00

চন্দ্রাবতী !! Part- 04

মাহমুদ বললো,’কার সাথে করবো?’
‘কেন আপনার কী কোন পছন্দের মানুষ নাই?’
‘পছন্দের মানুষ থাকলেই কী প্রেম হয়ে যাবে?মানে ধরো আমি তোমায় বললাম,চন্দ্রাবতী,আমি তোমায় খুব পছন্দ করি।ভালোও বাসি।আই লাভ ইউ ভের‍্যি মাচ।তাহলে তুমি কী রিয়‍্যাকশান দেখাবে?বলবে কী?আই লাভ ইউ টু। মাহমুদ ভাই,আপনাকেও আমি ভালোবাসি?’
চন্দ্রা খানিক দমে গেল। কিন্তু মাহমুদের কথাগুলো কেন জানি খুব ভালোও লাগলো তার।সে কী জানি একটা কিছু বলতে চাইলো মাহমুদকে ঠিক তখন দেখা গেল সিঁড়ি ডিঙিয়ে ছাদের দিকে কেউ একজন এগিয়ে আসছে।চন্দ্রা চতুর হরিণীর মতো মুহূর্তে ফোনটা কেটে দিয়ে সাবধানে এটা দেহের গোপন জায়গায় রেখে দিলো। তারপর গোলাপের টবের কাছে গিয়ে একটা পাতা ছিঁড়ে এমন ভাব করলো যেন সে গোলাপ গাছটার কাছেই এসেছে!

ছাদে উঠে এলেন বৃন্দাবন দাস। বৃন্দাবন দাস অমল চ‍্যাটার্জীর সবচেয়ে কাছের বন্ধু।পেশায় অধ‍্যাপক। ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজে ইতিহাস পড়ান তিনি।তার কথাবার্তা সব ইতিহাস নির্ভর। তিনি চন্দ্রা কে ডাকেন হেলেন বলে। তিনি মনে করেন চন্দ্রা ঠিক দেবী হেলেনের মতোই সুন্দর।আর মনে মনে তিনি এটা কামনা করেন যে চন্দ্রা কে তিনি তার বড় পুত্র জয় দাসের জন্য বউ করে নিবেন। কিন্তু এই কথাটা তিনি গোপন রাখেন। অবশ্য চন্দ্রা এই লোকটাকে তেমন পছন্দ করে না। পছন্দ না করার কারণ হলো এই লোক বেশি প্রশ্ন করে।আর তার মনে হয় ইনি একজন মানসিক রোগী।
যেমন আজ এসেই বললো,’হেলেন, তুমি কেমন আছো মা?’
হেলেন বিরষ মুখে গোলাপের পাতাটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে বললো,’ভালো আছি আঙ্কেল। আপনি কেমন আছেন?’
আমি ভালো নেই। কারণ মানুষ ইতিহাস নিয়ে এখন আর পড়তে চায় না।তারা চায় সায়েন্স পড়তে।ফিকশন পড়তে।আরে গাধারা ফিকশন কী দিবে রে তোদের!’
চন্দ্রা বললো,’আঙ্কেল, আমিও ফিকশন পছন্দ করি। হুমায়ূন আহমেদের সবগুলো উপন্যাস আমার পড়া।’
‘গিয়েছে মাথা গিয়েছে। এইসব পড়েই ছেলে মেয়ে নষ্ট হচ্ছে। ইতিহাস থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।’
‘না আঙ্কেল আপনি ভুল বলেছেন। হুমায়ূন আহমেদের অনেক উপন‍্যাসেই ইতিহাস আছে।আর হুমায়ূন আহমেদ নিজেও একজন ইতিহাস।’
‘কী বললে হেলেন?’
‘ভুল বলিনি।’

‘মাথা পচেঁ একেবারে গোবর হয়ে গেছে।
কোন ক্লাসে জানি পড়ো তুমি?’
ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ার।’
‘উহ হু।এতো কাঁচা বয়সে মাথাটা খেলো হুমায়ূন তোমার।’
বলে মাথায় হাত দিয়ে ছাদ থেকে নেমে চলে যান বৃন্দাবন দাস।আর চন্দ্রা তখন বুক ভরে শ্বাস টেনে নিয়ে বলে,’হায় ভগবান, তোমার দুনিয়ায় এমন মানুষও পাঠাতে হলো!’

বৃন্দাবন দাস চলে গেলে ছাদে উঠে আসে বারিষ।বারিষকে দেখেই চন্দ্রা হাসিমুখ করে বলে,’বারিষদা, তুমি জানো পৃথিবীতে সবচেয়ে পবিত্র জিনিস কী?’
বারিষ খানিক ভেবে বলে,’ফুল।’
‘না ফুল না।’
‘ফুল না হলে আর কী?’
‘ভালোবাসা।’
বারিষের বুকের বাঁ পাশটা তখন ব‍্যাথায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।সে বুকে নিজের হাতটা চেপে ধরে চন্দ্রার দিকে তাকায়।চন্দ্রা তখন তাকিয়ে আছে দূরের রাস্তার ওপর।বারিষ তাকে দেখে।কী সুন্দর যে লাগছে আজ চন্দ্রাকে।তার খুব ইচ্ছে করে চন্দ্রাকে জাপটে ধরে চিৎকার করে বলতে,’চন্দ্র, তুই হলি পৃথিবীতে ভগবানের দেয়া সবচেয়ে পবিত্র সৃষ্টি। তুই হলি আমার বুকের বাঁ পাশের মৃদু কম্পন।চন্দ্র, তোকে আমি ভালোবাসি। তুই আমার ভালোবাসা চন্দ্র।’
কিন্তু বলতে পারে না।আর তখন কোত্থেকে এক বাউলুরি বাতাস ছুটে আসে ধা ধা করে। সেই বাতাস এতো খেচড় যে চন্দ্রার গোলাপ রঙা উড়নাটা উড়িয়ে নিয়ে যায়।বারিষ দৌড়ে যায় সেই উড়না কুড়াতে। কিন্তু পারে না।সে ছাদের এতোটা কিনারেই চলে যায় যে আরেকটু হলে পা পিছলে পড়েই যেতো!
চন্দ্রা তখন তাকায় বারিষের দিকে।বারিষ ধীরে ধীরে পা ফেলে এগিয়ে আসে চন্দ্রার কাছে।
চন্দ্রা হঠাৎ কেঁদে উঠে।তার চোখে কোল কোল করে জল বয়ে যায়।চন্দ্রা জাপটে ধরে ফেলে বারিষকে। তারপর বলে,’বারিষদা,বারিষদা, তুমি আমার জন্য এতো রিক্স নিতে পারো?’

বারিষ বলে,’মরতেও পারি।’
চন্দ্রার কান্না আরো বাড়ে।সে মনে মনে ভাবে,সে আর অনাথ নয়।তার মামাই তার পিতা, তার মামী তার মাতা।আর বারিষ তার ভাই। আপনার ভাই।
বারিষের খুব ভালো লাগে তখন।সে আলতো করে ছুঁয়ে দেয় চন্দ্রার পিঠ। তারপর মুছে দেয় তার জলজ দুটি চোখ।
বারিষের খুব ইচ্ছে করে এভাবেই সারা জনম চন্দ্রাকে বুকে ধরে রাখতে। চন্দ্রা তার বুকে এলেই বুকের ব‍্যাথাটার উপশম হয়।
তারপর হলুদ বিকেলের বুকে নেমে আসে এক ঝাঁক বক পাখি।একটি সাথী হারা কাঁঠ ঠুকরে।আর ঘাসের ডগায় ঝরঝরে শিশির।শহরে জ্বলে উঠে তারার মতো ঝলমলে আলো।

বারিষরা ধীরে ধীরে সিঁড়ি ডিঙিয়ে নেমে যায় নিচে।আজ দুজনের মন খুব ভালো। চন্দ্রার খুব ইচ্ছে হচ্ছে মাহমুদকে ফোন করে বলতে,’মাহমুদ ভাই, আপনি বারিষদার সাথে শুধু শুধু ঝগড়া বাঁধিয়ে রেখেছেন কেন? প্লিজ ঝগড়াটা মিটিয়ে নিন। আপনি কী জানেন পৃথিবীতে দশজন ভালো মানুষ থাকলে তার মধ্যে আমার বারিষ দা প্রথম হবে।
চন্দ্রা খুব সাবধানে তার মামীর ফোনটা আবার সরিয়ে আনলো। তারপর পড়ার টেবিলে বসে খুব লুকিয়ে চুরিয়ে মাহমুদের ফোনে কল দিতেই ও পাশ থেকে—-

#চলবে