তুমি আমারই থাকবে

তুমি আমারই থাকবে !! Part- 06

প্রথম দেখে ভালোলাগা, এলোমেলো মন
সময় যেন যাচ্ছে থেমে ভেবে সারাক্ষন
রোদের রঙে যাক মিশে ভালোলাগা সব
তোমায় পেলে আর কিছুই চায় না অনুভব
তুমি এলে যেন অবাক শ্রাবনের সুখ
পলক চোখের যাক থেমে দেখে ঐ মুখ
ভাসলো মেঘে পরান আমার উদাসী মন
কান পেতে শুনতে পাবে বুকের কাঁপন।
রেখে আসি পথের মায়া, পায়ে পায়ে বহুদূর
বেঁধে রেখে দুটো ছায়া, আঁকি তবু একই সুর
ছায়া হয়ে আছো কাছে হৃদয় বোঝে সেই টান
কল্পনা জুড়ে আছে এক সুখ সুখ অভিমান
বলা হয়েও হয় না, বলি মন তা শোনে না
তুমি জানো কি না তা জানি না
কি যেন কি আছে লেখা, আবছা তা যায়না পড়া
জেনে যায় এই মন তবু, কোন উপায়ে দিচ্ছে ধরা
কাছে পেয়েও পাই না, দূরত্বটা চাই না
তুমি জানো কি না তা জানি না
তুমি এলে যেন অবাক শ্রাবনের সুখ
পলক চোখের যাক থেমে দেখে ঐ মুখ
ভাসলো মেঘে পরান আমার উদাসী মন
কান পেতে শুনতে পাবে বুকের কাঁপন।
,
🍁
,
গানের কথাগুলো যেন অনেক কিছুই বলতে চায় কিন্তু সেটা কি, তানহার জানা নেই। কেননা সে জানে যার ভালোবাসা সে আশা করছে তার ভালোবাসা হয়তো অন্য কারও জন্য।তবুও মন তো, মন মানতে চায়না.!!
পুরোটা গান তনয় তানহার দিকে তাকিয়েই গেয়েছে। এখনও দুইজন তাকিয়ে আছে যেন একজন চোখের মাধ্যমে কিছু বুঝাতে চাচ্ছে আর অন্যজন তার চোখের ভাষা পড়ার চেস্টা করছে।
মাঝির কণ্ঠে চোখ সরায় দুইজন দুইজনের থেকে,
-অনেক সুন্দর গান গাইলেন তো আপনি বাপজান।
-ধন্যবাদ চাচা।(হেসে)
-তা মাইয়াডা আপনার কে লাগে? গালপেন্ড?
-নাহ চাচা।(হেসে)
সেই সুযোগ তো আর পাইলাম না। বিয়েই হয়ে গেলো একবারে..!!(তানহার দিকে তাকিয়ে)
-তাইলে তো ভালোই। বউ নিয়া ঘুরতে আইছেন। নতুন বিয়া হইছে আপনাদের?
-বিয়ের বয়স তো অনেকদিন কিন্তু সংসার নতুন, চাচা।
-তা কেমন কথা বাপজান?
-সে এক লম্বা কাহিনি। অন্য একদিন শুনাবোনি। আজ যাই চাচা সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
তানহার হাত ধরে নৌকা থেকে নামিয়ে দিয়ে তাকে একটু অপেক্ষা করতে বলে মাঝির ভাড়া দিতে গেলো তনয়।
-খুব ভালাবাসেন আপনি মাইয়াডারে তাইনা বাপজান?
মাঝির কথায় চমকে উঠলো তনয়।
-তেমন কিছুই না চাচা।(অন্যদিক হয়ে)
-বুঝি আমি বাপজান। আপনাদের বয়সের অনেকেই আসে বউ, গালপেন্ডের সাথে। আপনার গান গাওয়ার সময়ই আমি বুঝে পাইছি গানটা মাইয়াডার জন্যি গাইছিলেন আপনি।পুরোডা সময় তার দিক চাইয়া ছিলেন..!! (এক গাল হেসে)
-….
আসি তাহলে আজকে চাচা। দোয়া করবেন!
-আল্লাহ আপনাগো একসাথে রাখুক সারাজীবন দোয়া করি।
তনয় একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাটা শুরু করলো।
,
,
,
তানহা দাঁড়িয়ে আছে আর পাশে হাওয়াইমিঠাই আলাকে দেখছে। ওর খুব নিতে ইচ্ছা হচ্ছিলো কিন্তু ওর কাছে এখন টাকা নেই। তনয়ের উপর হালকা রাগ হচ্ছে এখন তার।
তনয় এসে দেখে তানহা গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে।
-কি হয়েছে তোমার? (ভ্রু কুচকে)
-এতক্ষণ লাগে ভাড়া দিতে? (চোখ ছোট করে)
-আরে, চাচার সাথে কথা বলছিলাম তাই একটু দেরি হয়ে গেলো।
-হ্যা বুঝি ওগুলো।
-কি বুঝো?
-কিছুনা। তো কি কথা বলছিলেন?
-চাচা বললো আমি খুব হ্যান্ডসাম আর বউ পেয়েছি পেত্নীর মতো (শয়তানি হাসি দিয়ে)
-কিহহহহহ,, আমি জানি উনি এটা বলেননি। আপনার সাথে কথা নাই যান।
-হয়েছে??এখন বলো তো।
তানহা হাত দিয়ে ইশারা করলো হাওয়াই মিঠাইয়ের দিকে। তনয় বলল,
-এইটার জন্য রাগ করেছো তুমি? লাইক সিরিয়াসলি?
-….
অতঃপর তনয় যেয়ে বেশ কয়টা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে আসে। তানহা খুশিতে লাফাতে থাকে।আর তনয় ওকে টেনে বাসায় নিয়ে আসে।
বাসায় আসতেই মা বলে,
-কি রে তনয়, এতগুলা হাওয়ায় মিঠাই কার জন্য?
-আর বলো না মা।তোমার বউ মা এখনও বাচ্চাই আছে। যে বয়সে নিজের মা হওয়ার কথা সেই বয়সেও বাচ্চাদের মত খাবার পেয়ে লাফালাফি করে।
তনয় তো কথা বলে চলে গেলো ভিতরে, এইদিকে তানহার লজ্জায় অবস্থা খারাপ। মন চাইছে মাটি খুড়ে তার মধ্যে মিশে যেতে। মায়ের সামনে কিসব বলে গেলো এই ছেলে। লজ্জা-শরম একটুও নাই বলতে গেলে!!
তানহার লজ্জা পাওয়া দেখে মা হেসে বলে,
-লজ্জা পাস না মা, তনয় এইরকমই।ও তোকে বেশি বিরক্ত করেনি তো?
-না মা। উনি ভালোই ঘুরিয়েছেন আমায় আজকে।
-তাও ভালো। দেখ মা, আমার ছেলেটার মন অনেক ভালো। কিন্তু রাগ আর জিদ প্রচন্ড ওর। ও রেগে গেলে একটু সামলে নিস।
-কি বলছেন মা? আমি তো ভেবেছিলাম উনার রাগ নেই তেমন।
-না রে মা।ওর প্রচুর রাগ।তবে তনয় সহজে রাগেনা। কিন্তু যদি কোন গুরুত্বপুর্ন বিষয় হয় বা ওর জিনিস এইদিক-ওইদিক হয় তাহলে ক্ষেপে বোম হয়ে যায় আমার ছেলে!
,
,
,
রাতে খাওয়ার পর তানহা রুমে যেয়ে দেখে তনয় বই পড়ছে আর সে তানহাকে দেখে বলে,
-তুমি ঘুমিয়ে পড়। কাল তো পড়তে পারিনি বইটা আজ পড়তে হবে। সকালে উঠে অফিস যেতে হবে আবার।
তানহাও মাথা নেড়ে পাশে শুয়ে পড়লো আর ভাবতে লাগলো তনয় যদি কখনও ওর উপর রাগ করে ও রাগ ভাংগাবে কি করে? এসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় সে!
,
,
,
পরেরদিন সকালে তনয়ের ঘুম ভাঙলো মুখে পানির ঝাপটা লেগে। তড়িঘড়ি করে চোখ মেলতেই দেখলো তানহা বেডের পাশে দাঁড়িয়ে হাসছে আর ওর ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।
গোসলের পর মানুষকে স্নিগ্ধ লাগে তনয় জানতো কিন্তু আজ তানহাকে স্নিগ্ধ মুখের সাথে লেপ্টে থাকা ভেজা এলোমেলো লম্বা চুল, হালকা গোলাপি রঙয়ের শাড়িতে এইভাবে দেখে মনের ভিতর বেশ কিছু একটা হচ্ছে তনয়ের কিন্তু সেটা কি সে বুঝতে পাচ্ছেনা…
তনয়কে এইভাবে চেয়ে থাকতে দেখে তানহার গাল দুটো আপনাআপনিই লজ্জায় লাল হয়ে উঠে আর সেটা দেখে তনয়ের ঠোঁটের কোণে নিজের অজান্তেই সূক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠে..!!!
-কি হলো? অফিসে যাবেন না?
– হ্যাঁ, যাবো তো।
-তো উঠুন। দেরী হয়ে যাবে আবার আপনার।
তনয় মাথা নেড়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।তারপর শাওয়ার নিয়ে স্যুট পরে রেডি হয়ে নাস্তা করে আর অফিসে চলে যায়।
,
,
তানহা রান্নাঘরে ছিলো কলিংবেলের শব্দে এসে দেখে ড্রইংরুমে তার শাশুড়ির সাথে এক মহিলা আর এক ছেলে বসে আছে।
তানহাকে দেখে তার শাশুড়ি বলে,
-আপা, এইটা হলো আমার তনয়ের বউ। বউমা, ইনি তোমার ফুপি শাশুড়ি আর তার ছেলে আশিক।
তানহা সালাম দিলো মহিলাটিকে!!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। তুমি তো বেশ সুন্দর দেখতে। তনয়ের তো দেখি কপাল ভালো, চাঁদের মত সুন্দর বউ পেয়েছে।
তানহা পাশে তাকিয়ে দেখে আশিক নামের ছেলেটি তাকিয়ে আছে তার দিকে..
-হাই ভাবী। আমি আশিক।
-হাই ভাইয়া, আমি তানহা।
ইচ্ছা না থাকা সত্বেও কথা বলতে হচ্ছে তানহার। ছেলেটি কেমন যেন গায়েপড়া স্বভাবের।সে একটু পরপর হেসে যাচ্ছে আর তানহার খুব বিরক্ত লাগছে ওর সাথে কথা বলতে!!
,
,
,
তনয় অফিস থেকে আসার পথে তানহার জন্য এক বক্স চকলেট কিনে বাসায় ফিরছিলো। বাসায় এসে দেখে তানহা সোফায় বসে হেসে হেসে গল্প করছে এক ছেলের সাথে। সেটা দেখে যেন রক্ত চড়চড় করে মাথায় উঠে যায় তনয়ের।ছেলেটি আশিক সেটা দেখে ওর মেজাজ সাত আসমানে পৌঁছে যায়!!
তনয় রুমে যেয়ে জানালা দিয়ে চকলেট বক্স সজোরে ছুড়ে ফেলে দেয় বাইরে। তারপর তানহাকে জোরে জোরে ডাকতে থাকে। তানহা রুমে এসে বলে,
-আরে,,আপনি কখন এলেন? আমাকে বলেননি কেন?
-ওহ, এখন আমি বাসায় এসেছি কি না সেটাও জানতে পারোনা তুমি!!(দাতে দাত চেপে)
-এভাবে বলছেন কেন? আমি আজকে আপনাকে ঢুকতে দেখিনি ওইজন্য জানতাম না।
-হ্যা,এখন তোমার মনোযোগ তো অন্যদিকে থাকে ওইজন্য আমাকে চোখে পড়েনা তোমার আর।(চিল্লিয়ে)
তনয়ের চিল্লানোতে ভয়ে কেপে উঠে তানহা।
-আ,,আপনি এভাবে চিল্লাচ্ছেন কেন?ক,,কি করেছি আমি?(কেপে কেপে)
তনয় তানহাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আর বলে,
-কি করেছো তুমি জানোনা?
-আমি সত্যিই বুঝতে পাচ্ছিনা আমি কি করেছি।
-ফাইন। বুঝতে হবেনা তোমার! (ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে)
তনয়ের এই রুপ দেখে তানহা ভয়ে ভয়ে রুম থেকে বের হতে ধরলো। কিন্তু দরজার কাছে পৌঁছাতেই তনয় দৌড়ে গিয়ে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো।
-কার অনুমতি নিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছিলে তুমি?আমি বের হতে বলেছিলাম? (চিল্লিয়ে)
-ন,ন,না বলেননি।
-তাহলে যাচ্ছিলে কেন বলো?(দুই বাহু চেপে ধরে)
তানহা এবার ভয়ে কেদেই দিলো। তার চোখের পানি দেখে তনয় একটু নরম হয়ে গেলো।
-রুমের কি হাল হয়েছে দেখেছো তুমি?? (তানহাকে ছেড়ে দিয়ে)
তানহা এইবার রুমের দিকে তাকায়। রুম দেখে সে হা হয়ে গেলো.!! সাজানো গুছানো রুম পুরো এলোমেলো হয়ে আছে। মনে হচ্ছে ছোট-খাটো কোন টর্নেডো এসেছিলো রুমের মধ্যে..!!!
-একি, রুমের এই অবস্থা কেমন করে হলো? আমি তো গুছিয়ে রেখে গিয়েছিলাম!(অবাক হয়ে)
-তো তুমি কি বলতে চাচ্ছো রুমের এই অবস্থা আমি করেছি??(ধমক দিয়ে)
যদিও তানহার মনে হলো যে রুমের এই অবস্থা তনয়ই করেছে কিন্তু তার রাগ দেখে কিছু বলতে পারলো না সে ভয়ে। কে জানে বেশি রেগে যদি জানালা দিয়ে ফেলে দেয় ওকে?!
-এখন হা করে কি ভাবছো? আমি বাইরে যাচ্ছি, তুমি রুম সাফ করো আর হ্যাঁ,আমি এসে যেন রুমে পাই তোমাকে!
-কিন্তু আমার রান্নাঘরে কাজ..
এটা বলতেই তানহার এক বাহু চেপে ধরে তনয় বলে,
-আমার বাসায় সার্ভেন্ট আছে।আর ফিরে এসে তোমাকে রুমে না পেলে আজ রাত বাথরুমে লক করে রাখবো তোমাকে।
বলেই তানহাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে তনয় হনহন করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে..!! ধাক্কা লাগার ফলে পাশের টেবিলের সাথে হাতে বারি খায় তানহা কিন্তু সেইদিকে তার খেয়াল নেই এখন। সে ব্যস্ত অন্য চিন্তায়..!!
,
,
তানহা পুরো অবাক হয়ে ভাবছে হুট করেই কি হলো তনয়ের? সে-ই বা কি করেছে যে এত রাগ দেখাচ্ছে ওর উপর??
চলবে…