প্রাক্তন

প্রাক্তন 2 !! Part- 07

রাগ করলে কি?(আমি)
তুরু তোমার প্রতি রাগ আসেই না আমার।
“আর যাকে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত জীবন সৃষ্টি হয়েছে তার ও তো একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে তা ভুললে চলবে?”(বলেই কপালে এক চুমু দিয়ে সে চলে গেলো!)

ভাইয়া?(জারিফ)
__হুম(জারিফ এর ডাকে বর্তমান এ ফিরে এলাম)
বাসায় এসে গেছি!
__হুম চল।

নিসান বাসায় আসার পর থেকে এখনো একটা কথাও বলে নি হয়তো রেগে আছে।খাওয়া দাওয়া শেষ ফ্যামিলি আড্ডাতেও সে বসে নি।আড্ডা শেষে ঘরে ফিরে এলাম।দেখি ওর রুমের লাইট জ্বলছে..

__আসবো? (দরজায় টোকা মেরে বললাম)
এত ফরমাল হওয়ার কি আছে?(নিসান)
__না মানে!
কি কিছু বলবি?
__রেগে আছিস আমার উপর!
ধুরু তোর প্রতি আমার রাগ আসে না।প্রিয়মানুষ গুলোর উপর আবার কিসের রাগ? তবে একটু খারাপ লেগেছিলো!

নিসানের এই কথা টা অতীতে নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেললো “সমুদ্র যখন বলতো রাগ করেছো?”

আমি এক গাল হাসি নিয়ে বলতাম “ধুরু তোমার প্রতি আমার রাগ আসে না।ভালোবাসার মানুষের উপর আবার কিসের রাগ!আসলেই আসে না কেনো জানি এখনো মানুষ টার উপর রাগ আসে না।

কি রে কোথায় হারালি?(নিসান)
__অতীতে চলে গেছিলাম।ভাগ্যিস টেনে আনলি নয়তো ওখানেই পরে থাকতাম। পরে মরে ভুত হয়ে যেতাম!
__অতীত বরাবরি মুখ মলিন করতে সক্ষম!তা সে ভালো স্মৃতির হোক বা খারাপ।

হুম ঘুমাবি না?
__হুম।
আচ্ছা আমি যাই তাহলে।
__হুম।

আমি বেরিয়ে এলাম ওর রুম থেকে। আজ বেচারা আমার জন্য কষ্ট পেয়েছে।আসলে কাছে মানুষ গুলোর বিন্দু মত ভুল গুলোও খুব বাজে ভাবে কষ্ট দেয়।

রুমে এসে গল্পের বই নিয়ে বসলাম।রাতে আসলে আর ঘুম টা হয় না। জেগেই কেটে যায়।আসলে রাত জাগার যাদের অভ্যেস আছে তারা জানে শুধু শুধু রাত জাগাটা যে কত টা দম বন্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।হাতে নিয়েছি বৃষ্টি বিলাস।আজ নিয়ে বইটা চতুর্থ বার শেষ করা হবে।কেনো জানি রাত্রি বিলাসী হতে খুব ইচ্ছে করছে।হাতে বৃষ্টি বিলাস নিয়ে বারান্দায় রাত্রি বিলাস করতে গেলাম।বেশ হাওয়া দিচ্ছে। রাত্রি বিলাস করতে এসে যে চন্দ্র বিলাস ও করবো তা তো ভাবি নি,তাহলে ব্যাপার টা কি দাড়ালো,
“বৃষ্টি বিলাস হাতে রাত্রী বিলাস করতে এসে চন্দ্র বিলাসি হয়ে গেলাম”

এইগুলো ভাবতে ভাবতেই ফোন এ কল এলো শেষ ৩টা ডিজিট এ চোখ আটবে গেলো।এক মুহূর্তের মধ্যেই হৃদস্পন্দন হাজার গুন বেরে গেলো।এত বছর পর এই নাম্বার টা থেকে কল।আশ্চর্য হয়ে মোবাইল স্ক্রেএন এ দেখছি। দেখতে দেখতেই কল টা কেটে গেলো।
আবার কল এলো!
এইবার দেখে থাকার ভুল করালাম না চট করে রিসিভ করলাম।

হ্যালো!(আমি)
__(এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস মাত্র)
হঠাৎ কি মনে করে?
__তা রাত্রী বিলাস করছো না চন্দ্র?(সমুদ্র)

আপনি কি জানলেন?
__ঘরে এসো?বাইরে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে।
কিহ?
__বললাম ঘরে এসো!
কার ঘরে?(বেশ অবাক হয়ে)
__তোমার নিজের ঘরে এসো।
মানে বুঝলাম না!(কথা টা শেষ না হতেই কাধে ঠান্ডা কিছু অনুভব করলাম)

চমকে পিছনে ঘুরতেই বেশ অবাক হয়ে হা হয়ে আছি।সমুদ্র এখানে!

আপনি?(বেশ জোরেই বলে ফেলেছি)
__কি করছো আসতে কথা বলো!(মুখ চেপে ধরে)

আপনি এখানে কি করছেন?(অনেক আসতে)
__আসতে কথা বলতে বলেছি তাই বলে এত টা যে আমি ই শুনতে না পারি!
আচ্ছা আপনি এখানে কি করছেন?(স্বাভাবিক ভাবে)
__দেখতে চলে এলাম!(সমুদ্র)
কিহ?(আমি)
__হুম। দেখতে চলে এলাম।(কত দিন পর এক চোখ গুলো তে চোখ রাখতে পারছি।আহ নীরা!আচ্ছা তুই এত্ত গাধী কেন?)
হুম?কিছু বললেন?(মনে হইলো ডাকলো মানুষটা)
__হুম বললাম তো।
কিহ?
__দেখতে এসেছি।
কি দেখতে এসেছেন?
__সুবহা কে।(তোকে দেখতে আসছি গাধি মনে মনে)
মানে?(বেশ অবাক হয়ে)
__জারিফ নাকি সুবহা কে দেখবে। তো একা আসার সাহস পাচ্ছিলো না এই রাতে ।তাই আমাকে নিয়ে আসলো।আর আমি তো ওখানে যেতে পারি না দুজনের খুনসুটির মধ্যে কি আর আমি যেতে পারি বলো? আর অন্য কোথাও থাকাটাও সেভ হবে না।ধরাপরে গেলে কি ভাববে বলো? আমার ভাইটাকে হ্যাংলা ভাববে! তাই তোমার রুমে চলে এলাম।

বাবাহ জারিফ এর তো দেখি বহুত সাহস হইছে।যাই হোক ভালো করেছেন। কেউ দেখে ফেললে আসলেই সমস্যা ছিলো।(আমি)
__হুম তো বাইরে কি করছিলে?
রাত্রী বিলাস আবার চন্দ্র বিলাস ও।সাথে বৃষ্টি বিলাস ও।(হাতের বইটা দেখিয়ে)
__বই পড়ার অভ্যেস দেখি এখনো আছে!
ভালো অভ্যেস গুলো রেখেদিয়েছি।খারাপ গুলো বর্জনের চেষ্টায় চেষ্টারত।
__খারাপ অভ্যেসের কাতারে নিঃশ্চয় আমি আছি।
হুহুহ হয়তো…….(একটু হেসে)
__হয়তো?(জিজ্ঞাসু চেহারা নিয়ে)

কিছু না বলেই তার থেকে একটু দূরে এসে আকাশ দেখতে লাগলাম।মনে করেছিলাম বলবে হয়তো “তোমায় দেখতে এসেছি”।আমার এখনো মনে আছে একবার খুব জ্বর হয়েছিলো ৪দিন জনাবের সাথে দেখা করতে পারি নি।রাতে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছি।মধ্যরাতে পানি তেষ্টা পাওয়ার উঠে বেশ ভুত দেখার মত চকমে উঠেছি প্রথমে।তারপর ভাবলাম ভ্রম আমার ওটা। জ্বর শরীরে এরকম ভ্রম প্রায় হয় নি।

“অবচেতন মন সব সময় ই প্রিয় কাউকে খোঁজে” তাই আমার ও হয়তো খুঁজতেছে।
এই ভেবে এক হাসি দিয়ে পানি খেয়ে আবার ঘুমিয়ে গেছি।বেশ সকালেই ঘুম ভেঙে গেলো।৪দিন যাবৎ ঘুমালে যা হয় আর কি।ঘুম থেকে উঠে বসতেই আবার এক ধাক্কা খেলাম সত্যি ই সমুদ্র ওখানে সোফায় ঘুমিয়ে গেছে!তার মানে ও সারা রাত এখানেই ছিলো আমি ভুল দেখি নি।

কি হলো কি ভাবছো?(সমুদ্র)
__কিছু না।(স্মৃতির দেয়াল ভেদ করে বর্তমান এ এলাম)
সে রাতের কথা ভাবছো না? কি পাগল টাই না ছিলাম!(একটু হেসে হেসে)
__হুম আসলেই অনেক পাগল ছিলেন।তবে এখন তো সুস্থ। তাইনা?(তার দিকে তাকিয়ে বললাম)
সুস্থ!!!(আকাশ পানে চেয়ে)

কি আর সুস্থ হলাম?
মধ্য রাতে অতীত নামক ৩ অক্ষরের শব্দ টা বুকের বা পাশটার ব্যাথ্যা এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে ঘুম কিনতে হয়।(মনে মনে)

__ সুখকর অতীত হলো প্রিয়মানুষ এর মতো যাকে চোখ বন্ধ করে খুব কাছে থেকে স্পষ্ট দেখা যায় না।ঘোলা ঘোলা লাগে তার চেহারা।
হুম। জানি তার উদাহরণ বহুবার পেয়েছি।(সমুদ্র)
__হুম তাই অতীত নিয়ে ভাবা বন্ধ করুন সাথে মধ্য রাতের ঘুম নষ্ট করাও(আমি)

এখনো দেখছি মস্তিষ্কে বিচরণ করার ক্ষমতা রাখো!আগের মতই(আমার দিকে তাকিয়ে)
__অনেক কিছুই আগের মত রয়ে গেছে তার মধ্যে হয়তো এইটাও।

ঠক ঠক। দরজায় বারী পরলো!!!

(চলবে….)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *