তোকে চাই !! Part- 17
আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছি,,কিন্তু উনি আমাকে পাত্তায় দিলেন না।।।নিজেকে আজ খুব ছোটো ছোটো লাগছে,,আচ্ছা আমি কি উনার ওয়াইফ হওয়ার যোগ্য নই??এটা কি আমাকে অপমান করা হলো না??আজ আমি যদি উনাকে কোনো ছেলের কাছে ভাই হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতাম উনি কি মেনে নিতেন???তখন সাথে সাথেই আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠতো।।নিজের কাছেই আজ আমি লজ্জিত।।হঠাৎ ছেলেটি বলে উঠলো,,
।
হাই রোদেলা,,আমি সাহেল,,,শুভ্রর ছোট্ট বেলার বন্ধু।।গ্রামের ভাষায় বলতে গেলে ন্যাংটা কালের বন্ধু।।হা হা হা
।
আমি শুধু একটা শুকনো হাসি দিলাম,,,উনি আবার বলে উঠলেন,,
।
রোদেলা??আমি কি তোমাকে রোদ বলে ডাকতে পারি??,রোদেলা নামটা বেশি বড় হয়ে যায়,,প্লিজ??
।
ইয়াহ,,,অবশ্যই।।(জোর করে একটা হাসি দিয়ে)
।
উনার পাশের ভাইয়াটা হালকা কাশি দিয়ে সাহেল ভাইয়াকে কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে বলে উঠলেন,,,
।
মাম্মা??কি চলে?(দাঁত কেলিয়ে)
হোয়াট কি চলে??স্যাট আপ।।শুভ্র তোরা কই যাচ্ছিলি??
।
রোদকে ড্রপ করে দেন অফিস যাবো।।রোদ এবার এডমিশন দিবে,, মাহির ভাইয়ের কোচিং এ এডমিট করে দিছি।।
।
ওহ,,আচ্ছা।।
।
আমার আর ওদের কথাবার্তা ভালো লাগছে না।।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে,,,জানি না এ রাগ কার উপর নিজের উপর,,নাকি শুভ্রর উপর।।এদের সবার চুল টেনে টেনে ছিঁড়তে পারলে রাগটা কমতো বলে মনে হচ্ছে।।কি মনে করে শুভ্র নিজেকে??আমি কি ফেলনা নাকি??আমার পরিচয় যদি ওর কাছে শুধুই ফুপ্পির মেয়ে হয়,,তাহলে আমার কাছেও ওর পরিচয় শুধু আমার মামুর ছেলেই হওয়া উচিত।।আর কিছু ভাবতে ইচ্ছা করছে না,,,আর না ওদের দাঁত কেলানো দেখতে ইচ্ছা করছে,,মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া যেনো আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে,,,
।
ভাইয়া??শুভ্র ভাইয়া??
।
আমার ভাইয়া ডাক হয়তো উনার হজম হয় নি,,, বা উনি হয়তো এক্সপেক্ট করে নি এমন কিছু,,,যার কারনে উনি অবাক চোখে আমার দিকে তাকালেন,,,
।
কি হলো ভাইয়া??এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো??চলুন প্লিজ আমার ক্লাসে লেট হচ্ছে,,,,
।
উনি কোনোরকম মাথা নেড়ে উনাদের থেকে বিদায় নিয়ে বাইট স্টার্ট দিলেন।।আমিও চুপচাপ বসে আছি।।।আমি বুঝতে পারছি না,, আমার ঠিক কেমন রিয়েকশন দেওয়া উচিত।।।উনি আমাকে কোচিং এর সামনে নামিয়ে দিলেন,,,
।
ভাইয়া,,ছুটির সময় আপনাকে আসতে হবে না,,আই উইল মেনেজ।।
।
বলেই চলে এলাম,,না তাকিয়েই বুঝতে পারছি উনি অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন,,,,থাকুক তাকিয়ে,,,শুধু অবাক কেন??পারলে “হা” করে তাকিয়ে থাকুক,,,সাথে দুই তিনটা মশাও খেয়ে নিক,,,তাতে আমার কি??হো কেয়ারস্?????
।
কোচিং শেষে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি রিকশার জন্য,,কিন্তু আশেপাশে রিকশার টিকি টা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না।।সব রিকশাওয়ালা কি রোদের বিপক্ষে জোট গঠন করেছে নাকি??যে রোদ কে তারা কেউ রিকশায় তুলবে না??আমার ভাবনা-চিন্তাকে দুমড়ে মোচড়ে দিয়ে একটা গাড়ি চরম স্পিডে আমার সামনে এসে থামকে দাঁড়ালো।।ভয়ে আমি রীতিমতো লাফিয়ে উঠলাম।।।মনে হচ্ছে,,আমার প্রানিপাখি উড়ে গিয়ে আশেপাশে ডানা ঝাপটিয়ে আবার ফিরে এসেছে।।মেজাজটা চরম গরম হচ্ছে,,,ব্যাটা গাড়ি আছে তাই বলে কি উড়ে যেতে হবে নাকি??এদের উড়াউড়িতে কারো জীবন উড়ে গেলে কি হবে শুনি??যত্তোসব আজাইরা পাবলিক,,হুহ।।নিজের মনে বিরবির করছিলাম ঠিক তখনই গাড়ি থেকে একটা কচুরিপানা নেমে আমার সামনে দাঁড়ালো,,, এই লোকটার জন্য কচুরিপানা নামটা আপাতত আমার কাছে পার্ফেক্ট বলেই মনে হচ্ছে,,,কড়া সবুজ ব্লেজার আর কুচুরিপানার ফুলের কালারের শার্ট পড়েছে লোকটা।।তবে দেখতে তেমন খারাপ লাগছে না।।ভালো করে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,,ওহ এটা তো সাহেল ভাইয়া।।।এই ব্যাটায় এইখানে কি করে??
হাই রোদ??এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন??
।
মাছ মারার জন্য দাঁড়িয়ে আছি,,,আবে তোরে কোন দুঃখে বলতে যামু??একটু আগেই তো প্রায় হার্ট আট্যাক করে ফেলছিলাম,,(মনে মনে)….জী রিকশার জন্য ওয়েট করছি।।(একটা হাসি দিয়ে)
।
ওহ,,চলো আমি তোমাকে পৌছে দিই।।
।
নো থেংক্স।।আই উইল মেনেজ।।
।
বলেই হাটা দিলাম,,হয়তো সামনে রিকশা পেয়ে যাবো।।এখানে দাঁড়িয়ে এই আবালের বকবকানি শোনার কোনো মানেই হয় না।।কিন্তু মসিবত কি এতো সহজে পিছু ছাড়ে??উনিও দৌড়ে আমার পাশে এসে আমার সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে লাগলেন,,,আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই উনি বলে উঠলেন,,,
।
তুমি যতোক্ষণ রিকশা না পাও,,আমিও তোমার সাথে হাটি,,
।
আপনার গাড়ি থাকতে আপনি হাঁটবেন কোন দুঃখে??(ভ্রু কুচকে)
।
দুঃখে হাটঁবো কে বললো??হাটবো তো সুখে,,,
।
মানে??
।
এতোদিন কানাডায় ছিলাম প্রায় ৬ বছর,,,এতোদিন পর দেশে আসছি,, একটু হেঁটে হেঁটে পরিবেশটা উপভোগ করি,,,এই কদিন পারি নি কজ সঙ্গী ছিলো না,,কিন্তু আজ তো তুমি আছো।।
।
এক্সকিউজ মি??আমি আপনাকে সঙ্গ দিতে যাবো কেন??আপনি যান তো এখান থেকে,,,,একদম বিরক্ত করবেন না(বিরক্তি নিয়ে)
আরে,,এভাবে বলছো কেনো??ফ্রেন্ডের বোন হিসেবে এইটুকু সার্ভিস তো দিতেই পারো,,তাই না??
।
ওহ,,,হ্যালো,,,ফ্রেন্ডের বোনদের কি আপনার ফ্রি সার্ভিস মনে হয় নাকি??(রাগী গলায়)
।
আরে তা কেনো হবে??ওকে যাও,,আই উইল পে ফর ইট।।
।
তাই নাকি??তাহলে অন্যকাউকে অপয়েন্ট করেন আম নট অ্যাবলএবল।।।
।
প্লিজ,,তোমাকে আমি আইসক্রিম খাওয়াবো,,,যদি তোমার সাথে হাটার পারমিশন দাও তো,,,(বাঁকা হাসি দিয়ে)
।
ওই মিষ্টার??আপনার কি আমাকে বাচ্চা মনে হয়??যে আইসক্রিমের লোভ দেখাবেন আর রাজি হয়ে যাবো৷,,,,,আর পারমিশন পারমিশন যে করছেন,,,পারমিশন না নিয়েই তো দশ মিনিট ধরে আমার সাথে হাটঁছেন,,সেটা??
।
ডাবল পে করবো,,,আইসক্রিম প্লাস ফুচকা??মেয়েরা আর কি খায় জানি না(মাথা চুলকে)
।
উনার দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে হেসে দিলাম,,,উনিও হেসে দিয়ে বললেন,,
।
সো পারমিশন গ্রেনটেড??তাহলে আইসক্রিম খাই??
।
আমিও রাজি হলাম,,,পাশের দোকান থেকে আইসক্রিম কিনে যেই না মুখে দিবো,,একটা বাইক তুফানের গতিতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো,,, আমি ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছি,,,ভেবেছিলাম,,আজ আমার ইন্নাননিল্লাহ্ হলো বলে কিন্তু লাস্ট পর্যায়ে বেঁচে গেছি।।আজ সব সিডর,,আইলা আমার সাথেই কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছি না।।চোখটা হালকা খুললাম বাইকে থাকা মানুষটাকে দেখার আশায়,,,,
।
#চলবে,,,,,