ও আমায় ভালোবাসেনি- সিজন ২ – Part- 13
— অন্তর ভাই ভালো আছেন?
— হ্যাঁ ম্যাম ভালো । আপনার কি খবর?
— আমিও আছি মোটামুটি আর আমাকে ম্যাম বলার দরকার নেই । যার সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠতো সে ই যখন নেই তাই আর ম্যাম ডেকে কি করবেন? আমাকে নাম ধরেই ডাকুন । আমি তো আপনার বোনের মতই ।
— আচ্ছা । আপনার পায়ের কি অবস্থা?
— এখন হাঁটতে পারছি ব্যাথা নেই কিন্তু পায়ে দাগ বসে গেছে । কি জঘন্য লাগে!
— সময় যেতে যেতে মিশে যাবে সমস্যা নেই ।
— হ্যাঁ । অন্তর ভাই আমি কিন্তু মাইন্ড করেছি খুব । এতদিন আপনার একটা খবরও ছিলো না ।আমি সুস্থ আছি কি না তার খবরও আপনি নেন নি ।
— স্যরি বোন আমি কাজে খুব ব্যস্ত ছিলাম আর রাইদ সাহেব বাসায় থাকবে কি না এই ভেবেও কল দেয়া হয়নি।
— ও তো বাসাতেই ছিলো না । আচ্ছা যাক এসব কথা। শব্দের বাসায় কি এখনো সিকিউরিটি কড়া?
— নজরে রাখা হয়েছে কিন্তু পূর্বের মত না ।
— তা’হলে আমরা কবে যেতে পারবো?
— আপনি কবে যেতে চাইছেন?
— আমি তো সুযোগই পাচ্ছি না। আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছি জানিনা কবে ফিরবো ।
— আচ্ছা আপনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঘুরে আসুন তারপর পরিকল্পনা করা যাবে ।
— অন্তর ভাই আপনার কন্ঠ বিষন্ন লাগছে কেনো?
— নাহ্ তেমন কিছু না স্যারের কথা মনে পড়ে সবসময় এজন্য ।
— মন খারাপ করে থাকবেন না । আপনার স্যারের জন্য প্রে করুন ।
— আচ্ছা বোন এখন রাখছি । একটু জরুরি কাজ আছে তো ..
— আচ্ছা । ভালো থাকবেন ভাই । আবার কথা হবে ।
ফোন রেখে পেছনে ঘুরতেই দেখা গেলো রাইদ দু’হাত পকেটে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
মিথিকে চমকে উঠতে দেখে ও বললো_
— যেতে হবে না? কার সাথে কথা বলছিলে?
— একটা ফ্রেন্ড । আ..মি রেডি তো । ব্যাগপত্র গুছিয়ে নেবো শুধু ।
— আচ্ছা নাও । আমাদের বেরুতে হবে তো ।
— হুম ।
রাইদ কে পাশ কাটিয়ে আলমারির সামনে গিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস ফেললো । এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিল সব শুনে নিয়েছে রাইদ ।
অন্তর বারবার করে বলে দিয়েছে কেউ যাতে এ ব্যাপারে না জানে ।
এই লুকোচুরি খেলা জলদিই শেষ করতে হবে ।
__
দুপুর দেড়টার দিকে খাবার খেয়ে বেরুলো ওরা । রফিক আর নীরা সকালে গিয়ে সব গোছগাছ করেছে ।
আজ শীতের তীব্রতা বেশি নেই । মিষ্টি রোদে আকাশ ঝলমল করছে ।
উষ্ণ পুলওভারের পকেটে হাত রেখে গভীর মনযোগে বাইরে টা দেখছে মিথি । সারি সারি গাছ পেছনে ফেলে এগোচ্ছে গাড়িটা, কি অদ্ভুত দৃশ্য!
এদিকে রাইদ তার দলের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ছেলেগুলোর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড দেখছে ।
এদের ফ্যামিলিতে আপাতদৃষ্টিতে কেউই নেই বলতে গেলে ।
এরা ছয় জনই বিভিন্ন অনাথ আশ্রম থেকে এসেছে ।
রাইদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ঐ মেয়েটা বেছে বেছে এই ছয়জন কেই কেনো পাঠালো আর তারা নিখোঁজ হবার কারণই বা কি?
ওর ওপর টেক্কা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে না তো! এই মেয়েকে বিশ্বাস করে ভুল করে ফেললো না তো?
— কি করছেন আপনি? দেখুন না বাইরে টা কত সুন্দর। সবসময় ল্যাপটপে মুখ গুঁজে থাকতে হবে কেনো?
— স্যরি আসলে একটা জরুরি কাজ করছিলাম ।
— ছাড়ুন ওসব । দেখুন বাইরের প্রকৃতি কত সুন্দর । শীতল পরিবেশে মিষ্টি রোদ । আমার কিন্তু শীতকাল ভীষণ পছন্দের ।
— আচ্ছা তাই!
— হ্যাঁ । মনে আছে? আপনারা পরীক্ষা শেষ করে আমাদের বাসায় আসতেন আর তখন কত্ত মজা হতো! রিজাপু কি সুন্দর পিঠা বানিয়ে খাওয়াতো উফফ কি টেস্ট সেগুলোর ।
— হ্যাঁ আর আপনি করতেন কি আমার প্লেটের ভালো পিঠা গুলো নিজে তুলে নিয়ে আমায় আধ খাওয়া নতুবা ভাঙা পিঠা দিতেন আর আমি কিছু বলতে গেলে কেঁদে একাকার করে আমার বোন কে নালিশ করতেন ।
— আমি মোটেই ওরকম করতাম না ।
— অবশ্যই করতা আন্টিও সাক্ষী আছে ।
— মিথ্যে মিথ্যে মিথ্যে ।
— সত্য সত্য সত্য।
— হবে না হবে না । মিথ্যে এগুলো ।
— নাহ্ সত্যি আমি প্রমাণ দিতে পারবো ।
— কি প্রমাণ শুনি?
— আন্টিই সবচেয়ে বড় প্রমাণ ।
— সে আমার আম্মু । আমার বিরুদ্ধে কথা বলবে না ।
— তোমার আম্মু হলে সে আমারও আন্টি ।
— আমার অধিকার বেশি ।
— না সমান সমান অধিকার ।
— মোটেই না । আমার অধিকার আগে ।
— উঁহু সমান অধিকার ।
— কীভাবে শুনি?
— মা তোমার , তুমি আমার । তোমার যা তার ওপর আমারও সমান অধিকার ।
— হবে না হবে না । মানবো না ।
— তুমি না মানলেও এটাই সত্যি ।
— মোটেই না ।
— অবশ্যই হ্যাঁ ।
মুখ ভেঙ্গিয়ে ওপাশে ঘুরে গেলো মিথিলা । ওর কাণ্ড দেখে রাইদ হাসি আটকাতে পারলো না ।
হাসতে হাসতে সিটে মাথা এলিয়ে দিলো ।
একেকবার করে মনে হয় সব ভুল কাজ ছেড়ে দিক , এই মেয়েটার সাথে সুন্দর একটা লাইফ লিড করুক । কিন্তু ও একটা চোরাবালিতে আটকে আছে , বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা কিন্তু বাঁচানোর মানুষ নেই । যে আছে সে কিছু তিক্ত সত্যের মুখোমুখি হলে বাঁচাতে আর চাইবে না ।
মোটকথা একদিন এই চোরাবালিতে তলিয়ে যেতে হবে রাইদ কে এটা নিশ্চিত ।
প্রশস্ত রাস্তার সারি সারি ঝাউ গাছ ছাড়িয়ে
বিশাল গেইটের ভেতর দিয়ে গাড়িটা প্রবেশ করলো । আগ্রহ ভরে চারিদিক দেখার চেষ্টা করছে মিথিলা গাড়ির জানালা দিয়ে । একপাশে সুসজ্জিত বাগান , তাতে হরেক রকমের ফুলের বাহার । অপরদিকে ছোটখাট মাঠ , মাঠে বিশাল এক আমড়া গাছ তার নিচে আবার কাঠের দোলনা ।
চারিদিকে শুকনো পাতা পড়ে কি দারুণ লাগছে । মিথি এক গাল হা করে আশেপাশের প্রকৃতি দেখছে ছোট্ট জানালা দিয়ে ।
রাইদ ওর কর্মকাণ্ড দেখে হালকা কেশে ওঠে_
— ম্যাডাম বাড়ির ভেতর যেতে হবেনা?
— আমরা কি গাড়িতেই?
— জ্বী আপনি গাড়িতেই । মর্জি হলে সোনায় বাঁধানো চরণ দুটি গাড়ির বাইরে বের করুন । আপনার মোলায়েম পায়ের স্পর্শে ধন্য হোক খান মঞ্জিল ।
— সবসময় আমার মিমিক্রি বানানো! অসহ্য ।
চোখ রাঙানি দিয়ে গাড়ি থেকে নামলো মিথি ।
রফিক ইন্সট্রাকশন দিতে দিতে ক্লান্ত । সে তার এবড়োখেবড়ো বেশভূষা নিয়ে রিসিভ করলো মিথি দের ।
দ্বিতল বাড়িটায় পা দিতেই চারিদিক থেকে শুভ্র ফুলের সুবাস ভেসে আসতে থাকলো নাকে ।
ড্রয়িংরুমের আনাচে কানাচে ফ্লাওয়ার ভাস গুলো টাটকা ফুল দিয়ে ভরা । পুরোনো নকশা করা কাঠের সোফা সেটের সামনে সেন্টার টেবিলের ওপর ফ্লাওয়ার ভাসে মিথির পছন্দের গ্লাডিওলাস ফুল । পছন্দের ফুল দেখে আত্মহারা হয়ে মিথি ছুটে গিয়ে লুফে নিলো ওগুলো ।
গালের সাথে লাগিয়ে আদর করে নিজে নিজেই বললো_
— ইশশ আমার পছন্দের ফুল গুলো কতদিন পর ছুঁয়ে দেখলাম ।
— আরো আছে ঘরে , বাগানে । আপাতত চলো ফ্রেশ হবে পরে না’হয় দেখো?
ওর উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাটা পড়লো রাইদের কথায় ।
ফুল গুলো রেখে রাইদের কাছে এসে বললো_
— চলুন?
বাড়িটা অনেকটা ডুপ্লেক্স সিস্টেমে বানানো । ড্রয়িংরুমের ঠিক পেছনে এক সাইড দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে । সিঁড়ি বেয়ে ওপরে লিভিংরুম ।
রুমে এসেই বিছানায় শুয়ে পড়ে মিথি । রাইদ ভ্রু কুঁচকে বলে_
— ফ্রেশ হবা না?
— উঁহু আমি খুব টায়ার্ড ।
— ধুলোবালিতে মাখামাখি হয়ে এসে এখন বলছো টায়ার্ড? যাও ফ্রেশ হয়ে আসো ।
— না পারবো না । আগে একটু ঘুমাই ।
— ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমাও ।
— আপনার দরকার আপনি ফ্রেশ হন গিয়ে ।
— এমন অবস্থায় শুয়ে পড়লে খাটুনি তোমারই হবে । বেড শিট আবার চেঞ্জ করতে হবে, আমি ধুলোবালি মাখা বিছানায় শুবো না ।
— কত্ত ঢং! শোবেন না তো অন্য রুমে চলে যান আমি তো ঘুমাবো এভাবেই ।
পুলোভার টা খুলে রেখে ব্ল্যাংকেটের নিচে ঢুকে গেলো মিথি ।
রাইদ মাথা নেড়ে বিড়বিড় করে বললো, “অলস মেয়ে একটা”
ওদের আসতে আসতে যেহেতু সন্ধ্যা হয়ে গেছিলো তাই সেদিন আর বাড়ি ঘুরে দেখা হলো না । সন্ধ্যায় ঘুমানোর কারণে রাত বারোটার দিকে ঘুমটা ভেঙে গেলো মিথির । আর তো ঘুমাতে পারে না । পরে খাওয়া দাওয়া করে রাইদ কে টেনে বসিয়ে গল্প করলো । রাইদ বেচারা খুব কষ্ট করে চোখ খোলা রাখতে পেরেছে ।
সারা রাত ওকে এই গল্প নামক অত্যাচার করে ফজরের আজানের পর পর ঘুমিয়েছে মিথিলা । দেরি করে ঘুমানোর ফলে উঠেছেও দেরিতে ।
দু’জনেরই ঘুম ভেঙেছে বেলা এগারোটায় ।
হালকা নাশতা সেরে রাইদ মিথি কে এরিয়াটা ঘুরে দেখিয়েছে ।
ফ্যান ফলোয়ার নামক অত্যাচার থেকে বাঁচতে দু’জন কেই মুখ ঢেকে বেরুতে হয়েছে এমনকি তারা গাড়িও নেয়নি ।
তবে বাড়ি থেকে বেরুতে যারা দেখেছে তারা কয়েকজন ছুটে এসেছিলো অটোগ্রাফ নিতে ।
তাদের কড়া ভাবে নিষেধ করে দিয়েছে যাতে কাউকে না বলে ওরা বেরিয়েছে । রাইদের অজান্তে ওর পেছনে গার্ড পাঠিয়েছিলো রফিক ।
তারা নিঃশব্দে অচেনা মানুষের মত পেছনে পেছনে ছিলো ।
রাইদের বাসা থেকে কিছুদূর এগিয়ে একটা লেক ।
মিথি কে নিয়ে ওই লেক পাড়ে যায় রাইদ । ওখানে খালি পায়ে নরম ঘাসের ওপর হেঁটে বেড়ায় দু’জনে । পুরো বিকেল টা ওখানে কাটিয়ে সূর্যাস্ত একসাথে দেখে ।
বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ রাইদ ওর দু’হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে একটু ইতস্তত করে বলে_
— আমি তোমার সাথে এ অবধি যা যা অন্যায় করেছি তারজন্য কি আমাকে ক্ষমা করা যায় প্লিজ? আমি আসলে এই কয়দিনে উপলব্ধি করলাম আমি জীবনটাকে যেমন জটিল ভাবতাম এটা তেমন জটিল নয় । মূলত সরল নাকি জটিল এটা মানুষের চিন্তার ওপর নির্ভর করে ।
আমি যদি আমার অর্ধাঙ্গিনীর সাথে সম্পর্ক টা সহজ করে নেই তা’হলে জীবনটা সরল মনে হবে আর যদি জটিল ভাবি তাহলেই জটিল হয়ে যাবে ।
আমি আসলে তোমার কাছে সুযোগ চাইছি । একটা ঝামেলার মধ্যে দিয়ে আমাদের বিয়েটা হলো , জানি আমাদের বিয়েতে তোমার মত ছিলো না তুমি তোমার উড বি এর জন্য ঠিকমত চোখের জল ফেলার সুযোগ পাওনি তার আগেই মানুষের কটু কথা শুনে কিংবা ভবিষ্যতে শুনতে হবে ভেবে তোমাকে আমার সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছিল ।
একটা কথা কি জানো? বিধাতা যার সাথে তোমার ভাগ্য ডোর বেঁধে দিয়েছেন তার সাথেই তোমায় মানিয়ে নিতে হবে । মানিয়ে নিতে নিতে মন থেকে মেনে নেবে এবং একটা সময় বন্ধন দৃঢ় হবে ।
বিলিভ মি তোমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে আমি বিয়ে করতাম না । সবাই জানে আমি আমার বন্ধু মারজুকের রিকোয়েস্টে তোমাকে বিয়ে করেছি কিন্তু এই কথাটা সত্য নয় । আমিই মূলত তোমার উড বি এর মৃত্যুর খবর শুনে বিয়ের কথা তুলেছিলাম । আমিই ওদের ইনফ্লুয়েন্স করেছিলাম এটা বলে যে যার বিয়ের আগেই হবু স্বামী মারা যায় তাকে সমাজ অপয়া বলবে , তার বিয়ে হবে না ।
এক প্রকার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আমি পরিস্থিতি আমার অনুকুলে এনেছিলাম ।
তুমি এখন বলবে আমি কেনো এমন টা করেছি!
আমি ঐ মুহুর্তে নিজের স্বার্থ পেয়ে গেছিলাম । আমার বাবা’র মৃত্যু , তার লাশ খুঁজে না পাওয়া এর জন্য পরোক্ষভাবে তোমাকে দায়ী করেছে আমার অবচেতন মন । ঐ মুহুর্তে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে আমি বিয়ে করেছিলাম তোমায় । আমি ভাবছিলাম তোমাকে খুব কষ্ট দেবো । আমার বাবা এবং বোন জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর যে কষ্টটা আমি পেয়েছি তার একাংশ হলেও তোমায় উপলব্ধি করানোর জন্য আমি বিয়ের পীড়িতে বসেছিলাম ।
আমার সব পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে গেলো তোমার সাথে ঐ ইন্সিডেন্টের পর । মিথি ভালোবাসা , মায়া এসব এক মুহুর্তে হয়ে যেতে পারে । তোমার সাথে আমার ক্ষণিকের পরিচয় নয় । আমি তোমার শৈশব থেকে তোমায় চিনি মাঝখানে কিছু তিক্ত ঘটনার কারণে আমরা আলাদা হয়ে গেলেও আমার মনে তোমার জন্য সফট কর্নার ছিলোই ।
আসলে আমি সব অতীত ভুলে বর্তমান আর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতে চাই মিথি । তুমি কি আমায় একটা সুযোগ দেবে?
— সুযোগ! রাইদ আপনি তো আমাকে দোষ না করেই ভিক্টিম বানিয়ে রেখে দিয়েছেন । একপাক্ষিক অন্যায় আমার ওপরই হচ্ছে শুরু থেকে । ঐদিন আপনার বাবা কে খুন করতে দেখেছিলাম আমি এবং আপনাদের জানাইও কিন্তু আপনাদের সাথে কথা বলতে বাবা আমায় দেখে নেয় । আমি ছোট মানুষ , আমার পৃথিবী আমার বাবা-মা ছিলো । বাবা আমায় বলে এই কথা আমি কাউকে বলে দিলে বাবাকে আমার থেকে দূরে নিয়ে যাবে, আমি কখনোই দেখা পাবো না তার ।
আমি বাবা কে প্রচন্ড ভালোবাসতাম আমি কিছুতেই চাইতাম না বাবা আমার থেকে দূরে যাক তাই আমি ভয় পেয়ে সেদিন মুখ খুলিনি কারো সামনেই । তখন ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য আমার মাথায় ছিলো না কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমি যখন বুঝতে পেরেছি তখন বাবা’র থেকে দূরে সরে গেছি ।
আপনাদের খোঁজার চেষ্টা করেছি একটা স্যরি বলবো বলে । বাবার থেকে দূরে থাকবো বলে ক্লাস টেন থেকে আমি হোস্টেলে থেকেছি ।
অপরাধবোধ আমার মনেও ছিলো ।
আমার বাবা’র করা ক্রাইমের শাস্তি আমি কেনো পাবো? আমার এখানে ভুল টা কোথায়??
যে সংসার টাই ছলনা আর প্রতিশোধের নেশায় গড়া তার কি কোনো ভবিষ্যৎ আছে?
— তা’হলে কি তুমি আমায় সুযোগ দেবে না?
— আমার চিন্তা করার জন্য সময় চাই রাইদ ।
হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায় মিথিলা । ওর যাবার পানে তাকিয়ে রাইদ কেবলই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে । যে জীবনটাই মিথ্যে আর ছলনা দিয়ে ভরা তার মধ্যে সুখ আসবে কীভাবে?
চলবে,