একঝাঁক জোনাকির আলো

একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 42

৪২
বর্তমান_________________
ঠান্ডা ভিজাঁ বালিতে সাফা বসে আছে।তার সামনে বিশাল হৃদয়ের সমুদ্র।যার এক একটা ঢেউ এসে ভিঁজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে পা জোড়া।আকাশে বিশাল চাঁদ।থালার মত লাগছে সে চাঁদকে।সাফার দৃষ্টি চাঁদ থেকে সমুদ্রে নামে।আবার চাঁদে যায়।সমুদ্রের এক একটা ঢেউ তার মনের শূন্যতায় এসে বারি খাচ্ছে। উত্তাপ ঢেউয়ের শব্দে মনের ক্ষত জেগে উঠে হু হু করে।মনের বিষাদময় কষ্টে আবার কাঁপে বুকের বাঁ পাশের হৃৎপিন্ডটা।সাফার হাতে পায়েল আর আংটি।আজ নিয়ে শতখানেক বারের উপর সে এগুলো ফেলে দিতে চেয়েছে।কখনো নদীতে কখনো পুকুরে কখনো রাস্তায়।কিন্তু দিতে পারলো না।মুঠোয় ভর্তি করে বসে রইলো প্রতিবারের মত।একটা ঢেউ যেমন ভিঁজিয়ে দিয়ে রূপ পরিবর্তন করে এই বালির ঠিক একুই ভাবে একটা বছর তার রূপের কত পরিবর্তন করে দিয়েছে।ভেবেই সাফা তাছিল্যের হাসি হাসে।জীবন কত বিচিত্র।বিচিত্র এর রূপ রং।আর সবচাইতে বিচিত্র এর ভালোবাসা নামক যন্ত্রনা।একবছর আগেও যে ভালোবাসা ছিলো আবেগের আজ তা কতটা গভীর কতটা ভয়ংকর রূপ নিয়েছে তা বুঝা দায়।এই ভালোবাসা চঞ্চল সাফারানী থেকে বুঝদ্বার, কঠিন মুখের সাফার জন্ম দিয়েছে।ভালোবাসা এক জীবন্ত প্রান।তা না হলে এত পরিবর্তনের ক্ষমতা এর থাকতো না।প্রেম আর ভালোবাসার মাঝেও সাফা বিস্তর ভিন্নতা খুঁজে পেয়েছে।প্রেম যখন গভীর হবে তবে তা আর প্রেম থাকে না।নাম নেয় ভালোবাসার।সেই রাতে যতটা সাহস নিয়ে প্রেম ছাড়তে পেরেছে আজও ততটা সাহস নিয়ে ভালোবাসা বুলতে পাড়েনি। এটাই পার্থক্য।সাফার হেজাবের এক অংশ উড়ছে বাতাসের তালে।এই বাতাস হৃদয়কে ঠান্ডা না করে আরো উত্তেজিত কেনো করে তা সাফার জানা নেই।শরীরের উড়নাটা উড়ে এসে একবার মুখে পরে আবার তা সরে যায়।সাফা নিজের দু হাত পিছনের বালির উপড় দিয়ে রেখেছে।চোখ তার শূন্যে এবার।কত পুরোনো আবেগ আবার জেগে উঠেছে মনে। কত তিব্র এর ক্ষত।বাস্তবতার কাছে ভালোবাসা নামক ভয়ংকর কথাটাও হার মেনে নেয়।সাফার চোখের দুই কোনা বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অসংখ্য পানির কনা।এটা নতুন না পুরানো ক্ষতর পুরোনো পানি।যা প্রতি রাতে এই সমুদ্রের পাড়ে,বা নদীর তীরে কখনো বালিশের বুকে নিজেদের জায়গা করে নেয়।সাফা কান খাড়া করে,সমুদ্রের সাঁ সাঁ শব্দ কানে এসে ধাক্কা খায় প্রবল ভাবে।হৃদয়ের কোনে কোনে টুকরো টুকরো ভালোবাসারা জেগে উঠে সাথে তার ক্ষত।
—” আর কত সময় বসে বসে চোখের পানি ফেলবি মোহারানী??”
ঝুমার এমন কথায় সাফা কপাট রাগ নিয়ে তার দিকে তাকায়।ঝাঁঝালো গলায় বলল,
—” ঝুমা কতবার বলেছি আমাকে এই শব্দে ডাকবি না??তারপরও একুই ভুল করতে তোর ভালো লাগে??আমার কিন্তু শুনতে ভালো লাগে না।”
ঝুমা বুঝতে পেরে বাসে বসে।সাফার মত সামনে তাকিয়ে বলল,
—” এতটা ভালোবাসলে ছেড়ে কেনো এলি?? সবার উপড়ে ভালোবাস। তাই তোরও ছেঁড়ে আসা উচিঁত ছিলো না।”
সাফা ঝুমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।তারপর বলল,
—” কে বলেছে সবার উপড়ে ভালোবাসা??আমি যদি বলি সবার উপরে ভালোবাসার মানুষ গুলো!! ”
—” ওই একুই ব্যাপার।”
—” মোটেও না।দুটি দুই রকম।যেটা ছেড়ে এসেছি সেটা আমার ভালোবাসা।আর যাদের জন্য ছেড়ে এসেছি তারা ভালোবাসার মানুষ।তাই দুইটাই ভিন্ন।”
ঝুমা বিরক্তির সাথে শ্বাস নেয়।তারপর দাঁড়িয়ে সাফার হাত টানতে টানতে বলে,
—” হইছে তোর জ্ঞান দেওয়া। তাহলে চল। সবাই ও দিকে।আর তুই এদিকে একা একা বসে কি সব চিন্তা করছ।চল।”
—” যাবো কিছুক্ষণ পরে।তার আগে বল তুই তোর ভালোবাসা ছেঁড়ে আমার কাছে কেনো পরে আছিস?”
—” অভি তোকেও অনেক ভালোবাসে।তোর কাছে থাকলেই ও বেশি খুশি হবে।আর তুই নিজেই আমার ভালোবাসা।ওই দিন যদি তোর সাথে বাসে হুট করে দেখা না হত তাহলে তো তোকে কখনই খুঁজে পাইতাম না।আল্লাহ বাঁচাইছে। আর এতে অভি কষ্টে থাকলেও খুশি।”
—” এটা বুঝাতে চেয়েছি।এই কারনেই ছেড়ে এসেছি।”
ঝুমা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ ভাবে।তারপর বলে,
—” ভাই এবারো বুঝলাম না।”
—” নিজ দায়িত্ব বুঝে নে।ইডিয়ট।এসব ছাড়া।তুই প্রতিদিন বাড়ির ছেলেমেয়ে গুলোরে আমার পিছনে পিছনে নিয়ে আসছ কা বলতো??”
ঝুমা বলে না।হাঁসে শুধু।সেদিন সাফার বাবা আর সাফার সাথে হুট করেই বাসে দেখা হয়ে যায় ঝুমার।ঝুমা সাফার সবচাইতে প্রিয় বন্ধু।তাই সব কথা গুলো শুনে সাফার সাথে সেও পারি জমায় লুকুচুরি খেলায়।একসাথেই থাকে তারা।তারা কক্সবাজারে থাকে এখন।তবে বিগত একমাস এখানে থাকছে।সাফা একজায়গায় থাকে না।নানা সময় নানা জায়গায় থাকে।লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু পরীক্ষা দেয় ভার্সিটি যেয়ে।তাছাড়া সে তার এলোমেলো জীবন নিয়েই থাকে।
সাফা ঝুমা বাচ্চারের পাশে বসে।বাচ্চা গুলো তাদের বাড়িওয়ালার।সমুদ্রের একটু দূরেই তাদের বাড়ি।সাফা এখানে কিছু ছেলেমেয়েকে পড়ায়।সারা দিন নিজেকে ব্যস্ত রাখে। আর এই একমাস ধরেই সমুদ্রের সাথে তার বেশ ভাব হয়েছে।তাই এখানে এসে বসে।
সাফারা বসে আছে।সবাই গল্প করছে।সাফা উদাসীন হয়ে বসে আছে।তার চোখ সমুদ্রে।তাদের একটু পাশেই কিছু তরুণ তরুণী বসে গান বাজনা করছে।তারা এখানে ঘুরতে এসেছে বুঝাই যাচ্ছে।গল্পও করছে তারা।গল্পের বিষয় ভালোবাসা।সাফা কান পেতে সেসব শুনছে আর মনের অজান্তেই হাসছে।যে বিষয়টা থেকে সে পালিয়ে বেড়ায় সেটাই তার আশেপাশে আলোচনা হয়।এমনকি সে ভালোবাসার জায়গায় বসে আছে।সমুদ্রে তো ভালোবাসার একটা নিদর্শন। তার কাছেই সে প্রতিরাতে নিজের বিচ্ছদের গল্প শুনাতে আসে।সাফা মনে মনে ভাবে সমুদ্র নিশ্চুই তাকে নিয়ে হাসে।হাঁসারই কথা।সাফা নিজেই হাঁসে।একটা মেয়ে বলে উঠে,
—” তোর চিরকুটে লেখা প্রেম ভালোবাসা কি এবং বিচ্ছদ কি।ভয়ংকরতা ব্যাখা করো?? বল এবার।”
বলেই সবাই হেঁসে উঠে।ছেলেটা করুন সুরে বলল,
—” ভাই প্রেম তো প্রেম আর ভালোবাসা তো ভালোবাসা এটা বুঝানের কি আছে?বাদদে আর একটা তোল!!”
—” হবে না।তোরে এটাই বুঝাতে হবে।তুই জীবনে কম প্রেম তো করস নাই।এখন বলতে পারস না কা??
—” ভাই প্রেম করি ভালো কথা এত ডিটেল্স জানমু কেমনে??ছাড় না।”
—“না না”
এবার আশেপাশে সবাই চেঁচিয়ে উঠেছে।আর বেচারা চিন্তায় মগ্ন।সাফা কান পেতে সব শুনছে আর হাসছে।তার ভালো লাগছে অনেক দিন পরে এদের কথা শুনে।সাফা উঠে ওদের পাশে বসে।সবাই অবাক।সাফাকে দেখে।সাফা গভীর গলায় বলে,
—” পিকনিকে এসেছ বুঝি??”
—” হুম।”একটা মেয়ে বলে।
—” কোন ক্লাস??”
—” এবার অনার্স ফার্স্ট এয়ার।”
সাফা আবার হাঁসে। এই বয়সেই তো.. আর ভাবে না।পুরোনো স্মিতি। সবই পুরাতন।তার কাছেও হয় তো।সাফা আবার উঠতে চায়।ছেলেটা বলে,
—” আপনি বলতে পারবেন এই আজাইরা প্রশ্নের উত্তর??”
সাফা ঘুড়ে তাকায়।চোখে মুখে কঠিন দৃষ্টি। ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বলে,
—” না মানে আপনি ওই কথাটা শুনেই এদিকে এসেছেন তাই বললাম।রাগ করলে সরি।”
সাফা আবার বসে।ঝুমা দূর থেকে দেখে।সাফা সমুদ্রের দিকে চোখ রাখে।একদম গভীরে।তারপর বলা শুরু করার ভঙিতে বলে,
—“প্রেম জীবনের একটা অদ্ভুত পৃষ্ঠা।এই পৃষ্ঠা তুমি না পড়তে চাইলেও তোমাকে পড়তে হবে।এ যেনো জ্বলন্ত আগুন।এতে না জ্বলে তুমি পার পাবেনা।এর প্রথম অনুভুতি তোমাকে সব দিক থেকে থমকে দিবে।ভাসিয়ে নিবে বহু থেকে বহু দূর।সমুদ্রের উত্তাপের মত এর ঢেউ।তুমি ভাসবে এই ঢেউয়ের মাঝে।কিন্তু,কিন্তু প্রেম তো আগুন।আর আগুন নিয়ে খেললে যদি তুমি না জ্বলো তবে খাটি হবে কিভাবে?তাই প্রেমে জ্বলতে হয়।এটা যতটা দ্রুত তোমাকে আক্রমণ করবে ততটা দ্রুত তোমাকে মুক্তি দিবে এটা ভাবা নিছক বোকামি।এটা মুক্তি দেওয়ার নয়।এই যন্ত্রনা কঠিন, ভয়ংকর কঠিন এর প্রহার।তোমার হৃদয়ের গভীর থেকে গভীরে এর আক্রমণ চলে।সবার প্রেম আলাদা।কারো সাথে কারো প্রেমের মিলবন্ধন নেই।আল্লাহ মানুষ যেমন আলাদা আলাদা বানিয়েছে তাদের মাঝের সব সত্তাকে আলাদা আলাদা রূপ দিয়েছে।প্রেমেও দিয়েছে আলাদা অনুভুতি ।মেয়েদের প্রেম পুুরুষের চেয়ে আলাদা।মেয়েদের প্রেম লুকানো।একান্ত নিজের করে রাখার ক্ষমতা আছে এদের।পুুরুষ জাহের করতে পারে নারী লুকিয়ে রাখতে পারে।এটাই প্রেমের আসল নাম।প্রেম তোমাকে বুঝিয়ে দিবে তুমি নিজের নও।এটাই তো পার্থক্য। প্রেম ভালোবাসা আর ভালো লাগার মাঝে।প্রেম বাতাসের মত এসে তোমার মনের কুড়িকে জাগিয়ে দিবে ভালোবাসার নামে।সে বাতাস চলে গেলেও এর শীতলতা তোমাকে দগ্ধ করবে তিলে তিলে।প্রেমে হার নেই।যা আছে সব জিত।এই যেমন তুমি তাকে পেলে না এটা জিত।পাওয়াতে সব সময় জিত থাকে এটা ভুল।হারেও থাকে বহু জিত।ভালো থাকার নামই ভালোবাসা।তাই সে ভালো থাকলেই হবে।এটাই তোমার জিত।তাকে মনের মাঝে রেখে একান্তে কষ্ট পাওয়াটা হল বিচ্ছেদ।এর প্রতিটা সময় মনের মাঝে পুষে রাখা হল এর ভয়ংকরতা।”
সাফা উঠে দাঁড়ায়। আজ হৃৎপিন্ডটা বেশিই ভারী হয়ে আছে।কষ্টে দম বন্ধ হয়ে আসছে।সব কিছু এলোমেলো লাগছে।সবাই মুগ্ধ শ্রোতার মত সব শুনেছে।সাফা কিছুদূর যেতেই ছেলেটা চেঁচিয়ে বলল,
—” আপনি এত সুন্দর ভালোবাসার অর্থ বুঝেন।যে আপনার প্রেমিক বা প্রিয়তম হবে সে খুবি লাকি।”
সাফা ঘুড়ে তাকিয়ে হাঁসে। তারপর আবার চিৎকার করেই বলে,
—” সে সবচাইতে অনলাকি ছিলো।”
সাফা হাঁটছে। ঝুমা তার পাশে।সাফার চোখমুখ ফুলে গেছে।ঝুমা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।আবার দৌড়ে সাফার পাশে পাশে হাঁটে।তারপর বলল,
—” ভাই আমার মনে হয় উনি এত সময়ে বিয়ে করে ফেলেছে।তোর কি মনে হয়??”
সাফা থমকে দাঁড়ায়। ঘাড় ঘুড়িয়ে বলে,
—” উনিটা কে??”
—” আরে নিভ্রনীল। উনার জন্য মেয়েরা তো হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে।মনে তো হয় বিয়েটিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চার বাপও হয়েগেছে। না একবছর হলেও হিসাব করলে আরো অনেক মাস চলেগেছে না।তাই বললাম।”
সাফা কিছু বলল না।চুপ করে থাকে।ঝুমা আবার বলে,
—” তোকে অনেক খুঁজেছে উনি।এমন কি এ..
—” তোকে প্রশ্ন করেছি??এসব বাদ দিতে কয়বার বলেছি??তুই আমার সাথে কথাই বলিস না।ফালতু।”
সাফা বাড়ির ভিতরে ডুকে যায়।ঝুমা মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর সেও ডুকে যায়।
______________________________
নিভ্র ঘরের প্রতিটা জিনিস নিখুঁত ভাবে ভেঙেছে।টিভি থেকে শুরু করে সোফা। সব আসবাবপত্র ভেঙে ফেলেছে।এতে তার পরিবারের প্রতিটি মানুষ খুশি।নিভ্র যেদিন জিনিস ভাঙে সেদিনই সবার সাথে দুইচারটি কথা বলে।এতেই তারা খুশি।আজও ভেঙেছে।কিন্তু আজকে নিভ্র বেশিই রিয়েক্ট করছে।চিৎকার চেঁচামেচি করছে।বলছে,
—-“কয়বার বলেছি মেয়েদের আমার কেবিনে পাঠাতে না।কয়বার। তবুও কেনো পাঠালে??কেনো??”
কথাটা বলেই টেবিলের গ্লাসস ছুঁড়ে মারে।রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আছে।সবাই এবার ভয় পাচ্ছে।অভ্র পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।কিছুক্ষণ আগেই ঘরে ডুকেছে।ডুকেই এসব দেখছে।নিভ্র বুকে হাত দিয়ে এবার বসে পড়ে।হঠাৎ করেই সেন্সলেস হয়ে পড়ে।অভ্র ডাক্তারকে কল করেছে।নিভ্রকে তার রুমে রাখা হয়েছে।ফ্যামিলির সব মেম্বরের অবস্থা এমনেই খারাপ।তার উপড় আজ কি এমন হয়েছে নিভ্র এতটা হাইপার এটা অনেকেই বুঝতে পারছে না।ডাক্তার কঠিন গলায় বলে,
—” দেখো আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি ওকে কন্ট্রোল করো।নিভ্রর হার্ট দিন দিন প্রচন্ড দূর্বল হয়ে পড়ছে।এতে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেক বেশি।তাই ওর এত উত্তেজিত হওয়া মোটেও ভালো না।”
ইফতেখার হু হু করে কেঁদে দেয়।আজ নিভ্রর এতটা হাইপার হওয়ার পিছনে তিনি দায়ি।এক সুন্দরী মেয়েকে নিভ্রর সহকারীট পোস্টের জন্য নিজে সুপারিশ করে পাঠিয়েছে।মেয়েটাও ডাক্তার।যেটা নিভ্রর মেজাজ আরো খারাপ করে দিয়েছে।তিনি কি করবে??তার ছেলে দিন দিন উম্মাদের নেয় পরিনত হচ্ছে। এতদিন পরে ভালো হয়েছে।এখন যদি আবার অসুস্থ হয়ে পরে!!সে ভয়েই তিনি চাচ্ছে নিভ্র নিজের জীবনে এবার এগিয়ে যাক।কিন্তু নিভ্র আজ এতটা হাইপার হবে এটা তিনি বুঝতে পারেনি।ছেলের এমন খারাপ অবস্থা আর নিতে পাড়ছেনা তিনি।সাফা নামের মেয়েটাকে পেলে যে কি করবে তিনি নিজেও জানে না।সব তার জন্যই হয়েছে।এত ভালোবাসার প্রতিদান এভাবে দিলো??কিভাবে পারলো?? ইফতেখার আবার কেঁদে উঠে।সাখাওত স্ত্রীর দিকে তাকালেন না।ছেলের চিন্তায় তার ঘুম হয় না। বাড়ির সবাই চিন্তিত হয়ে আছে।মাহবুব বললেন,
—” ওকে কন্ট্রোল করা আমাদের হাতে নেই।এটা তুই যানছ আশিক।তবুও কেনো বলছ?”
ডা.আশিক মুখ ভার করে বললেন,
—” জানি।তবুও করতে হবে।আর সাফাকে খুজে বেড় কর।আমি এত কিছু বুঝিনা।তোরা কিসের এত বড় লোক বলতো??এত কিসের পাওয়ার??এসব পানিতে ফেলেদে।একটা পুচকু মেয়েকে খুজে বেড় করতে পারলিনা।মর তোরা।আর তুমি সাখাওত ছেলের প্রতি মনোযোগী হও সবাই।আমার লাইফে আমি এমন ভয়ংকর প্রেমিক দেখি নাই।ভালোবাসা যে এতটা ভয়ংকর আর ডেস্পারেট করতে পারে নিভ্রকে না দেখে বুঝতেই পারতাম না।আল্লাহ।একজন হার্টসার্জেন ও। তবুও নিজের প্রতি এত উদাসীন কেনো??আল্লাহ সাফাকে ফিরিয়ে দেয়।আমার এত বছরের ক্যারিয়ারে এই প্রথম রোগীর জন্য ঔষুধ না একজন ভালোবাসার মানুষকে চাইছি।ওই মেয়ে বাদে আমার মনে হয় না নিভ্র জীবিত থাকবে।সরি খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই।এত দিন ওর টিকমেন্টের করে আমি এটাই বুঝেছি।”
কথাগুলো বলেই তিনি থামলেন।দীর্ঘশ্বাস ফেললেন কিছু সময়।বাড়ির সবাই কেঁদে দিয়েছে।রাফা তো প্রচন্ড চিৎকার করেই কাঁদছে।নিশান তাই তাকে নিয়ে রুমের বাহিরে চলে গেছে।আশিক আবার বলেন,
—“অভ্র রেগুলার ঔষুধ দিবে। এখন আসি।ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে ঘুমাবে এখন ও।তোমরা প্লিজজ ওকে খুঁজে বের করো।নিভ্র আমার স্টুডেন্ট ছিলো।ওর মস্তিষ্ক বাকি সবার মত সাধারন না।ভিন্ন অসাধারণ মস্তিষ্ক তার।তাই সব দিকে পারদর্শী ও।একবার যা ভেবে নেয় তাই থাকে মাথায়।প্রচন্ড বিলিয়েন্ট স্টুডেন্ট ছিলো।একটা কাজ করবে ভাবলে সেটাই করে সে।তাকে নিয়ন্ত্রণ করা দায়।আর ছোট থেকেই একা থাকতে থাকতে আর প্রচন্ড যিদ্দি হওয়ায় নিভ্র অন্যরকম হয়েছে।ওর যা চাই তা না পেলে ও সত্যি ডেস্পারেট হয়ে পরে।অভিজ্ঞাতা থেকে বলছি। ডু সামথিং।”
.
.
#চলবে__________________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *