পরিণয়ে পরিণতি

পরিণয়ে পরিণতি !! Part- 11

মুনতাহা মানসিক শান্তির জন্য নামাজে বসে গেলো। কিন্তু নামাজের মধ্যেও সাইমুন অবন্তিকার কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
মানুষ যখন কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকে সেটা ব্রেনে আটকে যায়। সারাক্ষণ সে ব্যাপার টা কারণে অকারণে তাড়া দিতে থাকে।
মুনতাহা নামাজ শেষ করে শুয়ে গেলো। যতই ঘুম কে আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছে ঘুম যেন ফাঁকি দিয়ে অন্য কোথাও বাসা বাধঁছে। না ঘুম আসছে না।
নিজকে শক্ত করলেও মন কিছুতেই মানতে চায় না। অবুঝ মন বার বার নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়। চাইলে কি সব ছাড়া যায়? ছাড়ার পরেও কতকিছু বাকি থেকে যায়।
মুনতাহার মনের অজান্তে সাইমুনের রুমের সামনে বার বার ঘুরে এসেছে। চারদিকে ঘড়ির কাঁটার টিক টিক আওয়াজ ছাড়া,আর কিচ্ছু নেই। আজ সবাই প্রশান্তির ঘুম দিচ্ছে।
মুনতাহা শাশুড়ীর রুমের পাশ দিয়ে যেতে দেখছে,,
আজ শাশুড়ী মা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। পৃথিবীর কি অদ্ভুত নিয়ম এক জনের ঘুম কেড়ে অন্য জন সুখের ঘুম দেয়। একবারও আমার কথা ভাবলো না আমি ঘুমাতে পারছি কিনা। অনুতপ্ততা অনেক বড় ব্যাপার যা সবার মাঝে থাকে না।
.
.
অবন্তিকার সাইমুনের ঘুম ভাঙ্গার আগে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে গেলো। নতুন বউ সকাল সকাল গোসল না করলে দুনিয়ার প্রশ্ন!! এটা যেন বাধ্যতামূলক।
সাইমুনের মা অবন্তিকা কে দেখে বলছে,,
এই তোরা কই বউমা উঠে গেছে নাস্তা রেডি কর।
— বউ মা ঘুম কেমন হয়েছে।
— জি ভালো।
— সাইমুন উঠেনি।
— জানিনা। কষ্ট করে আমার ব্রেকফাস্ট রুমে পাঠিয়ে দিন। আমি এত জনসম্মুখে খেতে পারি না।
— হুম তুমি যাও আমি নিয়ে আসছি।
মুনতাহা ইচ্ছা করে নাস্তা নিয়ে রুমে গেলো। জানে ওর যাওয়াটা ঠিক হচ্ছে না তারপরেও মন মানছে না। দেখতে চায় সেই চেনা রুম আজ কতটা অচেনায় রূপ নিয়েছে।
অবন্তিকার রুম থেকে বের হবার পর পর সাইমুন ফ্রেশ হতে চলে গেলো।। সাইমুন ভাবছে,,
যতদ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে যেতে পারবে ততই শান্তি। বাসায় কোনভাবে থাকতে ইচ্ছে করছে না। মুনতাহার সামনে দাঁড়ানোর সাহস হচ্ছে না।
মুনতাহার সাথে বিয়ের পরের দিন কাটানো সময় গুলোর কথা খুব মনে পড়ছে। মুনতাহা ভেজা চুলে সাইমুনের ঘুম ভাঙ্গিয়ে আলতো করে কপালে চুমু এঁকে দিয়েছিলো। সেই স্পর্শ ভুলার মত না।
চাইলে কি ভুলা যায়!! এ জন্য বোধয় সবাই বলে প্রথম ভালোবাসা জীবনে দাগ কেটে যায়। প্রথম ভালোবাসার অনূভুতির কাছে সব তুচ্ছ।
মুনতাহা রুমে এসে দেখছে অবন্তিকা গান গাইতে গাইতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে শাড়ি ঠিক করছে।
এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছে সাইমুন নেই। পানির আওয়াজ শুনে বুঝেছে সাইমুন ওয়াশরুমে।
মুনতাহার বুকের ভিতর টা হঠাৎ মোচড় দিয়ে উঠলো। তাহলে কি সাইমুন অবন্তিকার মধ্যে সব হয়ে গেছে!!
কিন্তু বিছানায় যেভাবে ফুল দিয়ে সাজানো ছিলো সেভাবেই আছে।
আর কেন বা আমি ভাবছি এটা তো হওয়ার কথা।
অবন্তিকা মুনতাহা কে দেখে জজ্ঞেস করলো,,
— আচ্ছা আপনি কে হোন সাইমুনের??
— আমি!!
— হুম
মুনতাহা কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছে না। অবন্তিকার প্রশ্নে কিছুটা গাবড়ে গেলো।
— কিছুই না আমি উনাদের আশ্রিতা।
কথা টা শুনে অবন্তিকার মুনতাহার জন্য মায়া হচ্ছে। এত সুন্দর চেহেরার মানুষ কারো বাসায় আশ্রিতা হতে পারেম আহা জীবন কত নাটকীয়!!
অবন্তিকা ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,,
–“আপনি না দেখতে খুব সুন্দর!
— তুমিও খুব সুন্দর।
অবন্তিকা নাস্তা খেয়ে মুনতাহা কে বলছে,,
— কে বানিয়েছে নাস্তা গুলো??
— কেন খারাপ হয়েছে বুঝি?
— না না ভীষণ মজার। ঠিক আমার মায়ের হাতের মতো। মনে হচ্ছে কত বছর পরে মায়ের হাতে বানানো খাবার খাচ্ছি। একদম মা মা গন্ধ…
— তাই!! যত খুশি খাও আমি আবার বানিয়ে দিব।
এরমধ্যে সাইমুন বের হলো। কোন কথা না বলে অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে। একটু পর পর আড়াল হয়ে মুনতাহাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। মুনতাহার চোখে এক রাজ্যের অভিমান। মুনতাহা সাইমুনের দিকে একবারও ফিরে দেখছে না। ফিরে তাকাবে কেন ফিরে তাকানোর মত তো কিচ্ছু করে নি। মুনতাহার জায়গায় অন্য কেউ হলে জীবন নরক করে দিতো।

সাইমুন কে বের হতে দেখে সাইমুনের মা তড়িঘড়ি করে এসে বলছে,,
কিরে তুই কই যাচ্ছিস। নাস্তা ও তো করলি না??
— অফিসে। নাস্তা ওখানে করে নিব।
— নতুন বউ মা কে রেখে অফিস করবি??
কয়েকদিন ছুটি নিবি না?
— আমার কাজ আছে ছুটি নেয়া যাবে না।
মা কে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সাইমুন অফিসে চলে গেলো।।
রাহি মুনতাহা কে অবন্তির সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে মায়ের কাছে এসে বলছে,,
— মা দেখবা তোমার বড় বউ সব ডুবাবে।
— কেন কি হয়েছে??
— এটারে এখান থেকে না তাড়ালে পরে সব হারাবা।
— ভনিতা না করে বল না কি হইছে??
— দেখে এলাম অবন্তিকা ভাবীর সাথে খুব খাতির জমাচ্ছে। কখন আবার কি বলে ভেজাল লাগাই দেয় আল্লাহ জানে।
— কি বলিস এত অল্প সময়ে কিসের খাতির।
— আমার সাথে চলো দেখবে।
রাহি ওর মা কে নিয়ে অবন্তিকার ঘরে গেলো। মুনতাহার শাশুড়ী তাচ্ছিল্যের সুরে বলতে লাগলো,,
— তুমি এখানে কি করছ মুনতাহা?? এত হাসাহাসি কিসের?? কোন খুশি তোমাকে জড়িয়ে ধরেছে!
অবন্তিকা জবাব দিল,,
— কেন এ ঘরে হাসাহাসি কি পাপ?? নাকি জীবনে কখনো কাউকে হাসতে দেখেন নি।
রাহি মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আদিক্ষেতা দেখিয়ে বলছে,,
— ভাবী তুমি এখনো নতুন এসব বুঝবা না।
কখন তোমারে কি ভুলভাল বলে প্যাঁচ লাগাই দিবেন এগুলো কূটনামি করতে ভালোই পারে।
— শুনো রাহি আমি বাচ্চা না। এখন তো মনে হচ্ছে যত কুটনামি তোমাদের মাঝে।
— ভাবী!! কি বলছ তুমি।
— যা বলছি একদম ঠিক বলছি। চেহেরা হাবভাব দেখলে বুঝা যায় কারা কূটনামি করে।
— দেখছ মা। এই কূটনী মহিলা এতক্ষণে তোমার নতুন বউয়ের মাথা খেয়েছে।
রাহি, রাহির মা ভাবছে মুনতাহা না জানি কি অবন্তিকা কে কি লাগিয়ে দিয়েছে তাই আগে থেকে কথার প্রলপ দিচ্ছে।
মুনতাহা বললো,,
— আমি আপনাদের আশ্রিতা। মনিবের কথা মনিবের কাছে আর কি লাগাবো। কূটনামি করার স্বভাব
আমার কোন দিন ছিলো না।
মুনতাহার কথা শুনে রাহি, শাশুড়ী দুইজন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। মুনতাহা আশ্রিতা!!
— হুম তাতো দেখতে পাচ্ছ (রাহি)
— যা আমার না, তা পাওয়ার আশা আমি করি না। নিজের হলে এমনি থেকে যায় কূটনামি করতে হয় না।
রাহি মুনতাহার কথার মানে বুঝলো না।
— মুনতাহা কি না পাওয়ার কথা বলছ??
— ও কিছুনা বোন।
মুনতাহার শাশুড়ী মুনতাহার হাত টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন…
……চলবে….