ও আমায় ভালোবাসেনি

ও আমায় ভালোবাসেনি !! Part- 13

কেটে গেছে আরো দু সপ্তাহ , রাইদরা চলে গেছে অনেকদিন হলো ।
মায়ের সাথে রিহার সম্পর্কটা সহজ হচ্ছে আস্তে আস্তে ।
এদিকে ম্যামের আমাদের বাসায় আনাগোনা শুরু হয়েছে ।
কারণে-অকারণে ম্যাম আমার সাথে দেখা করতে আসছেন , বাবার সাথে গল্প করছেন- মায়ের সাথে গল্প করছেন।
আমি একটা জিনিস লক্ষ করেছি উনি সুযোগ পেলেই ওনার ছেলেদের নিয়ে গল্প করেন ।
সিমিকে ব্যাপারটা বলায় সিমি সেদিন মজা করে বললো ম্যাম মেইবি তোকে ছেলের বউ বানাতে চায় ।
ব্যাপারটা আমলে না নিলেও মাঝেমধ্যে ভাবায় আমাকে ।
শুনেছি বড় ছেলে শুভ বিদেশে বিয়ে করেছে আর ছোট ছেলে স্মরণ এখনো অবিবাহিত ।
স্মরণ নামটা বড়ই পরিচিত লাগে আমার বাট বুঝতে পারিনা কোথায় শুনেছি বা দেখেছি ।

গতকাল রাতে ফুপ্পি বাবাকে ফোন করে বললেন রাইদের বিয়ে করিয়ে দেয়া উচিৎ ।
হাহ্ পৃথিবী টা এরকমই , প্রত্যেকটা মুহুর্ত অপেক্ষা করে থাকে নতুন মুখ দেখবার জন্য ।
কেউ কাউকে ছাড় দেয় না , নিজের জায়গা নিজেকেই বানিয়ে নিতে হয় আান্ড ইটস ন্যাচারাল ।
শোনা যাচ্ছে রাইদের সাথে ওর মায়ের বান্ধবীর মেয়ে কেয়া’র বিয়ের কথা উঠেছে ।
কেয়া আপু আমার চাইতে বয়সে প্রায় তিন বছরের বড় ।
একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে জয়েন করেছে মাত্র ক’মাস হলো ।
রাইদের সাথে বেশ মানাবে তবে আমার বড্ড বেশীই খারাপ লাগছে ।
বাবা যখন কাল ডেকে বললেন রাইদের বিয়ের কথা তখন বুকটা ধক করে উঠেছিলো আফটার অল হি ইজ মাই লাভ..
মাঝেমধ্যে মনে হয় রাইদকে গিয়ে সব কিছুর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে আসি কিন্তু হঠাৎ করে আর ইচ্ছে করেনা ।
কিছুদিন যাবৎ একটা আননোউন নাম্বারও বড্ড জ্বালাতন করছে ।
সকাল বিকেল মেসেজ দিয়ে মাথাই খারাপ করে দেবার জোগাড় ।
পরিচিত কাউকে নাম্বারটা ট্র্যাক করবার জন্য দিবো ভাবছি কিন্তু আমার পরিচিত তেমন কেউ নেই ।
যাহোক মোটামোটি ব্যস্ত সময় কাটতে লাগলো আমার ।
কয়েকদিন থেকে বাবা আমায় ইশারায় বিয়েশাদীর কথা বোঝানোর চেষ্টা করছেন , ম্যামের মৌন প্রস্তাব ভালোই কাজে দিয়েছে মনে হচ্ছে ।
ভাইয়া আমায় অবশ্যি বলেছিল ডিরেক্ট কিন্তু আমি বলে দিয়েছি আমার লেখাপড়া শেষ না হওয়া অবধি এই বিষয় নিয়ে ভাবতে চাইছি না ।
ভাইয়া বুঝতেই পেরেছিলেন আমি এটা কেনো বলেছি , উনি শুধু জবাবে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন_ তোর ভালো থাকাটা ইম্পর্টেন্ট বাচ্চা । তুই যেভাবে ভালো থাকতে চাস সেভাবেই সব হবে ।

সময় খুব দ্রুত চলছিলো , এর মাঝে সিমি আর রামিম ভাইয়ের আকদ করার প্ল্যান হয় ।
সিমির পড়াশোনা শেষে অনুষ্ঠান করে বিয়েটা দেয়া হবে আপাতত পরিবার পরিজন নিয়ে আকদ ।
আকদের দুই দিন আগেই আমাকে যেতে হলো সিমির বাসায় ।
ওর কাজিন সংখ্যা অনেক আর তাছাড়াও ওর যেহেতু বাবা-মায়ের মিল হয়ে গেছে সেহেতু আঙ্কেে আন্টির আত্মীয় পরিজনও বেশী ।
বেশী লোকের ভীড়ে আমার বড্ড অস্বস্তি আর তাছাড়াও এরা অনেকেই জানে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল এবং বিয়েটা কোনোভাবে ভেঙে গেছে ।
আমি মনে করেছিলাম হাজার হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে আমায় ।
কিন্তু আল্লাহ্ রহমতে তেমন কেউই প্রশ্ন করেনি ।
আকদের আগের দিন হালকা হলুদ ছোঁয়ানোর প্রোগ্রাম হলো।
সিমি আর রামিম ভাইয়ের বাসাটা পাশাপাশি , দু’টো ছাদে একইসময়ে হলুদের প্রোগ্রাম হলো ।
বেশ মজাই হয়েছে অবশ্য ।
পুরোটা সময় জুড়ে রাইদের সাথে অসংখ্য বার আমার চোখাচোখি হয়েছে , ফয়সাল অবশ্যি চারুর সাথে সাথেই আছে ।
কথা হয়েছে শব্দ ভাইয়ার সাথে । সে ছাদের কিনারায় এসে এসে কথা বলেছে আমার সাথে ।
তার কথার ভাঁজ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে ।
সেদিকে আর বেশী নজর দিই নি আমি ।
সন্ধ্যায় মেহেদী পরানো হয় ওকে । আমিও দু’হাত ভরে মেহেদী পরলাম । কেবলই ঐদিনের কথা মনে হচ্ছিল আমার , সেদিনও দু’হাত ভরে মেহেদী পরেছিলাম ।
স্বপ্নের গাঢ় রঙ ধারণ করেছিলো হাতে কিন্তু..

সব অসহ্য লাগতে শুরু করলো , উঠে ছাদে চলে গেলাম ।
ছাদে আপাতত কেউই নেই , হিমেল হাওয়া বইছে ।
শান্তশিষ্ট পরিবেশ বেশ ভালো লাগছে আমার ।
প্রকৃতিকে যখন খুব করে অনুভব করছি তখন হঠাৎ একজোড়া হাত আমাকে শক্ত আলিঙ্গনে বন্দী করে ফেললো ।
চমকে উঠে বন্ধ চোখজোড়া খুলতেই পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে _ শুনলাম তোর বিয়ের সম্বন্ধ আসছে?
স্মিত হেসে বললাম_ মেয়েরা বড় হলে বিয়ের সম্বন্ধ আসবে এটা তো অস্বাভাবিক কিছু না আর বিয়ের সম্বন্ধ তো আপনারও আসছে ইনফ্যাক্ট বিয়ে ফাইনাল হয়ে গেছে অলমোস্ট ।
— আচ্ছা তো সব খবর পেয়েছিস?
— হুম ।
— তবুও কিছু যায় আসছে না?
— নাহ্!
— কি বললি?
— যা সত্যি তাই ।
— কিন্তু আমার যে বড্ড যায় আসছে । অন্য কারো ঘরে তোকে দেখা আমার পক্ষে অসম্ভব ।
— হাহ্ প্রহসন বাদ দিন আর ছাড়ুন আমাকে । অন্যের ঘরে কি? বিছানায় যাওয়ারও রাইট আমার আছে কিন্তু আপনার কিছু যায়-আসবার রাইট নেই ।
— তোর সাহস দেখে আমি অবাক হই মিথি ।
— অবাক হবার কিছুই নেই ইটস নরমাল এন্ড সো ট্রু । সো লিভ মি নাউ ।
জোর করে ছাড়িয়ে চলে যেতে চাইলাম কিন্তু ডান হাত তার হাতে শক্ত করে ধরা পড়লো ।
এক ঝটকায় কাছে টেনে নিয়ে গালে হাত বুলিয়ে বললেন_ ঠিক এই মুহুর্তের পর থেকে যা হবে তার জন্য শুধু তোর জিদ দায়ী মিথি । আর হ্যাঁ স্যরি ইন এডভান্স!
আমি ভ্রুজোড়া কুঁচকে কিছু বলতে চাইলাম কিন্তু তার আগেই একটা রুমাল আমার নাকে চেপে ধরলো শক্ত করে ।
মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো কয়েক মুহুর্তেই আর তারপর…

জ্ঞান ফিরেই চোখে অন্ধকার ছাড়া কিছু নজরে আসলো না ।
একটা নরম তুলতুলে বিছানায় শুয়ে আছি মনে হলো আর আমাকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে , তার উষ্ণ নিঃশ্বাস বুকে অনুভব করছি ।
মাথার সাথেসাথে শরীরেও হালকা ব্যাথার আভাস পাচ্ছি ।
আচ্ছা আমি কোথায় আছি? ছিলাম কোথায়?
মাথায় একটু প্রেশার দিতেই মনে পড়ে গেলো সবটা ।
তার মানে আমি এখন রাইদের সাথে আছি??
ব্যাপারটা মাথায় আসতেই ওকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম ।
কিন্তু পারলাম না , উল্টো ও আরো জাপটে ধরে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো_ মিথি ডিস্টার্ব করিস না , ঘুমাইতে দে ।
আমি রাগে চেঁচিয়ে উঠলাম_ আপনি কি করে করতে পারলেন এটা?
— কি করছি আমি?
— কি করেছেন বুঝতে পারছেন না?
রাগে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি ।
সে মহা বিরক্ত হয়ে বললো_ মিথি একদম কান্নাকাটি করবি না বলে দিলাম , কান্না অফ ।
আমি যা করছি মোটেই ভুল কিছু করিনাই বা পর নারীর সাথে করিনাই ।
যা হইছে বউয়ের সাথেই হইছে , এখন চোপ্!
,
এ কথা শুনে আমার আসলেই কান্না থেমে গেলো ।
চরম অবাক হয়ে বললাম_ বউ মানেহ্?
সে বিড়বিড় করে বললো_ মানে ঠিক চার ঘন্টা আগে তোর সাথে আমার বিয়ে হইছে আর দুই ঘন্টা আগে…
আর কিছু না বলে আমার বুকে মুখ গুঁজলো সে , আর আমি চরম বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে মরার মতো পড়ে রইলাম ।
তার কথার মানে বুঝতে আমার বড্ড কষ্ট হতে লাগলো ।
কি হচ্ছে আমার লাইফে? আমিই বুঝতে পারছি না ।
সে কি পাগল হয়ে গেছে নাকি আমি পাগল হয়ে গেলাম?
চলবে,