পূর্ব রোদ

পূর্ব রোদ !! Part- 29

“ইয়েস।এক রাত কাটালে তোমার থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তি তো পেয়ে যাবো।”
কথাটা নিলয়ের বুকে নির্ধারিত তীরের মতো ভেদ করলো।নাবিলা’র কাছে সত্যিই সে অতোটা বিরক্ত যে মুক্ত হওয়ার জন্য কতোকিছু করছে।হ্যা!নিলয় তাকে সত্যি চিরদিনের মতো মুক্ত করে দিবে।নিলয় বাঁকা হাসলো।সে হাসিতে লুকিয়ে পরলো জমে থাকা কষ্টের পাহাড়’টা।
নিলয় ওয়াইন গ্লাসে ঢালতে ঢালতে বললো,”ওয়াইন তো খাও?”
“নাহ।”
“আমেরিকার মেয়ে হয়ে ওয়াইন খাও না?”
“আমেরিকা যখন ছিলাম তখন খেতাম।আপাতত এক বছর হলো খাই না।”
“নাইস!যেমন দেশে আছো তেমন সংস্কৃতি।বাই দ্যা ওয়ে তুমি আগে যে অতিরিক্ত মাত্রায় ফর্সা ছিলে সেটা এখন নেই।”
“জানি।”
নিলয় গ্লাসে ঢে

লে রাখা মদটা এক বার মুখে দিয়ে পুরাটা খেয়ে ফেললো।নিলয় আবার বোতল থেকে গ্লাসে ওয়াইন নিচ্ছিলো তখন নাবিলা সামনের সোফায় বসে বললো,”আগে তো ওয়াইন খেতে না এখন কেনো খাও?”
“সবসময় খেতাম।”
“ওহ।তুমি সেদিন বলেছিলে তোমার অসুস্থ তাই ইন্ডিয়া ছিলে।কী অসুখ হয়েছিলো উনার?”
“ক্যান্সার।এখন আগের তুলনায় বেটার আছে।”
“ওহ।উনারা এখানে থাকেন না?”
“নাহ।ইন্ডিয়া আছেন।”
প্রতিত্তোরে নাবিলা চুপ করে রইলো।ক্যান্সারের খরচ চালানোর জন্য হয়তো নিলয় মেয়েদের ফাঁসাতো।নাবিলা জানে তার বাবা নেই।নাবিলা’র ছোট বোন আছে একটা।তাহলে সংসারের হাল এখন নিলয়ের হাতে।অথচ নিলয় কতোটা চিল আছে।ভাবতেই নাবিলা’র মুখটা ‘চ’ এর রুপ ধারণ করলো।
“তো নাবিলা?”
“হুয়াট?”
নিলয় ওয়াইনের গ্লাস’টা সাথে নিয়ে নাবিলা’র পাশে বসলো।তাদের মধ্যে দূরত্ব বলতে শুধু মাত্র দু ইঞ্চি।হঠাৎ নিলয় এভাবে তার পাশে বসায় নাবিলা চমকে উঠলো।আড়চোখে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে আরাম করে মদ খাচ্ছে।নাবিলা’র নাকে বেঁধে গেলো অন্যরকম একটা সুগন্ধ।অনেকটা বেলি ফুলের মতো।কিন্তু নাবিলা’র জানা মতে ওয়াইন থেকে তো বিদঘুটে গন্ধ আসে।তাহলে নিলয়ের কাছ থেকে মধুর ঘ্রাণ কেনো আসছে?
নিলয়ের পান করা শেষ হলে গ্লাসটা পাশে রেখে দিলো।তারপর নাবিলা’র হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
“সেদিন পার্টি’তে কতো সুন্দর ড্রেস পরে গেলে অথচ আজকে আমার কাছে আসলে জিন্স পরে?”
নিলয়ের কথায় নাবিলা যতটা না রাগলো তার চেয়ে বেশি রাগলো তার হাত ধরায়।নাবিলা এক ঝটকায় নিজের তার নিলয়েড কাছ থেকে নিয়ে নিতে চাইলো।কিন্তু নিলয় আগে থেকে যেনো জানতো নাবিলা এমনটা করবে।তাই সে হাতটাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।প্রচন্ড রেগে নাবিলা কিছু বলার জন্য ঠোঁট নাড়বে তার আগেই নিলয় তার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললো,”সসস!কোনো কথা না।আজ রাতে তুমি টোটালি আমার।আমি যা বলতো তুমি তাই করবে।”
“ইউ ব্লা…”

“জানি আমি।এখন যাও গিয়ে শাড়ি পরে আসো।”
“হুয়াআআট?আর ইউ গন ম্যাড?তুমি ভাবলে কী করে আমি শাড়ি পরবো।তাও তোমার কথায়?”
নাবিলা’র কথায় নিলয় কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের কানে এক হাত দিয়ে বললো,”কান’টা একদম গেলো।নাবিলা পাখি এভাবে চিল্লাও কেনো?”
“তোমাকে আমি….”
“চাইলে কিস করতে পারো।মাইন্ড করবো না।”
“রাবিশ!”
নাবিলা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে নিলয় তাকে শাড়ি পরিয়ে ছাড়বে।কিন্তু নাবিলা জীবনেও শাড়ি পরেনি।তাহলে হুট করে শাড়ি কীভাবে পরবে?আর পরবেই না কেনো?নিলয়ের সাথে এক রাত থাকতে এসেছে এখানে শাড়ি পরার কী দরকার?
নাবিলা হুট করে নিলয়ের উদ্দেশ্য বললো,”শাড়ি পরতে পারি না।আর আমি শাড়ি কেনো পরতে যাবো কেনো?হু আর ইউ?”
“আপাতত তোমার ওয়ান নাইট পার্টনার।শাড়ি আমি পরাতে পারি।”
“তোমার থেকে শাড়ি পরার মতো লো ক্লাস ইচ্ছে আমার নেই।আর শাড়ি না পরলে কী করবে তুমি?”
“আন্টি’কে ফোন করে বলবো তুমি এখন আমার সাথে আছো।তারপর আন্টি মনে করবে আমাদের মধ্যে কুচ কুচ আছে।দ্যান…. বাকিটা বুঝে নাও।”
নাবিলা’র নিজের কপালে নিজের চড় দিলো।কেনো যে শুধু শুধু নিলয়ের কাছে আসতে গেলো।আর যদি মা ঘুনাক্ষরেও টের পাই তাহলে তো ভাবতে নিলয়ের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক আছে।তখন তাদের বিয়ে পাক্কা সেট।আর নিলয়ের মতো একটা থার্ড ক্লাস ছেলেকে নাবিলা বিয়ে করে লাইফ হ্যাল করবে না।তার চেয়ে বরং শাড়ি পরাটাই শ্রেয়।নাবিলা আগের মতো কন্ঠস্বরে কঠিন ভাব বজায় রেখে বললো,”শাড়ি পরতে পারি না।আর তোমার থেকেও পরবো না।অন্য কেনো ওয়ে থাকলে বলো।”
“গুড গার্ল!এবার নাহয় হট গার্লের মতে আচরণ করলে।ইউটিউব থেকে দেখে শাড়ি পরে আধ-ঘন্টা’র মধ্যে আমার সামনে আসবে।”
“শাড়ি কোথায়?”
“ঐ রুমে।”
নিলশ হাতের ইশারায় নিজের রুমটা দেখিয়ে দিলো।নাবিলা বিরক্তি নিয়ে সে রুমে প্রবেশ করতে যাবে তখন পেছন থেকে নিলয় বললো,”একটু সুন্দর করে বাঙ্গাল বউয়ের মতো পরিও।হিন্দি নায়িকার মতো না কিন্তু।”
নাবিলা’র ইচ্ছে করছিলো নিলয়কে কয়েকটা কথা শুনাতে।কিন্তু কথায় কথা বাড়ে।তাই সে সবটা হজম করে রুমে ঢুকে গেলো।

রোদ অনেকক্ষণ ধরে সদর দরজার সামনে পাইচারি করছে।অপেক্ষা করছে পূর্ব।সেই আছরের সময় যে বেরিয়ে গেলো এখনও বাসায় ফেরেনি।টেনশনে রোদের মাথা ফেটে যাচ্ছে।এদিকে এশা’র সময় হতে যাচ্ছে।রোদ অগণিত বারের মতো দরজার বাইরে তাকাতে দেখলো পূর্ব নামের মানুষটি বাসার দিকে এগিয়ে আসছে।রোদ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো।তার অপেক্ষা শেষ করে পূর্ব তার সামনে এলো।এক পকল রোদের দিকে কিছু না বলে রুমের দিকে এগোলো।রোদ পেছন পেছন যেতে যেতে বললো,”কোথায় ছিলে তুমি?কতো অপেক্ষা করেছি?কিছু বলছি তো আমি।পূর্ব?”
রোদের একটা প্রশ্নেরও পূর্ব উত্তর দিচ্ছে না।পূর্ব রুমে ঢুকে রোদের মুখের সামনে টাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো।পূর্বের এমন ব্যাবহারে রোদ হতবাক হয়ে গেলো।রোদের মনে পরলো আসরের সময় কী হয়েছিলো।রোদ দরজায় হালকা টুকা দিয়ে বললো,”পূর্ব তুমি ভূল ভাবছো।মেঘ….”
“আমার রুমে যেনো কেউ না ঢুকে।”
পূর্বের বিপরীত কথা শুনে রোদের কিঞ্চিত মন খারাপ হলো।পরক্ষণে ভাবলো দোষ সে নিজে করেছে তাই শাস্তি পাচ্ছে।কিন্তু রোদ ঠিক করে নিয়েছে যেভাবে হোক পূর্বের রাগ ভাঙ্গিয়ে ছাড়বে।রোদ বিড়বিড় করে দরজায় হালকা আঘাত করে চলে গেলো।


“Disgusting,শাড়ি পরছি না কচু।যত্তসব!”
নাবিলা শাড়ির কুচিটা কিছুতেই ঠিক করতে পারছে না।ইউটিউবে হাজার বার দেখেছে শাড়ি পরার ভিডিও।কিন্তু এতো দেখার পরও ভূল হচ্ছে।বিরক্ত হয়ে নাবিলা একবার খুলছে আরেকবার পরছে।ওদিকে নিলয় অনেকক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করছে।দু-তিনবার সাড়া দেওয়ার পর নাবিলা একদম কথায় বলছে না।মূলত তার রাগ উঠছে নিলয়ের উপর।নাবিলা শেষ বারের মতো শাড়িটা গায়ে প্যাঁচালো।
প্রায় এক ঘন্টা হয়ে যাওয়ার পরও যখন নাবিলা’র রুম থেকে বের হওয়ার নাম নেই নিলয় তখন ভয় পেয়ে গেলো।নাবিলা’র নাম ধরে কয়েকবার ডাকাডাকিও করলো কিন্তু সাড়া আসছে না।নাবিলা’র কিছু হয়েছে মনে করে নিলয় ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে রুমের দরজা খুললো।
দরজা নড়ার শব্দে নাবিলা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো নিলয় আতঙ্কিত চেহেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ সে বাতাসের গতিতে দৌড়ে এসে নাবিলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।এভাবে হুট করে ঝাপিয়ে পরায় নাবিলা হতবাক হয়ে গেলো।প্রায় পাঁচমিনিট পর নিলয় তাকে ছেড়ে দিলো।রাগান্বিত কন্ঠে নাবিলা শাসাতে যাবে তখন নিলয় বললো,”জাস্ট সিম্পল একটা শাড়ি পরতে এতোক্ষণ লাগে?প্রাণটাই চলে যাচ্ছিলো।”
পরক্ষণে নিলয় নাবিলা’র শাড়ি পরা দেখে ফিক করে হেসে উঠলো।নিলয়ের হাসিতে নাবিলা অবাকের রশ্মি কাট হলো।নাবিলা নিজের দিকে খেয়াল করে দেখলো শাড়িটা মোটামোটি পরা হয়েছে কিন্তু কোনো রোলস ফলো করেনি।শাড়ি শুধু ওপাশ থেকে এপাশে পেঁচিয়ে রেখেছে।নিলয় যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিলো তখন ভয় পেয়ে কুঁচি গুলায় খুলে যায়।নিলয় হঠাৎ তার শাড়িতে হাত দিলো।অসস্তিতে নাবিলা রেগে বললো,
“স্টপ দিস ননসেন্স।”
“তোমাকে আমি….ওয়েট”
নিলয় তার ড্রয়ার খুলে ড্রয়ার থেকে ট্যাপ নিয়ে নাবিলা’র মুখে লাগিয়ে দিলো।তার মুখের সামনে তর্জনী আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে বললো,”যদি নড়াচড়া করেছো তাহলে হাত-পাও বেঁধে দিবো।”
নিলয় নিজে ইউটিউব দেখলো কিছুক্ষণ মন দিয়ে।তারপর নাবলিকে উদ্দেশ্য করে বললো,”তুমি আঁচল’টা ধরে রাখে আমি হেল্প করছি।”
অনিচ্ছা সত্ত্বেও নাবিলা শাড়ির আঁচলটা ধরলো।নাবিলাকে অবাক করে দিয়ে নিলয় কয়েক মিনিটের মধ্যে শাড়ি’র কুঁচি খুব সুন্দর করে তৈরি করলো।কুঁচি গুচ্ছ নাবিলা হাতে দিলে নাবিলা তা গুঁজে নিলো।একটু পরে শাড়ি পরানো শেষ হলে নাবিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“ঐ বক্সে কিছু সরঞ্জাম আছে।তুমি এ রুম থেকে বের হয়ে পূর্ব দিকে গেলে দেখবে ছাঁদে যাওয়ার সিঁড়ি দেখবে।তারপর ছাঁদে চলে এসো।”
নাবিলা’কে কিচ্ছুটি বলার সুযোগ না দিয়ে নিলয় বেরিয়ে গেলো।নিলয়ের এতে সুন্দর ব্যবহারে নাবিলা অবাক থেকে অবাক হচ্ছে!ছাঁদে কেনো যেতে বললো নিলয়?কী উদ্দেশ্য ওর?

“রোদ কী হয়েছে?পূর্ব এখনো আসেনি?”
“এসেছে।রুমে আছে।”
“কী হয়েছে তোর?মুখটা ওমন কেনো?”
“কিছু না বাবা।”
“বল আমায়..”
সূর্য মোহাম্মদের জোরাজোরি’তে রোদ শুধু বললো পূর্ব রেগে আছে।সূর্য মোহাম্মদ রাগ ভাঙ্গানোর জন্য রোদকে কিছু টিপস দিলো।সূর্য মোহাম্মদের কথায় রোদ বেশ খুশি হলো।কথামতো রোদ পরিকল্পনা তৈরি করলো।


নাবিলা তৈরি হয়ে নিলয়ের দেওয়া নকশা অনুযায়ী ছাঁদে গেলো।ছাঁদে পা রাখতেই নাবিলা অবাক হয়ে গেলো।ছাদের এক কোণায় বড় বড় সাইজের দুটি গোলাপ গাছ।গাছের উপরে ছোট ছোট বাতি দিয়ে লাইটিং করা।লাইটিংটা এতোটা নিখুঁতভাবে করেছে যে আলো’টা খুব নিখুঁতভাবে গোলাপের উপর পরছে।ছাদের মাঝখানটাই দোলনা।দোলনাটা তেও লাইটিং করেছে। নাবিলা’র থেকে কয়েক ফুট দূরে ডিনারের জন্য গোল করা টেবিল।নাবিলা অবাক হয়ে চারপাশটা দেখছে তখনি তার চোখে এক গুচ্ছ আলোর রশ্মি পরলো।এমনভাবে আলোটা আসায় নাবিলা মুখে হাত দিলো।পেছনে দু’পা এগোতে গেলে শাড়িতে পা লেগে হুঁচট খেয়ে পড়ে যেতে চাইলে নিলয় তাকে ধরে ফেললো।ভয়ংকর রকম দৃষ্টিতে দু’জন দু’জনকে নিখুঁতভাবে খেয়াল করছে।
নাবিলা নিলয়’কে কাছ থেকে দেখে বুঝতে পারলো চেহেরা আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গেছে।চোখের নিচটা কালো হয়ে গেছে।তবুও যেনো নাবিলা’র মনে হলো নিলয় তার দেখা সেরা পুরুষ!
আজ কোনো প্রথম মেয়েকে নিলয় টাচ করেনি।তবুও নাবিলা যেনো অন্য রকম।মাতাল করা মতো ঘ্রাণ নিলয়ের নাকে বেঁধে গেলো।কালো শাড়ি’টা নাবিলা’র সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে।নাবিলা মুখে থাকা তীল চিহ্ন যেনো নাবিলা’র সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতা!খুব কষ্ট হয় নিলয়ের যখন মনে পরে নাবিলা অন্যকারো হয়ে যাবে।কিন্তু নিয়তির খেলা তো কেউ আটকাতে পারে না।
[চলবে]