ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 03

পা টিপে টিপে হৃদ ভাইয়ার রুমের সামনে এসে উঁকি দিচ্ছি।না রুমের ভেতর কোথাও তো নেই।হয়তো ওয়াশরুমে গেছে।এটাই সুযোগ।কিছু একটা করতে হবে।হাতের সামনে এক জগ পানি দেখতে পারছি।পুরো বিছানায় পানি ঢেলে দিলাম।সোফাটা কেন বাদ রাখবো? সেখানেও ঢেলে দিলাম পানি।এখন আমি শান্তির ঘুম ঘুমাবো।কাল সকালে তুমি ঘুম থেকে উঠার আগেই আমি চলে যাবো হোস্টেল।তো মি.অসভ্য ঘুমিও তুমি ফ্লোরে। আচ্ছা ফ্লোরে একটু অন্যরকম ব্যবস্থা করলে কি হয়?

আইডিয়া! তেলের বোতলটা এনে সবটুকু তেল ঢেলে দিলাম ফ্লোরে। বিছানার এপাশ ওপাশ দুপাশেই ভালোভাবে ঢাললাম কোথায় ঘুমাবে তাতো আমি জানি না।পা রাখলেই যেন সিলিপ খেয়ে পরে।প্লান শেষে রুম থেকে বেড়িয়ে যাবার জন্য পা বাড়াতেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম।এখন কি করবো আমি।যদি দেখে ফেলে? তাড়াহুড়ো করে ঢুকে পরলাম খাটের নিচে।চোখদুটো শক্ত করে বন্ধ করে রেখেছি।আর বিরবির করে বলছি আমায় যেন না দেখে।কিছুক্ষণ পর হৃদ ভাইয়ার চিৎকার শুনে চোখ খুললাম আমি। মাথাটা ঘুরিয়ে দেখি ফ্লোরে বসে কোমড়ে হাত দিয়ে কাতরাচ্ছে আর বলছে, হাড় ভেঙে গেলো গো। হাড্ডি গুড্ডি আর আস্ত থাকলো না।কেউ আছো আমায় একটু টেনে তুলো।আমার কোমড় ভেঙে গিয়েছে। মাথাটা একটু খাটের নিচ থেকে বেড়িয়ে দেখলাম উঠে দাড়াবার চেস্টা করছে কিন্তু পারছে না।বার বার সিলিপ খেয়ে পরছে।আমি বিছানার ওপাশ থেকে আস্তে করে বেড়িয়ে চুপিচুপি রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার চেস্টা করছি।হঠাৎ আমার ওরনায় পরলো এক টান।ভয়ে ভয়ে পেছনে ঘুরে দেখি খাটের পায়ার সাথে ওরনাটা বেঁধে আছে।হৃদ ভাইয়া হাত উঁচু করে ডাকছে আর বলছে,

-ফুল তুই এসেছিস? আমায় ছেড়ে যাস না ফুল।দেখ আমার অবস্থা একটুও ভালো না।
আমি কাপাঁকাপাঁ কন্ঠে বললাম,
-ত..তো কি হয়েছে? আপনি তো ডাক্তার। নিজের চিকিৎসা নিজে করুন আর সুস্থ হয়ে উঠুন।
হৃদ ভাইয়া নেকা নেকা কন্ঠে বলল,
-এভাবে বলিস না ফুল।নিজের চিকিৎসা কখনো করা যায়? তুইও তো ডাক্তার হবি কিছুদিন পর। এখন যদি অসুস্থ মানুষকে অবহেলা করিস তাহলে তাহলে…
-থাক আর কিছু বলা লাগবে না আমি বরং আপুকে পাঠায়।আপু এসে আপনার চেকাব করুক।
-না ফুল না।
-না ফুল না মানে? দেখুন আমি এখনো স্টুডেট।ডাক্তারি লাইসেন্স পাই নি।যদি আপনাকে সামান্য টোকাও দিই আপু আমায় মেরে ভর্তা বানাবে।আপু খুব ভালো ডাক্তার। আপনার চিকিৎসা খুব ভালো ভাবে করবে দেইখেন।
কথাটা বলে আমি ছুট লাগাবো এমন সময় তেলে সিলিপ লেগে পা উল্টে পরলাম আমি।ভয়ে চোখদুটো বন্ধ করে নিলাম।ব্যাথায় চিৎকার দিতে যাবো মুখটা বন্ধ হয়ে গেলো।একি নিচে পরেও আমি ব্যাথা পাচ্ছি না কেন? চোখটা খুললেই হৃদ ভাইয়ার মুখটা দেখতে পেলাম। খেয়াল করলাম আমি তার কোলে।চোখদুটো বড় বড় করে তাকিয়ে বললাম,

-আপনি দাড়াতে পারছেন? নাটক করছিলেন এতোক্ষণ?
অমনি আমাকে কোল থেকে নামিয়ে নিচে বসে পরলো।আমার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিয়ে বলল,
-কোমড়ে ব্যাথা উঠতে পারছি না।
-ওরে নাটক।আমাকে বোকা পেয়েছেন? ছাড়ুন আমি যাবো।
-না আমার কোমড় ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তুই এখান থেকে কোথাও যাবি না।
মহা মুশকিল তো।কেন যে আসতে গেলাম এই রুমে।বিরক্তি ভাব নিয়ে চোখ ঘুরিয়ে বললাম,
-আচ্ছা কি করতে হবে বলুন?
-আমাকে উঠিয়ে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিবি।তারপর আমার কোমড়টা ম্যাসার্চ করে দিবি।যতোক্ষণ না আমার ঘুম আসে।
-আমি পারবো না।
-ঠিক আছে সবাইকে ডেকে দেখাই তুই আমার রুমে এসে কি করেছিস।
-নাহ!
-হ্যাঁ।

-আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু আপনার বিছানাটা তো পুরো ভেজা।
-তাতে কি হয়েছে?
বলেই আমার হাত ধরে উঠে দাড়ালো। কাঁধে ভর
দিয়ে ভেজা চুপচুপে বিছানায় নিয়ে ফেললো আমায়। আর টলমল চোখে তাকিয়ে বলল,
-বিয়ে করলে আমি তোকেই করবো ফুল।তুই জানিস না তোকে আমার কতোটা ভালো লাগে।
ধীরে ধীরে আমার দিকে আগাতে লাগলো হৃদ।আমি উঠতে যাবো আমার হাতটা টেনে ধরলো।অমনি আমার মাথার মধ্যে চক্কর দিয়ে উঠলো।একি আমার মাথার মধ্যে এমন ভাবে ঘুরছে কেন? সব কিছু অন্ধকার নেমে আসছে চারিদিকে।আমি তো চকলেট ছাড়া কিছু খাইনি রাতে।
চলবে,,,,