ও আমায় ভালোবাসেনি !! Part- 14
সব ইজি মনে হয় তাইনা রাইদ? সব ইজি আপনার কাছে?
বিয়ের নামেও তো প্রহসন চালাইছেন । চেতনাহীন অবস্থায় বিয়ে হয়না এটা জানেন না আপনি?
আর আমাকে তুলে আনলেন সাক্ষী ছাড়া বিয়ে করলেন আমিও মেনে নিলাম , এটা হইলো??
,
ক্যাচ ক্যাচ করে আমি ধপ করে বিছানার ওপরে বসলাম ।
রাইদ ডাম্বেল’স নিয়ে এক্সারসাইজ করছিলেন , ওভাবেই বললেন_ কি মনে হয় তোর? আমি অতো কাঁচা কাজ করি??
— মানেহ্?
— মিথি মুভি দেখবি?
— আপনার মনে হয় আমি মুভি দেখার মুডে আছি?
— আরেহ্ দেখ না বাস্তব বাস্তব মুভি ।
,
ডাম্বেল’স গুলো নামিয়ে রেখে উনি ল্যাপটপ নিয়ে বসলেন , কিছুক্ষণ চাপাচাপি করে আমাকে ডাকলেন ।
মুখ বাঁকিয়ে বললাম যাবো না , উনি বললেন_ আরেহ্ আয় তো ।
ফের মুখ বাঁকিয়ে সোফায় ওনার পাশে গিয়ে বসলাম ।
একটা ভিডিও চালু করলো সে ।
ড্রয়িংরুমে রাইদের কাঁধে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকা অবস্থায় আমাকে দেখা যাচ্ছে ।
সেখানে আমরা মোটেই একা নই , ভাইয়া-ভাবি বাবা , রামিম-সিমি, ফয়সাল-চারু , ফুপ্পি এবং শব্দও আছে ।
আর একজন বৃদ্ধ লোক যাকে রাইদ কাজি সাহেব বলে সম্বোধন করলেন ।
লোকটি যখন কালেমা পড়ছিলেন তখন আমাকে ঝাঁকি দিয়ে জাগানো হলো , চোখ পিটপিট করে আমি বললাম_ আমি কিন্তু রাইদকে ছাড়া আর কাউকে কবুল বলবো না কিন্তু রাইদের তো অন্য কারো সাথে বিয়া দিবে , ওউফ আমার কি হবে??
যখন আমি ন্যাকা কান্না করছি তখন রাইদই বললেন_ আমাকেই তো কবুল বলবা জান । চটপট কবুল বলো ।
আমি চোখ বড়বড় করে বললাম_ তোমাকে কবুল বলতে হবে? ইয়েস! রাইদ আমার বর হয় কবুল কবুল কবুল ।
,
সবাই হেসে আলহামদুলিল্লাহ পড়লো ।
রাইদ বিসমিল্লাহ কবুল বলার পরে রেজিস্ট্রি পেপার দেয়া হলো এবং আমি গটগট করে সাইনও করে দিলাম ।
সাক্ষী হিসেবে বাকিরা সাইন করলো ।
শুধু শব্দ যখন সাইন করতে গেলো তখনই কলম টা গেলো ভেঙে ।
ভিডিওটা পজ করে দিলো রাইদ ।
— ওয়েট কর এখনই শেষ না আগে পরের ভিডিও দেখ ।
আরেকটা ফাইলে গিয়ে আরেকটা ভিডিও ওপেন করলো সে ।
এই ভিডিও তে আমরা রুমে , বেডে শুয়ে আছি ।
রাইদ আমাকে বলছেন ঘুমাতে বাট আমি ঘুম বাদ দিয়ে ওর ওপর চেপে বসে জিদ করে বলছি_ নো ঘুম টুম । বিয়ে হইলো বাসর হবে না?
তারপর বাকি কাজের সূচনাও আমিই করেছি…
,
এই ভিডিও দেখার পর লজ্জায় আমি মাথা নিচু করে ফেললাম ।
রাইদ কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন_ ডার্লিং বলো সব দোষ কি আমার একার? তুমি যদি ঘুম থেকে উঠে সব ভুলে যাও তাহলে কি দোষ আমার বলো?
,
আমি নিজেই তব্দা খেয়ে গেলাম । আমার আবছা কিছু মনে পড়ছে , ভাইয়ারা হাসাহাসি করছিলেন তারপর রাইদ আমাকে নিয়ে রুমে নিয়ে আসলো ।
হঠাৎ চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে
আমি চিল্লিয়ে বললাম_ সব দোষ আপনারই ।
রাইদ হেসে ফেললেন_ হ ঠিক । সব দোষ আমার । এখন নতুন টুইস্ট আসবে বুঝলি না? একটু শক্ত কইরা ধর আমারে ।
আমি নাক ফুলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।
আমাদের বিয়ের ভিডিওটা ও পুনরায় চালু করলো ।
লাস্ট দিকটাতে শব্দ ভাইয়ার সাইনের জায়গাটায় প্লে করলো আবার ।
পজ করে জুম করার পর বোঝা গেলো কলম টা এমনি এমনি ভাঙ্গেনি , শক্ত করে চেপে ধরার কারণে ভেঙ্গেছে ।
রাইদ বললেন_ কলম ভাঙ্গা দেখছস না? এবার ওর মুখের দিকে তাকা?
আমিও তাকালাম ।
শব্দ রক্তিম চোখে পেপার টার দিকে চেয়ে আছেন ।
আমি রাইদকে বললাম_ সে ওভাবে তাকায় ক্যান?
রাইদ এবার হাসতে হাসতে বললেন_ সতীনের বিয়ার রেজিস্ট্রি পেপার দেইখা কি ও খুশিতে নাচবে?
— মানেহ্?
— মানে হলো শুরু থেকে সবটা তোর পেয়ারে শব্দ ভাইয়া করে যাচ্ছে ।
— কি শুরু থেকে?
— আমার বউ আমার সাথে বিয়ে ক্যান ভাঙ্গলো এটার খোঁজ আমি নিবোনা মনে করেছিলি?
মিথি তুই যে বিয়ের খানিক আগে একটা ভিডিও পেয়েছিলি সেটা আমি জানি । ভিডিওটা দেখে তোর উচিৎ ছিলো আমাকে এসে জিজ্ঞেস করা , আমার ওপর রাগ দেখানো বাট তুই সেটা না করে চলে গেলি ।
ঠিকাছে তুই ছোট মানুষ তুই চলে গেছিস । কিন্তু তুই ক্যান চলে গেছিস এই খবর তো আমাকে রাখা লাগতো?
তুই কিন্তু তোর ফোনটা ফেলে গেছিলি রুমে ।
আমি যখন তোর খোঁজে রুমে আসলাম তখনই আমি ঐ ভিডিওটা দেখি ।
আমার নিজেরই মাথা ঘুরছিলো ভিডিওটা দেখে ।
ঐ মুহুর্তে আমি কাউকেই কিছু বলিনি, সবাইকে সবটা মেনে নিতে বলেছি ।
কিন্তু পরে সিলেটে চলে যাওয়ার পর আমি বারবার ভিডিওটা প্লে করে দেখেছি , ক্লু খোঁজার চেষ্টা করেছি ।
জানিস কি পেয়েছি? একটা লোগো ইটালিক অক্ষরে S লেখা ।
যেটা সবসময়ই কোনো ভিডিও এডিট করলে শব্দ জুড়ে দিতো ।
তার মানে বুঝতে পারছিস? ভিডিওটা শব্দ এডিট করেছিলো/বানিয়েছিলো ।
বিশ্বাস কর এটা দেখে আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেছিলো ।
ও আমার সব চাইতে ভালো বন্ধু ছিলো ।
ও এটা কেনো করেছে এই খোঁজ লাগাতে গিয়ে জানা গেলো ও তোকে পছন্দ করতো ।
আর একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার জানিস?
চারুমতি শব্দকে পছন্দ করতো , ওর লুকস , পয়সা সব দেখে ওর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল ।
শব্দ এই ব্যাপারটাকে কাজে লাগিয়েছে ।
সেদিন এই অন্তরঙ্গ মুহুর্ত টা আমার আর চারুর নয় , শব্দ আর চারুর ।
চারু তো জানেও না এই ভিডিও টা এভাবে এডিট করা ।
ওকে বলা হয়েছিল আমার কাছাকাছি থাকার নাটক করতে ।
এসবই কিন্তু আমাকে চারু নিজে বলেছে ।
চারু ফয়সালকে ছেড়েছিলো শব্দকে পাবার জন্য আর শব্দ চারুকে লাস্ট মোমেন্টে ডাম্ব করেছে ।
যার জন্যই চারু আমার কাছে এসে সব বলে দিয়েছে ।
রাইদ হাহা করে হাসছে ।
আমি ওর হাসির মিনিং খুঁজে পেলাম না ।
বোকার মতো জিজ্ঞেস করলাম_ হাসছেন কেনো?
এবারে রাইদ হঠাৎ চুপ করে গেলো । তারপর বললো_ আমি তোকে দু’বছর থেকে ফলো করে আসছি । তুই কি কি করেছিস সবই আমি খেয়াল করতাম । ফয়সালের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছিলি সেটাও আমি জানতাম । আমার রাগটা কোথায় জানিস? তুই আমাকে ক্লিয়ারলি না কিছু জিজ্ঞেস করেছিস আর না কিছু বলেছিস ।
তোর চাপা স্বভাব টা যদি না থাকতো তাহলে এতদিন না তুই কষ্ট পেতি আর না আমি কষ্ট পেতাম ।
রাইদ উঠে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা ধরলো ।
আমি মাথা নিচু করে বসে থাকলাম ।
ও আবার ফেরত এসে বললো_ ফয়সাল তোকে ছেড়েছিলো কারণ ওর ব্রেইন টিউমার হয়েছে । বাট এখানেও একটা টুইস্ট আছে ।
ডোন্ট প্যানিক ওর আসলে কিছুই হয়নি ।
ওকে একটা ফেইক রিপোর্ট দেয়া হয়েছে , যেটা দেখে ও ওর অনিশ্চিত লাইফের সাথে তোকে জড়াতে চায়নি ।
তারপর আমার খুব কাছে এসে গালদুটো চেপে ধরে রাইদ বললেন_ যেকোনো পরিস্থিতিতেই তুই শুধু আমার মিথি । আমি অবসেসড্ তোর জন্য , পৃথিবীর কোনো সাইকো লাভারই আমার মতো হতে পারবে না । যতদিন এই রাইদ থাকবে ততদিন মিথি শুধুই তার আর কারো নয় ।
আমাকে ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে রাইদ আবার বললেন_ আমি কিছু কথা তোকে বলিনি এবং তোর কাজ এই কথাগুলো নিজে নিজে খুঁজে বের করা নইলে তোর মাফ নাই
আমি বিরাট বড় ঘোরের মধ্যে আছি । নিজের হাতে দু’বার চিমটিও কেটে দেখলাম ঘটনা স্বপ্ন নাকি সত্যি ।
নাহ আসলে সত্যিই ।
— চিমটি কেটে লাভ নাই যা হইতেছে সত্যিই হইতেছে ।
রাইদের গলা শুনে আমি মাথা তুলে ওর দিকে তাকাই ।
শাওয়ার নিয়ে একটা প্যান্ট পরেছে শুধু , গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে সেই টাওয়ালের একাংশ দিয়ে ভেজা চুলগুলো মুছে নিচ্ছে ।
আমার সামনে এসে বললো_ মাথা মুছে দে ।
সোফায় ধপ করে বসে পড়লো সে ।
আমি দাঁড়িয়ে টাওয়ালটা নিয়ে মাথা মুছে দিচ্ছি আর তার শুরু হয়ে গেলো খুনসুটি ।
আমার কোমরে হাত জড়িয়ে সে একদম কাছাকাছি টেনে নিয়ে একহাত দিয়ে শাড়ির কুঁচির
অংশটা নামিয়ে নাভি বের করে ফেললো তারপর
ঠোঁট ছোঁয়াতে শুরু করে দিলো ।
আমি অস্থির হয়ে বলছিলাম রাইদ কি হচ্ছে টা কি?
সে নির্বিকার ।
তাকে থামাতে পারবো না বুঝতে পেরে বললাম_ আমি জানি আমি ভুল করে ফেলেছি , আমাকে কি মাফ করা যায় না?
সে ঐ মুহুর্তে কোনো জবাব দিলো না , আরো কিছুক্ষণ ওভাবে থেকে উঠে ক্লোজেটের সামনে গেলো ।
শার্ট বের করে পরতে পরতে আমাকে প্রশ্ন করলো_ টাই বাঁধতে পারিস?
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম ।
সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাই বেঁধে চুলটা সেট করে আমার হাতে কোর্ট ধরিয়ে দিলো ।
ফুল রেডি হবার পর নিচে নামবার কিছুক্ষণ আগে বললো_ শোন মিথি একটা সম্পর্ক টিকে থাকার পূর্বশর্ত হলো বিশ্বাস ।
পার্টনারকে সবার আগে বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতে হবে এন্ড বিশ্বাস করতে হবে ।
তুই আমাকে বিশ্বাসই করতে পারিসনি , কে না কে একটা ভিডিও পাঠালো সেটা বেইজ করে তুই বিয়ের আসর থেকে চলে গেলি তুই চাইলেই ঐ মুহুর্তে আমায় জবাবদিহি করতে পারতি কিন্তু করিস নি ।
যেখানে আমার পার্টনার আমাকে বিশ্বাসই করতে পারেনি , অযাচিত ভিডিও দেখে ভালোমন্দ না বুঝেই আমায় ছেড়ে চলে গেছে সেখানে আমার রাগ/ অভিমান করা কি খুব অন্যায় হবে?
তোর ওপর আমার এত তীব্র একটা অভিমান জেগেছে যে এই মুহুর্তে না আমি তোকে ফেলতে পারছি আর না আপন করে নিতে পারছি ।
তোকে ছাড়া নিঃশ্বাস নেয়াও দুষ্কর কিন্তু তোকে দেখলে আমার জখম তাজা হয়ে যাচ্ছে মিথি ।
এই অভিমান তোকেই কমাতে হবে , সম্পর্কে তিক্ততা যাতে না আসে এই দায়িত্ব এখন তোর ।
বলেই রাইদ বেরিয়ে গেলেন ।
কথাগুলো শুনে আমার পৃথিবীই যেন থমকে গেছে ,কষ্টে বুক ভাঙছে আমার ।
ভুল তো আমি করেই ফেলেছি এখন এর মাশুল আমাকেই গুনতে হবে ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমিও নিচে গেলাম ।
ফুপ্পি আর রাইদ ডাইনিংয়ে বসে আছে , প্লেটে খাবার অথচ তারা খাচ্ছে না ।
আমাকে দেখে ফুপ্পি বললেন_ এতো দেরি করলি কেনো মা? বসে আছি আমরা তোর জন্য ।
— স্যরি ফুপ্পি ।
ফুপ্পির পাশে গিয়ে বসে আমিও খাবার বেড়ে নিলাম ।
রাইদের খাওয়া আমাদের আগেই হয়েছে ।
ও উঠে যাবার আগে শুধু বললো_ রেডি হয়ে থাকবি , সন্ধ্যায় সিমির আকদ্ ।
আমি মাথা নাড়লাম ।
ও চলে যাবার পর ফুপ্পি জিজ্ঞেস করলেন_সব ঠিক আছে তো মা?
ফুপ্পির কথা শুনে আমার কান্না পেয়ে গেলো আমার ।
শব্দ করে কেঁদে ফেললাম । ফুপ্পি মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন আমাকে ।
আমি ওনাকে সবটা খুলে বলায় উনি বললেন_ তোর বয়স কম ছিলো , একটা ভুল হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারছি মা । তোর উচিৎ ছিলো আমায় বা রাইদকে জিজ্ঞেস করা কিন্তু তুই করিস নি । যা হওয়ার হয়ে গেছে , কিন্তু মা বল তো তুই কি শুধু ঐ ভিডিওটা দেখেই চলে গেছিলি?
আমি মাথা নেড়ে বললাম_ মা এসেছিলো ঐ মুহুর্তে , আমায় বলেছিলো আমি যদি তার সাথে যাই তাহলে মা আমাকে আপন করে নিবে আর আমি কিছু চিন্তা না করেই….
ফুপ্পি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন_ তোর মায়ের যে কি হয়েছে রে! কেনো যে সে ঐসব কুসংস্কার মাথায় রেখে চলে তাই বুঝতে পারিনা ।
থাক বাবা কাঁদিস না । চল দেখি কোনটা শাড়ি পরবি আমি সিলেক্ট করে দিই ।
,
সন্ধ্যায় ফুপ্পিই আমাকে রেডি করে দিলো ।
একটা সাদা রাজশাহী সিল্ক পরিয়ে গোল্ডেন হিজাব পরিয়ে দিলো তারপর মুখের সাজটাও ফুপ্পিই করিয়ে দিয়েছে ।
গয়না বলতে দু’হাত ভর্তি তার স্বর্ণের চুড়ি আর দু’পায়ে ভারি রূপোর নুপূর ।
সবটা সাজানোর পর ফুপ্পি বললেন_ রাইদের বাবা সবসময় চাইতেন তোকে এভাবে সাজিয়ে দিই , উনি কিন্তু মনে মনে চাইতেন তোকে রাইদের বউ বানাতে ।
আজ তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে কিন্তু সে নেই । আঁচলে চোখ মুছে নিলেন ফুপ্পি ।
সেই মুহুর্তে কলিংবেল বেঁজে উঠল , ফুপ্পি বললেন_ রাইদ এসেছে বুঝি!
তুই থাক মা আমি দেখি ।
ফুপ্পি চলে গেলেন , আমি চটজলদি নুপূর জোড়া পা থেকে খুলে ফেললাম ।
রাইদ পরিয়ে দিবে এসে ।
দশ মিনিটের মাথায় রাইদ এসে পরলেন ।
রেডি হয়েছিস? বলে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আয়নায় তাকাতেই থমকে গেলেন ।
তার পলক পড়ছিলো না চোখের , আমিও আয়নার ভেতর দিয়েই তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।
সে হঠাৎ করেই বললো_ দেখি এদিকে ফিরে তাকা তো ।
আমি বিনা বাক্য ব্যায়েই তার দিকে ফিরলাম ।
সে দু’হাতে আমার মুখখানা আঁজলা ভরে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো_ বড্ড সুন্দর হয়ে গেছিস দেখছি । মাথা নষ্ট করা সুন্দর!
আমি কিছু বলার সুযোগ পাইনি তার আগেই সে আমার মুখ বন্ধ করে দিয়েছে ।
মিনিট পনেরো পর এক প্রকার জোর করেই ছাড়িয়ে নিয়ে দিশেহারা গলায় বললো_ প্রোগ্রামে না গেলে হয়না মিথি?
— উহু যাইতে হবে ।
— প্লিজ মিথি , ওদের তো আবার বিয়ে হবে আমরা তখন যাই?
— নাহ্ । ফ্রেশ হতে যান রাইদ এক্ষুণি ।
আমার সাথে না পেরে বেচারা ফ্রেশ হতে চলে যায় ।
এদিকে আমার ফোনে সিমির কল আসে ।
সিমির সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে যাই আমি ।
— আজ কথা বলেই কাটিয়ে দিবি?
ফের রাইদের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে।
ফোনটা কেটে ওর কাছে গিয়ে বলি ।
— আপনি রেডি হয়ে নিন?
হুম । বলে সে পাঞ্জাবি বের করে পরে।
যাবার আগে আগে নুপূর জোড়া হাতে নিয়ে তাকে বলি_ পরিয়ে দিন না?
সে এক ভ্রু উঁচিয়ে বলে_ নিজের কাজ নিজে কর?
— প্লিজ রাইদ?
এবার আর সে না করতে পারেনা ।
আমার খুব খুশি লাগে ।
,
সিমিদের বাসাটা বেশি দূরে না হওয়ায় খুব জলদিই আমরা পৌঁছে যাই ।
আমাদেরকে দেখে সবাই এগিয়ে এসে কথা বলতে শুরু করে ।
চারু আপু আমার হাত ধরে বলে_ স্যরি বোন । তোমার কাছে মাফ চাওয়ার মুখ আমার নেই । তবুও বড় বোন মনে করে মাফ করে দিও ।
তার ওপর রাগ রেখে তো লাভ নেই ।
ইটস ওকে বলে তার সাথে একটা হাগ করি আমি ।
ক্ষমা মহৎ গুন , নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় মানুষকে ক্ষমা করে দিতেন ।
আমরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকিই বা কতদিন?
শব্দ ভাইয়াও এসেছেন দেখছি । সিমির আকদ টা খুব সুন্দরভাবেই হয়ে যায় ।
পুরোটা সময় খেয়াল করেছি শব্দ ভাইয়া তীক্ষ্ণ চোখে তাকাচ্ছেন আমার দিকে , আমিও রাইদের সাথে সাথে থাকারই চেষ্টা করছি ।
কিন্তু এক ফাঁকে একটা কাজে আমাকে পার্কিংয়ের দিকে যেতে হয় ।
হঠাৎ মনে হয় কেউ আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে ।
ভয়ে পিছু মুড়ে দেখি শব্দ ভাইয়া ।
একটা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে ওনাকে পাশ কাটিয়ে চলে আসার সময় উনি আমার হাতটা টেনে ধরেন ।
ভয় পেয়ে আমি হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করি ।
— কি হচ্ছে কি হাত ছাড়ুন শব্দ ভাইয়া?
— কেনো ছাড়বো? এই হাত তো আজ আমার হাতেই থাকার কথা ছিলো ।
বাস্টার্ড টা ছিনিয়ে নিয়েছে ।
— শব্দ ভাইয়া কি বলছেন এসব?
চিল্লিয়ে উঠি আমি ।
উনি আরো শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরেন আর বলেন_ দেখো মিথি তুমি আমারই হবা । আজকেই আমি তোমাকে নিজের করে নিবো ।
,
ওনার পাগলামি দেখে আমি বেশ ভয়ে পেয়ে যাই ।
চিল্লিয়ে রাইদকে ডাকি ।
একবার ডাকার সাথে সাথেই সে আমার মুখটা চেপে ধরে ।
আমি ধাক্কাতে থাকি তাকে আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করি ।
শব্দ দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাউকে ইশারা করে ।
আমি পেছনের ব্যক্তিটাকে দেখার চেষ্টা করি কিন্তু এর আগেই কোমরে সুক্ষ ব্যাথার আভাস পাই তারপর আর কিছু মনে নেই..
চলবে,