তোমাকে খোঁজে !! Part- 06
টানা দুইঘন্টা ধরে নেহাল ঘুমিয়ে আছে। ঘুম থেকে উঠতেই নেহালের আদিবার কথা মনে পরে যায়। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই নেহাল ঝাপসা চোখ ডলতে ডলতে আদিবার রুমে ছুটে আসে। এসে দেখে আদিবা বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে।আর আদিবার পাশে মিতি বসা।নেহালকে দেখে মিতি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে যায়। যেটা দেখে নেহাল অবাক হয়। মিতির হাসির কারণটা খুঁজতে খুঁজতে আস্তে করে হেঁটে নেহাল আদিবার পাশে এসে বসে।নেহাল আদিবার দিকে তাকাতেই চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা দেখতে থাকে। মাথাটা আবার ঘুরে ওঠে নেহালের।আর তখন নেহালকে পরে যেতে দেখে আদিবা ধরে বসে নিজের পাশে টেনে বসায়।যেটা দেখা নেহাল খুব খুশি হয়।
আদিবা মুখ তুলে নেহালের দিকে তাকায়, মিতি বলেছে আপনি নাকি আমাকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছেন? কি দরকার ছিলো আমাকে বাঁচানোর? আপনার শরীরের রক্ত আমাকে না দিলে কি হতো না?
কথাটা আদিবা নেহালের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।
নেহাল আদিবার গাল দুই হাত দিয়ে আকড়ে ধরে বলে, না হতো না! ভালোবাসি তোমাকে আমি।বেঁচে থাকলে তোমাকে নিয়েই একসাথে বাঁচবো।আর যদি তুমিই না থাকো তাহলে বেঁচে থেকে কি করবো?
তাই বলে এতোটা রক্ত দিবেন? যদি আপনার কিছু হয়ে যেতো? মিতির কি হতো? আমি না হয় আমার বাড়িতে চলে যেতাম কিন্তু আপনার বোন? তার তো আপনি ছাড়া আর কেউ নেই নেহাল! ভালোবাসায় এতোটাও অন্ধ হয়েন না যেটাতে আপনার আপনজনেরা নিঃস্ব হয়ে যায়। আমার জীবনটাতো আপনি নস্ট করেই ফেলেছেন।এখন আপনার সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর কথা অন্তত ভাবুন।
তোমার জীবন আমি নস্ট করেছি আদিবা? আমি তো তোমাকে শুধু ভালোবেসেছি।যেই ভালোবাসাটা একদিন তুমি আমাকে শিখিয়েছিলে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আস্তে করে বলে নেহাল।
তাই? ভালোবাসেন আমাকে আপনি? কোনটা ভালোবাসা বলতে পারেন নেহাল? আমাকে আটকে রেখে যেভাবে শারীরিক অত্যাচার চালাচ্ছেন আমার উপর আপনি সেটাকে ভালোবাসা বলেন?
তোমার উপর আমি শারীরিক অত্যাচার চালাচ্ছি?
নয়তো কি? কাল কি করেছিলেন আমার সাথে আপনি ভুলে গেছেন?
কিচ্ছু করি নি আমি।আমি শুধু তোমার ড্রেসটা চেঞ্জ করে দিয়েছিলাম।
সেটা আবার লম্বা গলায় বলছেন? লজ্জা করছে না আপনার? কোন অধিকার আছে আপনার আমার কাছে আসার, আমাকে স্পর্শ করার? আমি আপনাকে আবারও বলছি নেহাল ভালোবাসা জোড় করে হয় না। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।আপনাকে পারবো না কখনো ভালোবাসতে।তাই প্লিজ আমাকে তার কাছে যেতে দিন।
আদিবার কথা শুনে নেহাল জোড়ে একটা ধমক দেয়।ধমকটা শুনে আদিবা একদম নিশ্চুপ হয়ে যায়।তারপর নেহাল আদিবার দুই বাহু চেপে ধরে।আদিবাকে ঝাকিয়ে বলে, জ্ঞান দিচ্ছো আমাকে? ভালোবাসার মানে শেখাচ্ছ? ভুলে যেও না একদিন তুমিই আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছিলে।আর অধিকারের কথা বলছো না তুমি? তাহলে শুনে রাখো তোমার উপর তোমার বাবা-মায়ের থেকেও এখন আমার বেশি অধিকার।আমি চাইলেই তোমাকে নিজের করে নিতে পারি।কিন্তু সেটা আমি করবো না।কারণ ভালোবাসি তোমাকে আমি।আর কাল যেই খারাপ ব্যাবহারগুলো করেছিলাম সেটা তোমার উপর রাগ করে করেছি।তার মানে এই নয় যে তোমাকে আমার জীবন থেকে আলাদা করে দেব।তুমি আমার।বুঝেছ?
আদিবা ভয়ে ভয়ে মাথাটা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে।আর মনে মনে ভাবে, এভাবে নেহালের থেকে নিজেকে ছাড়ানো যাবে না।আরেকবার নেহালের সাথে ভালোবাসার নাটক করে তাই এখান থেকে পালাতে হবে।তাছাড়া নেহালকে বোঝানো সম্ভব নয়।
ওদিকে,,,, সায়ানের বাবা-মা অনেকগুলো ছবি নিয়ে সায়ানের কাছে এসেছে।সায়ানকে বলছে এর মধ্যে থেকে যে কোনো একটি মেয়েকে পছন্দ করতে।কিন্তু সায়ানের মন মানছে না।যেই মন এতোগুলো বছর ধরে শুধু আদিবাকে ভালোবেসেছে, আদিবার কথা ভেবেছে, সেই মনে কি অন্য মেয়ের জায়গা হয়?
কি হলো সায়ান কিছু বলছিস না কেন? সায়ানের মা মুখটা শুকনো করে জানতে চাইলো।
সায়ান তার বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের খুশি করতে একটু মুচকি হাসি দিয়ে না দেখেই একটা ছবি তুলে মায়ের হাতে দিলো।আর বললো, এই মেয়েটা দেখতে ভালো।
সত্যি বলছিস তো বাবা একে তোর পছন্দ হয়েছে?
সায়ান মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে।
একটা গাল ভরতি হাসি দিয়ে সায়ানের মা আবার বলে, এর সাথেই তোর বিয়ে হবে সায়ান।কথাটা বলে বাড়ির সবাইকে ডাকতে ডাকতে ছবিটা দেখাতে যায়। আর সায়ানের বাবা তার পিছনে পিছনে ছোটে।বাবা-মায়ের চলে যাওয়ার পর সায়ান বলতে থাকে, বিয়ে আমি অবশ্যই করবো মা।সেটা শুধু তোমাদের খুশির জন্য।কিন্তু কোনোদিনও আমি আদিবাকে ভুলতে পারবো না।কারণ আদিবাকে আমি সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি।
চলবে,,,,,