না বললেও ভালোকিন্তুবাসি

না বললেও ভালোকিন্তুবাসি !! Part- 22

মোহনা : মামার ফোন? strange …
মোহনা ফোন ধরলো। সালাম দিলো।
মামা : ভালোহ আছো বউমা।
মামার কন্ঠ শুনে মোহনা বুঝতে পারলো যে কন্ঠে বিষন্নতা ।
মোহনা : জী মামা আমরা ভালো আছি । কিন্তু আপনার কন্ঠ এমন লাগছে কেন?
মামা : মারে… যখন উভয় সংকটে পরে তখন মানুষের হয়তো এমনই হয়।
মোহনা : মানে মামা?
মামা : তোকে কি বলবো মা? তুই যে বড্ড অবুঝ… তুই কি বুঝবি মা… আমার কষ্ট… অন্য কারো কষ্ট… তোর মন যে সরল।
মোহনা : মামা কি হয়েছে বলুন না…
মামা : কি বলবো? কোন মুখে বলবো জানিনা… ১দিকে আমার নিজের একমাত্র ভাগনে… অন্যদিকে রুষা… যে আমার মেয়ের মতো… আরেকদিকে তুমি…
মোহনা : মানে মামা…?
.
মামা : কি আর বলবো মা। লজ্জাও লাগে নিজের ভাগনের সম্পর্কে এমন কিছু বলতে কেমন যেন লাগছেও।আসলে.. সাগরের সাথে রুষার ১টা সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। ২-৩ বছর ধরে। হয়তো তুমি বিশ্বাস করবেনা যে ওদের সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়ে গেছে । তোমাদের বিয়ের তো প্রায় ১মাস হয়ে গেছে। তবুও সাগর রুষার সাথে সম্পর্ক রেখেছে । আজও রুষাদের বাড়িতে গিয়েছে ।
না ও রুষাকে ছারছে আর না তোমাকে ছারতে পাচ্ছে। দায়িত্ববোধের জন্য। রুষাকে কতো কথা শুনতে হচ্ছে জানোনা । আরও ১টা কথা বলতে হচ্ছে যে রুষা is pregnant …
মোহনা: what ?
মামা :হ্যা মা… সারা দুনিয়া রুষাকেই দোষ দিবে। কারন ও মেয়ে। অথচ ও ২মাসের pregnant … আমি শিখাকে বলেছি। কিন্তু শিখার দুনিয়া তুমি… তাই না ও রুষাকে চায় আর না সাগর-রুষার অনাগত সন্তানকে… কিন্তু সাগর এতোটাও rude হয়নি নিজের সন্তানের সাথে । তাইতো আজও দেখা করতে গিয়েছিলো রুষার সাথে । নিজস্ব কিছু মুহুর্ত কাটাচ্ছি তখন কিছু অসাধু লোক ছবিও তুলেছে ।
মোহনা : আজও গিয়েছিলো?
মামা : হ্যা মা। বিশ্বাস না হলে ছবিও দিতে পারি… ক্ষমা করো মা… তোমাকে বলতে হলো। তুমি যদি কিছু না করো তো পুলিশে যেতে হবে….
মোহনা : রাখছি মামা…
.
ফোন রাখতেই মোহনার ফোনে কিছু ছবি এলো । যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুষা সাগরের কোলে । সাগর রুষাকে বেডে শুইয়ে দিচ্ছে । আরেকটাতে রুষা সাগরের কোলে থেকে সাগরের ঘাড়ে কিস করছে। ছবি গুলো দেখে আর কথা গুলো শুনে মোহনার ঘামের ওপর ঘাম দিচ্ছে ।
মোহনা : মোহো… মামা তোকে পছন্দ করেনা তাই হয়তো এগুলো বলছে। সত্যি না জেনে কিছু করা ঠিক হবেনা… কিন্তু মামা নিজের ভাগনের সম্পর্কে কেন কিছু বলবে? আচ্ছা আমি কি এতোটাই selfish আর অবুঝ যে ১টা নিষ্পাপ প্রানের ভালোমন্দ বুঝবোনা? এতো না ভেবে শাশুড়িআম্মুকে জিজ্ঞেস করি….
মোহনা গিয়ে শিখার রুমে নক করলো। রেদোয়ান বেরিয়ে এলো।
রেদোয়ান : কি হয়েছে মামনি?কিছু লাগবে?
মোহনা : না…শাশুড়িআম্মু?
রেদোয়ান : আসলে মামনি ওর bp টা high… আর মাথাও ব্যাথা। তাই ঘুম পারিয়ে রেখেছি।
মোহনা : ওহ…
রেদোয়ান : কোনো সমস্যা মা?
মোহনা : না। good morning ….
মোহনা রুমে চলে এলো।
মোহনা: আচ্ছা ছবি গুলো তো edit করাও হতে পারে….
মোহনা ছবিগুলো ভালোকরে দেখতে লাগলো । ছবিগুলো এমন ভাবে তোলা যে রুষার ব্যান্ডেজ করা পা দেখা যাচ্ছেনা। মোহনা ছবিতে ঘাপলা পেলোনা।
মোহনা : মোহো …cool cool… সাগর এলে উনাকেই জিজ্ঞেস করিস । কিন্তু কতোরাত হয়ে গেলো উনিতো এখনও এলোনা। ফোন করি….
মোহনা ফোন করতে লাগলো ।
.
ওদিকে…
সাগর নির্জন পথে গাড়ি থামিয়ে কান্না করছে । আসলে সাগর আজকে ডক্টর উৎপল ঘোষের সাথে মোহনার treatment এর বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলো। উৎপল ঘোষ ১জন মেডিসিন ডক্টর । যিনি india এর ১জন best ডক্টর , ডক্টর দেবী শেঠীর সাথে ১টা গবেষণা করেছিলেন। সেই উৎপল ঘোষ মোহনার সব রিপোর্ট দেখে মোটামোটি ১টা হতাশজনক তথ্য দিয়েছে । হঠাৎ মোহনার ফোন এলো। সাগর ধরলোনা।
মোহনা : আমার ফোন ধরলোনা?
মোহনার ১টা অভ্যাস আছে কেউ ফোন না ধরলে ততোক্ষন পর্যন্ত ফোন করে যতোক্ষন পর্যন্ত ফোন না ধরা হয় । আজও তাই করলো । বাধ্য হয়ে সাগর ধরলো।
মোহনা : কোথায় আপনি? আর ফোন ধরছিলেন না কেন?
সাগর : আমি কোথায় সেটা জানতে হবেনা… কি লাগবে বলো…
মোহনা : কি লাগবে মানে?
সাগর : তুমি আমাকে তখনই ফোন করো যখন তোমার কিছু লাগে। so বলো।
মোহনা : কিছু জিজ্ঞেস করার ছিলো।
সাগর : করো…
মোহনা : উত্তর পেয়ে গেছি ।
বলেই মোহনা ফোন রেখে দিলো।
সাগর : হ্যালো মোহো মোহো…damn it…
.
১ঘন্টাপর…
মোহনা বসে আছে। তখন হঠাৎ ওর চোখের সামনে চকোলেট ice cream এলো।
সাগর : sorry মোহোপাখি। actually আমি mentally disturb ছিলাম। তাই… অনেক গুলো sorry… যে শাস্তি দিবে সেটাই granted হবে। বলো…
মোহনা : divorce …
সাগর : divorce ??? একটু বেশি হয়ে গেলোনা? আরেকটু কম শাস্তি… please …
মোহনা: divorce না দিলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো….
সাগর : ওরে বাবারে মোহোপাখি দেখি ভীষন রেগে আছে। sorry তো…
মোহনা : নাটক বন্ধ করেন তো…
সাগর : নাটক?
মোহনা : হ্যা নাটক…
মোহনা যা মনে আসছে সাগরকে বলতে লাগলো।
সাগর বারবার মোহনাকে বলতে লাগলো চুপ যাও চুপ যাও। কিন্তু মোহনা আজকে চুপ করতে রাজীই না। সাগর অনেক চেষ্টা করলো মোহনাকে আঘাত না করার। কিন্তু মোহনাক কথায় সাগর নিজের রাগ control করতে পারলোনা। মোহনাকে থাপ্পর মারলো। সেদিন মোহনাকে থাপ্পর মারার পর সাগর নিজেকে কথা দিয়েছিলো যে ও আর কখনো মোহনার গায়ে হাত তুলবেনা। কিন্তু আজকে তুলল।
সাগর : এখনও divorce চাই…
মোহনা : হ্যা… 😭…
সাগর : you cross all the limit …
সাগর কোনোদিনও যেটা করতে চায়নি সেটা করতে বাধ্য হলো। মোহনাকে নিজের করে নিলো….
.
ভোর ৪টা….
সাগর ছাদে দারিয়ে আছে। আকাশ পানে মুখ করে।
সাগর : what have i done today …
১বস্তা হতাশা নিয়ে সাগর রুমে ঢুকলো । রুমে ঢুকে দেখে মোহনা রুমে নেই।
সাগর : মোহো…মোহো… কোথাও চলে যায়নিতো? কিন্তু গেট তো আমি বাইরে থেকে লক করে গেছিলাম। আর আমিই এসে খুললাম। সাগর রান্নাঘর বাকী ২টা রুম খুজলো । এরপর কিছু ১টা ভেবে ওদের রুমের washroom এ ছুটলো। আর ভেতরে ঢুকে ওর মুখ দিয়ে কেবল ১টা কথাই বের
হলো : মোহো… 📢📢📢…
চিল্লানোটা এতো জোরে ছিলো যে রেদোয়ানের ঘুম ভেঙে গেলো । ছুটে এলো। শিখাও এলো । আর এসে যা দেখলো তা সত্যি ভয়ংকর । আসলে মোহনা নিজের হাতের রগ কেটে tap ছেরে বাথটবে শুয়ে পরেছিলো। সাগর দেরি না করে মোহনাকে নিয়ে হসপিটালে ছুটলো।
.
হসপিটালে…
শিখা : সাগর তুমি কি বলেছো মামনিকে?
সাগর : …
শিখা : কিছুই না বললে ও শুধুশুধু এতো বড় stand নেয়নি। কারন এমন না যে ওর মন খারাপ ছিলো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওর মন অনেক ভালো ছিলো । তাহলে হঠাৎ এমন কি হলো?
সাগর : …
শিখা : কিছু জিজ্ঞেস করেছি….
সাগর : মাম…
তখন ডক্টর বেরিয়ে এলো ।
ডক্টর : immediately O+ blood লাগবে।
সাগর-শিখা বলে উঠলো : আমার blood group O+…
সাগর শিখাকে রক্ত দিতে দিলোনা। ওই দিলো ।
.
কিছুক্ষনপর…
ডক্টরের কেবিনে…
ডক্টর :দেখো সাগর আমি জানিনা আবার কি হয়েছে? তবে i think she is in big trauma …. আর first time ওর bp high…. আমি damn sure যে অনেক বড় কিছু হয়েছে । ওর মাথায় কিছু ঘুরছে। দেখো ও ধীরে ধীরে আরো স্পর্শকাতর হয়ে উঠছে । আর suicide টা যে করেই হোক ওর মাথা থেকে বের করতেই হবে। তা না হলে পরের বার সময়মতো আনলেও লাভ হবেনা।
সাগর : …
ডক্টর: জীবনের প্রতি ওর মায়া বারাতে হবে…
সাগর : … i will try my best ….
.
পরদিন…
মোহনার ঘুম ভাঙলো । দেখলো অহনা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।
অহনা :ওরে আমার কলিজাটা উঠে গেছে …. morning ..
মোহনা : 😒।
অহনা : বসো আমি ডক্টরকে ডেকে আনি।
ডক্টর এলো । চেক আপ করে চলে গেলো । এর সবাই ভেতরে ঢুকলো সাগর ছারা । মোহনাকে face করার সাহস ওর নেই । শুভ্র আর অভ্রকে দেখে মোহনার মেজাজ গরম হয়ে গেলো।
মোহনা : আপু… এই ২টা লোক এখানে কি করে?
অহনা : ম…
মোহনা : এদেরকে এখনই এখান থেকে যেতে বলো না হলে আমি এগুলো হাত থেকে খুলে ফেলবো…
২জন চলে গেলো ।
শিখা মোহনার গালে হাত দিয়ে
বলল : কেমন লাগছে আমার মামনপাখিটার?
মোহনা মুখ ঘুরিয়ে নিলো । সবাই খানিকটা অবাক হলো ।
মোহনা : আপু … আমি তোমাদের বাসায় যাবো… আজকেই..
অহনা : আচ্ছা ভালো কথা যাবে । কিন্তু আজকে না কালকে …
মোহনা : আজকেই যাবো আর কেবল আজকের জন্যেই যাবো। কালকের মধ্যে আমাকে কোনো ১টা হোস্টেল রুম বুক করে দিবে ওখানে থাকবো। আমার বৃত্তির টাকা দিয়ে । ২-৩টা tuition পড়াবো ঠিক হয়ে যাবে।
অহনা : হোস্টেল কেন আর tuition কেন? আমরা কি মরে গেছি নাকি?
মোহনা : দেখো তোমাদের আজিরা দরদ , দয় আর দায়িত্ববোধ দেখাতে হবেনা। ok fine… এখানে থেকেই হোস্টেলে যাবো।
অহনা : এই না না… আমাদের বাসাতেই চল…
মোহনা অহনাদের বাসায় গেলো।
.
চৌধুরী বাড়িতে…
রেদোয়ান : সাগর কি এমন হয়েছে বলবা?
শিখা : তুমি কিছু না বললে এমনিতেই হয়নি । মেয়েটা কতো খুশি ছিলো। খুশি মনে বলল সাগরের জন্য ভ্যানিলা কেক বানাবো …
সাগর : কি…
শিখা : হ্যা…
সাগর : আচ্ছা বলো তো কালকে কি কি হয়েছে… ওর মন হঠাৎ এতো খারাপ হলো কেন?
শিখা : জানিনা… bp high আর মাথা ব্যাথার জন্য ঘুমিয়ে পরেছিলাম। ঘুমানোর আগ পর্যন্ত তো সব ঠিক ছিলো।
সাগর : কিছু তো হয়েছে…
রেদোয়ান : ১মিনিট ১মিনিট… কালকে ১২টার দিকে ও ১বার রুমে নক করেছিলো। শিখার কথা জিজ্ঞেস করছিলো। অনেক restless লাগছিলো … আমি জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু কিছু বললনা….
সাগর : তারমানে কিছু হয়েছিলো… মোহোর মোবাইল…
সাগর দৌড়ে গিয়ে মোহনার মোবাইল চেক করতে লাগলো। দেখলো কল লিস্টে মামার নাম। duration প্রায় আধা ঘন্টা । আর দেখলো যে কিছু message delete দেখাচ্ছে । মোহনার মোবাইলে ছবি auto download দেয়া । মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে সাগর gallery তে গেলো। আর ছবি গুলো দেখলো । সাগরের মাথায় আগুন উঠে গেলো । ও আর ১মিনিটও দেরি না করে ছুটলো রুষাদের বাসায়।
.
রুষাদের বাসায় গিয়ে সাগর দেরি না করে রুষার রুমে গিয়ে একদম রুষার গলা চেপে ধরলো । রুষার তো পা ভাঙা । তাই ও নরতে চরতেও পারছেনা। রুষার বাবা এসে অনেক কষ্টে সাগরকে ফেরালো।
রুষার বাবা : এসবের মানে কি ?
সাগর : আমি ওকে জানে মেরে ফেলবো।
রুষার বাবা : কেন কি করেছে আমার মেয়ে?
সাগর ছবি বের করে দেখালো।
সাগর : এই বল এই ছবি উঠিয়েছিস কেন ? বল… তুই একটা নোংরা মেয়ে। বুঝেছিস…
রুষার বাবা :mind your language …. আমার মেয়ে তোমাকে ভালোবাসে….
সাগর : কিন্তু আমি তো বাসিনা… আপনার মেয়ে যে আমার আর মোহোর সম্পর্ক ভাঙতে চাইছে …. যদি মোহো আর আমার সম্পর্ক ভেঙে যায়ও তবুও তো আমি ওকে বিয়ে করবোনা। আর কসম আল্লাহর যদি রুষা আরেকবার ঝামেলা করতে আসে তবে আমি আয়ান ভাইয়া আর আপনার বড়মেয়ের বিয়ে ভেঙে দিবো। যেভাবেই হোক।
বলেই সাগর চলে যেতে নিলো।
রুষা : দারাও সাগর… আমাকে তো খুব বললা। আমি তো ছবি তুলিয়েছি। কিন্তু যা করার যা বলার তা তো তোমার মামা বলেছে।
সাগর : কি বলেছে?
রুষা : কি বলেছে সেটা তোমার মামাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো।
সাগর আর দেরি না করে মামা বাড়ি গেলো।
.
মামি : আরে সাগর তুমি?
সাগর : মামা কোথায়?
মামি : ভেতরেই। আসো ।
সাগর ঢুকলো।
মামা : আরে স….
সাগর : মোহোকে কি বলেছো?
মামা : মানে?
সাগর : অবাক হওয়ার মতো কিছু বলিনি…বলো কি বলেছে মোহোকে…
মামা: কিছুনা …
সাগর : বলো কি বলেছো…
মামা : কিছু বলিনি….
সাগর : ভালোমতো জিজ্ঞেস করছি বলো ….
মামা : আরে কিছু তো বলিইনি…. তো কি বলবো?
আয়ান : কি হয়েছে ?
সাগর আয়ানকে দেখলো। আর দেখলো টেবিলে ছুরি। সাগর দুম করে ছুরিটা আয়ানের গলায় ধরলো।
মামা : আয়ান … সাগর কি করতেছো?
সাগর : তুমি কি বলবা সত্যি সত্যি যে মোহোকে কি বলেছো? নাকি?
মামা : বলছি….
.
চলবে…