তুমি প্রাক্তন নও আমার ভালোবাসা

তুমি প্রাক্তন নও আমার ভালোবাসা !! Part- 06

সবাই গাড়িতে উঠলো এক এক করে আমি উঠে বসলাম,, আর,,কোথা থেকে ফারহান এসে আমার সাথে বসলো…

আমি : আরে আরে আপনি কি করছেন আপনি😒😒
ফারহান : কই কি করলাম আমি(এদিক সেদিক তাকিয়ে)😦😦
আমি : আপনি আমার পাশে কেন বসলেন?😒
ফারহান : আর কোথাও তো জায়গা নেই বসার তাছাড়া আমার ভালো লেগেছে বসেছি,, তোমার কি তাতে😏 নাকি আমার মত স্মার্ট একটা ছেলে পাশে বসাতে অস্বস্তি হচ্ছে(ভাব নিয়ে বললো)

আমি হুহ বলে অন্য পাশ ফিরে তাকিয়ে আছি,,,
আর ফারহান বসে বসে ফোন টিপছে,,,
সবাই ওই বাসায় গিয়ে পরিচিত হলো সবাই আড্ডা দিচ্ছে এমন সময় চোখ গেলো ফারহানের দিকে দেখেই তাকিয়ে আছি খুব মায়াবি লাগছে😍 ভাইয়ার সাথে কথা বলছে আর আমি তাকিয়ে আছি তখনি কে যেন বলে,,
হাই আমি নওশিন খান,,,
আমি : হ্যালো আমি ফারিয়া😊
নওশিন : আপনাকে কিন্তু দারুন লাগছে
আমি : থ্যাংকস..
নওশিন : ওয়েলকাম… একটু সোজা হয়ে দাঁড়ান
আমি : কেন
নওশিন : কিছু না বলে আমার কপালে হাত দিয়ে টিপটা ঠিক করে দিলো,,,আসলে টিপটা বাকা হয়ে গেছে আপনার ☺☺
আমি : থ্যাংকস…

নওশিনের সাথে কথা বলছি বলতেছি হেসে হেসে এমন সময় দেখি ফারহান আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে আমি তা দেখে আরো বেশি করে হেসে কথা বলতে লাগলাম নওশিনের সাথে…

নওশিন : আচ্ছা আমি কি আপনার নাম্বার টা পেতে পারি
আমি : হ….(আর কিছু বলার আগেই ফারহান বলে উঠে..
ফারহান : ব্রো ও তো ফোন ইউজ করে না তাই না বউ..ওইদিকে চলো তো বউ তোমার সাথে কথা আছে,,(ফারহানের মুখে বউ ডাক শুনে আমি স্তদ্ধ হয়ে গেছি কি বলে ও

আমি : আরে কি বলছেন এইসব আমি কেন আপনার বউ..(আর কিছু বলার আগেই আমাকে টেনে নিয়ে গেলো একটা দেওয়ালের সাথে হাত চেপে ধরে বলে

ফারহান : ওই ছেলের সাথে কিসের এত কথা তোমার😡😡(রেগে)
আমি : হাত ছাড়ুন আমি আপনার বউ হতে যাবো কেন হুম আর কার সাথে কি বলবো এটা আমার ইচ্ছে আপনার কি,,,
ফারহান : আমার সব,,তুমি কোন ছেলের সাথে কথা বলতে পারবে না এটাই শেষ কথা
আমি : হাজার বার বলবো আপনি কে বাধা দেওয়ার,,, হুহ😏😏

ফারহান : বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না,,,আর টিপ পরার দরকার নেই (বলেই টিপটা ফেলে দিল)
আমি : নেক্সট টাইন টিপ পরলে আমাকে জিজ্ঞেস করবে ঠিক হয়েছে কিনা ওকে😡
আমি : বয়েই গেছে আপনাকে জিজ্ঞস করতে আমার 😏😏(বলে চলে যেতে নিলেই ফারহান আমার কোমর ধরে টেনে আবার দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আর আমার মুখের উপর তার মুখটা নিয়ে আসে,,, আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলি,,,

ফারহান : যেটা করতে চাইছি,, বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু রেহাই পাবে না (বলেই চলে গেলো আর আমি বোকার মত দাঁড়িয়ে আছি,, শালা গরু ইঁদুর টিকটিকি আমি কি করব না করবো তোকে জিজ্ঞেস করতে হবে লুচু একটা বলে গালি দিতে লাগলাম মনে মনে…

ভাইয়ার বিয়ের সম্পূর্ণ হলো বউ নিয়ে সবাই বাসায় চলে গেলো,,,

রাতে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে খেয়াল করলাম ফারহান নেই,,,ওকে না দেখতে পেয়ে কেমন জানি হচ্ছিলো,,, এদিক ওদিক করছিলাম,, পিছন থেকে এসে ফারহান বলে উঠলো..

ফারহান : কাউকে কি খুজছো তুমি
আমি : ক…কা…কে খ…খুঁজবো আমি,,
ফারহান : আমি কিন্তু জানি কাকে খুজছো,,এখানে তো সবাই আছে আমিই ছিলাম না আমি ভুল না বললে সত্যি আমাকেই খুজছো 😗
আমি : এহহ আপনাকে খুঁজতে আমার বয়েই গেছে😏
ফারহান : তোমার চোখ বলছে তুমি আমাকেই খুজছো,,মিস ফারিয়া(মুচকি হেসে)

আমি কিছু না বলে সবার সাথে আড্ডা দিতে লাগলাম,,,কাজিনরা কিছু চিরকুট লিখলো তাতে,,, অনেক কিছু লিখা আছে যে চিরকুট নিবে তাতে যা লিখা তা করে দেখাতে হবে ,কাজিনরা এক এক করে শেষ করল,,,কেউ গান গাইলো,,, কেউ পাগলের অভিনয় করলো তানভীর ভাইয়া,,, ভাবিকে নিয়ে ডান্স করলো এবার ফারহানের পালা,,,, সে একটা চিরকুট নিলো তাতে লিখা,,, কাউকে প্রপোজ করতে হবে…..

ফারহান আমার হাত ধরে সবার সামনে নিয়ে গেলো আর হাটুগেড়ে বসে বললো….

তোমাকে প্রথম দেখেই খুব ভালো লেগেছে…হয়তো তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না আমার অনুভূতি গুলো…কিন্তু বিশ্বাস করো একটা কথাও মিথ্যা না খুব বেশি ভালো লাগে তোমাকে,,,তুমি কারো সাথে কথা বললে খুব খারাপ লাগে….তুমি কি আমাকে তোমার হাতে চুড়ি পরানোর দায়িত্ব দিবে….তোমার কপালের টিপটা ঠিক মাঝ বরাবর বসাবোর সুযোগটা কি দিবে আমাকে,,,, তোমাকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিতে চাই দিবে কি আমাকে একটা সুযোগ…. I love you fariya,,,,,,, বলেই আমার হাতে তার হাত থেকে একটা আংটি খুলে পরিয়ে দিল…

সবাই হাত তালি দিতে লাগলো আর আমি মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছি তখনও

ফারহান আমার মুখের সামনে এসে বলে মিস ফারিয়া দাঁড়িয়ে কি ঘুমিয়ে পড়লেন,,, সবাই হেসে দিলো

আর আমি লজ্জা পেয়ে চলে গেলাম সেই থেকে আমাদের প্রেম শুরু খুব ভালোবাসতাম ফারহানকে,,,ফারহানও পাগলের মত ভালোবাসতো,,,,, আমাদের ব্যাপারটা মোটামুটি অনেকেই জানতো ফারহানের বোন দিপ্তিও জানতো আমাদের ব্যাপারে সে ছিলো একজন গাইনি ডাক্তার

আমাদের বিয়ের নিয়ে কথা হচ্ছিলো দুই ফ্যামিলিতে… এর মাঝে ইদানীং আমার পেটে খুব ব্যাথা হতো প্রথম প্রথম পাত্তা না দিলেও দিন দিন খুব সিরিয়াস অবস্থা হতে শুরু করে উপায় না পেয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম,,, দিপ্তি চেম্বারে গিয়ে চাকাপ করাই রিপোর্ট হাতে পেয়ে জানতে পারি আমার জরায়ুতে টিউমার হয়েছে এখনি যদি অপারেশন না করাই পরে অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে,,,

উপায় না পেয়ে অপারেশন করাতেই হলো, অপারেশন করার পর দিপ্তি বলে আমি কোন দিন হয়তো মা হতে পারবো কিনা তার কোন গেরান্টি নেই,,,জরায়ু অপারেশন এর ফলে আমার মা হওয়ার ক্ষমতা ৫% আছে,,, কথাটা শুনে কান্না পাচ্ছে খুব,,, একজন মেয়ের মা না হলে জীবনটাই হয়ত বৃথা,,, এর মাঝে দিপ্তি আমাকে বলে আমি যেন তার ভাইয়ের জীবন থেকে সরে যাই,,,তার মা নাকি নাতি নাতনির জন্য অনেক পাগল,,,আমি যদি বিয়ে করি তাহলে নাকি ফারহানের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে

সত্যি তো যে মেয়ের মা হওয়ার যোগ্যতা থাকে না সমাজে তার কোন দাম নেই,আমি কখনো ফারহানের বাবা হওয়ার ইচ্ছেই পূরণ করতে পারবোনা,আমি যে এক অসম্পূর্ণ নারী সব কিছু ভেবে ফারহানকে ছেড়ে আমি পালিয়ে চলে আসি বাসা থেকে,,বান্ধবীর সহায্যে একটা হোস্টেলে থেকে টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ জোগাড় করি,,চাকরীটা খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো আমার জন্য, তাই কোন উপায় না পেয়ে ফারহানের অফিসেই চাকরী নিতে হলো,,আমি অসম্পূর্ণতার জন্য ওকে ছেড়ে চলে গিয়ে ছিলাম আমি চাইনি আমার জন্য ফারহান বাবা হওয়ার ইচ্ছা থেকে দূরে থাকুক,,,আমি চাইতাম ও সব সময় ভালো থাকুক
,,কিন্তু আজ কি হয়ে গেলো আমি তো দিপ্তিকে কথা দিয়েছিলাম ফারহানের জীবন থেকে চলে যাবো এক বছর ফারহানের থেকে দূরে থেকেছি নিজেকে জীবন কে যন্ত্রণাময় করে তুলেছি তাও আমার মত পাপীর ছায়া পড়তে দেইনি,,, নিয়তি আজকে আবার আমাকে ফারহানের সামনে দাড় করিয়ে দিলো বানিয়ে দিলো ফারহানের অর্ধাঙ্গিনী,,, কি জবাব দিবো আমি দিপ্তিকে …আমি তো ফারহানকে কখনো বাবা ডাক শোনাতে পারবো না

(বাকিটা সবাই জানেন)

নামো গাড়ি থেকে,,, কি হলো আমার কথা কানে যাচ্ছে না তোমার (ফারহানের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম..

আমি : কোথায় নিয়ে এসেছেন আমাকে স্যার(ভয়ে)
ফারহান : বিয়ের পর মেয়েরা কোথায় যায় জানো না 😡আমার বাসায় নিয়ে এসেছি তোমাকে,,,

আমি : স্যার আমি হোস্টেলে যাবো আমি এখানে থাকবো না প্লিজ আমাকে হোস্টেলে দিয়ে আসুন আমি নামবো না গাড়ি থেকে(কান্না কণ্ঠে)
ফারহান : তুমি এখানেই থাকবে আমার আমার সাথে,,আমার কথার উপরে কোন কথা বলবে না আমি পছন্দ করি না,,, বলেই ফারহান আমাকে কোলে করে ভিতরে নিয়ে গেল…..

চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *