তোমার আঁচলের উঠোনে

তোমার আঁচলের উঠোনে !! Part- 07

বিভাবরী পুরোনো কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো, নিজেই জানে না। ঘুমের মধ্যে হটাৎ মনে হলো, তার কানের পাশে কারো গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। তার স্বপ্নে আবার ধ্রুব এলো না তো! কিন্তু তার ধারণা ভুল। কিছুক্ষণ পরই তার কানের লতিতে কারো কামড় পড়ে। বিভাবরী দ্রুত চোখ খুলে। সামনে কাউকে দেখতে না পেয়ে তড়িঘড়ি করে দোলনা ছেড়ে উঠে পড়ে। পেছনে তাকিয়ে দেখে রিশাদ এক হাত পকেটে, আরেক হাত দোলনার স্ট্যান্ডে রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বিভাবরী রেগেমেগে বলে,
— আপনি এমন অসভ্যের মতো আচরণ করছেন কেন?
— তুমি এমন বেহায়ার মতো আচরণ করছো কেন?
বিভাবরী দাঁত চেপে বলে,
— আমি বেহায়ার মতো আচরণ করি?
— অবশ্যই! ভার্সিটিতে যেতে না যেতেই ছেলেদের সাথে ফূর্তি করা শুরু করে দিয়েছে? তো বেহায়া বলবো না??
— ছিঃ! আপনার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধছে। কতটা নিম্নশ্রেণীর মানুষ আপনি!
কথাটা বলে বিভাবরী হনহন করে চলে যেতে চাইলে রিশাদ পথ আটকায়। বিভাবরী ধমকের সুরে বলে,
— পথ ছাড়ুন। কি হলো শুনতে পাচ্ছেন না? এখনো সরছেন না যে!
বিভাবরী বিরক্তি ভাব নিয়ে সরে যেতে চাইলেই তার হাতে টান পড়ে। রিশাদ তাকে ধাক্কা দিয়ে দোলনায় বসিয়ে দেয়। তার দিকে ঝুঁকে বলে,
— আমি নিম্নশ্রেণীর মানুষ??
বিভাবরীর দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। ছেলেটা এত কাছে এসেছে যে, তার নিঃশ্বাস বিভাবরীর মুখের উপর পড়ছে। সে মিনমিন করে বললো,
— আপনি দূরে যান। আমার অস্বস্তি লাগছে।
— লাগুক। আগে বলো, আমি তোমার সাথে কি করেছি যে তুমি আমায় নিম্নশ্রেণির মানুষ বলবে!
— আপনি বাজে বাজে কথা বলবেন! আর আমি সেগুলো হজম করবো??
বলতেই বলতেই বিভাবরীর চোখে পানি চলে এসেছে। ছেলেটা এখনো সরছে না কেন? তার একদম সহ্য হচ্ছে না ছেলেটাকে।
রিশাদ চোখদুটে বড় করে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
— এই মেয়ে এই! কাঁদছো কেন? আমি তোমায় বকেছি নাকি? আশ্চর্য!
— আপনি সরে যান, প্লিজ!
রিশাদ আরেকটু সামনের দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে,
— চোখে কি গাঞ্জা চাস করো?? তাকালেই নিজেকে মাতাল মাতাল লাগে যে!
কথাটা বলেই রিশাদ গুনগুন করতে করতে চলে যায়। বিভাবরীর শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। কি ভয়ঙ্কর কথা, কত বেয়াদব ছেলে! বিভাবরী চোখ বন্ধ করে, দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে।

বিভাবরী এক দৌড়ে ঘরে চলে যায়। দরজা বন্ধ করে, দুহাত বুকে চেপে ধরে। চোখ বন্ধ করে শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, আজ থেকে দুনিয়াবি সব বাদ। শুধু পড়াশোনা নিয়ে থাকবে সে। এমনকি, ধ্রুব কে নিয়েও আর ভাববে না। এক ফোঁটাও ভাববে না। রিশাদকেও সর্বোচ্চ এড়িয়ে চলে সেদিনের পর থেকে। কিন্তু সে সুযোগ পেলেই বিভাবরী কে ঝালাচ্ছে, বিরক্ত করছে। এর কোনো কারণ বিভাবরী খুঁজে পায় না। তবে একটা লক্ষণীয় বিষয় হলো, সে এখন আর ধ্রুবকে স্বপ্ন দেখে না। এর জন্য সে সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে।

ভার্সিটিতে বিভাবরীর বেশ ভালোই লাগছে। কিন্তু আজ একটু বেশিই ভালো লাগছে। অবশ্য এর একটা কারণও আছে। আজ তাদের নবীন বরণ। বিভাবরী শাড়ি পড়বে। তার জীবনের সেরা মুহূর্ত গুলো ঘটেছে শাড়িতেই। টিয়া আর সবুজ, এই দুইয়ের মাঝামাঝি একটা রঙের একটা শাড়ি পড়েছে সে। হাত ভর্তি সবুজ চুড়ি, গাঢ় কাজল পড়েছে…
হালকা মেক ওভারে মেয়েটাকে ভালোই লাগছে। ভার্সিটি যাওয়ার আগে নাজনীন সুলতানা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
— ওমা! আকাশ থেকে পরী নামলো নাকি? পরীরা শাড়ি পড়ে আগে জানতাম না তো!
বিভাবরী লজ্জিত ভঙ্গিতে হেসে ফেলে। কেউ তার প্রশংসা করলে সে এত লজ্জা পায়, যে প্রশংসাকারীর দিকে তাকানোও লজ্জাজনক হয়ে পড়ে। আজ নাজনীন কে একদম রোবেটিক মনে হচ্ছে না। তাই বিভাবরী একটু বেশিই লজ্জা পাচ্ছে।

অত্যন্ত খুশ মেজাজে সে ভার্সিটি তে প্রবেশ করে। মনটা তার আজ খুব ভালো। কিন্তু এই ভালোটা বেশিক্ষণ টিকে থাকে নি। উপরে যাওয়ার সময় সামনে রিশাদকে দেখে থমকে যায় সে। তাকে দেখেও না দেখার মতো করে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রিশাদ বলে উঠে,
— আরে, এটা বিভাবরী নাকি! আজ তো তোমাকে একদম চেনাই যাচ্ছে না। সবুজ শাড়িতে সবুজ ব্যাঙের মতোই লাগছে তোমায়। আজ থেকে তোমার নাম ব্যাঙাবরী! বুঝলে ব্যাঙাবরী!
রিশাদের কথা শুনে বিভাবরীর রাগ সপ্তম আকাশে উঠে বসে আছে। রিশাদের সাথে থাকা ছেলেদুটোও মিটমিট করে হাসছে। তার ইচ্ছে করছে রিশাদকে কোনো ম্যাজিশিয়ানের কাছে নিয়ে যেতে। যেন তাকে ম্যাজিশিয়ান ব্যাঙ বানিয়ে দেয়। তাহলে সে রিশাদকে বুঝাতে পারত ব্যাঙ আসলে কি।
তার ইচ্ছে করছে রিশাদকে ভয়ঙ্কর কিছু কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু সে শুনাবে না। কোনো কথাই বলবে না সে এই ছেলের সাথে।
বিভাবরী কোনো উত্তর না দিয়ে চলে আসে সেখান থেকে। মনে মনে তাকে অভিশাপ দিয়ে আসছে রিশাদ যেন ব্যাঙ হয়ে যায়। আর কিছু ভয়াবহ গালি।

বিভাবরী সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় তার খোলা চুলে টান পড়ে। বিভাবরী জানে টান পড়ার কারণটা কি। সে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নেয়। সে একটা কাজ করতে যাচ্ছে এখন। ভয়ঙ্কর একটা কাজ…

চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *