তুই যে শুধুই আমার

তুই যে শুধুই আমার ! সিজন- ২ !! Part- 16

পিটি পিটি করে চোখ খুলছে সায়রা। মাথাটা একদম ভার হয়ে আছে। সে আস্তে আস্তে চোখ বুলিয়ে দেখে সে কোন গাড়িতে আছে। সায়রা আস্তে আস্তে উঠতে নিলে সে এইটা আবিষ্কার করতে পারে যে কাউরো বুকের উপর শুয়ে আছে। এইটা বুঝতে পেরেই সায়রা এক লাফে উঠে বসে আর পাশে তাকিয়ে দেখে আরুশ তার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এতে সায়রা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে বলে।

সায়রাঃ আমার দিকে এইভাবে কেন তাকিয়ে আছেন আমি কি চকলেট নাকি??

আরুশ সায়রার দিকে কিছুটা ঝুঁকে
আরুশঃ যদি বলি তার থেকেও বেশি কিছু। বাঁকা হেসে।

সায়রাঃ এই মিয়া দূরে যান আপনার শরীর থেকে ঘামের গন্ধ আসতাসে। বমি আইসা গেল আমার।। ওয়াক থু। দূরে যান বলছি।

এমন কথায় আরুশ ভেবা চেকা খেয়ে যায়।
কই আরুশ একটু রোমেন্টিক কথা বলছে আর এই মাইয়া নাকি ঘামের গন্ধে বমি আসছে। হায়রে খোদা। তাও আরুশ একটু দূরে সরে নিজের শরীরে থেকে একবার স্মেল নিয়ে দেখে কই না তহ তেমন তহ গন্ধ বলছে না। তার মানে সায়রা ওকে দূরে সরানোর জন্য এমন করেছে। আরুশ রাগী চোখে তাকাতেই সায়রা বলে উঠে।

সায়রাঃ আমি বাসায় যাব। সন্ধ্যা নেমে আসছে আমি বাসায় যাব।

আরুশঃ আজ তুমি বাসায় যেতে পারবে না।

সায়রাঃ কেন কেন কেন!!!!

আরুশঃ একটু পরই বুঝতে পারবে। নাও লেটস গো।
এই বলে আরুশ গাড়ি থেকে বের হয়ে সায়রাকে টেনে বের করে। সায়রা বের হয়ে এসে দেখে সে কাজি অফিসের সামনে দাড়িয়ে আছে। সায়রা অবাক হয়ে আরুশের দিকে তাকিয়ে বলে।

সায়রাঃ কত বড় বাটপার আপনি😲। একটু আগে আমায় প্রাপস করে এখন অন্যের সাথে বিয়ে করতে আসছেন। লজ্জা করে না। তার উপর আমাকেই এনেছেন নিজের সাক্ষী দেওয়ার জন্য। হায় মেরা চকলেট এই দিনও দেখার ছিল।

আরুশ আড়চোখে সায়রার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে পুনরায় টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে যেতে থাকে। আর সায়রা মুভির নায়কার মত ডাইলোগ দিতে থাকে। বাট ইন সায়রা স্টাইল।

সায়রাঃ ছোড় দে মুঝে চকলেট চোর। আমি সাক্ষী দিমু না। একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের লাইফ বারবাদ হওয়ার সাক্ষী হমু না আমি। কিছুতেই না। এতে আমার চকলেট রাগ করব। ছোড় দে মুঝে।

কিন্তু আরুশের কোন হেলদোল নেই। সায়রাকে সে কোন মতে অফিসের ভিতর ঢুকায়। সায়রা
ভিতরে গিয়ে জান্নাত দাড়িয়ে আছে। আর তার পাশেই একটা ছেলে। সায়রা সে দিকে তোক্কোয়া না করে জান্নাতের সামনে গিয়ে বলে।

সায়রাঃ তুই এইখানে কেন?? এক মিনিট তুই কি এরে বিয়ে করতে এইখানে আসছোস। 😱😱শয়তান ছেমড়ি তোর এত বড় সাহস তুমি এই বদজ্জাত মি. উগান্ডারে বিয়ে করতে আইসো। লজ্জা করে নাই একবারও যে তুই আমারে কিছু বলস নাই৷ আমারে বললে তহ আমি এমনেও সাক্ষী দিতাম না। তহ বলস নাই কেন??

জান্নাতঃ কি বলতাসোস এইসব😳

সায়রাঃ থাক থাক লজ্জা পাইতে হইবো না। বুঝছি তোদের মাঝে ভালবাসার সম্পর্ক বাট একটা কথা জানস এই মি. উগান্ডা না কিছুক্ষন আগেই আমাকে প্রাপস করেছে। আমি না করেছি বলে হয়তো তোকে বিয়ে করতে আসছে। আমি ডেম সিউর এই পোলার অন্য কোথাও রিলেশন আছে। তুই এই বিয়ে করিস না বইন। আমি তোর লাইফ এমনে শেষ হইতে দেখতে পারুম না।

এই সব কথা শুনে জান্নাতের মাথা ঘুড়াচ্ছে আর পাশের থাকা ছেলেটা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এইদিকে এইসব শুনে আরুশ রাগে ফুসছে। আরুশ সায়রার সামনে গিয়ে ওকে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে।

আরুশঃ কিসব যা তা বলছো!! তুমি যানও তোমায় এইখানে কেন আনা হয়েছে??

সায়রাঃ এই ফকিন্নি আর আপনার বিয়ের সাক্ষী দিতে।

আরুশঃ জ্বী না ম্যাম। আমি জান্নাতকে নয় আপনাক্ব বিয়ে করতে এইখানে এনেছি। আজ আমার আর আপনার বিয়ে আর তার সাক্ষী হিসাবে জান্নাতকে এনেছি।

সায়রাঃ অহ আচ্ছা। ওয়েট কিইইইইইইই।। আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।

আরুশঃ করতে তুমি বাধ্য।

সায়রাঃ আরেহ ভাই কয়বার বলবো যে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। আমি অন্যের বাগদত্তা প্লাস হবু বউ।

আরুশ কিছু বলার আগেই জান্নাত বলে।

জান্নাতঃ তোর বিয়ে কবে ঠিক হলো??😳

সায়রাঃ অহহ তোকে বলা হয় নি মা তার বান্ধবীর ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে সেই ৪ মাস আগে। ছেলে নাকি এখন বাইরে আছে আসলেই বিয়ে করে নিয়ে যাবে।

আরুশঃ তা আর হচ্ছে না মাই লাভ। কেন না তুমি আজ এখনই আমাকে বিয়ে করছো।

সায়রাঃ দেখুন এইটা সম্ভব না। আমার বিয়ে অলরেডি ঠিক হয়ে আছে। আর আমি বাবা মার অমতে বিয়ে করতে পারবো না। একদম গম্ভীর হয়ে।

আরুশঃ করতে তুমি বাধ্য। তুমি না জানতে চেয়েছিলে তোমার উপর আমার অধিকার কি?? তা এইটা দেখ বুঝে যাবে।

এই বলে আরুশ জান্নাতের পাশা থাকা ওর ফ্রেন্ড আয়ানকে সে ইশারা করতে আয়ান একটা কাগজ ওকে এগিয়ে দেয়। আরুশ সেটা নিয়ে সায়রার সামনে ধরে সায়রা ওইটা পড়ার সাথে সাথে চোখ রসগোল্লার মত হয়ে যায়।

আরুশঃ ভালো মত কোন্ট্রাক পেপারটা পড়ে নাও। এইখানে ক্লিয়ালি লিখা আছে তুমি এই জন্মে আমায় বাদে কাউকে বিয়ে করতে পারবে না। আমি মরার আগ পর্যন্ত তহ একদমই না। তুমি আমার বাগদত্তা আর আজীবন আমার বাগদত্তাই থাকবে। আর আমি তোমায় যখন বলবো তোমায় আমায় তখনই বিয়ে করতে হবে। কোন না বলা চলবে না যদি না বলো তাহলে তোমায় আমার রক্ষিতা হয়ে থাকতে হবে।
আমি বাদে যদি তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে যাও তাহলে তার জেল হবে। তাই তোমার আমি বাদে কোন অপশোন নেই। তোমায় আমাকেই বিয়ে করতে হবে। তুমি চাইলেও অন্যকাউকে বিয়ে করতে পারবে না।

সায়রাঃ আমি মানি না এইসব।

আরুশঃ তুমি মানো আর না মানো এইখানে তোমার সাইন আছে।

সায়রাঃ বাট আমি তহ এইরকম কোন পেপারে সাইন করিনি।

আরুশঃ করেছ মাই জান। তুমি যখন অফিসে জয়েন করো তখন আমি তোমায়
দিয়ে এক গাদা পেপার সাইন করিয়েছিলাম। সেখানেই এই পেপার ছিল।😁

সায়রাঃ ইউউউউউউউ চিটার।

আরুশঃ Everything is fare in love and war😎

সায়রাঃ Love আর war এর চকলেট কিল্লাই। আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।

আরুশঃ তাইলে আমার রক্ষিতা হয়ে থাক। আর যখন এই নিউজটা চারদিকে ছড়াবে তখন কতটাই না ছি ছি হবে। তোমার বাবা তহ হার্টের পেশেন্ট তাই না। তিনি যদি যখন এই কথা জানবেন যে তার একমাত্র মেয়ে অন্য একজনের রক্ষিতা তখন কি হবে!! নিশ্চয়ই মারা যাবে তাই না।

সায়রাঃ নায়ায়ায়া। আমার বাবার কিছু হবে না। আমি তাকে কিছু হতে দিব না।

আরুশঃ যদি তুমি এমন না চাও তাহলে এই কাবিন নামায় সাইন করে দাও।

জান্নাতঃ দেখ সায়রা এর ছাড়া উপায় নেই প্লিজ সাইন করে দে।

সায়রাঃ তুই ও এইকথা বলছিস??

জান্নাতঃ ভুল বুঝেছিস না বাট ভাইয়া তোকে সত্যি ভালবাসে তাই তোকে পাওয়ার জন্য এইসব করছে। আর এর বাদেও তুই তার সাথে সংযুক্ত। তুই চাইলেও কি আর না চাইলেও কি তোকে তারই হতে হবে। এখন তুই সাইন না করলে অনেক প্রবলেম হবে। আর ভাইয়া যা যা বলেছে তিনি তাই তাই করবে পরে ফল কি হতে তা আমাদের অজানা নয়। নিজের কথা না ভাবলেও আঙ্কেলের কথা একবার ভাব।

সায়রা এইবার কেঁদে দেয়। যত যাই হোক ওর কাছে ওর বাবা সবার আগে। বাবার কিছু হোক তা সে চায় না। নিজের থেকে বেশি ভালবাসে তাকে কিন্তু এখন ওর কি করা উচিৎ তা সায়রা বুঝতাসে না। ওর কাছে সবই যেন এক গোলোক ধাঁধা যার আদো কূল আছে কিনা সে জানে না।


🍂

আরুশের পাশে বসে আছে সায়রা। একটু আগেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আরুশ আজ ওকে নিজের বাসায় নিয়ে যাচ্ছে ও নাকি সায়রার সাথে কিছু সময় কাটাতে চায়। তাই সে জান্নাতকে বলে দিয়েছে যে সে যেন সায়রার বাবা মাকে জানিয়ে দেয় যে সায়রা আজ তার বাসায় থাকবে। জান্নাত ও সম্মতি জানায়। গাড়ি ছুটছে আপন গতিতে আর সায়রা হলো ব্যস্ত তার জীবনের হিসাবে মিলাতে।

এইদিকে জান্নাত বাইরে দাড়িয়ে আছে রিকশার জন্য তখনই ওর সামনে একটা বাইক থামে। জান্নাত সেই দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে থাকে। বাইক থেকে নেমে হেলমেট খুলে জান্নাতের সামনে এগিয়ে আসে আয়ান। আয়ান দাঁত কেলিয়ে দাড়িয়ে আছে তা দেখে জান্নাত বলে।

জান্নাতঃ এইখানে ক্লোস আপের অডিশন চলতাসে নাকি যে এমনে দাঁত কেলিয়ে হাসছেন।

আয়ান মুখটা ছোট করে বলে।

আয়ানঃ না তা না। সে যাই হোক বাদ দাও, তা এখানে দাড়িয়ে কি করছো??

জান্নাতঃ মাছ বিক্রি করছি আপনি করেন। দাঁতে দাঁত চেপে।

আয়ানঃ কিভাবে!! তুমি তহ এইখানে দাড়িয়ে আছো।

জান্নাতঃ যখন দেখতেই আছেন যে দাড়িয়ে আছি তাহলে জিজ্ঞাস করছেন কেন। আবুল নাকি?

আয়ানঃ উফফ একবারেই ধানিলংকা। বাট আই লাইক ইট। মনে মনে।
— তা কেন হবো। তা মিস জান্নাত আমাদের তহ পরিচয়ই হলো না। বাই দ্যা ওয়ে আমি রাসেল আহমেদ আয়ান।

জান্নাতঃ ভারি বেয়াদব তহ আপনি। আমাকে জানেন না কিছু না তুমি সম্বোধন করছেন। ইতনা বাড়া সাহস। 😠

আয়ানঃ আমার থেকে বয়সে ছোট বলেই তুমি বলেছি মাইন্ড করলেও আমার কিছু যায় আসে না। এমনেও বাচ্চা মেয়েদের আপনি বলার অভ্যাস আমার নেই।

জান্নাতঃ ঠিকই বলেছেন আমি তহ বাচ্চা মেয়েই আর আপনি তহ সিনিয়র সিটিজেন মানে আমার আঙ্কেল বয়সি। তা আঙ্কেল আপনি আমায় তুমি এই বলুন। আমাকে নিজের ভাগনি জামাইয়ের বোনের ননদের ভাসুরের ঘরের ৪ নং মেয়ে মনে কইরেন ঠিক আছে।

আয়ানঃ এএএএএ। ওই মাইয়া আমারে কোন দিক দিয়া তোমাউ সিনিয়র সিটিজেন মনে হয়। বিয়েই করলাম না তার আগেই সিনিয়র সিটিজেন!!

জান্নাতঃ আমি যদি বাচ্চা মেয়ে হই তাহলে সে হিসাবে আপনি বড় এন্ড আমার মত বাচ্চা মেয়ের কাছে আপনি সিনিয়র সিটিজেন মানে বুইড়া আঙ্কেল। 😁

আয়ানঃ ইউউউউ!!

জান্নাতঃ জানি আমি অনেক কিউট তা আর বলতে হবে না। তা আঙ্কেল নিজের একটি যত্ন নিয়েন এখনকার যে দিন কাল কখন যে আল্লাহর প্রিয় হয়ে যান বলা তহ যায় না তাই না।

আয়ানঃ তোমাকে তহ!!

জান্নাতঃ চকলেট দিতে মন চায় তাই তহ। আচ্ছা দিয়েন আমি মাইন্ড করবো না। ছোট বাচ্চাদের তহ আঙ্কেলদের থেকে চকলেট দিতেই হয় । এইটা তহ তাদের চকলেট গত অধিকার।

আয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই জান্নাত একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠে পড়ে। রিকশা চলতে শুরু করে তখন জান্নাতের কিছু মনে পড়ায় উঁকি দিয়ে বলে।

জান্নাতঃ বায় বায় আঙ্কেল। খারাপ থাকবেন অসুস্থ থাকবেন আর আমার চকলেটের দিকে নজর দিবেন না ওকে। টাটা

আয়ান হা হয়ে জান্নাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন মেয়ে ও ওর লাইফে দেখে নি। আয়ান তারপর কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে আর নিজে নিজেই বলে।

আয়ানঃ মিস ধানিলংকা সম্পর্ক যখন তুমি নিজ থেকেই তৈরি করেছ তখন সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখাটা এখন আমার কর্তব্য তাই না। এই বলে সে বাঁকা হাসে।



#চলবে