তোকে চাই – Season 2 ! Part- 30
দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই ডক্টর আহানের করুণ অবস্থা চোখে পড়লো।হাতে-পায়ে প্লাস্টার আর ব্যান্ডেজের ছড়াছড়ি।ইশশ….আমার জন্য উনার এতোটা ক্ষতি হয়ে গেলো। এই মুহূর্তে শুভ্র ভাইয়ার প্রতি চরম রাগ লাগছে আমার…..একটা মানুষকে এভাবে মারতে পারে কেউ??একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেতরে ঢুকতেই ডক্টর আহান চোখ মেলে তাকালেন।আমাকে দেখেই মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে উঠলেন-
.
কেমন আছেন লিটল বেবি?
.
আমি তো ভালো আছি বাট আপনার অবস্থা তো করুন।।আই এম সো সরি….সবকিছু আমার জন্য…
.
আরে না না…আপনার জন্য কেনো হবে?কাল রাত ১টার দিকে একটা প্রেংক কল এলো….ক্লিনিকে নাকি ইমার্জেন্সি পেশেন্ট আছে…হসপিটালে এসে দেখি কিছুই না…ফেরার সময় কোথা থেকে একদল ছেলে এসে গাড়ি থেকে জোড় করে বের করে পেটালো…মরেই হয়তো যেতাম থেংক গড আপনার ভাইয়া চলে এসেছিলো নয়তো…
.
উনার কথায় আমি অবাক…ভাইয়া মানে?ভাইয়া তো রাতে নাক ঢেকে ঘুমোচ্ছিলো,, ভাইয়া কখন গেলো সেখানে??আমি কৌতূহলী হয়ে বললাম –
.
ভাইয়া??
হ্যা,, আপনার কাজিন…নামটা যেনো কি?ওহ হ্যা শুভ্র!!সাথে উনার বন্ধুও ছিলো উনার নাম মে বি সাহেল হবে।
.
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই দরজা ঠেলে ভেতরে এলো শুভ্র ভাইয়া….অমায়িক হাসি দিয়ে বলে উঠলেন-
.
ওহ গুড মর্নিং ডক্টর। কেমন আছেন এখন?
.
জি ভালো!!থেংক্স এগেইন ম্যান।
.
ইটস অলরাইট!!
.
কথাটা বলেই আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলেন উনি।।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না…নিজে মার খাইয়ে নিজেই সেবা? বাহ্…”সাপও মরলো লাঠিও ভাঙলো না” এই প্রবাদটার সঠিক প্রয়োগ করেছেন উনি।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিত্রা আর শুভ্র ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম-
.
আমার ডক্টর আহানের সাথে কিছু কথা আছে।একটু বাইরে যাবেন প্লিজ?চিত্রা?তুইও যা!!
.
কেনো?কি এমন বলবি এই ডক্টরকে যে আমার সামনে বলা যাবে না?এই একদিনের ডক্টর তোর আপন হয়ে গেলো আর আমি পর??
.
এইযে বিউটিফুল লেডি! আপনি কি অলওয়েজ ঝগড়ায় করেন নাকি?(মুচকি হেসে)
.
কিহ?রোদ?দেখ এই ডাক্তার কি বলে…আমি নাকি ঝগড়ুটে!! বেশ হয়েছে ভাইয়া মেরেছে একে…আরো মারা উচিত ছিলো…হুহ
.
ভাইয়া মেরেছে মানে?(কনফিউজড হয়ে)
.
নাথিং ডক্টর…. এই তোরা যা না প্লিজ!!
.
আমার কথায় কেভিন থেকে বেরিয়ে গেলো শুভ্র-চিত্রা।আমি আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেডের পাশের টোলে গিয়ে বসলাম।মাথা নিচু করে বলে উঠলাম-
.
মিষ্টার আহান? আই এম সো সরি।আপনার এই অবস্থার জন্য আলটিমেটলি আমিই দায়ী।(কিছু বলতে নিলে) প্লিজ ডক্টর আহান…লেট মি ফিনিশ।সেদিন শপিং মলে চুরি দেখতে গিয়ে আচমকাই হাত ধরেছিলেন আমায়।বিষয়টায় আমিও চমকে গিয়েছিলাম… সাথে সাথে ছেড়েও দিয়েছিলেন কিন্তু…. এনিওয়ে… আমি একজনকে পছন্দ করি।আর যাকে পছন্দ করি তার মাথায় একটু গন্ডগোল আছে বলেই মনে করি আমি।এমনিতে সব ঠিকঠাক শুধু আমার ব্যাপারেই যতো পাগলামো তার।আপনি আমার হাত ধরায় রাগের মাথায় আপনার এই অবস্থা করেছে সে।। তাই বলছিলাম কি?একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিন প্লিজ।আমাকে নিয়ে ভাবা বন্ধ করুন নয়তো আবারও মার খেতে হতে পারে….হয়তো মেরেই ফেলবে।।সো প্লিজ..এই বিষয়টা নিয়ে আর না এগোলেই বেটার।
.
বাট আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ।।ইটস নট এবাউট মাই ফিলিংস…আমার মায়ের ফিলিংসও জড়িয়ে আছে এতে…মা অনেক পছন্দ করেন আপনাকে।।তাছাড়া এখন আমিও তাই চাই…
.
দেখুন…আগে জীবন তো বাঁচান তারপর বিয়ে।।আমার জন্য কারো ক্ষতি হোক তা মোটেও চাই না আমি।।তাছাড়া উনি আপনাকে না মারলেও বিয়েটা করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না।।আই রিয়েলি লাভ হিম।প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।আপনার মা কে বলে দিবেন যে আমি ফালতু একটা মেয়ে।।তাহলে দেখবেন উনি নিজেই সরে যাবেন।আসছি!!
.
কথাটা বলে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে হাঁটা দিতেই পেছন থেকে ডেকে উঠলো আহান-
.
হেই লিটল বেবি!!
.
হু?(পেছনে তাকিয়ে)
.
আপনার কথায় রাখবো…মাকে বলবো বিয়েটা করছি না কিন্তু একটা রিকুয়েষ্ট আছে…রাখবেন??
.
রিকুয়েষ্ট??কি রিকুয়েষ্ট??(ভ্রু কুঁচকে)
.
চলে তো যাচ্ছেনই…মাথাটা ব্যাথা করছে খুব একটু হাত রাখবেন মাথায়??প্লিজ!!
.
আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কি বলবো বুঝতেই পারছি না।।কি একটা অদ্ভুত অস্বস্তি হচ্ছে আমার!!ঠিক তখনই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুৃকলো শুভ্র…আমার হাতটা টেনে ধরে বলে উঠলো..
.
কাম রোদ…ভিজিটিং টাইম শেষ আমাদের যেতে হবে।হেই ডক্টর…আজ আসি কেমন?তাড়াতাড়ি সেড়ে উঠুন…(মুচকি হেসে)
.
আহানকে কিছু বলতে না দিয়েই আমার হাতটা টেনে বেরিয়ে এলো শুভ্র।।মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি।।চিত্রা আর আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে উঠলেন উনি-
আজকেই লাস্ট টাইম।।এই হারের ডক্টরের সামনে আর যেনো না পড়ো তুমি।
.
আপনিই আপনার চেলাদের দিয়ে এভাবে মেরেছেন উনাকে,,,তাই না?
.
হুম…মেরেছি তো??
.
তো মানে?মারলে নিজে মারবেন…অন্যকে দিয়ে মার খাইয়ে ভালো সাজার মানেটা কি??
.
আমি মারলে পুলিশ কেইস হতো….পোলাপানগুলো যেভাবে মেরেছে তাতে ব্যাপারটা রাস্তাঘাটে ছিনতাইকারীর আক্রমন হিসেবে শো করছে… পুলিশ কেইস হলেও কোনো এ্যাকশন হবে না।।নিজেই মারতে চেয়েছিলাম বাট সাহেলের জন্য পারি নি।।তাই বাধ্য হয়েই…
.
উনাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়েই চিত্রা বলে উঠলো…
.
ওহহো শুভ্র ভাইয়া…এই সাহেল ভাইয়াটা না অলওয়েজ ওভার করে..উনাকেও দু’চারটা চড় থাপড়া দেওয়া উচিত ছিলো ভাইয়া!!আপনার বউয়ের হাত ধরে…
.
আমি রাগী চোখে তাকাতেই থেমে গেলো চিত্রা।।আমতা আমতা করে বলে উঠলো সে..
.
না ম..মানে আমি তো এমনি বলছিলাম…হে হে
.
মাইরটা সাহেল ভাইয়াকে না দিয়ে তোর ওই পেট মোটা “হতে হতে না হওয়া” জামাইকে দেওয়া উচিত।(দাঁতে দাঁত চেপে)
.
কেন?সে কি করলো তোকে?(মুখ ফুলিয়ে)
.
তোকে বিয়ে করে যে আমাদের উদ্ধার করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো সেটা তো ভেঙে টুকরো করে দিলো…. এটা কি কম বড় অন্যায়??আমি কতো ভেবেছিলাম তোর মতো সিন্দাবাদের ভূত থেকে রেহাই হয়তো পাবো এবার…কিন্তু ব্যাটা লাস্ট স্টেজে এসে ভেগে গেলো??
.
আমাদের কথায় শুভ্র ভাইয়া হুহা করে হেসে উঠলেন।আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছি আর চিত্রা অসহায়!!
সবাই মিলে গ্রামের বাড়ি পাড়ি জমিয়েছি।আপুদের বিয়েটা গ্রামেই হবে।গ্রামের বাড়ি বলতে আমার নানু বাড়ি আর শুভ্র ভাইয়ার দাদু বাড়ি।।মামু প্রায় ২৮ বছর পর বাড়ি ফিরছেন….চিত্রাসহ শুভ্র ভাইয়ার সব ফ্রেন্ড আর কিছু জুনিয়ররাও যাচ্ছে আমাদের সাথে….এরমধ্যে অনেকেরই এই প্রথম গ্রামে যাওয়া।চারদিকে হৈ-হুল্লোড় আর গান বাজনায় মাথা নষ্ট অবস্থা।।আমরাও প্রায় ৬ মাস পরে গ্রামে যাচ্ছি…নানু মারা যাওয়ার পর এদিকে আসায় হয় না তেমন। বাস থেকে নেমেই মনটা শান্ত হয়ে গেলো একদম….বিভিন্ন ধরনের গাছপালার মাঝে ছিমছাম পুরাতন দু’তলা বাড়ি।সবার জন্য রুম বরাদ্দ হয়ে গেছে….কিন্তু সমস্যা হলো আমার বেলায়..শুভ্র ভাইয়া আর আমার একই রুমই পছন্দ হয়েছে।এই নিয়ে কি তুমুল ঝগড়া… অবশেষে মামুর ধমকে দমে গেছে শুভ্র…বিনা বাক্য ব্যয়ে দুটো গ্রুপে ভাগ হয়ে গিছে আমরা….একটা সিনিয়র সিনিজেন অর্থাৎ মামুদের গ্রুপ আরেকটা জুনিয়র সিটিজেন..অর্থাৎ আমাদের গ্রুপ।।ছাদে তুমুল গতিতে পাটি বিছানো হচ্ছে আজ সারারাত গল্প আর পিঠা খাওয়া হবে।।রহিমা খালা আর মজিদ চাচা দুজনে নিজ ইচ্ছেই আমাদের গ্রুপে নাম লিখিয়েছেন তার নাকি ওইসব বুইড়াদের সাথে মিশ খায় না।রহিমা খালা এই বাড়ির কাজের লোক আর মজিদ চাচা কেয়ারটেকার…এদের দুজনের মধ্যে মাখো মাখো ভাব…প্রেমের দ্বিতীয় এপিসোড চলছে তাদের।।রাত আটটা বাজতেই সবাই গিয়ে বসলাম ছাদে…রাতুল ভাইয়া এখনও শুভ্রকে বারবার দুলাভাই বলে চলেছেন…সাথে দু’একটা থাপ্পড়ও খাচ্ছেন কিন্তু তাতে তার কোনো ভাবোদয় হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না….বরং বেশ মজা পাচ্ছেন বলেই মনে হচ্ছে….সাকিব ভাইয়া চিত্রাকে ইমপ্রেস করার বহুত চেষ্টায় আছে কিন্তু সিনিয়রদের সামনে নিজেকে ঠিক প্রকাশ করতে পারছেন না বেচারা।।নীলিমা আপু আর রোহন ভাইয়া তাদের ননস্টপ ঝগড়া চালিয়ে যাচ্ছে।।রাহি আপু সাব্বির ভাইয়ার সাথে কি এতো ফুসুরফুসুর গল্প করছেন আল্লাহ মালুম….আমাদের সাহেল ভাইয়া ক্যামেরা হাতে ছুটেছেন…সবারই বিভিন্ন এ্যাংগেলের ছবি তোলে মেমোরি ভরে চলেছেন….তার ক্যামেরায় রহিমা খালা আর মজিদ চাচার সিঁড়ি তলের রোমান্সও ধরা পড়েছে চরম ভাবে।।
.
#চলবে…