একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 40
৪০.
_________________
—” বিয়ে মানে??”অভ্রর আশ্চর্য জনক প্রশ্ন।
—” বিয়ে মানে বিয়ে।মাহি আর নিভ্রর।
মাহির বাবার একথাটা শুনেই অভ্র একবার নিভ্রকে তো একবার সাফাকে দেখে নেয়।সাফা মাথা নিচু করে বসে আছে সাথে নিভ্রও।অভ্র আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিভ্র হাত টেনে বসিয়ে দিয়েছে তার পাশে।অভ্র চরম অবাক নিভ্রর কাজে।নিভ্র এবার নিচের দিকে তাকিয়েই বলে,
—” তারিখ ঠিক করছেন না কেনো??”
সাফা মাথা তুলে আবার একবার তাকায়।নিভ্র মাহিকেই বিয়ে করতে চায় ভেবে তার প্রচন্ড যন্ত্র না হচ্ছে। সাফা এখানে বসে থাকতে পাড়ছে না।তার ভালো লাগছে না। কেমন যানি আওয়াজ করে কাদঁতে ইচ্ছে করছে।কই আগে তো এত ভালোবাসা অনুভব হয়নি?? তবে আজ কেনো মনে হচ্ছে নিভ্রকে সে প্রচন্ড প্রচন্ড ভালোবাসে।সাফার চোখে পানি বার বার গালে পরতে চাইছে। সাফা চোখের মধ্যেই উড়না দিয়ে পানি মুছে ফেলছে।
নিভ্রর কথা শুনে পরিবারের প্রতিটি মেম্বার হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।মানি সহ তার পরিবার খুশিতে ডগমগ করে উঠে।মাহির বাবা বলে,
—” দেখলি ছেলেও রাজি।আমি তো যানতাম এমন হবে তাই তো বলছি।আচ্ছা তারিখ ঠিক করে ফেলি। কত তারিখ দিলে ভালো হবে সাখাওত??শুভ কাজে দেরি করতে নেই। ”
সাখাওত ছেলের দিকে তাকিয়ে ভারী অবাক হওয়া গলায় বলে,
—” তুই সত্যিই এই বিয়েতে রাজি??”
নিভ্র নিচের দিকে তাকিয়েই বলে,
—” তারিখ ঠিক করতে বলছি।মানে করো।”
অভ্রর মন চাচ্ছে ঠাটিয়ে চড় দিয়ে গাল লাল করে দিতে নিভ্রর।এগুলো কি উল্টাপাল্টা কথা বলছে।অভ্রর মনে হচ্ছে তার মাথাই ভৌ ভৌ করে ঘুড়ছে।নিভ্রর কানের কাছে ফিসফসিয়ে বলে,
—” দেখ নিভ্র তুই পাগল হতে চাস ভালো আমাদেরকে করিস না।তুই এই মাহিরে হঠাৎ বিয়ে করতে চাস কেনো??তোর মাথা কি নষ্ট হয়েগেছে??”
নিভ্র জবাব দেয় না।অভ্রর মেজাজ তুঙ্গিতে।মাহির বাবা নিজেই নিজেই এক মাস পরে একটা তারিখ ঠিক করে।সবাই এতটাই শক্ট কিছু বলছে না।এবার নিভ্র উঠে দাঁড়ায়।হাই তুলতে তুলতে বলে,
—” তা আপনার পছন্দ হয়েছে তো তারিখ??পরে আর চেঞ্জ করা যাবে না।”
সবাই এবার আবার অবাক।বিয়ের তারিখ ঠিক করেছে মাহির বাবা নিভ্র প্রশ্ন করছে সাফার বাবাকে।সারিক ভূত দেখার মত চমকে তাকিয়ে আছে।কিছুসময় পরে বলে,
—” আমাকে কেনো প্রশ্ন করছো??যে তারিখ দিয়েছে তাকে বা তোমার বাবাকে বলো!! আমাকে কেনো বলছো??”
—” প্রয়োজন তো আপনাকে।বাবা রাজি আপনি রাজি না হলে তো আমার ভিলেন হতে হবে।তাই আপনার অনুমতির প্রয়োজন।”
সবাই এবার চমর বিস্মিত।নিভ্রর কথা তারা কিছুই বুঝতে পারছে না।এতসময় তো মাহির পরিবার অবাক হয়নি কিন্তু এখন তারাও অবাক।এগুলো কি বলছে নিভ্র বা কি হচ্ছে কিছুই তাদের মাথায় ডুকছে না।অভ্র এবার আয়েশ করে বসে।তার কেমন সিনেমা সিনেমা লাগছে সব।বেশ মজাই পাচ্ছে সে।সাফার বাবা আশ্চর্য হয়ে বললেন,
—” কি সব বলছো বাবা??ভিলেন কেনো হবে??আর আমি রাজি না কি রাজি না তা দিয়ে কি হবে??বিয়ে যারা করবে তাদের সাথে কথা বলো??তারা রাজি হলেই হবে।”
নিভ্র এবার সাফার দিকে ঘুড়ে।সাফা প্রচন্ড অবাক সাথে বিরক্ত। লোকটা সোজা কথা বললে কি হয়??এত বাঁকা তেঁড়া কথার মানে কি??নিভ্র শান্ত গলায় বলে,
—” তুমি রাজি কি না তোমার বাবা প্রশ্ন করেছে?? তা তুমি রাজি তো??যদিও জানি পর্মালেটি মেন্টেন করতে হয় তো সাফারানী।তাই প্রশ্ন করলাম।”
মাহির বাবা এতসময় ভাবনায় ডুবে ভাবছিলেন নিভ্র কি করতে চাইছে। এবার নড়েচড়ে বসে বলে,
—” আরে ওকে প্রশ্ন করছ কেনো??মাহিকে করো??যে তোমার বউ হবে তাকে কারো??”
—” তাকেইত করছি।”
সবাই এবার তাকিয়ে নিভ্রকে দেখছে।কেউ কথা বলছে না।সাফার বাবা তো বোবার মত তাকিয়ে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে কথাই বলতে পারেনা।সাফার মুখ হা হয়ে গেছে।চোখ ভর্তি পানি এখনো টলমল করছে।একটু ধাক্কা দিলেই বেড়িয়ে আসবে মনে হয়।নিভ্র এবার বিরক্তি নিয়ে বলে,
—” আরে আজব তো??কেউ কিছু বলছেন না কেনো??কিছুক্ষণ আগেও কত কথা সবার।এ হলে যাবে তার বিয়ে হবে ব্লা ব্লা। যেই আমি বলা শুরু করলাম সব চুপ।আশ্চর্য তো!!আচ্ছা ক্লিয়ার করি।”
কথাটা বলে নিভ্র একটু থামে অভ্রর বাসে বসে পড়ে।অভ্র কানের কাছে এসে ছোট করে বলে,
—” ভাই তুই কি দুই বিয়ে করবি??ভাই এই কাজ ভুলেও করিস না।তাহলে আমি মেয়ে পাবো না।আর বউ সামলাবি কিভাবে।এই মাহি তো জঙ্গল একটা।”
নিভ্র চোখ গরম করে তাকাতেই অভ্র চুপ করে।নিভ্র সবাইকে উদ্যেশে করে বলে,
—” বিয়ে তো ওই তারিখেই হবে।শুধু আমার বউয়ের সাথে হবে।মানে অন্য মেয়ে না।আর সেটা যেহেতু সাফাই তাই ওর সাথেই বিয়ে হবে।তা সাফার বাবা যেহেতু আপনি আঙ্কেল তাই আপনার অনুমতির প্রয়োজন ছিলো কিন্তু যেহেতু আপনি নিজেই বলে দিলেন যারা বিয়ে করবে তারা রাজি হলেই হবে।তাই আমি এবং সাফা রাজি।কি রাজি তুমি??”
সাফা এখনো তাকিয়ে আছে।বাবার সামনে এই ছেলে তার সব বলে দিবে।আল্লাহ বাচাও। নিভ্র মুখ ঘুড়িয়ে আবার সাফার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” আরে ও রাজি।নিরবতা সম্মতির লক্ষণ।তাই আমার হবু বউ আমার বাড়িতেই এই কিছু দিন থাকবে হলে যাও লাগবে না।”
মাহির বাবা রেগে বলেন,
—” মজা করছো নাকি??তোমার বিয়ে সাফার সাথে কেনো হবে??মাহির সাথে হওয়ার কথা।সাফাকে মাঝে টানছ কেনো??”
—” মজা তো আপনি করেছেন আঙ্কেল।এখন আর করার প্রয়োজন নেই।মাঝে টানবো কেনো।আমাদের মাঝে কিছু নেই।তাই টানা টানির কি আছে।আপনার পছন্দ করা তারিখ টাই নিলাম তবুও আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো??সাফাকে বিয়ে করবো এটা পুরানো কথা।এটা নিয়ে এত ভাব বার কিছু নেই।সারিক আঙ্কেল একটু ভাবুক।উনি যানতো না তাই।আর দু’দিন পরে ঢাকা গিয়ে সব ঠিক করা হবে।এখন আলোচনা বন্ধ করে ঘুমাতে যাওয়া উচি।আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।চল অভ্র।আর আপনাকে ধন্যবাদ তা না হলে এত তাড়াতাড়ি আমার বিয়ের তারিখ ঠিক হত না।”
সবাই বসে আছে।মাহির বাবা, তার, তার মায়ের চেহারা দেখার মত।তাদের যে খুব রাগ হচ্ছে এটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। পারছে না নিভ্রকে খুন করে দিতে।নিভ্র অভ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেছে।সারিকে সাখাওত সব বুঝিয়ে বলছে।তার মাথায় কিছুই ডুকছে না।
________________
অভ্র বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে।নিভ্রর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে সে।নিভ্র যথেষ্ট ঠান্ডা কুল কুল হয়ে বসে ম্যাগাজিন দেখছে।অভ্ররাগী স্বরে নিভ্রকে বলে,
—” কিছুই ভালো ভাবে জবাব দিলি না।কি সব বলে চলে এলি।আমি ভেবেছি ঠাটিয়ে চড় দিবে মাহির গালে।মাহি ইচ্ছে করেই এমন করেছে বুঝলি।ওর আগের প্লান এসব।ওকে ভালো করে চিনি। বদের হাড্ডি একটা।তা না হলে ওর বাবা এত আগ্রহ দেখা তো না বিয়ের জন্য।শালি একটা শয়তান।
নিভ্র দুষ্টুমি ভরা গলায় বলে,
—” ওর বোন নাই।বিয়াও করতে পারবি না।সো শুধু শুধু শালি ডেকে কষ্ট পাবি।”
—” দেখ ফাইজলামি না।আঙ্কেল এখন ছোট চাচ্ছুর সাথে পার্টনারশিপ ভেঙে দিবে।এসবই ওর জন্য হয়েছে।ফাজিল মেয়ে।”
—” আরে ভাঙলে ভাঙবে আমাদের কি??বিজন্যাস আমাদেরটা ভালো।আর আমাদের কারনেই টিকে আছে তাই এত তাড়াতাড়ি পার্টনারশিপ ভাঙ্গবে না।চিলল।আমার তো সব রাগ রাফার উপড়ে।ওকে একটা শিক্ষা দিতে ইচ্ছে করছে।”
অভ্র ভারী অবাক হওয়া গলায় বলে,
—” মানে!!ও কি করলো??মেয়েটা বিয়ের কথা শুনেই কেঁদেছে আমি দেখেছি।”
—” সেটা না। ও হলে যাবে বলেছে কেনো??তাই রাগ হচ্ছে। ওর দূরে যাওয়ার কথা শুনলেই মাথা খারাপ হয়ে যায়।আর ও কিনা নিজেই যেতে চাচ্ছে!!”
নিভ্র এমন রাগী কথা শুনে।অভ্র শুধু হাসলো কিছু বললো না।
__________________
—” নীলা মারামারি করতে করতেই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। এটা প্রেম না শুধু ভালোও বাসি তোমায়।”
আরিফ চোখবুজেই কথাগুলো বলে দিলো।দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে সে।যানে এখন যেকোনো সময় তার গালে ঠাসসস ঠাসসস পড়বে।তবুও না বললে তো হবে না।থাপ্পড় খেয়ে হলেও বলা উঁচিত। অনেকসময় চলে গেছে থাপ্পড় এখনো পড়ে নি।আরিফ চোখ খুলে দেখে নীলা তাকিয়ে আছে তার দিকে।আরিফ ভয়ে ভয়ে বলে,
—” আমি রিলেশনে যেতে বলছিনা।শুধু মনের কথাটা বলছি।”
—” কেমন ভালোবাসেন??”
আরিফ মাথা নিচু করে বলে,
—” জানি না।শুধু তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে।রাতেও স্বপ্নে তোমাকে দেখি।তোমার সাথে মারামারি করতে ভালো লাগে।ঝগড়া করতেও ভালো লাগে।সব ভালো লাগে।এত ভালো আমার আগে কখনো লাগে নি।বিশ্বাস করো তুমিই প্রথম যাকে এত ভালো লাগে।”
নীলা তাকিয়ে আছে এখনো।কিছু বলছে না।আরিফ একবার মাথা তুলে তাকিয়ে নীলাকে দেখে।চোখে চোখ পরে।আবার বলে,
—” আমরা সব সময় ঝগড়া করবো।প্রেম করা লাগবে না।তুমি আমার সাথে সারা জীবন ঝগড়া করবে??”
নীলার মনে হয় না পৃথিবীতে কেউ এভাবে প্রপোজাল দিতে পারে।মিটমিটিয়ে হেঁসে ফেলে সে।যদিও সিরিয়েস থাকতে চেয়েছে সে তবুও পারলো না।আরিফ করুন স্বরে বলে,
—” আমি অত সুন্দর করে প্রপোজ করতে পারি না।যেভাবে তোমার সাথে আমার ভালো লাগে সেভাবেই বলেছি।তুমি ঝগড়া করলেই ভালো লাগে।”
—” আমি ঝুগরুটে??
—” এই নানা তবে ঝগড়াটা সেই লাগে।মনে হয় শুধু ঝগড়া করতে।”
—” আমি যদি আপনার ঝগড়ার পার্টনার হই আমার কি লাভ??”
—” তুমি তো নিভ্র স্যারের মত ভয়ংকর প্রেমিক পছন্দ করো।আমি না হয় স্যারের কাছে ট্রেনিং নিয়ে স্যারের মত হবো।তবুও ঝগড়ার লাইফ পার্টনার হবে??”
নীলা খিলখিল করে হেঁসে আরিফের গলা জড়িয়ে বল,
—” নিভ্রকে নিভ্রর মতই মানায়।আর ওর ভালোবাসা সাফার জন্যই ভালো দেখায়।আমাকে না হয় আপনি ঝগড়ার ভালোবাসা দিয়েন।আমার নিভ্রর মত না আরিফের মত ভালোবাসা চাই।ওরটা সাফারই থাকুক।হবো আপনার ঝগড়ার পার্টনার।কিন্তু শর্ত আছে।
—” সব মানবো বলো বলো!!”
—” বালতি ভরে পানি মাথায় ঢালবো মাঝে মাঝে।”
—” মাঝে মাঝে কেনো সব সময় ঢেলে দিয় সমস্যা নেই।”
নিভ্র হাঁসতে হাঁসতে বাড়ির পিছন থেকে বেড়িয়ে আসে।সাথে সবাই।সবাই মিলে এদের কাহিনী দেখছিলো।সাফাতো পেটে হাত দিয়ে গড়াগড়ির অবস্থা। এদের দেখেই ছিটকে দুরে চলে যায় তারা দুজনে।নিভ্র আরিফের পিঠ চাপড়ে বলে,
—” আরিফ তুমি যে কি?? তা আমি আজও বুঝলাম না।তবে বেস্ট প্রপোজ ছিলো এটা।ঝুগরুটে প্রেমিক প্রেমিকা।😂
আকাশও এসে অভিনন্দন দিয়ে বলে,
—” ভাই ভাবতে পারবেন না কত কষ্টে হাসি আঁটকে রাখছি।ভাই তোমরা যখন সংসার করবা আমাকে একমাস সাথে রাখিও একটু ঝগড়ার লাইফ পার্টনারের সংসার দেখমু।
সবাই হাসছে।আরিফ নীলা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
_______________________
গভীর রাত।চারপাশে নিরবতা ছেঁয়ে গেছে।আকাশ ভর্তি তারা,আর চাঁদ।সাফা ছাদের দরজা থেকে উঁকি দিয়ে নিভ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক।সাফার ঘুম আসছে না তাই ছাঁদে এসেছে কিন্তু নিভ্র কি করছে??সাফা গুটিগুটি পায়ে নিভ্রর পিছনে দাঁড়ায়। নিভ্র না ঘুড়েই বলে,
—” এত রাতে ছাদে কি করছ??”
সাফা বেশ অবাক হয়।তারপরই নিভ্রর দু’হাতের মাঝে নিজের দু’হাতে দিয়ে জড়িয়ে নেয় পিছন থেকে।নিভ্র এখনো সামনে তাকিয়ে আছে।সাফা করুন স্বরে বলে,
—” স্যরি আমি হলে যেতে চাইনি।কিন্তু ওরা অনেক অপমান করে বলেছিলো তাই আমিও চলে যাবো বলেছি।আপনি কি রাগ করেছেন??”
নিভ্র এবার ঘুড়ে দাঁড়ায়। রেলিংয়ের সাথে ঘেঁষে দাঁড়ায় সে।এক হাতে সাফার কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে নেয়।খুব কাছে টেনে নিভ্র গভীর স্বরে বলে,
—” তুমি দূরে যাবে শুনলেই খুব কষ্ট হয় আমার।মনে হয় দম বন্ধ হয়েগেছে। আমি মনে হয় না তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো।”
সাফা নিভ্রর চোখে চোখ রাখে।তারপর বলে,
—” কেউ কাউকে ছাড়া মরে না।বাঁচাটা কষ্টের কিন্তু মরেনা।”
—” তুমি মাঝে মাঝে বড়দের মত কথা বলো।”
সাফা মুখ ফুলিয়ে বলে,
—” আমি কি ছোট নাকি।বড়ইত।তাই বড়দের মত কথা বলি।”
নিভ্র হাসলো।কিছু বললো না।সাফার সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।এক পাশ কাত হয়ে সাফার গালেও একটা চুমু খেলে সাফা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।চাঁদের আলোয় তা মারাত্মক আঁকার ধারন করেছে।নিভ্র নিচে বসে। সাফাকেও বসায়।এক হাতে জড়িয়ে নেয় সাফাকে।নিভ্রর বুকে গুটিশুটি মেরে সাফা মাথা রাখে।নিভ্র নেশাতর কন্ঠে ডাকে,
—” সাফারানী!!”
সাফা ছোট করে জবাব দেয়,
—“হুম।
—” ভালোবাসি।”
সাফা আমিও বলতে চেয়েও বলে না।লজ্জায় পড়ে গলায় থেকে যায় সে কথা।সাফার মনে ডানা ঝাপ্টে হাজারো ভালোবাসার কথা ঘুড়ে।কিন্তু বলা হয় না।মেয়েদের ভালোবাসায় সুপ্ততা বেশি।প্রেমে পড়ে ভালোবাসার নতুন সব মানে বুঝিয়েছে নিভ্র তাকে।নিভ্রকে গভীর ভাবে ভালোবেসে ফেলেছে সে।এ ভালোবাসা ভয়ংকর আকার ধারন করছে দিন দিন।সাফা মাথা তুলে তাকায়।নিভ্রও চোখ মেলে তাকায়।সাফা গভীর ভাবে চাঁদের আলোতে নিভ্রর সবুজ জ্বলজ্বল করা চোখে চোখ রাখে।নিভ্রও রাখে।মুহূর্তেই হাসে নিভ্র।সাফার মুখটা হাত দিয়ে উঁচু করে ডান গালে আবার একটা চুমু খায়।এর বেশি তার অধীকারে পড়ে না।তাই হাজারো নিষিদ্ধ ইচ্ছা নিভ্র নিজের মাঝেই লুকিয়ে রাখে।নিভ্র মাতাল করা ঠান্ডা কন্ঠে চোখে চোখ রেখে বললো,
—” ভালোবাসি।”
সাফা হেঁসে বলে,
—” কয়বার বলবেন আর??”
—” সারা জীবন।যতসময় শ্বাস চলবে।ঠিক তত বার বলবো।”
সাফা আবার হাঁসে। নিভ্র সাফার কোলে মাথা রাখে।চাঁদের দিকে একবার তাকায় সাফার দিকে একবার তাকায়।আকাশের দিকে তাকিয়ে গভীর আবেগ নিয়ে বলে,
—” বলো তো আকাশ কার চাঁদ বেশি মায়ায় বাঁধা??আমার না তোমার??”
সাফা ভারী অবাক হয়ে বলে,
—” আপনার আবার চাঁদ আছে নাকি??”
—” অবশ্যই আছে!এই যে আমি চাঁদের কোলে মাথা রেখেছি।”
সাফা কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার হাঁসে। মাথা ঝুঁকিয়ে নিভ্রর সামনে আসা চুলগুলো সরিয়ে কপালে একটা গভীর চুমু আঁকে।নিভ্র কিছুসময় চোখবুজেই হঠাৎ খুলেই সাফার পাশে উঠে বসে।সাফার দিকে তাকিয়ে দুষ্টমির সুর তুলে বলে,
—” ছেলেদের সাথে আগবাড়িয়ে বেশি ভালোবাসা দেখাতে এসো না।আমার ক্ষেত্র তো আরো না।আমি মোটেও ভালো ছেলে না।”
—” কেনো??আমার তো মনে হয় আপনি দুনিয়ার সবচাইতে ভালো ছেলে।”
—” তাই নাকি।”
কথাটা বলেই সাফার কানের পাশে হাত রাখে।দু’হাতে গাল আগলে ধরে সাফাকে আর একটু সামনে এগিয়ে নিয়ে আসে।সাফা চোখ বড় বড় করে তাকায়।বুকের ভিতরে ধাকধাক শব্দ বেড়ে যায়।নিভ্র নেশা নেশা চোখে তাকিয়ে আছে সাফার লালছে ঠোঁটজোড়ার দিকে।সাফা ভয়ে, লজ্জায় চোখবুজে।অনেক সময় কেটেঁ যায়।ভয়ে সাফার হা পা কাঁপে।কিন্তু যা ভাবে তা হয় না।সাফা চোখ খুলে একবার তাকায়।নিভ্র এখনো আগের মতই দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।নিভ্র এবার শব্দের সাথে হেঁসে সাফার হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে নিজের আঙ্গুল রাখে।ঠোঁটে হাসি ঝুঁলিয়ে বলে,
—” একটুতেই শেষ!!হাত ঠান্ড হয়েগেছে। এবার বলো আমি আদো ভালো ছেলে কি না??”
সাফা লজ্জার হাসি দেয়।নিভ্র আর একটু এগিয়ে সাফাকে নিজের পাছে টানে।কানের পাশে একটা চুমু দিতেই সাফা ভয়ংকর মাত্রায় কাঁপে।নিভ্র সাফা দিকে তাকিয়ে বলে,
—” আমি মোটেও ভালো ছেলে না সাফারানী।”
সাফা আবার হাঁসে।নিভ্র চোখ ছোট করে বলে,
—” এভাবে হেঁসো না!মরে যেতে ইচ্ছে হয়!ডুব দিতে ইচ্ছে হয়!ভাসতে ইচ্ছে হয়!ভয়ংকর সব ইচ্ছে জাগে!”
ভালোবাসায় জড়িয়ে আছে দুজন দুজনের সাথে।চাঁদ লজ্জা পেয়ে মেঘের আড়ালে লুকিয়েছে।শীতল বাতাস এসে গায়ে বাড়ি খাচ্ছে। ভালোবাসা ভয়ংকর। এর রূপ নিজেকে পরিবর্তন না করলেও কিন্তু আশেপাশের সব পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে।সাফার চুলের কাঠি খুলে ফেলে নিভ্র।বিশাল চুলের ভাঁজে একটু মুখ লুকায়।মাতাল করা চুলের ঘ্রাণ।বাতাসেও কেমন মাতাল করা হাওয়া বইছে।সাফার চুল নিয়ে নিভ্র কিছুসময় খেলে।সাফা তা দেখে হাঁসে। তারপর বলে,
—” আপনি মারাত্মক প্রেমিক।ভয়ংকর ভালোবাসার মানুষ।এভাবে ভালোবাসতে দেখিনি আমি কখনোই।মুভিতেও না।”
—” ভালোবাসার গভীরা থাকা প্রয়োজন। মুভিতে তুমি ভালোবাসার গভীরতা পাবে কই যে এর মারাত্মকতা বুঝবে??”
সাফা ভাবে।আসলেই তো।তারপর আবার নিভ্রর কাধে মাথা দেয়।নিভ্র দু’হাতে বুকে জাড়িয়ে বলে,
—” আমি মারাত্মক বা ভয়ংকর প্রেমিক হতে চাইনা।শুধু তোমাকে চাই।এই তুমি টাই দরকার আমার।”
সাফা একটা চুমু দেয় নিভ্রর বাহুতে। নিভ্র সাথে সাথে ধমক দিয়ে বলে,
—” এই তোমাকে নিষেধ করেছিনা এত আদর দেখাতে না।পরে কিন্তু উল্টাপাল্টা কিছু করে বসলে আমার দোষ দিবে না।”
সাফা আবার একটা চুমু খায়।নিভ্র এবার হাঁসে বুকে হাত দিয়ে বলে,
—” আল্লাহ বাঁচাও। আমার ইজ্জত লুট করার জন্য বউ আমার উপর ঝাঁপিয়ে পরছে।”
সাফা এবার কামড় বসিয়ে দিয়ে বলে,
—” যান আর ছুঁয়েও দেখবো না।”
মুখ বাঁকিয়ে উঠতে উঠতে বলে।নিভ্র শক্ত করে জড়িয়ে বলে,
—” ভালোবাসি।”
—” একটা কবিতা শুনাবেন??”
নিভ্র হাঁসে। সাফার গাল ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেয় এক হাতে।আর এক হাতে বুকে চেপে নেয় সাফাকে।তারপর সাফার দিকে ঝুঁকে তাকায়।সাফা চোখবুজে আছে।নিঃশ্বাস বারি খাচ্ছে নিভ্রর বুকে।গভীর সে নিশ্বাসের গতি। মাতাল করা স্বরে নেশা মিশিয়ে নিভ্র বলে,
🍁
ওহে লজুকলতা
শুনছ কি আমার কথা
একটু ঘুড়ে চুল বাকিয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছ মনের ব্যাথা।
কাজল ডাকা পলক তোমার
রঞ্জে আমার বহমান দোলা।
ওহে লাবন্যলতা
বিষন্ন হৃদয়ে ধুকপুকানির ব্যাথা।
তোমাতে আমি বহমান তারা
তোমার কাজল আখিতে আমার মরন জ্বালা
তোমার পরশে জীবন আমার ধন্য ওগো
তুমি আমার সেই সুখ তাঁরা।
একটু কি ভাগ দিবে আমায় ওই কাজলের পাড়ার
দেখেই নাহয় কাটিয়ে দিব রোদ্দুর মনের সারা বেলা।
..তুমি প্রেমলতা
থাকুক না হয় এমনের ব্যাথা।
🍂
সাফা ঘুড়ে নিভ্রর বুকে নাক ঘঁষে।তারপর বলে,
—” কবিতা কার জন্য বানিয়েছেন??
—” তোমাকে নিয়ে এটা আমার লেখা প্রথম কবিতা।মনের অজান্তেই লিখে ছিলাম আগে।
—“আমি কাজল লাগাই না তেমন!!”
—” আমি খুঁজে নিবো পাড়া। তোমাকে কাজল লাগাতে হবে না।তুমি ঘাড় ঘুড়িয়ে চুল বাঁকালে চলবে।”
দুজনেই হেঁসে উঠে।
#চলবে________________________🍁