তারে আমি চোখে দেখিনি

তারে আমি চোখে দেখিনি !! Part- 23

মায়া রাইশাকে একটা প্লান দেয়। তারপর দুজনে মিলে একটা ঝাড়ু নিয়ে মাহির আর স্নিগ্ধার সামনে এসে দাড়ায়।রাইশার হাতে ঝাড়ু দেখে স্নিগ্ধা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।আর ভয়ে গুটিশুটি হয়ে মাহিরের পিছনে গিয়ে দাড়ায়। রাইশা মাহিরকে সরিয়ে দিয়ে স্নিগ্ধার হাত ধরে টেনে নিজের সামনে নিয়ে আসে। আর বলে,

রাইশাঃ আরে আরে বউমা মাহিরের পিছনে পালাচ্ছো কেন? আমাকেও দেখতে দাও তোমার চাঁদ মুখ খানা!

রাইশার মুখের কথা শুনে সবাই হা হয়ে আছে।রাইশা স্নিগ্ধার থুতনিটা ধরে আবার বলে,

রাইশাঃ বাহ খুব সুন্দর তো দেখতে। আমার তো ওই মায়াকে কখনো পছন্দই ছিলো না।কোথায় তোমার মতো লেখাপড়া যানা শিক্ষিতা একজন ডাক্তার মেয়ে আর কোথায় মায়া! যে কিনা একটা অশিক্ষিতা! বস্তিতে বড় হওয়া মেয়ে! ভালো হয়েছে তুমি এসেছো। তোমাকেই আমার ছেলের বউ বানাবো।ওর কোনো কোয়ালিটি আছে নাকি?

রাইশার কথা শুনে স্নিগ্ধা তো সেই খুশি।

স্নিগ্ধাঃ সত্যি বলছেন মা আপনি আমায় মেনে নিয়েছেন?

রাইশাঃ হ্যাঁ সত্যি বলছি।

পাশ থেকে মায়া এগিয়ে এসে বলে,

মায়াঃ এতো বড় একটা কথা আপনি বলতে পারলেন মা? আমার কোনো কোয়ালিটি নাই? আমি রান্না করতে পারি, কাপড় কাচতে পারি, বাসন মাজতে পারি এমনকি ঘড়ও ঝাড়ু দিতে পারি।আর স্নিগ্ধা কি পারে?

স্নিগ্ধা একটা জোড়ে হাসি দেয়। তারপর মায়ার মুখের সামনে আঙুল উঁচিয়ে বলে,
স্নিগ্ধাঃ হে মায়া! তুমি কি ভাবো নিজেকে? আমি সব পারি বুঝলা?

মায়াঃ তাই? ঠিক আছে।করে দেখাও।

স্নিগ্ধাঃ কি করে দেখাবো?

মায়াঃ বেশী কিছু না! আপাততো পুরো বাড়িটা ঝাড়ু দিয়ে দেখাও কেমন পারো।

স্নিগ্ধাঃ এটা এমন কি কঠিন কাজ?

মায়াঃ কঠিন নাতো খুবই সহজ করে দেখাও তো তাই মানবো তুমি সব পারো।

স্নিগ্ধাঃ ঠিক আছে।

বলে রাইশার হাত থেকে ঝাড়ুটা নিয়ে ঝাড়ু দিতে লাগে স্নিগ্ধা।এখানে এক ঝাড়ু ওখানে এক ঝাড়ু দিয়ে একটু করে থামে আর ঝাড়ু দেয়। তাই দেখে মায়া আবার বলে,

মায়াঃ দেখেছেন মা কি কোয়ালিটি স্নিগ্ধার? একটা ঝাড়ুও ঠিক ভাবে ধরতে পারে না।আর ও কিনা আপনার ছেলের সাথে সংসার করবে?

স্নিগ্ধা মনে মনে ভাবে, মায়া আবার ওকে অপমান করছে।নাহ নিজেকে মায়ার কাছে ছোট করা যাবে না।তাই জেদ দেখিয়ে পুরো বাড়িটার প্রতিটা রুমের প্রত্যেকটা কোণায় কোণায় ঝাড়ু দিয়ে তারপর মায়ার সামনে গিয়ে দাড়ায়। স্নিগ্ধা যখন ঝাড়ু দিচ্ছিলো তখন বাড়ির সবাই হা হয়ে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে ছিলো।ঝাড়ু শেষে স্নিগ্ধা এখন ঝাড়ুটা ফেলে দিয়ে কোমড়ে হাত গুজে মায়ার সামনে এসে দাড়ায় আর মাহিরকে ডেকে বলে কোলে করে রুমে নিয়ে যেতে।স্নিগ্ধার কথা মতোন না চাইতেও মাহির স্নিগ্ধাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে যায়। তারপর কোমড়ে আর হাত, পায়ে ব্যাথা হয়েছে বলে মাহিরকে দিয়ে নিজের হাত, পায়ে তেল মালিশ করায়।মায়া এসব দেখে খুব কস্ট পায়।আর মায়ার উজ্জ্বল মুখটা আবার ফ্যাকাশে হয়ে যায়।মায়া কাঁদতে কাঁদতে মাহিরের রুম থেকে বেড়িয়ে রুসার রুমে গিয়ে দরজাটা আটকিয়ে ভেতর থেকে কাঁদে। আর মাহিরের ছবি বুকে জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলে,

মায়াঃ খুব খারাপ আপনি অনুভব! খুব খারাপ! একটা পাষাণ! নির্দয়! ছোট মনের মানুষ! এভাবে ঠকাতে পারলেন আমাকে? সকলের সামনে ওই মেয়েটার হাত, পা টিপছেন? আমি আর কক্ষনো আপনাকে আমার কাছে আসতে দেবো না কক্ষনো না।থাকুন আপনার স্নিগ্ধাকে নিয়ে।ভালোবাসবো না আপনাকে আর।

মায়া সারাদিন রুমে বসে আছে আর কাঁদছে। কারও সাথে কথা বলছে না।কিছু খাচ্ছেও না।মায়া যে না খেয়ে বসে আছে এই খবরটা মাহিরের কানেও গিয়েছে।কিন্তু স্নিগ্ধার কারণে মাহির কিচ্ছু করতে পারছে না।স্নিগ্ধা মাহিরকে এক মিনিটের জন্যও ছাড়ছে না।রাতে যখন স্নিগ্ধা ঘুমিয়ে পরে তখন মাহির সুযোগ পেয়ে চুপিচুপি রুসার রুমে যায়।তারপর মায়ার কাছে এসে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে।আর দেখে মায়ার ঘুমন্ত চোখদুটো ফুলে আছে।মায়ার চোখে মুখে কান্নার পানি শুকানো দাগ।মাহির নিচু হয়ে মায়ার কপালে একটা চুমু এঁকে দেয়। তারপর ফিসফিসিয়ে মায়াকে ডাকে।মাহিরের কন্ঠস্বর শুনে মায়া চোখ তুলে হঠাৎ মুখের সামনে মাহিরকে দেখেই ভয়ে চিৎকার দিতে যায় আর মাহির মায়ার মুখটা চেপে ধরে।

মাহিরঃ উসসস! মায়া চুপ। পাশে রুসা আছে জেগে যাবে।

মাহিরকে ধাক্কা দিয়ে মায়া কিছুটা দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর আস্তে করে শব্দ বিহীন রুমের বাইরে চলে আসে।আর মাহির মায়ার পিছনে পিছনে আসে।

মায়াঃ বলুন কেন এসেছেন এতো রাতে আমার কাছে? সারাদিনে এতো অপমান করেও স্বাদ মেটে নি? আপ..ন..

মায়া আর কিছু বলার আগেই মাহির মায়ার কোমড়টা জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়।

মাহিরঃ মায়া আমাকে কিছু বলতে দাও?

মায়া আবার ধাক্কা দিয়ে মাহিরকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর রুমের মধ্যে ঢুকতে যাবে এমন সময় পেছনের থেকে মাহিরকে বলতে শোনে।

মাহিরঃ ভালোবাসি তোমাকে আমি মায়া।

কথাটা শুনে মায়া ঘুরে মাহিরকে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আর কলারটা চেপে বলে,

মায়াঃ নাটক করতে এসেছেন মাঝরাতে? লজ্জা করে না আমার রুমে স্নিগ্ধাকে নিয়ে থাকতে? এখন স্নিগ্ধা ঘুমিয়ে গেছে বলে আমার কাছে এসেছেন? ছিঃ সকলের সামনে আপনি ওর হাত, পায়ে তেল মালিশ করে দিলেন? এই হাত দিয়ে আপনি আর কখনো আমাকে স্পর্শ করবেন না।

মাহিরঃ মায়া প্লিজ আমার কথাটাতো শোনো?

মায়াঃ কি শুনাবেন আপনি আমায়? আপনার তো চরিত্র ভালো না।সামান্য একটা শোধ তুলতে আপনি এইভাবে কাল রাতে আমার সাথে অভিনয় করলেন? মানুষ এতোটা নিচ হয় সেটা আপনাকে না দেখলে বুঝতাম না।

মাহিরঃ অনেক বলেছো তুমি।এভাবে তোমাকে বোঝানো যাবে না।আসো আমার সাথে…

বলে মায়াকে টানতে টানতে মাহির নিজের রুমের কাছে নিয়ে যায়। তারপর মায়াকে বাইরে দাড় করিয়ে স্নিগ্ধার ফোনটা ভেতর থেকে লুকিয়ে নিয়ে আসে।তারপর একটা ভিডিও বের করে মায়ার সামনে ধরে।

মাহিরঃ ভিডিওটা দেখও মায়া বুঝতে পারবে আমি কেন এমন করছি।

মায়া চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে একটা হিন্দি গানের ভিডিও চলছে।মায়ার রাগ আরও বেড়ে যায়।মায়া আবার মাহিরের শার্টের কলারটা টেনে ধরে।তারপর মাহিরকে মনে যা আসে তাই শুনিয়ে দিয়ে চলে যায়। আর মায়া চলে যাওয়ার পর মাহির ভাবতে থাকে মায়া আবার তাকে ভুল বুঝেছে।কিন্তু ভিডিওটা গেল কোথায়? ভাবতে ভাবতে পিছনে ঘুরে রুমে ঢুকে দেখে স্নিগ্ধা জেগে আছে।আর বিছানার উপরে বসে সয়তানি হাসি হাসছে।মাহিরের এবার বুঝতে বাকি থাকলো না স্নিগ্ধাই মায়ার বাবা-মাকে বন্দী করে রাখার ভিডিওটা ডিলিট করে দিয়েছে।

চলবে,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *