1. নতুন গল্পঃ3. রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প গুলোঃপরিণয়ে পরিণতিলেখাঃ কাজী সারা

পরিণয়ে পরিণতি !! লেখাঃ কাজী সারা

পরিণয়ে পরিণতি

আজ আমার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের ফাইনাল কথা হবে। কনে পক্ষের অনেকে আসবে । রাতে ডিনার করে যাবে। সবাই কাজে লেগে গেছে বংশের বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা। ধুমধাম না করলে কি চলে হোক না দ্বিতীয় বিয়ে তাতে কি!! মেয়ে পক্ষের আবদার বলে কথা।
মেয়ের নাকি বিয়েতে খুব সেজেগুজে ছবি তোলার ইচ্ছে। প্রতিটা মেয়ের এমন স্বপ্ন থাকে। তার উপর শুনেছি মেয়ের দিক থেকে প্রথম বিয়ে। আমার শাশুড়ী মা জোর গলায় বলেছে নতুন বউ এর কোন শখ অপূর্ণ রাখবে না।
নিজের বিয়ের কথা মনে করে মুনতাহার চোখের জল গাল গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে। এক নজরে দেয়াল বেয়ে উঠে যাওয়া টিকটিকির দিকে তাকিয়ে আছে।
আচ্ছা টিকটিকিদের কি সংসার হয়। ওদের ও কি কষ্ট হয় মানুষের মত!! ওরা ও কি কষ্ট পেলে কাঁদে। সব কষ্টের মলম থাকলেও নিজের স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দেয়া কষ্টের মলম বোধয় এ দুনিয়াতে তৈরি হয়নি।
হঠাৎ করে মুনতাহা চিৎকার করে উঠলো,,

(বিঃ দ্রঃ “পরিণয়ে পরিণতি !! লেখাঃ কাজী সারা ” উপন্যাসর সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)

— উহুহু….
গরম তেলের চিটকায় মুনতাহার সকল ভাবনার অবসান ঘটলো । শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে আবার রান্নার কাজে মন দিলো।
কিছুক্ষণ পর মুনতাহার শাশুড়ী মা রান্নাঘরে এসে উঁকি দিয়ে বলছে,,
—- মুনতাহা সব রান্না যেন ঠিকমত হয়। নতুন আত্মীয় হতে যাচ্ছে ভালো মন্দ না খাওয়ালে চলে!! পরে যেন বলতে না পারে ঠিকমতো আপ্যায়ন করতে পারিনি।
আগে মুনতাহার শাশুড়ী বউমা বলে ডাকতে৷ যখন থেকে সাইমুন এর বিয়ের কথা বার্তা চলছে বউমা বলে ডাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। করবে কিভাবে নতুন বউয়ের আগমন ঘটছে বলে কথা।
মুনতাহা আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে কান্নাভরা কন্ঠে বলছে,,
—- মা আপনি চিন্তা করবেন না আমি খেয়াল রাখবো।
— তোমার খেয়াল থাকলে কি আমার চিন্তা করা লাগতো?? আজকাল তো কোন কাজ ভালো ভাবে করতে পারো না। না পারলে বল এখনো রান্না করার মত শক্তি আছে আমার। এত বুড়ি হই নাই যে রান্না করতে পারব না।
— না… না.. মা আমি পারব।
— দয়াকরে সারাক্ষণ নেকি কান্না কর না। তুমি কি চাও আমার ছেলেটা বিয়ে করে সুখে না থাকুক?? নতুন মেহমান এসে দেখলে হাজার কথা হবে। আমি চাই না কোন ঝামেলা হোক। তোমাকে তো আমি কম ভালোবাসা দি নাই। ভাগ্য তোমার সহায় হচ্ছে না সেটাতে আমাদের কারো হাত নেই। শেষ সময়ে আমি কোন মায়া বাড়াতে চাই না।
— ঠিক আছে মা। আমি কান্না করব না। আপনারা সুখে থাকলে আমি সুখী।
— আর হ্যাঁ আমার ছেলেটার আগে পিছে ঘুরিও না। ওকে বিয়েতে মন দিতে দাও। আমার ছেলেটার উপর কম ঝড় তুফান যাচ্ছে না। বিয়েতে মত দিয়েছে এটাই আমার শান্তি।
কথা গুলো বলে মুনতাহার শাশুড়ী হন হন করে চলে গেলো।

রান্না শেষ করে খাবার টেবিলে রেখে দিয়ে মুনতাহা রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। লাইট নিভিয়ে জানালার পাশে গিয়ে বসছে। আজকাল মুনতাহার আলো একদম ভালো লাগে না। অন্ধকারে বরং কষ্ট গুলোকে কবর দেয়া যায়।
আকাশে কত তারা ঝলমল করছে। মানুষ চাইলে যেমন আকাশের তারা গুণতে পারে না তেমনি মাঝেমধ্যে বুক ভরা ভালোবাসা দিয়ে ও কারো মন বুঝা যায় না।
মুনতাহা শুধু ভাবছে কি হতে যাচ্ছে। কেন হলো আমার সাথে!! এত কষ্ট কি আমার কপালে লিখা ছিলো । ভাবনার কোন কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না…
চারদিকে কত আলো ঝলমল করছে শুধু আমার মন টাই অন্ধকারে ঢেকে গেছে।সবার মনে কত উল্লাস বিয়ে নিয়ে। আচ্ছা সাইমুনের মনে ও কি আনন্দ হচ্ছে নতুন বউ এর জন্য। ওর মনেও কি ভালোবাসার ঢেউ বয়ে যাচ্ছে যেমন টা হয়েছিলো আমাদের বিয়ের সময়। খুব জানতে ইচ্ছে করে এত নতুনত্বের মাঝে আমার কোন অস্তিত্ব আছে কিনা! আজকাল খুব প্রয়োজন না হলে আমার কাছে আসে না।
আর হ্যাঁ আমরা কিন্তু ভালোবেসে ২ পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করেছিলাম। স্বপ্ন গুলো চোখের আলোয় সাজিয়েছি । কি অদ্ভুত তাই না চোখের সামনে নিজের স্বামীর ২ য় বিয়ের সব আয়োজন চলবে আর আমি অসহায়ের মত এক কোণে পড়ে থাকব।
অবশ্য আমার থাকা না থাকাতে ওদের কিছু এসে যায় না। না থাকলে বরং সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচত। ওরা আমাকে রাখতে চায়নি বরং আমি জোর করে থেকে গেলাম। দু-চোখ ভরে দেখতে চাই কিভাবে সাইমুন অন্য একজন কে ভালোবাসে।
আমার মা বলত ৩০ বছর সংসার করে ও নাকি অনেক সময় স্বামী কে আপন করা যায় না। সত্যি কি আসলে তাই!! হয়ত তাই।
অবশ্য কিন্তু এখানে ওদের কোন দোষ নেই৷ যত দোষ আমার ভাগ্যের!!
ঠিক ২ বছর আগে মুনতাহা কাজী বাড়ির বউ হয়ে আসে। শুশুর বাড়ির সবাই মুনতাহাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে। কখনো মনে হয় নি এটা ওর বাড়ি না। কত স্বপ্ন ছিলো এ ঘর সম্পর্ক সংসার নিয়ে। একটু একটু করে ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাচ্ছিলো। নিজের হাতে পুরা ঘর নতুন করে সাজিয়েছে। ছোটবেলা থেকে মুনতাহার ঘর সাজানোর শখ বেশি।
মুনতাহা আকাশের তারাদের বলছে,,
জানিস এখনও মনে পড়ে যখন ঘরের সব জিনিস সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতাম কাউকে ধরতে দিতাম না।
কিন্তু আজ কত সহজে আমার সাজানো স্বপ্নের বাগান শেষ হতে যাচ্ছে।
সেই বাড়িতে থেকে স্বামীর ২য় বিয়ের সকল কাজ এক হাতে করতে হচ্ছে। না না এখন আর কান্না আসে না । কান্নার ও একটা সীমা আছে কতক্ষন কাঁদা যায়…..
বললে কি আর কান্না হার মানে ঠিকি চোখের জল পড়তেই থাকে। কাঁদতে কাঁদতে মুনতাহার চোখ লেগে এসেছে।
দরজা ধাক্কার আওয়াজ শুনে মুনতাহা আঁতকে উঠল।
মুনতাহা মুনতাহা… এত ঘুম কোথা থেকে আসে উফফ। মেহমান রা চলে এসেছে তাড়াতাড়ি আসো….
চলবে..   পরিণয়ে পরিণতি পরিণয়ে পরিণতি 

বিঃ দ্রঃ নিচে ভালো করে লক্ষ্য করুন পরবর্তী পর্বের লিংক দেয়া আছে !!

বিঃ দ্রঃ “ লেখাঃ কাজী সারা ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন !!

👉আমাদের ফেসবুক পেজ