তোমার আঁচলের উঠোনে

তোমার আঁচলের উঠোনে !! Part- 08

বিভাবরী হাত শক্ত করে মুঠ করে ফেলে। রিশাদের নাক বরাবর একটা ঘুষি দিতে চাইছে সে। যেন নাকটা মুখের সাথে মিশে যায়। হা করে যেন তাকে শ্বাস নিতে হয়। কিন্তু পেছনে ফিরে ঘুষি দেওয়ার আগেই রিশাদ খপ করে তার হাতটা ধরে দেয়ালের সাথে আটকে দেয়। বিভাবরী এমন ঘটনায় পুরোপুরি চুপসে যায়। ছেলেটা কি জানতো সে এরকম কিছু একটা করবে?
রিশাদ গম্ভীর গলায় বলে,
— তুমি আমাকে মনে মনে ফাজিল বলে গালি দাও। তুমি ফাজিলের মানে জানো তো?
বিভাবরী থমথমে গলায় জবাব দেয়,
— আমি ফাজিল বলে গালি দেই আপনাকে?
— হু! আমি শুনতে পাই। শুনো, আমি ফাজিল নই। ফাজিল মানে জ্ঞানী, ভালো, পন্ডিত। কিন্তু আমি অভদ্র। ভিষণ অভদ্র! তুমি ধীরে ধীরে তা বুঝতে পারবে।
কথাটা শেষ করে রিশাদ বিভাবরীর আরেকটু সামনে যায়। হাতটা শক্ত করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে,
— এটিচিউট দেখাও ?? আমার সামনে দেখাবে না। বুঝলে? তোমার ভাব আমি ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেবো। হুহহ!
বিভাবরীর দম বন্ধ হয়ে আসছে। শরীর কেমন ঝিমঝিম করছে। মাথাটাও হালকা দুলছে…
— কথা বলছো না কেন? ঠিক আছে, বলতে হবে না।
রিশাদ হাতটা ছেড়ে দিলে বিভাবরী জোরে জোরে দম ফেলে। অগ্নি চোখে রিশাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
— আপনার মতো অসভ্য ছেলে আমি জীবনে দেখি নি।
কথাটা বলে সে এক মুহুর্তও অপেক্ষা করেনি। হনহন করে চলে যায়। একবারের জন্যও পেছনে তাকায় নি। তাকালে দেখতে পেত, লাল চোখের ছেলেটা কেমন হাত মুঠ করে দাঁড়িয়ে আছে।
বিভাবরী মনে মনে অজস্র গালি দিতে দিতে ওয়াশরুমের দিকে যায়। চোখে মুখে পানি দেওয়া দরকার। এখনো কেমন অস্বস্থি অস্বস্তি ভাব হচ্ছে তার। মাথার ভেতর ভূমিকম্প হচ্ছে। আজ শাড়ি পড়া একদম উচিত হয়নি তার। মনে হচ্ছে, দু’কদম এগুলেই পড়ে যাবে…

বিভাবরী মুখে পানি দিয়ে আয়নায় তাকিয়েই চমকে উঠে। ছেলেটা কি তাকে শান্তি দেবে না? সে পেছন ফিরে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলে,
— কথা ঘুরাবেন না। স্পষ্ট ভাষায় বলুন, আপনার সমস্যা টা ঠিক কি?
— তুমি অত্যন্ত স্মার্ট এবং বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে। তুমি অনেক আগেই আমার সমস্যাটা বুঝতে পেরেছো। তাই না??
বিভাবরী হতভম্ব হয়ে তাকায় রিশাদের দিকে। ছেলেটা কি বুঝাতে চাইছে, তা ভাবতেই বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠে। মিনমিন করে বলে,
— আপনাকে আমার মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
— তুমি আমাকে অনেক আগেই মেরে ফেলেছো। নতুন করে কিভাবে মারবে?
বিভাবরী উত্তরটা মেনে নিতে পারেনি। বিরক্ত হয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। উপরে উঠার জন্য পা বাড়াতেই রিশাদ তাকে আটকে দিয়ে বলে,
— কথা বাড়াবে না। চুপচাপ আমার সাথে চলো।
কথাটা বলে রিশাদ টানতে টানতে বিভাবরীকে নিয়ে চলে। বিভাবরী তার সাথে হেঁটে পারছে না। তাকে দৌঁড়াতে হচ্ছে। যার দরুন তার শাড়ির কুঁচিগুলো হালকা হয়ে যাচ্ছে। বিভাবরী এক ভুল দ্বিতীয় বার করতে চাইছে না। তাই দ্রুত শাড়ির কুঁচিগুলো আটকে রাখার চেষ্টা করে। ফলে, রিশাদকে আটকাতে পারছে না। রিশাদ তাকে নিয়ে ছাদে চলে যায়। বিভাবরীর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে নিজের মাথার চুলগুলোই টেনে টেনে ছিঁড়তে। রিশাদ বিভাবরীকে ছেড়ে সারা ছাদ জুড়ে পায়চারি করছে। একবার এপাশ থেকে ওপাশ, ওপাশ থেকে এপাশ… বিভাবরী রাগে চলে যেতে চাইলেই রিশাদ বলে উঠে,
— খবরদার! নড়বে না। একদম নড়বে না বলে দিচ্ছি।
— তাহলে কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আপনার হাঁটার স্টাইল দেখবো।
রিশাদ হাঁটা থামিয়ে বিভাবরীর সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলা শুরু করে,
— দেখো বিভাবরী! আমার কথা ঘুরাতে ভালো লাগে না। তোমাকে আমার ভালো লাগে। বিয়ে করতে চাই আমি তোমায়।
কথাটা শুনে বিভাবরীর পায়ের নিচের মাটি সরে যাওয়ার উপক্রম। মনে হচ্ছে সে এক্ষুণি পাতালে ডুকে যাবে। শান্ত পরিবেশেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। পুরোনো অসুখটা বোধ হয় ফিরে এসেছে..
বিভাবরী শুকনো গলায় জবাব দেয়,
— আমি বাড়ি যাবো।

চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *