গল্প- ফাঁদ !! Part- 05 ( সমাপ্ত )
গল্প- ফাঁদ
ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় ও আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না ওর গলায় এই চেইনটা এলো কি করে। এই চেইনটা তো ওই বক্সে ছিলো, আর ওই বক্সের মধ্যেই তো ও রেখে দিয়েছিল।
“না এটা কি করে সম্ভব! আমার গলায় চেইন কে পরাবে? আচ্ছা এমন নয় তো উনি পরিয়ে দিয়েছেন। না উনি কেন পরাবেন উনি তো ঘুমাচ্ছেন। আর তাছাড়া রুমে উনি ছাড়া কে আছে, আর এই বাড়িতেও তো আমরা দুজন ছাড়া কেউ নেই। না আমাকে ওনাকে সমস্তটা বলতে হবে।”
(বিঃ দ্রঃ “ নতুন গল্প- ফাঁদ !! লেখাঃ মৃণালিনী মৃণা ” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)
নিজের মনে কথাগুলো বলে আহেলী বেডের কাছে গিয়ে আদিত্যকে ডাকতে থাকে,,
“এই যে শুনছেন, শুনুন না, আপনার সাথে কথা ছিলো ”
আদিত্য চোখ খুলে তাকিয়ে বেশ রাগি স্বরেই বললো”
কি হয়েছে কি! ঘুমাতেও দিবে না নাকি, নতুন করে আবার কি নাটক শুরু করলে? যাও তো”
আহেলী কিছু না বলে ওখান থেকে সরে আসে আদিত্য পাশ ফিরে শোয়। আহেলী জারটা থেকে পানি ঢালতে গেলে দেখে জারটা খালি। জার হাতে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে কিচেন রুম থেকে পানি নিয়ে ওপরে আসতে গেলে দেখে ড্রয়িং রুমে কেউ একজন বসে আছে। আহেলী ভয় পেয়ে যায়। আবছা আলোয় বোঝা যাচ্ছে লোকটা মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের করছে, হাতে তার জলন্ত সিগারেট। আহেলীর কপালে ঘাম বেয়ে পড়ে, গলা শুকিয়ে যায়। পানির জারটা টেবিলের ওপর রেখে ধীর পায়ে সোফায় বসে থাকা লোকটার দিকে এগোয়।
“কে.. কে ওখানে.. কি হলো..? ”
লোকটি এবার হেসে ওঠে। হাসি শুনে আহেলী চমকে ওঠে। এই হাসিটা যে খুব চেনা। তাহলে কি,,? আহেলী ঝট করে ল্যম্পটা জালিয়ে দেয়। মানুষটির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চমকে ওঠে,,
” তানভীর তুমি ?”
“হুম আমি”
“কে.. ন. কেনো এসেছো”?
” হা হা হা হা আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরবে ! হয়তো বলবে কেমন আছো জান!”
“ওহহ প্লিজ তোমার কাছে হাত জোড় করছি তুমি চলে যাও এখান থেকে। ছেড়ে চলেই তো গিয়েছিলে। কেন এসেছো ফিরে?”
“আমি জানি জান আমি তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম অনেক কষ্ট পেয়েছো তুমি,, আর তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না, আমি তোমাকে নিতে এসেছি চলো আমরা আবার এক হয়ে যাই”।
তানভীর আহেলীকে কথাগুলো বলে জড়িয়ে ধরে।আহেলী ঝাড়া দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
“ডোন্ট টাচ মি, সেদিন আমাকে তুমি বিয়ের আসরে ফেলে চলে গিয়েছিলে তখন মনে হয় নি আমি কষ্ট পাবো? আর হ্যা আমার বিয়ে হয়ে গেছে আমি একজনের স্ত্রী সম্পর্কে সে তোমার ভাই হয়”
তানভীর রাগে আহেলীর চুলের মুঠি চেপে ধরে
“স্ত্রী! আদি কি তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দিয়েছে? দেয়নি। আর আমি এটাও জানি তোমাকে এতোদিনে ছুঁয়েও দেখেনি”।
আহেলী তানভীর এর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তানভীর কে দু হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিলো।
“ছিহহ কতোটা নীচ তুমি। হ্যা আমাকে স্ত্রীর অধিকার দেয়নি ঠিকি। কিন্তু উনি তোমার থেকে হাজার গুন ভালো। আরে তুমি তো ওনার পায়ের নখের যোগ্য নও।”
তানভীর এবার বেশ রেগে যায়।
“তোমাকে তো আমি আমার করেই ছাড়বো।
কে কার যোগ্য কি যোগ্য না তা আমি সময়ে দেখাবো। ”
“এই জন্মে তুমি আমাকে পাবে না। নিজেকে শেষ করে ফেলবো কিন্তু তোমার কাছে ফিরবো না। তোমার তো হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি সেদিন আমাকে বিয়ে করো নি। আমার পুরো পরিবারের মুখে চুনকালি মাখিয়েছিলে অপমানিত হয়েছিলাম তোমার জন্য এখনো আমার বাবা মা কেউ আমার সাথে কথা তো দূর আমার মুখ পর্যন্ত দেখে না।”
আহেলী চিৎকার করে কেঁদে ফ্লোরে বসে পড়ে। তানভীর আহেলীর কাছে হাটু মুড়ে বসে গাল দুটো চেপে ধরে।
“আমি যা চাই তাই পাই তোকে তো আমার করেই ছাড়বো তুই শুধু দেখতে থাক। ”
আহেলী এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়,
“আমাকে কি তোমার হাতের পুতুল মনে হয় যখন তোমার ইচ্ছে হবে তুমি নিয়ে খেলবে আবার ছুঁড়ে ফেলে দেবে। ”
“ঠিক তাই তুমি তো আমার হাতের পুতুল জান,, আমি যেমন চাইবো তাই তুমি করবে”
“মরে গেলেও না, তুমি চলে যাও এখান থেকে আমি তোমার মুখ দেখবো না। ”
“হুমম চলে যাচ্ছি, আর আমার এই মুখ তোমাকে সারা জীবন দেখতে হবে তার ব্যবস্থা করবো খুব তাড়াতাড়ি। ”
তানভীর চলে গেলে আহেলী ফ্লোরে বসে চিৎকার দিয়ে কাদেঁ। গলার চেইন টা একটানে হাত দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে।
“আবার নতুন করে কি শুরু করতে চলেছে ও? ও কি আমাকে বাঁচতে দেবে না শান্তিতে? কি চাইছে ও? ”
নিজের সাথে কথা গুলো বলে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো রুমে। ব্যালকেনীর রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। আদিত্য কখন ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে ও বুঝতেই পারলো না। সামান্য একটু কাশি দিয়ে বললো,
“কোথায় যাওয়া হয়েছিলো? ”
আহেলী চমকে উঠে পেছন তাকালো,
“কোথাও না তো পানি আনতে নীচে গিয়েছিলাম তো।”
“পানি নিয়ে এসেছো তো, তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেন?যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ফ্লোরে না বিছানায় গিয়ে শোও। ”
আহেলী আর কিছু না বলে শুয়ে পড়ে। মনে মনে ভাবতে থাকে
“যেই মানুষটা বিয়ের এতোদিনে বেডে শুতে দেয়নি তাহলে আজ কেন? তাহলে কি উনি সব শুনে ফেলেছেন! উনি কি জানতে পারলেন তানভীর এসেছিলো!”
আদিত্য কিছুক্ষণ পর এসে আহেলীর পাশে শুয়ে পড়ে। সকালে ঘুম ভাঙলে আহেলী দেখে আদিত্য তাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। আহেলী লজ্জা পেয়ে যায়। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। কেনো জানি আজকে আহেলীর মনটা বেশ ফুরফুরে। আজ আদিত্য আহেলী এক সাথে বসে সকালের নাস্তা করে। অফিস যাওয়ার সময় আদিত্য আহেলীকে সাবধানে থাকার কথা বলে কপালে চুমু দিয়ে চলে যায়। আহেলী কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়ে যায় একভাবে হয়তো আদিত্য তাকে এবার স্ত্রীর মর্যাদা দেবে সব কিছু আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে।
আদিত্য আর তানভীর দুজনে মুখোমুখি বসে আছে। তানভীর সিগারেটে একের পর এক টান দিয়ে যাচ্ছে আর আদিত্য রাগি দৃষ্টিতে একভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
“তানভীর নিজেকে সামলে নে যেটা করছিস ভুল করছিস। আমি জানি তুই কাল রাতে আমার বাড়ি গিয়েছিলি। তোর আর আহেলীর সব কথা আমি শুনেছি। তুই যদি সত্যি ও কে ভালোবাসিস থাহলে ও কে ওইদিন বিয়ে না করে চলে গিয়েছিলি বল? আর এখন যখন আমি ও কে বিয়ে করেছি তুই আবার ওকে কেনো নিতে চাইছিস। আমি খুব ভালো মতোই জানি ও তোকে আর ভালোবাসে না। তাই তুই ওর পিছু ছেড়ে দে।”
তানভীর সিগারেটের শেষ টুকরো টা নিজের পায়ের নীচে ফেলে জুতো দিয়ে ঘষে উঠে দাঁড়ায়।
“ভাই তুই কি ভেবেছিলি আমি ও কে সত্যি ভালো বেসেছিলাম! হা হা হা না রে আমি ওকে ভালোবাসিনি ফাঁদ পেতেছিলাম। ”
“ফাঁদ,, কিসের ফাঁদ? এই তুই পরিস্কার করে বলতো কি মতলব ছিলো তোর?”
“শোন ভাই আহীর বাবা খান সাহেব ওনার একটা ফার্ম হাউস ছিলো যেটার দাম 2 কোটি টাকা, আমি ওইটা হাতানোর জন্যই আহেলীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। বিয়ের দিন যখন আহীর বাবাকে বলেছিলাম ওই ফার্ম হাউসটা আমার নামে করে দিতে উনি বললেন সম্ভব না কারণ ওটা অলরেডি একটা এনজিও কে দান করেছেন শ্রমজীবী মানুষরা যাতে খেটে খেতে পারে। তাই আমি ও আর আহীকে বিয়েটা করলাম না আমার কাজটাই যখন হলো না,, ”
আদিত্য এবার সজোরে থাপ্পড় মারলো তানভীর এর গালে।
“আরে তোকে তো আমার ভাই বলতেই ঘৃণা হচ্ছে। তুই লোভের জন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছিলি। আরে এই তোর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার বাবা মা তোর কোন অভাব রেখেছিলো বল? তোকে আর আমাকে সবসময় এক করে দেখেছে। তোর ওই দু কোটির ফার্ম হাউস টা দরকার ছিলো আমাকে বলতে পারতিস আমি তোকে দু কোটি টাকা দিয়ে দিতাম আর তুই ছিহহ”।
“ভাই আমি ভুল করেছি ক্ষমা করো আমাকে। ”
“ক্ষমা আমার কাছে না আহেলীর কাছে চাওয়া দরকার তোর। আর একটা কথা আমাকে বলতো তুই ওই ড্যানি মাফিয়াকে দিয়ে আহেলীর খুন করাতে কেনো চেয়েছিলি? ”
“ভাই আমি ভুল করেছি ওই দাদীর কথা শুনে। দাদী বলেছিলো আমাকে আহেলীকে মেরে ফেলতে। কিন্তু অভিনয় করে হলেও আমি আহেলীকে ভালোবেসে ছিলাম আমি আহেলীর কিছু হয়ে গেলে নিজেকে কখনোই মাফ করতে পারতাম না। আমি চেয়েছিলাম আহেলীকে নিয়ে সবার চোখের আড়ালে অনেক দূরে চলে যাবো কিন্তু আমি গিয়ে দেখলাম আহেলী আমাকে ভালোবাসে না, ও তোকেই স্বামী হিসাবে মেনে নিয়েছে”।
” হুম আমি মেয়েটার প্রতি কম অত্যাচার করি নি, তবুও মুখ বুজে আমার কাছে পড়েছিলো। ”
“আমার মনে হয় আহেলী তোকে ভালোবাসে তা না হলে ও আমাকে বলতে পারে আমি না কি তোর পায়ের যোগ্য না। ”
“হুমম হা হা হা, কিন্তু দাদী কেনো আহেলীকে মেরে ফেলাতে চাইলো?”
“জানি না, তবে দাদীকে জিজ্ঞাসা করলেই পাওয়া যাবে, চল দাদীর কাছে”।
আদিত্য আর তানভীর দুজনে চৌধুরী ভিলায় এসেছে। আর সাথে করে আহেলীর বাবা মা কেও নিয়ে এসেছে। ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে এবং দাদীর দিকে চেয়ে আছে। দাদী চোখে পানি এনে বলেন,
“হ্যা, হ্যা আমি বলেছিলাম, আমি চেয়েছিলাম ওই মেয়েটাকে শেষ করে ফেলতে”
আহেলীর মা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে। আদিত্য চিৎকার করে বলে,
“কেনো দাদী কেনো? তুমি এমন একটা নোংরা খেলায় কেনো মাতলে বলতে পারো? আহেলী তোমার কি ক্ষতি করেছিল বলো? ”
” ও আমার কোন ক্ষতি করেনি? ওর মা করেছে? ” দাদীর এই কথা শুনে সবাই চমকে ওঠে, এবং আহেলীর মা এর দিকে তাকিয়ে থাকে। আহেলীর মা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমার জন্য! কি বলছেন আপনি? ”
দাদী এবার আহেলীর মা এর মুখোমুখি দাঁড়ায়,
“মনে পড়ে আজ থেকে 15 বছর আগের কথা? আমার আর এক ছেলে ছিলো। তোমার সাথে আমার ওই ছেলের সম্পর্ক ছিল। আর ওই মেয়েই আমার ছেলের ফসল, আমার নাতনি।”
এই কথায় সবার সারা শরীরে শিহরণ বয়ে যায়। এটা কি বলছেন দাদী। আদিত্যর বাবা বলেন, “মা আমার বড় ভাই এর এই,,, ”
“হ্যা তোমার ভাই এর সন্তান।”
আদিত্যর মা ধীর গলায় বললেন
” মা আহেলী যদি আপনার নাতনি হয় তাহলে ওর প্রতি এতো অবিচার কেন করছেন, কেনোই বা ওকে মারতে চাইলেন?”
আহেলীর বাবা এবার মুখ খুললেন,
” আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। আমি জানতাম ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে, কিন্তু আমিও ভালোবেসে ফেলে ছিলাম।কিন্তু প্রিয় বন্ধুটির মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারি নি আমি তোর ভালোবাসার মানুষটিকে ভালোবাসি। আজ আমি এতো বড়ো বাড়ি ব্যবসা সব করতে পেরেছি ওর জন্য। ট্রাকের নীচে চাপা পড়ে মারা যায়। ও আমাকে জানায় ওর বাচ্ছা ও বউকে আমার দায়িত্বে রাখি। আমি বিয়ে করে নি। আমি কথা দিলাম বিয়েও করলাম।”
আদিত্যর ফুফু সব শুনে বললো ,
” এইগুলো কি হচ্ছে মা আমি তো কিছুই বুঝছি না, আহেলী আমার বড়ো ভাইয়ার সন্তান! ”
দাদী চোখের পানি মুছে বললো
“হ্যা চেয়েছিলাম, ভিক্ষা চেয়েছিলাম আমার বংশের প্রথম সন্তান কে আমায় দিতে কিন্তু আমাকে তা দেওয়া হয়নি অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো। আমি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম আমি চেয়েছিলাম আমার প্রথম সন্তান হারিয়ে যে কষ্ট পেয়েছিলাম সেটা আমি ওদেরকে বোঝাতে চাই। ”
আদিত্যর দাদী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, তানভীর আদিত্যর পিঠে হাত রেখে বলে ,
“ভাই আহেলীর সাথে আমার সম্পর্ক আর তোর সাথে বিয়ে এটা পুরোটাই একটা ফাঁদ। দাদীর কথায় আমি আহেলীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলাম। তোকে মিথ্যা বলেছি ওই সব ফার্ম হাউস আরে কিছু না। ও কে বিয়ে করবো বলে আর বিয়ে করলাম না, ভেবেছিলাম ও হয়তো এই শোকে সুইসাইড করবে, তাহলে দাদীর কাজ আরো সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু মামী এখানে এসে পুরো চালটাই ঘুরিয়ে দিলো, তোর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি এইসব কারণ জানতাম না আমি শুধু দাদীর সাথ দিয়েছিলাম। ”
আদিত্যর ফুফু এবার তানভীরের গালে কষিয়ে থাপ্পড় মারে,
“ছিহ্ আরে তোকে তো আমার ছেলে বলতে ঘেন্না হচ্ছে, আর মা তুমি তুমি আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুমি এরকম একটা নোংরা খেলা খেলছিলে। তুমিই আমাদের মনটা বিষিয়ে রেখেছিলে। আহেলী আমার বড়ো ভাইয়ার সন্তান আর তাকে কি না আমি কতো খারাপ ভাবতাম।আর তানভীর সেটাতো তোর জন্য তুই কষ্টে আছিস আমাকে বোঝাতিস তাই আমি এতো খারাপ ব্যবহার করেছি। ”
আদিত্য নিজের হাত গুলো মেলে ধরে,
“দাদী আমি তোমার জন্য ওই নিরপরাধ মেয়েটার গায়ে হাত তুলতাম। আর তানভীর তুই আমাকে বলতিস আহেলীকে তোর হাতে তুলে দিতে। কেনো রে তোর ওকে ফেলতে সুবিধা হতো বুঝি? ”
আদিত্যর বাবা উঠে দাঁড়িয়ে বলে
” মা তুমি যা কাজ করেছো তোমাকে তার শাস্তি পেতে হবে। আদি পুলিশকে ফোন কর আমার বৌমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে এই মহিলাকে ধরে নিয়ে যেতে বল। ”
আদিত্যর মা আদিত্যর বাবার হাত ধরে নিয়ে বলে,
” কি বলছো তুমি এসব, উনি তো আমাদের মা” আদিত্যর দাদী বলেন,
“না বৌ তুই আটকাস না আমাকে আমার পাপের শাস্তি আমাকে পেতে হবে, পারলে আমাকে তোরা সবাই ক্ষমা করিস। ”
আদিত্যর দাদী বেরিয়ে চলে গেলে আদিত্যর ফুফু বলে,
” শুধু মা কে নো, তার সাথে আমার ছেলেও তো সমান ভাবে দোষী, শাস্তি ও কেও পেতে হবে। ”
পুলিশ এসে তানভীর আর দাদীকে থানায় নিয়ে চলে যায়। আদিত্য চলে আসতে গেলে আদিত্যর ফুফু হাত ধরে আটকে নেয়।করুণ স্বরে বলে,
“আমি না বুঝে মেয়েটার প্রতি অনেক অন্যায় করে ফেলেছি। তুই আমাকে নিয়ে যাবি রে আমি তার কাছে মাফ চাইবো। ”
আদিত্যর মা ফুফুর হাত ধরে নেয়,
“আগে ওদের সম্পর্ক টা ঠিক করে নিতে দাও।”
আজকে বাড়িতে পৌঁচ্ছাতে যেনো অনেক সময় লাগছে, রাস্তা তো ফুরাচ্ছে না আর। আজকে আর বেল বাজালো না, এক্সট্রা একটা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে এলো।
“আহেলী,, আহেলী..”
এইভাবে হঠাৎ আওয়াজে আহেলী ভয় পেলো। হঠাৎ আদিত্য এসে ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। আহেলী বুঝতে পারছে না এসব কি হচ্ছে আর আদিত্য কাঁদছে কেনো!
“তোমাকে আমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না আর। বলো তুমি আমাকে তোমাকে ভালোবাসার অধিকার দেবে? বলো না একটু ভালোবাসতে দেবে আমায়?”
এইরকম কথা শুনে আহেলী ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাহলে কি ওর সুখের দিন এসে গেছে। আদিত্য আহেলীর সারা গালে কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে। আহেলী আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বলে” আমি আপনাকে ভালোবাসি…। ”
— : সমাপ্ত : —
(জানি না কতোটুকু ফোটাতে পারলাম। আপনাদের মনের মতো হলো কি না। তবু আমাকে এতোটা সাপোর্ট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।)