ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 02

হায় আল্লাহ! আপু কেমনে আসলো? মারতে চাইলাম তো হৃদ ভাইয়ার মুখে। একটা কাজও ঠিকভাবে করতে পারি না আমি।আপু এবার সেই মাপের রেগে আছে।চোখদুটো বড় করে আঙুল উঁচিয়ে কিছু বলতে যাবে আমায় পাশ ফিরে হৃদ ভাইয়াকে দেখে থেমে গেলো। দাঁত কেলিয়ে আমাকে টেনে ধরে মাথা দুলিয়ে আদুরে গলায় বললো,
-সোনা বনুটা আমার। কত্ত মজা করে।দেখও না হৃদ আমাকে পুরো ভিজিয়েই দিয়েছে।তুমি ওকে নিয়ে পার্টিতে যাও আমি চেঞ্জ করে আসছি।
কথাটা বলেই আপু ভো দৌড়। আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম আপুর যাওয়ার পানে।কই থেকে যে মানুষটা উদয় হয়ে সামনে এসে দাড়ালো বুঝতেই পারলাম না।আচমকা আমাকে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে গলায় নাক ডুবিয়ে দিলো।আমি বুঝে উঠার আগেই হাতদুটো শক্ত করে চেপে ধরে রাখলো। ছাড়াতেই পারছি না নিজেকে।একবার ভাবলাম লাথি দেবো।চোখদুটো বন্ধ করে সেই প্রস্তুতি নিয়ে যেই লাথি দিতে গেলাম অমনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে পাশে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে মিশে দাড়ালো।উল্টো দিকে মুখটা ঘুরিয়ে জোড়ে নিশ্বাস ফেলে বলল,

-কি পার্ফিউম ইউস করিস রে তুই? একই তো তোকে দেখলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না। তার উপর..
এটুকু বলেই মুখটা আমার দিকে ঘুরিয়ে নিলো। নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।দেখেই আমার কেমন যেন ভয় লাগছে। না এবার আর কিচ্ছু করতে দেয়া যাবে না।কিন্তু কি করি? পা দাপাচ্ছি আর ভাবছি কি করবো আমি? হ্যাঁ মুখটা চেপে ধরি।সেটাই ভালো হবে।সাহশ নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াতেই কোমড়টা চেপে ধরলো।আর হয়েছে!আমার হাত পা থর থর করে কাঁপছে। বুকের ভেতরটা ধুপ ধুপ করছে।হৃদ ভাইয়া আস্তে করে তার হাত দুটো আমার কোমড় থেকে উপরের দিকে তুলছে।আর আমি চোখটা বন্ধ করে বিরবির করে কিছু একটা ভেবে চলেছি।অতোসতো না বুঝে মেরে দিলাম এক লাথি।ছেড়ে দিয়েছে বুঝতে পেরে এক চোখ খুলে হাবভাব দেখে ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকে দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিলাম।আর বললাম,
-কি? কেমন লাগে?
ওপাশ থেকে দরজা টাকাতে লাগলো।খুব জোরে টাকানোর শব্দ পেয়ে আমি আমার পার্ফিউমের মুখ খুলে ওর ভেতর আইলি’না ভরে সুন্দর করে ঝাকিয়ে নিলাম।মনে মনে ঠিক করলাম অনেক মজা নিয়েছে আমার থেকে।এবার আমার পালা।একটা ভাব নিয়ে দরজার সামনে এসে দরজাটা খুলেই স্প্রে করে দিলাম।আর লাফাতে শুরু করলাম।এত্ত খুশি লাগছে যে কি বলবো! হঠাৎ মনে হলো আমার ডান কানটা ঝিলিক দিয়ে উঠলো।সব কথায় অস্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।সামনে তাকিয়ে মায়ের মুখটা দেখে আমি যেন ৪২০ বোল্টেজের সর্ট খেলাম।লাফিয়ে পেছনে দুই পা সরে এসে মায়ের কালি মাখা মুখটা দেখে ভয়ে আমার হিচকি উঠে গেলো।আমাকে টেনে ধরে মা দিলো কষিয়ে এক চড়!

-বিয়াদ্দপ মেয়ে দিলি তো আমার সাজটা নস্ট করে! তিন ঘন্টা ধরে পার্লারে বসে সেজেছি পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে। আর তুই মুহূর্তে সব নস্ট করে দিলি?
-কি? পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে এসব আটা ময়দা মেখেছো? সর্বনাশ মাম্মা। আমিতো বিষ টাকার সুজিও মাখি নি তাও দেখও কত্তো সুন্দর লাগছে আমায়?
বলেই হেসে দিলাম।মাম্মাম আমার কান টেনে ধরে বলল,
-বড্ড সয়তানি করছিস তুই। কপাল চাপড়ে মুখটা ট্যিসু দিয়ে মুছতে মুছতে বলল, ধূর যেটা বলতে এসেছিলাম।
আমাকে রুমে এনে বিছানার উপরে বসালো মাম্মাম।তারপর আলমারি খুলে একটা বাক্স বের করে আমার সামনে রেখে থুতনিটা ধরে উঁচু করে বলল,
-হৃদকে তোর কেমন লাগে রে?

হৃদ ভাইয়ের নামটা শুনেই আমার মাথায় রক্ত টগবগ করছে।এসেছে ধরেই কি কি না করছে আমার সাথে।ছিঃ কত্ত ফাজিল।এমনটা কেউ করে? আমি কিছু বলতে যাবো মাম্মাম দুম করে বলে উঠলো,
-ভাবছি নূরের সাথে হৃদের বিয়ে দেবো।নূরও ডাক্তার আর হৃদ ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড পাওয়া ডাক্তার।দুজনের জুটিটা ভালো জমবে বল? কিছুদিন পর তুইও যখন ডাক্তার হবি তখন তোর জন্যও হৃদের মতোন ভালো কোনো ছেলে দেখে বিয়ে দেবো।ব্যাস আমাদের দায়িত্ব শেষ।এই গহনাগুলো দেখ।তোদের দু’বোনের জন্য বানিয়েছি সব।তুই বল এর ভেতর থেকে কোনগুলো নূরকে দেবো?
মাম্মামের কথা শুনে আমার গাল বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরল।কেন পরলো জানি না।তবে খুব খুশি লাগছে আপুর জন্য।আবার রাগও হচ্ছে হৃদ ভাইয়ার উপর।আমার সাথে আজ এতোকিছু কেন করল? না এভাবে মুখ বুঝে থাকা যায় না।এবার এমন কিছু করতে হবে যেন কোনো দিন আপু ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের ধারে কাছে না ঘেঁষে।
মাম্মামকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

-আপু তো সব দিক থেকে পার্ফেক্ট।সবগুলো গহনাই আপুকে দিয়ে দাও মাম্মাম। আমি কোথায় সাজগোজ করি? বিয়েতে আমি এসব কিছু পরতে পারবো না।আমার বিয়ে হবে একদম সিম্পল। আর গহনা হবে তোমাদের সকলের দোয়া আর ভালোবাসা।
চলবে,,,,,