তুই যে শুধুই আমার

তুই যে শুধুই আমার ! সিজন- ২ !! Part- 02

🍂🍂 ফ্ল্যাশব্যাক 🍂🍂
.
.
🌻🌻 ২ বছর আগে 🌻🌻
.
.
নিশিঃ সজিব এই ফুল গুলো এইখানে কেন,, এইগুলা তহ স্যারের কেবিনে থাকার কথা,, যাও জলদি তার কেবিনে রেখে আসো,,,

সজিবঃ জ্বী ম্যাম,,

নিশিঃ আর এইখানে এত ময়লা কেন,, রহিম কাকা,, রহিম কাকা,,

রহিম কাকাঃ জ্বী ম্যাম বলেন,,

নিশিঃ দেখ এইখানে কত ময়লা,, স্যার যদি এইসব দেখে তাহলে তহ আমার খবর করে ছাড়বে,, তুমি প্লিজ এই জায়গাটা আবার পরিষ্কার করে দাও না,,

রহিম কাকাঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,

নিশিঃ রিমি স্যারের ওয়েলক্যামের জন্য ফুল রেডি তহ,,

রিমিঃ ওইটা তহ সায়রা আনতে গেছে,,,

নিশিঃ হোয়াট,, আর কাউকে পাও নি ফুল আনার জন্য,, এই মেয়ে তহ নির্ঘাত কোন না কোন গন্ডগোল করবে,, তুমি ভালো করেই জানো স্যার কতটা রাগি তার উপর কোন রকমের ভুলঝুক মাফ করে না,, প্লাস তিনি অনেক পাঙ্কচুয়াল,, তার মধ্যে সায়রা হচ্ছে লেট লতিফের নানীর বড় মা,,
আজ তহ ওর খবর আছে,,

রিমিঃ সরি ম্যাম আমি বুঝি নি,,

নিশিঃ যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে,,, এখন আল্লাহর কাছে দোয়া কর যাতে সায়রা ঠিক টাইমে চলে আসে,, তা না হলে ওর ভাগ্যে শুক্র শনি রবি সোম সব এসে ঝেঁকে বসবে,,

এই বলে নিশি মাথায় হাত দিয়ে বসে,,

🍂🍂 এইদিকে 🍂🍂

সায়রাঃ ফুলের দাম এত কেন,, এই ফুল কি চাঁদ থেকে আনসেন নি,,

দোকানদারঃ কি কোন আফা,, চাঁইদ থেইক্কা আনতে যাইবো কেলা,, এইডা সেপেশিয়াল ফুল,, সহজে পাওয়া যায় না,, তাই একটু দাম আর কি বেশি।।

সায়রাঃ আমাকে আপনার বোকা মনে হয়,, যে যা বলবেন তাই বিশ্বাস করবো,, হুহ,,, পিছনের গলিতেই এই ফুল ৮০ টাকা করে দিচ্ছে,,

দোকানদারঃ ওইটি ভালা ফুল না গো আপা,, পঁচা ফুল,, তাই কমে বিক্রি করছে,, দেহেন আমার ফুলডি কোন তাজা আর সুন্দর,,

সায়রাঃ হুম বলসে আপনারে,, এই দেখে আপনার ফুল কেমন শুকিয়ে গেছে,, আর আপনি বলছেন তাজা,,

দোকানদারঃ আচ্ছা বুঝছি,, আপনি এই দামে ফুল লইতেন না,, তা কত দামে লইবেন শুনি,,

এই শুনে সায়রার মুখে হাসি ফুটে উঠে,,
সায়রাঃ এইতো এখন লাইনে আসছেন,, তা আমি কিন্তু একটা ফুলের দাম ৬০ টাকা দিব,,

দোকানদারঃ এইডি কি কোন আফা,, এত কম দামে মুই ফুল বেঁচতাম না,,

সায়রাঃ না বেঁচলে আমার কি,, আমি গেলাম,, থাকেন আপনার স্পেশাল ফুল নিয়ে,,,

দোকানদারঃ আইচ্ছা খাড়ান খাড়ান,, ৮০ টাহায় দিতে পারুম লইবেন,,

সায়রা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর মোবাইলে টুং করে শব্দ করে উঠে,, ফোন হাতে নিয়ে দেখে নিশি ম্যামের মেসেজ,,
” সায়রা কাম ফাস্ট,, যেকোন মূহুর্তে স্যার এসে পড়বে,,, জলদি,,”
এই মেসেজ দেখে সায়রা এইবার তারাতারি করা শুরু করে,, সে দোকানদারকে বলে,,

সায়রাঃ আচ্ছা দেন,, এই ফুল ২০ টা দিবেন,, আর ওইযে হোয়াইট রোজ দেখতাসেন ওইটি ১০ টা দিবেন,, আর এই রজনীগন্ধার স্টীক ১০ টা দিবেন,, এইসব ফুল মিলিয়ে একটা বুকে করে দেন,, তারাতারি,,

দোকানদারঃ জ্বী আইচ্ছা আপা,,

দোকানদার ফুলের তোড়াটা তৈরি করে সায়রাকে দেয়,, সায়রা জলদি ওইটা নিয়ে টাকা চুকিয়ে স্কুটিতে বসে রওনা দেয় অফিসের উদ্দেশ্যে,,

[[ এখন আসি পরিচয়ে,, এতক্ষণ যে এত পকোর পকোর করছিল সে বরং আর কেউ নয় আমাদের গল্পের নাইকা সায়রা ইসলাম,,, বাবার মায়ের এক মাত্র মেয়ে,, দেখতে একদম আহা মড়ি সুন্দরী তা না,, মোটামুটি সুন্দরী আরকি,,
সায়রা স্বভাবে একটু দুষ্টু,, সব সময় দুষ্টুমিতে মেতে থাকে,,
ফ্যাশন ডিজাইনিং এর উপর পড়ালেখা করছে,, ওর ডিজাইন গুলো ইউনিক আর এক্সক্লুসিভ বলে খান ফ্যাশনহাউস থেকে জবের অফার আসে,, খান ফ্যাশনহাউস ঢাকার শহরের নাম করা একটা ফ্যাশন হাউস,, বড় বড় সেলেব্রিটিরা তাদের কোস্টিউম এইখান থেকেই বানিয়ে নেয়,, সায়রা এত বড় সুযোগ পেয়ে তা হাত ছাড়া করতে চাই নি বলে রাজী হয়ে যায়,, সে এইখানে প্রায় ৬ মাস ধরে কাজ করছে,, আজ ওর অফিসে এই ফাস্ট বসের সাথে দেখা হবে,, সে নাকি ১ ইয়ার আগে একটা কোর্সের জন্য বিদেশে চলে গিয়েছিল,, পরশু দেশে ফিরেছেন,, আর আজ থেকে আবার জয়েন করছে,, তার জন্যই সায়রা এই ফুল গুলো কিনতে এসেছিল,, ]]

সায়রা ৫ মিনিটের মধ্যে অফিসে পৌঁছে যায়,, সকলেই এইদিক সেদিক দৌড়া দৌড়ি করছে,, সায়রা ভিতরে ঢুকে ফুলটা নিশি ম্যামকে দিয়ে আসে,, নিশি সায়রাকে দেখে এক স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে,, সে দ্রুত ফুল গুলো নিয়ে চলে যায়,, সায়রা চলে যায় কফি খেতে,, ওর প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে,, কফি খেলে হয়তো ভালো লাগবে,, তাই সে অফিসের কফি মেশিনের কাছে যায় কফি খেতে,, কিন্তু ভাগ্য খারাপ কফি মেশিন নষ্ট,,

সায়রাঃ উফফফ এই খাটারা মেশিন এইখানে রাখসে কেন,, মু দেখাই এর জন্য,, হুহ,, মনটা চায় এইটারে ধইরা উগান্ডা পাঠাইয়া দেই,,, এখন এত কষ্ট কইরা তিন তালা নাইময়া যাইতে হইবো হুহ ভালো লাগে না,, জীবনটাই নীম পাতার রস,,

এইসব বলতে বলতে সায়রা নিচে চলে যায় কফি খেতে,, কফি কিনে সেখানে দাড়িয়ে খেতে থাকে,, প্রায় অর্ধেক কফি শেষ করার পর ওর ফোন আবার টুং করে বেজে উঠে,, সায়রা দেখে নিশি ম্যামের এসএমএস,,

” সায়রা হোয়ার আর ইউ,, তোমাকে কখন থেকে খুঁজছি,, মি. হারুনের ফাইলটা এখন আমার আর্জেন্ট লাগবে,, তাই জলদি ওইটা নিয়ে আমার কাছে হাজির হও”

এই মেসেজ দেখে সায়রার মুখে এক বিরক্তিকর ভাব চলে আসে,, সে মনে মনে বলতে থাকে,,

সায়রাঃ ইঁদুরের নানি,, আরশোলার নাতির ঘরের তৃতীয় পোলার বউ,, টিকটিকির শ্বাশুরি,, বিলাই এর বউ,, কালা হাতির মাইয়া,, সারাদিন খালি আমায় কাজের বেটি রহিমার মতো খাটায়,, একটু শান্তিতে থাকতে দেয় না,, কে জানে বিয়ার পর আমার শ্বশুরবাড়ি না আইসা কয়,,
” সায়রা আমাকে তোমার জামাইয়ের Bio data এর ফাইলটা দাও তহ,, আর্জেন্ট,,”
এই অফিসে আশার পর থেকে এই মাইয়া আমার জীবনটা নীম পাতা করে রাখসে,, উফফ ভালো লাগে না,,

এই বলে কফিটা নিতে বড় বড় পা ফেলে অফিসের দিকে যেতে থাকে,, যেই না অফিসে পা রাখতে যাবে তখন দেখা হয় হিমেলের সাথে,, হিমেল ওর কলিগ,, অনেক দিন ধরেই ওকে জ্বালাচ্ছে,, সায়রা প্রতিবারই ওকে এভোয়েট করে,, আজও তাই করলো সায়রা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে পিছন থেকে হিমেল ওর হাত ধরে টান দেয়,, এমনে তেই সায়রার মেজাজ গরম হয়ে আছে তারউপর হিমেল ওর হাত ধরায় রেগে যায়,,

সায়রাঃ এইটা কোন ধরনের অসভ্যতা,,হাত ছাড়তে বলসি,,

হিমেলঃ সায়রা লিসেন টু মি,,

সায়রাঃ হাত ছাড় বলতাসি,,

হিমেলঃ না আগে তুমি আমার কথাটা শুনো,,

সায়রাঃ লাস্ট টাইম বলছি হাত ছাড়বা কি না,,

হিমেলঃ নো,

ব্যাস সায়রার মেজাজ এইবার একদম বিকরে গেল,, সে নিজের হাতের কফিটা হিমেলের উপর ছুড়ে মারে কিন্তু তার আগেই হিমেল স্বরে যায়,, আর কফিটা দিয়ে পড়ে আরেকজনের মাথার উপর,,, কিন্তু সায়রার সেইদিকে খেয়ালই নেই,,
হিমেল কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়রা ওর পায়ের ল্যাং মেরে ওকে ফালিয়ে দেয়,, আর বলে,,

সায়রাঃ নেক্সট টাইম ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু টাচ মি,, আমার সামনেও যাতে তোমায় না দেখি,, তা না হলে পরের বার তোমার হাল এমন বেহাল করবো তা তুমি ভাবতেও পারবে না,, যতসব আজাইরা পোলাপাইন,, মেজাজটাই খারাপ করে দিল,,

এই বলে কটমট করতে করতে চলে যায়,, হিমেলও রাগে ফুসতে ফুসতে চলে যায়,, কিন্তু অন্যদিকে যে একজন অগ্নি দৃষ্টিতে সায়রার দিকে তাকিয়ে ছিল তা কাউরো চোখেই পড়ে নি,, সেই ব্যক্তিটি রাগে গজগজ করতে পিছে ঘুরে গাড়িতে বসে গাড়িটি ইউ ট্রান মেরে ফুল স্প্রীডে বাতাসের বেগে চালিয়ে চলে যায়,,,


#চলবে