তোকে চাই

তোকে চাই !! Part- 42

রান্না করতে আমার বেশ ভালো লাগে,,,ইভেন এটা আমার প্যাশনও বলা যায়,,তবে অবিয়েসলি সব সময়ের জন্য নয়,,,মাঝে মাঝে।।আর আজকে আমার এই প্যাশনটাকে বের করে আনার একটা স্কোপও পেয়ে গেলাম।।রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে আছি,,উদ্দেশ্য সবার জন্য ডিনার তৈরি করা,,বিয়ে হওয়ার পর রান্না করার সৌভাগ্য আমার হয়ে উঠে নি,,মামানি আর আরিফ চাচার জন্য কোনো কিছু টাচই করতে পারি নি।।তাদের ব্যবহার দেখে মনে হয় আমি এখনো বাচ্চাটি,,কিছু ধরতে গেলেই হাতে ব্যাথা পেয়ে যাবো।।আর কনসিভ করার পর শুভ্রর জন্য কিচেনে আসাটাই আমার জন্য দিবাস্বপ্নের মতো হয়ে উঠেছে।।তবে আজ ব্যাপারটা ভিন্ন।।বাড়িতে একটা কাজের লোকও নেই সবাই ছুটিতে আছে,,আর আপুর তো ৮ মাস চলছে,,,এই অবস্থায় ও রান্না করবে আর আমি বসেবসে খাবো তাও মেনে নেওয়া যায় না।।।কাল রাত থেকে মামানির প্যাশারটাও ফল করছে সো এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেস্ট অপশন হলাম আমি।।যেভাবেই হোক শুভ্র ফিরে আসার আগে রান্না কমপ্লিট করতে হবে,,,নয়তো কি হবে কে জানে??মামানি তো কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না,,উনার এককথা,,,”মা তুই রান্না ঘরে যাস না,,,আমার ছেলে দেখলে কুরুক্ষেত্র করে ফেলবে,,যে ছেলে স্টোর রুমে পর্যন্ত কার্পেট বিছিয়ে রাখছে,,বউয়ের সেফটির জন্য,,সে যদি দেখে তার বউ রান্না ঘরে,,কি হবে ভেবে দেখেছিস??তারচেয়ে আমি যেমন পারি ম্যানেজ করে নিবো।।” কিন্তু ওই আমিও তো নাছোড়বান্দা,, বাড়িতে পুত্রবধূ থাকতে অসুস্থ শাশুড়ী মা রান্না করবে,,এমনটা বাবা-মা আমায় কখনো শেখায় নি।।।তাতে পৃথিবী উল্টে গেলেও আমার মোটেও যায় আসে না,,,,সেখানে শুভ্র তো কিছুই না।।এসব যুদ্ধের পালা শেষ করে আমি রান্না ঘরে দাড়িয়ে আছি।।ভাত,,মাংস হয়ে এসেছে,,এবার শুধু সবজি আর ডাল বাকি।।আমি সবজি কাটছিলাম হঠাৎ কোথা থেকে শুভ্র এসে সামনে দাঁড়ালো,,,উনি যে ভীষন রকম রেগে আছেন তা উনার টমেটোর মতো মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে,,,,আমি তাকাতেই দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,,,

তুমি এখানে কি করো রোদেলা??

উনার মুখে রোদেলা নামটা শুনে অবাক হলাম,,,বিয়ের প্রথমদিনেই শুধু উনি এই নামে ডেকেছিলেন,,,,তারমানে মশাইয়ের রাগের পাল্লা আজ ভীষন ভারি,,,উনার জলন্ত চোখের দিকে তাকালেই আমার কথা সব ফুঁস হয়ে যায়,,,তাই উনার দিকে না তাকিয়ে সবজি কাটায় মন দিলাম,,,

কি আবার করছি??রান্না করছি।।কিচেনে কাউকে ফুটবল খেলতে দেখেছেন কাউকে,,??

ফাজলামো বন্ধ করো রোদ,,,এসব করতে গিয়ে আবার নতুন কোনো অঘটন বাঁধাতে চাও??বাড়ির সবাই কই যে তোমায় রান্না করতে হবে।।

রান্না করতে গেলেই অঘটন বাঁধে আপনাকে কে বললো??রান্না করতে করতে শহীদ হয়ে গেছে এমন কাউকে কোনোদিন দেখেছেন??তাছাড়া বাড়িতে আজ কোনো সার্ভেন্ট নেই সো আমাকেই রাধঁতে হবে,,,(সবজি কাটতে কাটতে)

কেন?? সব কই মরেছে আর বউমনি বা মাই বা কোথায়??(ভ্রু কুচঁকে)

আরিফ চাচার বড় ভাই মারা গেছেন,,,নিশ্চয় জানেন??মামুও তো জানাজায় গেছেন,,,আর রাহেলার বিয়ে পড়শো,,,সো জামাই রেখে সে নিশ্চয় এখানে রান্না করতে আসবে না।।আর মাধবী তো আগে থেকেই অফ ডে তে আছে,,,

মা,,বউমনি??

আপনি পাগল??মামানির কাল রাত থেকে পেশার ফল করছে,,,উনি এই অবস্থায় রান্না করতে আসবে??আর আপুর কথা কিভাবে বলুন আপনি??ওর অবস্থা কি আপনার জানা নেই??

ওহ,,সরি।।তাহলে আমায় ফোন করে নিতে,,আমি হেল্প করতাম।।(মুচকি হেসে)দাও আমি সবজি কেটে দিই।।

নাহ,,,একদম ওস্তাদি দেখাতে আসবেন না,,,পরে বাংলা সিনেমার মতো হাত কেটে একাকার করবেন আর আমাকে নায়কা সাবানার মতো শাড়ি ছিড়ে নেকামো করতে হবে,,,আর তাতে আমি ইন্টারেস্টেড নই।।।সো দূরে থাকুন,,,

এভাবে বলছো কেন??(মুখ গোমরা করে)

কিভাবে বলছি??(ভ্রু কুঁচকে)

বাদ দাও,,,বাহ তুমি তো বেশ সবজি কাটতে পারো,,গ্যাচগ্যাচ কেটে চলেছো।।তুমি পুচকি হলেও গুণবতী বটে,,,রান্না পারো,,,শাড়িও পড়তে পারো,,

হুমম,,আই নো আমি গুণবতী,,,(ভাব নিয়ে)

শুভ্র দরজায় ঠেস দিয়ে হাত বাজ করে দাঁড়িয়ে ছিলো,,আমার কথা শুনে মুচকি হেসে পেছন থেকে জড়িয়ে নিলো,,,,

হুমম হতেই হবে,,,নয়তো যেন তেন মেয়ের জন্য কি আবরার শুভ্র পাগল হয়??

আপনি আমার জন্য পাগল??(বাঁকা চোখে)

ব্যাপারটা বিশ্রী হলেও সত্য,,আম মেড উইথ ইউ,,(মুখ গোমরা করে) জানো??(আমি আড়চোখে তাকাতেই)আমি মাঝে মাঝে ভাবি,,আমি দিনদিন পাগলাটে হয়ে যাচ্ছি,,,কনট্রোল করার যথেষ্ট চেষ্টা করি বাট তোমাকে দেখলেই সবগুলিয়ে যায়,,,এসব পাগলামো অটোমেটিক আমার মধ্যে চলে আসে,,,,আই কান্ট হেল্প।। (বাচ্চাদের মতো মুখ করে)

আমি উনার কথায় খিলখিল করে হেসে উঠলাম,,,আর উনি আমার গাড়ে মাথা রেখে আমার দিকে একপলকে তাকিয়ে আছেন,,,যেনো চোখের পাতা পড়লেই বিস্ময়কর কিছু হারিয়ে যাবে,,,উনার এভাবে তাকানো দেখে হাসি থামিয়ে চোখের ইশারায় জিগ্যেস করলাম,, “কি হয়েছে?”
উনি আমার কপালের চুলগুলো ডান হাত দিয়ে সরিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলেন,,,

কিছুই হয় নি,,,জাস্ট তোমাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে,,

কি??(ভ্রু কুঁচকে)

একদম আমার বউ বউ দেখাচ্ছি তোমায়,,,,(গালে হাত রেখে)

কেন?এমনি কি বোন বোন দেখায়??

কথাটা বলেই আমি হুহু করে হেসে উঠলাম,,,কেনো জানি প্রচুর হাসি পাচ্ছে আজ।।।আমি হাসতে হাসতে রীতিমতো কপোকাত,,,উনি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে থেকে আমাকে উঁচু করে ভ্যাসিনের পাশে বসিয়ে দিয়ে,,,সবজিগুলো নিতে ধুতে লাগলেন,,,আমি অবাক চোখে উনাকে দেখছি।।আমাকে তাকাতে দেখেই উনি বলে উঠলেন,,,

এটা আমি বেশ পারি,,,সো লেকচার দেওয়া বন্ধ করো,,,আর কি জানি বলছিলে??অন্যান্য সময় কেমন লাগে??অন্যান্য সময় তোমায় আমার রোদবালিকার মতো লাগে,,,(চোখ টিপে)

মানে??(কনফিউড হয়ে)

কিছু না বাদ দাও,,,সবজি ধোয়া শেষ,,,কি রান্না করবে তারাতারি করো তো পিচ্চি।।

আমাকে নামিয়ে দিয়ে উনি ফ্রিজ থেকে একগাদা ফ্রুটস বের করলেন,,,আমি ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে আছি,,,এগুলো দিয়ে কি করবেন উনি??

এসব দিয়ে কি হবে??(ভ্রু কুচঁকে)

এসব খাওয়া হবে??

আপনি এখন এসব খাবেন??(ভ্রু কুচঁকে)

আমি কি বলেছি আমি খাবো??(ফল কাটতে কাটতে)

তো??

আমার বউ খাবে,,,বেচারী রান্না করবে এনার্জি ওয়েস্ট হবে সো,,সে রান্না করবে আর আমি তাকে ফ্রুটস খাওয়াবো,,,গট ইট বেবি??

নো,,এখন আমি কিছুতেই খাবো না,,কাজের মধ্যে ডিসটার্ব করবেন না বলে দিলাম,,

চুপপ,,,আমার খাওয়ানোর মধ্যে ডিসটার্ব করবে না বলে দিলাম,,,নয়তো দিবো একটা কানের নিচে।।(রাগী গলায়)

কি আর করা??আমি তো বাধ্য,,,তাই বাধ্য হয়ে খেতে হচ্ছে,,আমি রান্না করছি আর উনি আমায় খাওয়াচ্ছেন।।।পাগলের শেষ সীমানা যাকে বলে আরকি।।


ঘড়িতে এগারোটা বা সাড়ে এগারোটা বাজে,,,তবু চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না,,তাই ভাবলাম গল্পের বই পড়া যাক,,,শরৎচন্দ্রের “পরীনিতা” উপন্যাসটার পাতা উল্টাচ্ছি আর হাটছি,,,গল্পটা বেশ রোমান্টিক।।গল্পটা পড়লেই গল্পের নায়ক “শেখর দা” কে দেখতে ইচ্ছে করে।।বইয়ের পাতায় যেনো ডুবে গিয়েছি।।ঠিক এই সময় বুঝতে পারলাম,,কেউ আমার পিছে হাটছে,,,আমি ঘুরলে সেও ঘুরছে,,,আমি জোড়ে হাঁটলে সেও জোড়ে হাঁটছে,,ভয়ে আমার অন্তরাত্তা কেঁপে উঠার উপক্রম,, ভূত টূত নয় তো??দূরুদ পড়তে পড়তে পিছনে তাকাতেই মেজাজ খারাপ হলো,,,শুভ্র ফোন হাতে আমার পিছু পিছু হাটঁছে,,,

কি সমস্যা??আমার পিছু পিছু হাটছেন কেন??

যদি তুমি পড়ে যাও,,,তোমাকে তো ধরতে হবে তাই।।

হোয়াট??এখানে কার্পেট বিছানো আছে,,তবু আমি পড়ে যাবো??এটা কোনো কথা??

পড়ে তো যেতেও পারো,,,,আগে থেকে সেইব থাকা ভালো,,,(ফোন চাপতে চাপতে)

তাই বলে এভাবে পেছনে ঘুরবেন??বিরক্তিকর(,রাগী গলায়)

আর তোমাকে এতো রাতে বই পড়তে হবে??যখন দরকার ছিলো তখন তো পড়ো নাই,,তাহলে ঠিকই আমাদের ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে যেতো,,,

খোঁচা দিচ্ছেন??(মুখ ফুলিয়ে)

নাহ,, জান,,, চলো তো ঘুমাবো,,

আপনি যান,,,আমি ঘুমাবো না,, (বিরক্তি নিয়ে)

উনি আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে কোলে তোলে নিলেন,,,

বেবি,,,তুমি না ঘুমালে,,আমাকে তো ঘুমোতে দেও,,,কাল তোমায় ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো,,,আই নিড সাম এনার্জি,,,এখনি টেনশন হচ্ছে,,সো চুপ থেকে আমাকে এনার্জি কালেক্ট করতে হেল্প করো,,,

কথাটা বলেই উনি আমাকে সহ কম্বল মোড়িয়ে শুয়ে পড়লেন,,,,আর আমি হাবলার মতো উনার দিকে তাকিয়ে আছি,,,

#চলবে,,,