পরিণয়ে পরিণতি

পরিণয়ে পরিণতি !! Part- 25

কি বলছ এসব রাহি?? তোমার মাথা ঠিক আছে তো??
— ভাবি যা বলছি সত্যি বলছি। আমি ১ বছর আগে বিয়ে করেছি তারেক কে।
— তাহলে তো সমস্যা নেই তুমি ওদের পরিবার কে আসতে বলো। আমি নাহয় সবাইকে বুঝিয়ে বলব।
— ভাবী ও এখন বিয়েটা স্বীকার করতে চায় না। ও বলেছে বাচ্চা টা নষ্ট করে দিতে। আমি যে
— কি!! একটা বাচ্চা কত সাধনা ধারণা আছে?? এই বাচ্চার জন্যই তো তোমরা আমকে..
— ভাবী তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি তাই বলে হয়ত আল্লাহ আমাকে এত শাস্তি দিচ্ছে।
— তুমি এখন কি করতে চাচ্ছ??
— ভাবী আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা কি করব কোথায় যাব।
— তোমার কাছে বিয়ের কোন প্রমাণ নামা কিছু আছে??
— না ভাবী ওকে যতবার জিজ্ঞেস করেছি ও বলত ওর কাছে নাকি রাখছে আমার এসব নিয়ে ভাবার দরকার নেই।
— সত্যি কি বিয়ে টা হয়েছে??
— বুঝলাম না!
— মানে ও কি বিয়েটা সত্যি করেছে নাকি বিয়ের,নাটক করেছে।
— ভাবী আমি জানিনা সত্যি কিছুই জানিনা।
— দেখো রাহি একটা সন্তান আল্লাহর দেয়া অনেক বড় রহমত। এত বড় পাপ করা ঠিক হবে না।
— ভাবী আমি সবাইকে মুখ দেখাবো কেমনে!!
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে মুনতাহার শাশুড়ীর চোখেল জল বেয়ে পড়ে বুক ভেসে যাচ্ছে। নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না এতক্ষণ যা শুনেছে সত্যি নাকি শুনতে ভুল করেছে।
এ কি ক্ষতি হয়ে গেলো আমার মেয়েটার। আমার মেয়েটার এখন কি হবে..
এটা বলে চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লেন।
রাহি মুনতাহা দৌড়ে আসলো। ওদের বুঝতে বাকি রইলো না কেন কাঁদছেন।
রাহি মায়ের পা ধরে ক্ষমা চাচ্ছে,,
— মাগো আমায় মাফ করে দাও। আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।
— তুই এই বাচ্চা টা রাখিস না। সমাজে মুখ দেখাবি কেমনে।
— মা আমি পারবো না এই মাছুম বাচ্চাটিকে মেরে ফেলতে।
— তোকে যে লোকে থুতু ছিটাবে। কেউ বিশ্বাস করবে না রাহি। এত বড় ভুল কেমনে করলি । এখন এই বাচ্চার বাবার পরিচয় কি বলবি। তুই এটারে রাখিস না।
রাহি আর ওর মা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
মুনতাহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে.. মুনতাহার চোখের কোণে জলের আনাগোনা। কেউ সন্তানের জন্য সারা দুনিয়ার কিছুই বাদ রাখে না আর কেউ না চাইতে পেয়ে যায় সবি আল্লাহর পরীক্ষা।
আল্লাহ আমি তো এমন অভিশাপ দি নাই। মাছুম বাচ্চা টা কি দুনিয়ায় মুখ দেখার আগে শেষ হয়ে যাবে।
মুনতাহা কিছুটা রাগ করে বলে উঠলো,,
— বংশের সন্তানের জন্য তো মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। আজ একটা বাচ্চা কে যে এখনো পথিবীর মুখ দেখেনি তাকে খুন করার কথা কিভাবে ভাবছেন?? নিস্পাপ শিশুটার কি দোষ!!
— তো কি করব বলো। জন সম্মুখে বলে আসব আমার মেয়ের বিয়ে হয়নি কিন্তু বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে। আমরা কেউ আর বাড়ির বাইরে পা রাখতে পারব??
— লোকে তো কত কথা বলে। এক বেলা না খেয়ে পড়ে থাকুন কেউ খোঁজ নিতে আসবে না৷ যে খারাপ কিছু শুনবে এমনি কথা শুনাতে হাজির হয়ে যাবে এটা অনেকের স্বভাব। এই বাচ্চা টা আমার আর আপনার ছেলের পরিচয়ে থাকবে।
— কি বলছ তুমি। যদি কেউ জেনে যায় তখন কি হবে। আমার মেয়েটার যে মরা ছাড়া উপায় থাকবে না।
— দেখেন যা হবার হবে কিন্তু জেনেশুনে এত বড় পাপ করা যাবে না।
মা বোনের কান্না দেখে সাইমুনের চোখে জল।
কেন আমার বোন টা শাস্তি পাচ্ছে যা পাপ করেছি তো আমি।
— রাহি ছেলেটার পরিচয় দে আমি ওকে দেখে ছাড়ব আমার বোনের সাথে বেঈমানী। আমি খুন করে ফেলব।
মুনতাহার মা চোখ মুছে বলছেন,
— এসব করতে যাইস না আমার মেয়েটার যে আরো বদনাম হবে।
— মা বুঝতেছ না আমার বোনটাকে ওই কুত্তা বিয়ে করেছে আর এখন স্বীকার করতে চাচ্ছে না। এসব জানার পরে ও কিছু করব না।
আজ তোমার বোন কে একা ফেলে রেখে গেছে বলে কত কষ্ট হচ্ছে তাই না সাইমুন। এভাবে আমার সাথেও তো বেঈমানী করেছিলে। কথা দিয়েছিলে আমার সুখ দুঃখের ভাগীদার থাকবে কিন্তু…
— এমন ও তো হতে পারে ছেলেটা ওকে বিয়ে করেনি শুধু রাহিকে বুঝ দেয়ার জন্য বিয়ের অভিনয় করেছে।
— আমরা কি চুপ করে থাকব।
— চুপ থাকার কথা বলিনি। মাথা গরম করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।
..
মুনতাহার শাশুড়ী কেমন যেন হয়ে গেলো সারাক্ষণ মেয়ের কথা বলে কান্নাকাটি করে। যত দিন যাচ্ছে রাহি একদম চুপ হয়ে যাচ্ছে।
মুনতাহা এ বাসায় আসার পরেও জব টা ছাড়েনি। মুনতাহা বুঝে গেছে কারো জন্য নিজের সব কিছু বিলিয়ে দেয়া ঠিক না। কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখা উচিত। নিজের পরিচয় নিজেকে গড়ে তুলতে হবে যাতে কেউ সুযোগ পেলে ছুড়ে ফেলে দিতে না পারে।
মুনতাহা আলাদা রুমে থাকে। সাইমুনের জন্য সব কিছু করে কিন্তু তেমন একটা কথা বলে না। মুনতাহা কে যেন সকল জড়তা ঘিরে ধরেছে। সাইমুনের আসে পাশে খুব প্রয়োজন না হলে থাকে না।
আবার সাইমুন একটু জোরে কাশলে নিজের রুমে থাকতে পারে না। আড়ালে ভালোবাসা আঁকড়ে ধরে কিন্তু সামনে আসলে সব কিছু উলট পালট হয়ে যায়।
কেন ভালোবাসা গুলো মাঝে মাঝে নিজস্বতা হারিয়ে ফেলে। কেন দিন শেষে সকল অভিমান ভুলে আমরা ভালোবাসার স্বপ্ন সাজাতে পারি না! হয়তো অভিমান গুলো এতটাই বেশি ক্ষত হয়ে যায় যে হাজারো মলম দিয়ে শুকানো যায় না।
সাইমুন চেষ্টা করছে মুনতাহার অভিমান ভাঙ্গাতে। কোথাও জানি ঘাটতি আছে। সাইমুন সহ্য করতে পারছে না মুনতাহা কাছে থেকেও অনেক দূরে। প্রথমে ভেবেছে অভিমান কমে গেলে ওর কাছে আসবে কিন্তু মুনতাহার মনের ভুবনে এতবেশি অভিমান জড়ো হচ্ছে কালো মেঘ গুলো কে সাইমুন দূর করতে পারছেনা।
এভাবে কয়েক দিন চলে গেলো। সাইমুন ঘুমাতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। বুকের কষ্টের ভার টা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
সবথেকে কষ্টকর হচ্ছ্ব কাছের মানুষ টা পাশাপাশি থাকার পরেও অতি যত্নে আদর করে তুলে রাখা অনুভূতি গুলো তাকে বলা যায় না।
একটা মানুষকে আপন করা সহজ কিন্তু সারাজীবন আপনকরে ধরে রাখাটাই কঠিন।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় ৩টা। সাইমুনের খুব ইচ্ছে করছে মুনতাহা কে দেখতে। একবার শক্ত করিয়ে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে,,
আমি আর পারছিনা মুনতাহা তোমাকে ছাড়া থাকতে।
মুনতাহা কে মৃদু আলোতে ভীষণ মায়াবতী লাগছে। মুনতাহা ঘুমের রাজ্যে ডুবে আছে ।
মুনতাহা মুখ থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে আলতো ঠোঁটে চুমু দিলো। মুনতাহা তেমন টের পেলো না। সাইমুন জড়িয়ে ধরার পর মুনতাহা গরম নিঃশ্বাস পেয়ে আঁতকে উঠল।
— তুমি কেন এত রাতে এখানে ?? কোন সাহসে জড়িয়ে ধরেছ??
— আমি তোমাকে ভালোবাসি মুনতাহা।
— এই ভালোবাসা তখন কোথায় ছিলো যখন বিশ্বাসের কাছে হেরে গিয়ে আমার ভালোবাসা আগুনে পুড়ে যাচ্ছিলো।
— মুনতাহা প্লিজ এমন কর না। আমি আর পারছিনা এই দুরুত্ব নিতে।
— জানো সেদিন আমিও পারিনি। কত করে বলেছিলাম শুনেছিলে সেদিন আমার ভিতরের আহাজারি?? এখন বুঝো ভালোবাসার মানুষ কাছে থেকেও দূরে থাকলে কেমন লাগে।
— বিশ্বাস কর আমার অবন্তিকার সাথে কিছু নেই।
— কিছু থাকলে বা কি! যেখানে বিশ্বাসে মৃত্যু হয়।
ভালোবাসা সামান্য স্বার্থের কাছে হেরে যায় সেখানে কোন কিছুর মূল্য থাকে না। প্লিজ এখান থেকে যাও।
— তুমি কি চাও আমি মরে যাই।
— মরার জন্য তো যাইনি। আর হ্যাঁ শুনো কাল রেডি হয়ে থেকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
— যেখানে তুমি থাকবে না সেখানে আমি আর কিছু ঠিক করতে চাই না আমার মরে যাওয়া ভালো।
— ভালোবাসলে কেউ ব্লাকমেইল করে না। ব্লাকমেইল করে কি ভালোবাসা টিকিয়ে রাখা যায়??
তুমি যাও আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
মুনতাহা কাঁথামুড়ি দিয়ে মুখে কাঁথা চেপে ধরে কান্না করছে।
আমি কেন পারছিনা তোমাকে আপন করে নিতে? কেন আমার মন এত শক্ত হয়ে গেছে। কেন ঘৃণার কাছে ভালোবাসা প্রতিনিয়ত হেরে যাচ্ছে।
কেন বা কষ্ট হয় তোমাকে কষ্ট দিয়ে। আমি যে নিজের সাথে যুদ্ধ করে নিজে হেরে যাচ্ছি। সবাইতো ভালোবেসে শত অপরাধ ক্ষমা করে দেয় তাহলে আমি কেন পারছিনা তোমাকে ভালোবেসে ক্ষমা করে দিতে। হয়তো ভালোবেসে বিয়ে করেছি বলে পারছিনা।
সাইমুনের কানে মুনতাহার কথা গুলো বাজছে।
সত্যি তো মুনতাহা নিজের জায়গায় ঠিক। ও কে তো আমি কম কষ্ট দি নাই। আমাকে কতভাবে বুঝিয়েছিলো আমি বুঝার চেষ্টা করিনি হয়তো বুঝেও না বুঝার ভান ধরেছি। আজ যখন সব বুঝলাম মুনতাহা আমাকে চায় না। সাইমুন গান শুঞ্চহে
মুনতাহার কানে ভেসে আসছে। মুনতাহা জানে সাইমুন কষ্ট পেলে গান শুনে।
স্মৃতির জোনাকি ছাড়া কিছু নেই,
বুকের বা পাশে।
আমার দুঃখ বাড়ে – যেকোনো ঋতুর
পাল্টে যাওয়া বাতাসে।
আলতো গায়ে মাখি – যতনে তুলে রাখি,
তোমার লেখা যত চিঠি আসে।
জানলা খুলে রাখি – আসলে সবই ফাঁকি,
তোমার নামে তবু আলো আসে।
স্মৃতির জোনাকি ছাড়া কিছু নেই,
বুকের বা পাশে।
অল্প আলোর শহর
কত মন ভেঙে যায়।
জেগে উঠে অভিমান
চিত্রকল্প ভরা কবিতায়।
আরো ব্যথা পেতে বাকি আছে,
কিছু ঘটনা বুঝি তাই চোখে ভাসে
.
.
মুনতাহা সাইমুন কে গিয়ে বলছে,,
— চলেন আমার সাথে ডাক্তার কাছে যাবেন।
— কেন??
— এত কথা না বলে চলেন। আর নাহয় আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।
মুনতাহা জানে এখন মুনতাহা কে কোনভাবে যেতে দিবে না রাহির এ অবস্থায়
মুনতাহা সাইমুন কে নিয়ে ডাক্তার কাছে গেলো। ডাক্তার বলেছে দুজন কে নতুন করে টেস্ট করতে হবে। সাইমুন মুনতাহা জানে রিপোর্ট কি আসবে তারপরেও দুজন নতুন করে টেস্ট করে নিলো।
….চলবে…..