পরিণয়ে পরিণতি !! Part- 24
মুনতাহা রেডি হয়ে মা কে সালাম করে বের হয়েছে। মাথায় নানান কথা ঘুরপাক খাচ্ছে।
আমার কি যাওয়া ঠিক হচ্ছে নাকি আবার কোন ভুল করছি!
ওরা যদি ভাবে আমি এখনো দূর্বল! ওদের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি তাহলে তো নিজেকে আবার ছোট করা হবে। মানলাম সাইমুন নিষেধ করেছে ওর মা কে কি পারতো না অনুতপ্ত মন নিয়ে ছোট হয়ে আমাকে নিতে আসতো।
রিক্সা চালক মামা দ্রুত গতিতে পেন্ডেল মেরে ঠান্ডা সতেজ বাতাসে এগিয়ে যাচ্ছেন। সামনে বাস কাউন্টার।
হঠাৎ মুনতাহা রিক্সা থামিয়ে,,
— মামা রিক্সা ঘুরিয়ে ফেলুন।
— কেন কি হইছে আফা??
— কিছু না মামা বাসায় যাব।
মাঝ পথ থেকে বাসায় চলে আসলো। যতক্ষণ না সাইমুনের মা মুনতাহা কে জোর না করবে মুনতাহা যাবে না।
আজ মন টাকে একটু শক্ত করি। নাহয় এমন লোক গুলো শত দোষ করার পরেও ভেবে যাবে এ সমাজে মেয়েরা এখনো দূর্বল। পুরুষের হাজার দোষ থাকলে মেয়েরা মেনে নিতে বাধ্য।
মুনতাহার মা মুনতাহা কে দেখে অবাক,,
— কিরে চলে আসলি কেন??
— মা ভাবলাম দুই একদিন পরে যাব।
— কিছু হয়েছে আমারে বল না।
— কিছুই না মা। ভেবেছি এভাবে রাহির কথায় চলে যাওয়া টা বেইমানান লাগছে। সাইমুনের মা যদি আমাকে কল করে অনুরোধ করে বা নিতে আসে তাহলে যাব তার আগে না।
— তোকে তো বলেছি এত সহজে যাইস না। অন্যায় করেছে যে সেটা ওরা আগে ভালো করে বুঝুক।
মুনতাহার মন সায় দিচ্ছে না কিন্তু বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে। জীবনে মাঝেমধ্যে অন্যের ভুল বুঝানোর জন্য কঠোর হতে হয়। যতক্ষণ না নিজের ভুল টা বুঝতে পারছে ততক্ষণ অপরাধবোধ কাজ করে না।
.
.
রাহি যখন দেখছে মুনতাহা আসছে না। মা কে গিয়ে বলছে,
— মা আমরা তো ভাবীর সাথে অন্যায় করেছি। ভাইয়া যত নিষেধ করুক তোমাকে একবার ভাবী কে আসতে বলা উচিত।
— তুই ঠিক বলছিস রাহি। নাহয় তোর ভাইটা শোকে শোকে মরে যাবে। আমি মা হয়ে ছেলের চোখে ঘৃণা নিয়ে কিভাবে বাঁচব!
— হুম মা তুমি নাহয় ভাবী কে আনতে চলে যাও।
রাহির কথা শুনে রাহির মা পরের দিন কাউকে না বলে মুনতাহার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।
বাস থেকে নেমে মুনতাহার শাশুড়ীর সাহস হলো না মুনতাহার বাড়ি যেতে। তাই চিন্তা করলেন এখানে অপেক্ষা করবেন।
মুনতাহা কে কল দিচ্ছে,,
— মুনতাহা মা কেমন আছিস।
মুনতাহা চুপ করে আছে।
— প্লিজ মা কথা বল। আমি তোর জন্য বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করছি তুই চলে আয় মা।
মুনতাহা নরমাল হয়ে বলল,,
— আপনি অপেক্ষা করেন আমি আসছি।
যতই বলি না কেন মুখের উপর এটা বলা দরকার সেটা বলা দরকার অনেকে আমরা পারি না। কষ্টের সময় কাউকে খোঁচা দেয়া ঠিক না। তাতে বদ দোআ ছাডা কিছুই মিলে না।
..
মুনতাহা কে দেখে মুনতাহার শাশুড়ী কেঁদে দিলেন। কিছু বলতে গিয়ে ও বলতে পারলেন না। গলায় যেন সব কথা একসাথে জমাট বেঁধেছে।
বাসের পাশাপাশি বসেও মুনতাহা ওর শাশুড়ির সাথে একবার ও কথা বলল না। মুনতাহার চেয়েও কথা বলতে পারছে না। কি জানি আটকে ধরে রেখেছে।
আসলে কেউ মন থেকে উঠে গেলে সহজে তার সাথে কথা বলা যায় না। কথা বলতে সংকোচ বোধ হয়। লজ্জা সংকোচ সব একসাথে পেয়ে বসে।
মুনতাহার শাশুড়ীর লজ্জা লাগছে কোন মুখে কথা বলবে। লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের জল মুছতেছে।
.
.
সাইমুন রাহি কে জিজ্ঞেস করছে মা কোথায় গেছে।
— মা একটু বাইরে গেছে কাজে।
— কি এমন কাজ আমাকে না বলে গেলো।
— তুমি তো আজকাল কারো সাথে কথা বল না কিভাবে বলবে।
— সেটা ঠিক আমি মরতে মরতে বেঁচে আছি। আমি এখন মানুষের মাঝে পড়ি না।
সাইমুন মুনতাহার ছবি বুকে নিয়ে শুয়ে আছে। এই রুমে কত হাসি দুস্টুমি মুনতাহা স্মৃতি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মুনতাহা তুমি কোথায়?? আমার কথা কি একটু ও মনে পড়ে না। খুব সুখে আছ রাশেদের সাথে তাই না। থাকবে না কেনো আমি যে তোমায় কষ্ট ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি।
.
.
মুনতাহা কে দেখে রাহি দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছে,,
— কেমন আছ ভাবী
— রাহি আমায় ভাবী না বললে খুশি হব।
রাহি মন খারাপ করে বললো,,
— আচ্ছা!!
মুনতাহার কন্ঠ শুনতে পেয়ে সাইমুন অবাক। ভাবছে স্বপ্ন দেখছে মুনতাহা কে। কতক্ষণ শুনার পর বুঝলো স্বপ্ন না সত্যি মুনতাহা এসেছে।
ধীরে ধীরে উঠে মুনতাহার সামনে গেলো,,
মুনতাহা সাইমুনের দিকে তাকাতেই বুক টা মোচড় দিয়ে উঠলো।
কি চেহেরা হয়েছে সাইমুনের। একদম চেনা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কতকাল বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলো। বয়স দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
—
— মুনতাহা তুমি এখানে?
সাইমুন মা কে বলছে,
– আমি তোমাদের নিষেধ করার পরেও মুনতাহা কে কেন আসতে বলেছ। আবারো নিজেদের স্বার্থের জন্য ওকে ডেকেছ।
— বাবা তোর শরীর খারাপ প্লিজ একটু শান্ত হ।
এমন সময় সাইমুন মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলো। মুনতাহা ধরতে গিয়েও কেন যেন ধরতে পারেনি।
সাইমুনের মা ছেলেকে ধরে বসালেন।
— আমাকে কেউ ডাকেনি। আমি অবন্তিকা থেকে তোমার শরীর খারাপ শুনে এখানে এসেছি আমার সময় হলে আমি চলে যাব।
— আমি জানি মা তোমাকে নিয়ে এসেছে আমার জন্য। আর চলে যেহেতু যাবে আসলে কেন??
— তুমি অসুস্থ এখন এসব কথা থাক।
রাহি মুনতাহার শাশুড়ী ওদের একা রেখে ভিতরে চলে গেছে।
মুনতাহা চলে আসতে যাবে পিছন থেকে সাইমুন বলে উঠলো,,
— কেমন আছ তুমি মুনতাহা।
— আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো। তুমিও ভালো থাকো।
দয়া করে আর সবাইকে ভালো থাকতে সাহায্য কর।
— দেখতে তো পাচ্ছ ভালো আছি। খুব ভালো আছি।
— ভালো থাকো সব সময় সে দোআ করি। তোমরা যাতে ভালো থাকো তাইতো চলে গেছি।
— হুম তুমি চলে যাওয়াতে আমরা সবাই খুব সুখে আছি।
.
.
মুনতাহার ইচ্ছা করছে না কোন কথা বাড়াতে। একবার মনের দূরুত্ব বেড়ে গেলে কাছে আসা কঠিন। বার বার আগের কষ্ট গুলো তাড়া দিতে থাকে। সাইমুনের দিকে তাকালে মুনতাহার বিয়ের সময়ের কথা গুলো মনে পড়ে যায়। কিভাবে মুনতাহা কে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজের সুখের জন্য বিয়ে করেছে।
.
.
মুনতাহা কে মুনতাহার শাশুড়ী আলাদা করে ডেকে হাত ধরে বলছে,,
— আমি জানি মা তুই আমাদের কে মনে প্রাণে ঘৃণা করিস। মেয়ে হয়ে মা টারে একবার মাফ করে দিতে পারবিনা। আমাদের উপর আর রাগ করে থাকিস না।
— আমি আপনাদের অনেক আগে মাফ করে দিয়েছি। রাগ সবার উপর করা যায় না তাই আপনাদের উপর আমার কোন রাগ অভিমান কিছু নেই।
— তুই আমাকে কথা দে আমার ছেলেটারে ছেড়ে যাবি না??
— আমি কখনো আপনার কোন কথা অমান্য করিনি। কিন্তু আজ আমি আপনাকে কথা দিতে পারব না। আমি এখানে সারাজীবনের জন্য থাকতে আসিনি। আমি এটুকু কথা দিতে পারি আপনার ছেলেকে সুস্থ করে সব কিছু ঠিক করে তবে যাব।
— আমাদের শেষ বারের মত মাফ করে দেয়া যায় না!
— আমাকে দয়াকরে আর রিকুয়েষ্ট করবেন না। আমি এটা রাখতে পারব না।
.
.
মুনতাহা ওর শাশুড়ী কে কিছুতেই মা ডাকতে পারলো না। মা ডাক টা অনেক মধুর শোনায়। মুনতাহা চেষ্টা করেও মুখ থেকে বের করতে পারেনি। বার বার মনে হচ্ছে এ মানুষ টিকে মা ডাকতে পারব না। কান্না আসছে তাও ঢুক গিলে বড় নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করলো।
.
সাইমুন খেয়াল করছে মুনতাহা আসার পর থেকে ওর সামনে তেমন আসেনি। তারপরেও সাইমুনের খুশি লাগছে অন্তত মুনতাহা একি বাসায় তো আছে। মুনতাহা আসার পরে সাইমুনে শরীর টাও আগের চেয়ে ভালো লাগছে।
মানুষ শরীরের অসুস্থতায় যতটা না খারাপ তার চাইতে মানসিক অসুস্থতায় বেশি অসুস্থ থাকে। শরীর ভালো থাকা অনেকটা মনের উপর নির্ভর করে। মন ভালো থাকলে মানুষ অসুখের মধ্যে ও সুস্থ থাকে।
..
রাহি কয়েকবার চেষ্টা করেছে মুনতাহা কে বলতে কিন্তু কিভাবে বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না।
মুনতাহা রাহির ঘরে গিয়ে,,
— কি ব্যাপার রাহি আমাকে তো আর কিছু বললে না নাকি সেটা আমাকে এখানে আনার মিথ্যে অভিনয় ছিলো??
— না ভাবী। আজ আমি মিথ্যে অভিনয় করার মত অবস্থায় নেই।
এটা বলে রাহি কান্না করছে
— কি হয়েছে তোমার কাঁদছ কেন?? বলনা কি সমস্যা??
— ভাবী আমি প্রেগন্যান্ট!
— কিইইইই…কিভাবে??
……. চলবে….