00

কেনা বউ !! Part- 02

পিটপিট করে চোখ খুলল শ্রেয়া।চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার।শ্রেয়া ভাবচ্ছে,,
—-আমি কি মারা গেছি? এখন কি আমি কবরে?হয়ত কবরে তাই এত অন্ধকার।কিছুক্ষণ পর হয়ত মুনকার নাকির এখনি আসবে তিনটি প্রশ্ন নিয়ে।আচ্ছা আমিতো আত্মহত্যা করেছি।আত্মহত্যা মহাপাপ। তাহলে আল্লাহ কি আমাকে জান্নাত দিবেন না জাহান্নাম?নাকি আমার রূহ পৃথিবীতে ফেলে আসবে?
তখনি হুঠ করে লাইট জ্বলে উঠে। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয় শ্রেয়া। আলো সরাসরি তার চোখে পরছে।ধীরে ধীরে চোখ মেলে নিজেকে একটি খাটে শুয়ে থাকতে দেখে।ঘার ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই গলায় টান লাগে।টান লাগাতে “আহ” করে ছোট একটি আর্তনাদ বের হয়ে আসে।গলায় হাত দিয়ে বুঝতে পারে সে ব্যান্ডেজ করা। গলা ধরে উঠে বসে ডান পাশে চোখে পরতেই দেখতে পায় শ্রেয়া কালকে সেই ছেলেটি যে তাকে তার স্বামী হিসেবে দাবি করে ছিল।ছেলেটির চোখে চোখ পরতেই।ছেলেটি কেমন ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না সে রাগ করে আছে না স্বাভাবিক ।শ্রেয়া এক শুকনো ঢোক গিললো।তারপর অন্য দিকে তাকালো। তখনি আরিশ উঠে এসে দাড়ায় তার কাছে। অতি গম্ভীর কন্ঠে জিগেস করে,
—-এখন কেমন লাগচ্ছে?
শ্রেয়া আড় চোখে তাকালো।কিন্তু কিছু বলল না।
আরিশ এতে অপমানিত বোধ করলো।তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—এ কেমন অভদ্রতা? কেউ কথা জিগেস করলে তার উত্তর দিতে হয় তা কি জানো না?
শ্রেয়া কাটকাট জবাব দিল,
—-আমি বাধ্য নই..!
আরিশের গা জ্বলে যাচ্ছে। এতটুকুন মেয়ে তার সাথে ঘের দেখাচ্ছে। অসুস্থ না থাকলে দু ঘা বসিয়েই দম নিত। মাথা ঠান্ডা করল আরিশ। যা করার কাল করবে সে।আজ অত্যন্ত ছাড় দেয়া যাক । আরিশ বলল,
—-ঘুমিয়ে পর সকালে দেখা হবে।
বলে গট গট করে চলে গেল সে।নিজের ঘরে এসে সজোরে আছাড় মেরে ফুলদানি ভেঙে ফেলল। রাগ লাগচ্ছে তার।
পাশের রুম থেকে কিছু ভাঙ্গার শব্দে কেঁপে উঠে শ্রেয়া আর বিড়বিড় করে বলতে লাগে,
—-পাগল নাকি?
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গে শ্রেয়ার।ধীরে ধীরে উঠে আয়নার সামনে যায় সে। ব্যান্ডেজ খুলে দেখে গলা ছিলে দাগ পরে গেছে। কিন্তু সেদিকে এখন তার মাথা ব্যথা নেই। সে জানালার পর্দা সরিয়ে উঁকি দেয় বাহিরে। ও মাই গড? এত গার্ডস। কিভাবে পালাবে সে? তার যে এখন থেকে বের হতে হবে! আরিয়ানকে খুঁজে বের করতে হবে এবং করায় গন্ডায় সব হিসেব নিকেশ নেবে সে। সামনে পেলেই নাক বরাবর ঘুশি দিবে সে…!!তারপর চুল গুলো কেঁটে কুচি কুচি করে, সেটা দিয়ে শাক রান্না করে খাওয়াবে তাকে। কত বড় সাহস তার! সে শ্রেয়াকে বেঁচে দিল!হুহ! যখন পাবে তখন ভাববে। এ ভেবে শ্রেয়া ব্যাগ থেকে বড় চাদর বের করে গায় মুরি দিয়ে বের হলো। আশেপাশে খুব লক্ষ করে ধীরে পায়ে এগিয়ে গেল সামনে। কি আশ্চর্য এ কোন বাসা? এটা তো আগের বাসা নই! হায় হায় কি করবে সে এখন…!! তাও মনে সাহস যুগিয়ে এগিয়ে চলল শ্রেয়া। পুরো বাড়িটা ভুলভুলাইয়া মনে হচ্ছে তার কাছে। শ্রেয়া অনেক কষ্ট বাসার মেন দরজা খুঁজে পায়। এক দৌড়ে বের হয়ে আসে সে। তারপর বাগানের সাইট দিয়ে দেয়াল টপকে বাহিরে চলে আসে সে। ভাগ্যিস তখন উপর থেকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিয়েছিল সে। ওপারে গিয়ে জোরে শ্বাস নিল শ্রেয়া। আহ মুক্ত বাতাস। প্রাণ খুলে হওয়া নিয়ে এগিয়ে চলল সামনে। কিন্তু আবার থেমে গেল। ও যাবে কোন দিকে? ওতো চেনে না কিছু?
তাই চোখ বন্ধ করে গুনতে লাগে।রাস্তা দুটো ডান পাশে একটি বাম পাশে একটি।ডান পাশের রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে লাগে সে। অনেকখানি হাঁটার পর কোনো কিছু পেল না সে শুধু চারপাশে পাহাড়ের মত। তারপর মাঠের মত। কিন্তু জনমানব শূন্য।
আরিশ সকালে উঠে শ্রেয়ার রুমে যায়। শ্রেয়া নেই। ভাবে ওয়াশরুমে আছে, নাহ নেই।পুরো বাড়ি খুঁজার পর বুঝতে পারল শ্রেয়া পালিয়েছে। আবার কপালের রগ দাড়িয়ে যায় তার। মেয়েটিকে সে হালকা ভাবে নিয়ে ঠিক করে নি সে..! এতই কি সহজ তার খাঁচা থেকে পালানো?
বেরিয়ে যায় আরিশ গাড়ি নিয়ে।
কিছু দূর থেকে গাড়ির ওয়াজ শুনতে পেয়ে শ্রেয়ার মুখে হাসি ফুঁটে উঠে। আহ কি আনন্দ। এখন সে লিফ্ট নিয়ে এখান থেকে অনেক দূর চলে যাবে।ভাবতেই খুশি খুশি লাগচ্ছে তার।
গাড়ি দেখতে পেয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে সে। গাড়ি থেমে যায়। শ্রেয়া দৌড়ে ড্রাইভারের কাছে গিয়ে বলতে লাগে,
—-এক্সকিউজ মি! আমাকে একটু বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত ছেড়ে দিবেন!
লোকটি মাথা নারায় আর পিছনে বসতে বলে। শ্রেয়া খুশিতে গদ গদ হয়ে উঠে পরে পিছনের সিটে। উঠে গেট লাগিয়ে তার পাশে তাকাতেই।এক চিৎকার মারে। গাড়ির ড্রাইভার কান ধরে ফেলে। শ্রেয়া গাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে নেয়। কিন্তু দরজা লক করা। শ্রেয়া গাড়ির ড্রাইভারকে বলতে লাগে,,
—প্লিজ ওপেন দা ডোর?
কিন্তু গাড়ি চলতে শুরু করল। শ্রেয়া ভয়ে ভয়ে পাশে তাকালো পাশেই আরিশ মাথা হেলিয়ে চোখ বুঝে রহস্যময় হাসি হেসে যাচ্ছে। শ্রেয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—-প্লিজ যেতে দিন আমাকে!
আরিশ সেই একি ভাবে থেকে বলতে লাগে,
—-এটা আমার রাজ্য এখানে কে আসবে কে যাবে তা আমি ডিসাইড করি। আর তুমি আমার রাজ্য থেকে পালাবে তা কি হয়। আর (শ্রেয়ার দিক ঘুরে বসে)সেখানে তুমি আমার #কেনা_বউ তোমাকে কিভাবে যেতে দেই?
আরিশের কথায় গলা শুকিয়ে আসে শ্রেয়ার। শুকনো ঢুক গিলে প্রশ্ন করে সে,
—-আমার সাথে কেন এমন করছেন? প্লিজ আমাকে যেতে দিন। কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার?
—-সব চেয়ে বড় ক্ষতি তুমি আমার করেছো বউ..!!
—-মানে?
—-এখন না জানলেও চলবে। শুধু এত টুকু জেনে রাখো! আরিশ তার কেনা জিনিসকে কখনো হাত ছাড়া করে না। কেউ তার জিনিসে হাত দিলে তার হাত আস্ত থাকে না।তা জালিয়ে দেয়। সে যে কেউ হোক।
শ্রেয়া এবার ভয় পেতে লাগলো। শ্রেয়াকে ভয় পেতে দেখে আরিশ হাসলো। শ্রেয়া তাকালো তার দিক। লোকটির হাসি খুব সুন্দর। শব্দহীন হাসি। তার সাথে লোকটি অত্যন্ত সুন্দর। এমন লোক তার পিছনে পরেছে ভেবেই পাচ্ছে না কেন? তার মতো একটি আনস্মার্ট মেয়েকে সে বউ বলছে। কত আজিব লাগচ্ছে সব।নাকি এই সব কিছুর পিছনে কোনো কারণ আছে??
শ্রেয়াকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে আরিশ। তার সামনেই একটি বোলে রাখা জলন্ত কয়লা। তা দেখে পিলে চমকে গেল তার।
আরিশ অদ্ভুদ রকমের হাসি দিয়ে বলতে লাগে,
—-আমার কাছে অন্যায় কারীর কোন মাফ নেই। তুমি অন্যায় নয় পাপ করেছ, পাপ! এখন থেকে পালানো তোমার উচিৎ হয়নি। তার উপর আমার কাছ থেকে বাচার জন্য তুমি গলায় ফাঁসী দিয়েছো। আমাকে অপমান করেছো, গায়ে হাত তুলেছে। সব কিছু জমিয়ে রেখেছিলাম।কিন্তু পালিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি তোমার। তাই শাস্তিস্বরূপ এই ব্যবস্থা। যেন ভবিষ্যতে আর পালাতে না পারো। বলে শ্রেয়ার পা দুটোয় কয়লার বোলে চেঁপে ধরলো।
শ্রেয়া জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে লাগলো গলা ফাটিয়ে। কিন্তু তার চিৎকার শুনার মতো কেউ নেই। তার চিৎকারের আওয়াজ এই চার দেয়ালের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে।শ্রেয়া ভাবচ্ছে, তার মতো অভাগী কমি আছে। যার না বাবার বাড়িতে সুখ হলো। আর না স্বামীর। কতটা অভাগা সে…!!ইশ কাল যদি মরে যেত সে। কেন বেঁচে গেল সে?এমন সুন্দর চেহারা রূপী পশুর হাতেই কেন পরলো সে??আদ কি এ সব প্রশ্নের উত্তর পাবে সে??
চলবে,,