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল। অনেক দিন আগে থেকেই ভেবেছি কিন্তু জিজ্ঞেস করা হয়নি।”
-“কি বলো?”
-“বান্ধরবানে একটা কথা বলেছিলে মনে আছে?”
-“বান্দরবানে তো কত কথাই বলেছি। কোনটার কথা বলছ এখন?”
-“ওইযে.. ইউ নেভার কিসড ইউর এক্স বিকজ অফ হার লিপস্টিক।”
মুগ্ধ তিতিরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। বলল,
-“হ্যা বলেছি তো। আর এটা ট্রু!”
-“তারমানে কি যেহেতু তোমার টোটাল ৩ জনের সাথে সম্পর্ক ছিল। তাই ওকে ছাড়া তুমি বাকি দুইজনের সাথে কিস করেছো?”
মুগ্ধ তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“হ্যা করেছি। এটা তো একটা নরমাল ব্যাপার। তোমাকেও তো কতবার করতে চেয়েছি তুমি তো পারমিশন দাওনি।”
-“ওরা কি চাইতেই পারমিশন দিয়ে দিল?”
-“হ্যা। পারমিশন লাগেনি ওরাও উদ্যোগী ছিল।”
-“আমার অবাক লাগে তুমি কি টাইপের মেয়েদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলে!”
-“সবাই তো আর তোমার মত লাজুকলতা না।”
-“তোমার ওরকমই পছন্দ না? আমার টাইপ মেয়ে তেমন পছন্দ না?”
এবার মুগ্ধ একটু সিরিয়াস হয়ে বলল,
-“তিতির, তোমার সাথে আমার সম্পর্কটা যে প্ল্যান করে হয়নি তা তো তুমি জানোই। সম্পর্কটা না করে বাঁচতাম না, তাই করেছি। ৫ দিনে বুঝে গিয়েছিলাম তোমাকে ছাড়া ভাল থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। তোমার সাথে ওদের তুলনা করা চলে না। আর তুমি যেমন তেমনভাবেই আমি তোমাকে ভালবেসেছি, তেমবভাবেই ভালবাসতে চাই বাকীটা জীবন। আমার কি ধরনের মেয়ে পছন্দ অপছন্দ তা তুমি ভাবতেও যেও না। শুধু জেনে রেখো তোমাকে আমার পছন্দ!”
আহ! তিতিরের আবার উড়তে মন চাইছে। কিছু বলল না, মনে মনে উড়তে লাগলো। মুগ্ধ বলল,
-“এই অনেক সিরিয়াস সিরিয়াস কথা হয়েছে। এবার একটু তাকাও না আমার দিকে।”
তিতির তাকালো। মুগ্ধ তিতিরের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তিতির মুগ্ধর গালে হাত রেখে বলল,
-“তোমার দাড়িটা এখন একদম পারফেক্ট সাইজ। বেশি বড়ও না, আবার বেশি ছোটও না। কেন যে ক্লিনসেভ করো!”
-“অফিসের জন্য।”
-“ধুর! অফিসকে বলবা এটা ফরমাল হওয়ার নতুন স্টাইল।”
-“তাই অনেক সুন্দর লাগছে?”
-“অন্নেক!”
-“তাহলে একটা চুমু দাও।”
তিতিরের জন্য ভালই হলো। এতক্ষণ দাড়ির দিকে তাকিয়ে তিতিরের একটা চুমু দিতেই ইচ্ছে করছিল। কিন্তু লজ্জায় বলতে পারেনি। মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে কিন্তু ওইযে লজ্জা! লজ্জায় পারেনা।
মুগ্ধ গাল বাড়িয়ে আছে। যদিও অন্ধকার আর এত রাতে সবাই ঘুমাচ্ছে তবু তিতির আশেপাশে তাকিয়ে একবার দেখে নিল। তারপর মুগ্ধর বাড়িয়ে রাখা গালটাতে একটা চুমু দিল। তিতির যখন সরে যাচ্ছিল তখন মুগ্ধ তিতিরের মুখটা ধরে ইচ্ছেমত ওর গালে গাল ঘষে দিল। তিতির ব্যাথায় উঁহ করে উঠলো। মুগ্ধ তাড়াতাড়ি ওর মুখ চেপে ধরে বলল,
-“আস্তে। কি সব সাউন্ড করছো! কেউ শুনলে কি ভাববে জানো? বোকা মেয়ে কোথাকার!”
তিতির মুগ্ধর দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে ঠোঁট উলটে বলল,
-“দাড়ি না যেন তাঁরকাটা।”
একথা শুনে মুগ্ধ হেসে গড়িয়ে পড়লো। তারপর বলল,
-“তোমার না দাড়ি ভাল লাগে?”
তিতির মুগ্ধর আরো কাছে এসে বলল,
-“ভাল লাগে তো। এখনো লাগে। দাড়ি দিয়ে আরো যত খোঁচাই দাও না কেন তবু ভাল লাগবে। আই জাস্ট লাভ ইট।”
-“তাই? তাহলে আরেকবার দিই?”
-“দাও।”
মুগ্ধ এবার তিতিরের গালে নয় ঘাড়ে দাড়ি ঘষে দিল। তিতির ছিটকে সরে গেল। ওপাশে মুগ্ধর একটা হাত না থাকলে তিতির জানালার উপর পড়ে ব্যাথা পেত। তিতির ঘাড়ের সেখানে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো। ওর হার্টবিট ভয়ানকভাবে বেড়ে গেছে। চোখ বন্ধ করে দ্রুত নিঃশ্বাস ফেলছে। মুগ্ধ জিজ্ঞেস করলো,
-“ব্যাথা পেয়েছ?”
তিতির আবার সেই ভেজা স্বরে বলল,
-“না।”
কিন্তু মুখ তুলে তাকালো না তিতির। একইভাবে বসে রইলো। মুগ্ধ ওকে বুকে টেনে নিল। তারপর তিতিরের পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,
-“পাগলী! শান্ত হও। এখনি এত অস্থির হলে ভবিষ্যতে কি করবে?”
তিতির কিছু বলল না। মুগ্ধ বলল,
-“আচ্ছা, তোমার কি খুব ভাল লেগেছিল?”
তিতির চুপ। মুগ্ধ বলল,
-“জাস্ট সে ইয়েস অর নো।”
তিতির এবারেও চুপ করে রইলো। মুগ্ধ বলল,
-“আচ্ছা যাও সহজ করে দিচ্ছি। ভাল না লাগলে তুমি আমার বুক থেকে উঠে তোমার সিটে গিয়ে বসো। আর যদি ভাল লাগে তাহলে এভাবেই থাকো আমার বুকে।”
তিতির আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলো ন। দুই হাত দিয়ে আরো শক্ত করে মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরলো। মুগ্ধ হেসে বলল,
-“জানতাম তো!”
To be continued…