একঝাঁক জোনাকির আলো

একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 35

৩৫.
চুমু খেয়ে আধাঘণ্টা এক টানা দাঁড়িয়ে থেকে নিভ্র আর সামনে আগাতে পারেনি।সাফা বিস্ময়ে হতভম্ভ। সে বুঝিয়েই উঠতে পারেনি।নিভ্র এমন বরফের মত জমে কুলফি হয়ে যাবে।নিভ্ররা আবার নৌকার কাছে ফিরে যায়।বিভিন্ন দোকান থেকে সাফা চকলেট কিনে নেয়।যদিও সাফার একদম চকলেট পছন্দ না।তবুও সবার জন্য কিনেছে সে।সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে তাই তারা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়।নৌকায় উঠার সময় একটা লোক এগিয়ে নিভ্রকে উদ্যেশ করে বলে,
—-” স্যার লুকিয়ে আপনাদের কিছু ছবি তুলেছিলাম।ভেবেছিলাম কাগজে ছাপালে আমার নাম হবে বেশ।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার দরকার নেই।এগুলো আপনি নিয়ে যান।”
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।নিভ্র ছবি গুলো হাতে নিলো ছবি দেখে সত্যিই সে খুব খুশি হয়।তাই লোকটাকে অনেক টাকা দিয়ে নৌকায় উঠে বসে।সাফা প্রশ্ন করে,
—-” লোকটা চুরি করে ছবি তুলেছে আপনি শাস্তি দিলেন না কেনো??ও কিন্তু ভালোর জন্যে তুলেনি খবরের কাগজে উল্টাপাল্টা নিউজ লিখে ছাপাতে চেয়েছে।আপনি ছেড়ে দিলেন কেনো??”
নিভ্র ছবিগুলো দেখতে দেখতে উত্তরে বলে,
—-” লোকটা ক্ষতি করতে চেয়েও উপকার করেছে।আর ক্ষমা একটি মহান গুন।সে তো নিজের ভুল শিকার করেছে তাহলে আর কি। বাদ দেও।”
সাফা মাথা উঁচু করে ছবি দেখার জন্য, নিভ্র দিলো না।একপাশে হাত নিয়ে সাফার দিকে তাকায় তারপর বলে,
—-” এভাবে লুকে লুকে কারো জিনিস দেখা ঠিকনা।এটা কিন্তু দেশের না আমার সম্পদ।”
সাফা রাগে কটমট করতে করতে বলে,
—-” আমার কথা আমাকেই ফিড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে!! খারাপ ডাক্তার একজন।হু…..”
সাফা মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।নিভ্র তা দেখে হাঁসে। সূর্য ডুবে গেছে।সন্ধ্যা নেমেছে।চারদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে।নিভ্র নিজের প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে।অনেকেই কল করেছে সাইলেন্ট ছিলো তাই ধরতে পারেনি।সাখাওতের কল দেখে নিভ্রর কপাল কুঁচকে আসে।আবার কল করে তাকে।ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে তিনি বলে উঠে,
—-” নিভ্র কোথায় তুমি??আর সাফা কি তোমার সাথে?ওকি ঠিক আছে??”
নিভ্র সাফার দিকে একবার তাকায়।সাফা ইশানি আর কৌশিকের প্রেম কাহিনি শুনতে ব্যস্ত।সাফাকে দেখে নিভ্র বললো,
—-” হুম আমার সাথেই আছে।”
সাখাওত সস্তির নিঃশ্বাস নেয়।চিন্তার মেঘ সরিয়ে রাগি গলায় বলে,
—–” তুমি কবে থেকে এতটা কেয়ারল্যাস হয়ে গেছ নিভ্র??তুমি জানো না আমরা চিন্তা করতে পারি।আর কয় বার কল করেছি??ফোন কই ছিলো??”
—-” রিলেক্স বাবা আমি যানতাম না তুমি কল করেছ।ফোন পকেটে ছিলো।সাফাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।ওর সাথে আমি আছি।ডোন্ট ওয়ারি।এখন রাখি।”
নিভ্র কল কেটেঁ দেয়।সাখাওত অবাক হয় না।ইফতেখারের দিকে তাকিয়ে কিটমিটিয়ে হেঁসে উঠে।ইফতেখার বিরক্তি মুখ করে তাকিয়ে দেখে সে হাঁসি।নিভ্রর যেনো দম যায় যায় অবস্থা।চোর ধরা খেলে যেমন হয় তেমন।কল কেঁটে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়।
.
.
দুজনেই গাড়িতে উঠে বসে।নিভ্র গাড়ি চালাচ্ছে।আর সাফা পাশে বসে ঝিমচ্ছে। তার ঘুম পাচ্ছে খুব।নিভ্র ব্রেক কসে।গাড়ির ঝাঁকিতে সাফা সামনে ঝুকে পড়তেই নিভ্র সাফার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দেয়।সাফা নিভ্রর হাতের উপড় পড়ে।সাফার দিকে তাকিয়ে নিভ্র বলে,
—-” অপেক্ষা করো আমি এখনি আসছি।”
সাফা অবাক হলেও কিছু না বলে অপেক্ষা করা শুরু করে।নিভ্র গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগিয়ে যায়।সাফাও বেড় হয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পরে।।নিভ্র তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে নিজেই গায়েব।যদিও তাকে ভিতরে বসতে বলেছে।তবুও সে বাহিরে চলে এসেছে।সাফা দাড়াতে দাড়াতে বিরক্ত হয়ে গাড়ির উপড়ে উঠে বসে।নিভ্র কিছুক্ষণ পরে আসে।দুহাত ভর্তি হাওয়াই মিঠাই নিয়ে।সাফা চোখবুজে পা ডুলাচ্ছে।নিভ্র লাফিয়ে পাশে বসে।সাফার হুশ হয়।পিড়ে তাকায়।নিভ্রকে দেখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার চোখ নিভ্রর হাতের দিকে যায়।সাফা খুশিতে আত্নহারা হয়ে নিভ্রর হাত থেকে পেকেট গুলো কেড়ে নেয়।তারপর বলে,
—-” আপনি কি এগুলো নিতে গিয়েছিলেন?? ”
নিভ্র একটা পেকেট খুলে দিতে দিতে বলে,
—-” হুম।”
—-” থ্যাংকু ডাক্তার।”
নিভ্র হাঁসে। সাফা এক হাতে পেকেট ধরে অন্য হাতে ছিড়ে খাচ্ছে।নিভ্র মনযোগ দিয়ে দেখছে।আকাশ কালো। চাঁদ নেই।তবুও নিভ্রর ভালো লাগছে।বাতাস হচ্ছে তিব্র।সাফার চুল উড়ে এসে তার চোখে মুখে আছঁড়ে পড়ছে।সাফার মুখের উপড় ও পড়ছে এতে সাফা প্রচন্ড বিরক্ত। খেতে পারছে না ভালো করে।বার বার হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিতে হচ্ছে তাকে।নিভ্র এক হাত সাফার বাম দিকে আর এক হাত ডান দিকে দিয়ে সাফার চুল সরিয়ে দেয়।দু হাতে চুলগুলো পিছনে নিয়ে নেয়।সাফা নিভ্রর দিকে ফিড়ে তাকায়।নিভ্র ইশারায় খেতে বলে।সাফা হাঁসে। নিভ্রর হাতের ভাঁজে দিয়ে উবু হয়ে ডুকে পরে তার বুক ঘেঁষে বসে।নিভ্র থমকায়।মনে মনে সাফাকে তার ঝাঁড়ি দিতে ইচ্ছে করে।মেয়েটা শুধু তার হার্টঅ্যাক করানোর ধান্ধায় আছে।নিভ্রর বুক লাফায়।সাফা বুক ঘেঁষে আপন মনে খাওয়ায় মনযোগী।সাফা খেতে খেতে করুন সুরে বলে,
—–” প্রথম দেখায় আপনি আমাকে মেরেছেন।আমার খুব ব্যথা লেগেছিলো।”
নিভ্র চুল সরিয়ে দেয়।এক হাতে সাফাকে আর একটু টেনে নেয়।তারপর বলে,
—-” ইচ্ছে করে মারি নি।তুমি সামনে চলে এসেছিলে।আমি অন্য কাউকে মারতে চেয়েছিলাম। ”
সাফা চট করে মাথা তুলে তাকায়।চোখে মুখে তার অপরাধী ভাব।সাফা কাঁদোকাঁদো সুরে বলে,
—-” তাহলে তো আমি ভুল করেছি।আপনাকে না বুঝে ধাম ধাম মেরে এসেছিলাম ওই দিন।স্যরি আপনি চাইলে আমাকেও মারতে পারেন আবার।আমি কিছু মনে করবো না।”
সাফা মাথা নামায়।নিভ্র সাফার মাথা নিজের বুকে চেঁপে নেয়।তারপর বলে,
—-” মেরেছ বলেই আমি মরেছি!বারি মেরে তুমি যখন উড়না উড়িয়েছ ঠিক তখন প্রথম বার মরেছি!নিভ্রনীল প্রথম হেরেছে তখনই!এভাবে আমি কখনো হারিনি বুঝলা।কেউ হারাতে পারেনি!তুমিই প্রথম যার চোখের পলকে,টোল পড়া গালে আমি নিজে থেকে হেরেছি!এভাবে ঘায়েল আমি কখনোই হইনি!কেউ ক্ষতবিক্ষত করেনি আমার হৃদয়! হৃৎপিন্ড নামক যন্ত্রটা এতটা উত্তেজিত হয়নি কখনো!আমার এই সবুজ চোখে এতটা তৃষ্ণা আগে কখনো লাগেনি!কখনোই আমি বিলিন হইনি কোনো মেয়ের মাঝে!কখনোই কেউ আমাকে কাঁপাতে পারেনি!কেউ হৃৎপিন্ডের দখল নিতে পারেনি!তুমিই সেই যার প্রথম ছোঁয়া আমার সব নিজ নামে করেছে!তুমিই প্রথম নারী যার কাছে হার শিকার করেও আমি জয়ী!যেনো এই মন প্রান সব শুধু হারতেই ভালোবাসে!আমি হারার মাঝেই তৃপ্তি পাই!আমার বিষন্ন হৃদয়ের শব্দ তুমি!যানি না কতটুকু চাই!কতটা ভালোবাসি!আমি কিছুই জানি না তুমি ছাড়া!কিছুই মাথায় ডুকে না তুমি ছাড়া!তুমি আমার নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছ!তোমাকে না দেখলে আমার দিনটাই থমকে গেছে মনে হয়!সাফা তুমি কি শুনতে পাচ্ছ??
নিভ্র ঘাড় নামিয়ে তাকায়।এমা..সাফা ঘুম।নিভ্র চোখবুজে হাঁসে। কাকে এত কথা! এত মনের আকুতি!বুঝাচ্ছিল?? সে তো গভীর ঘুমে তোলিয়ে গেছে।নিভ্র সাফার দিকে তাকায়।সাফার মুখ দেখলেই তার কেমন ভয়ংকর নেশা লাগে।নেশা কেমন হয় এটা তার জানা নেই।হাই সোসাইটিতে থেকেও মাদ,নেশা জাতিয় দ্রব্য থেকে তারা দুরে থাকে।কিন্তু সাফাকে যত দেখে নিভ্রর মনে হয় এটাই নেশা।না দেখলেই ভয়ংকর কষ্ট হয় তার।এটাই তো মাদকতা!আসক্তি!এই মুখই তাকে আসক্ত করছে দিনের পর দিন!নিভ্র সাফার চুল সরিয়ে দেয় গাল থেকে।মাথার পিছনে এক হাত দিয়ে চুলে হাত বুলায়।সাফার ঠোঁট লাল গোলাপির মিশ্রণে এক অদ্ভুত রং তৈরি করেছে।নিভ্রর বড্ড ইচ্ছে জাগে একটু খানি ছুঁয়ে দিতে।সাফা কাছে থাকলেই ভয়ংকর নিষিদ্ধ ইচ্ছেরা মনে ডানা ঝাপ্টায়।নিভ্র যথা সাধ্য চেষ্ট করে নিজেকে এসব থেকে বাঁচিয়ে রাখতে।কিন্তু সাফা তার দিকে এভাবে ঘেঁষলে তার নিজেকে পাগল পাগল লাগে।নিভ্র দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে।সাফাকে এক হাতে ধরে নিচে নেমে যায়।তারপর সাফাকে কোলে তুলে হয়।সাফার এমন গভীর ঘুম দেখে নিভ্র অবাক।এই মেয়েকে চোরে চুরি করে নিয়ে গেলেও খবর থাকবে না।এত ঘুম কই পায়!!
______________________
বেশ গভীর রাত হয়ে এসেছে।নিভ্র সাফার দিকে তাকায়।মেয়েটা এখনো ঘুমচ্ছে।গাড়ি বাসার সামনে দাঁড়িয়ে। নিভ্র অনেক সময় নিয়ে ভাবে।তারপর সাফাকে কোলে তুলে নেয়।দরজার সামনে আসতেই মৃদু দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়।নিভ্র বুঝে কেউ ইচ্ছে করেই খোলা রেখেছে।বাড়িময় অন্ধকার বিরাজ করছে।নিভ্র গুটি গুটি পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠে।সাফার রুমে উঁকি দেয়।দেখে রাফা নেই।নিভ্র একটু ভাবে।তারপর হাঁসে। রাফা নিশ্চুই নিশানের সাথে ঘুড়তে গেছে।নিভ্র পা ফেলে ভিতরে যায়।সাফাকে বিছানায় শুয়ে দেয়।গায়ে চাদুর টেনে নিঁচে বসে।সাফার চুল নিয়ে নিজের আঙ্গুলে পেঁচায়।তার এখানে এভাবে সাফাকে দেখেই কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু যেতে হবে।এটা যেনেও নিভ্র বসে আছে।সাফাকে দেখে নিভ্র অবাক।চরম অবাক।মেয়েটাকে এত দূর নিয়ে এলো কিন্তু সে একটু নড়েচড়ে নাই।নিভ্র হাঁসে। তারপর বিড়বিড় করে বলে,
—-” ঘুম পাগলি আমার!!”
—-” ভালোবাসো???”
কারো কথায় নিভ্র চমকে পাশে তাকায়।ইফতেখার সাফার একটু পাশে বসে আছে।নিভ্র হঠাৎ করেই ধরা পড়ে এতে তার লজ্জা লাগে খুব।মায়ের দিকে তাকাতে পারছে না।তবুও চোখ তুলে তাকিয়ে বলে,
—-” আম্মু তুমি এখানে??এখনো ঘুমও নি??”
ইফতেখার ছেলের চুল এলোমেলো করে দেয়।তারপর হাসি মুখে বলে,
—-” প্রশ্ন কিন্তু এটা ছিলো না আদর??”
মায়ের মুখে অনেক দিন পরে নিজের ছোটবেলার ডাক নাম শুনে নিভ্র তার কোলে মাথা রাখে।ইফতেখার ছেলের মাথায় হাত বুলাতে থাকে।নিভ্র মায়ের কোমড় জড়িয়ে বলে,
—–” হুম অনেক!!”
ইফতেখার হাঁসে। তারপর বলে,
—-” নিভ্রনীল প্রেমে পড়লো কিভাবে মাকে বলবে না??”
নিভ্র চোখ তুলে একবার তাকায়।তারপর বলে,
—-” সে ভয়ংকর ঘটনা।সাফারানীর বারির ছোঁয়ায় তার প্রেমে পিছলে পরেছে তোমার ছেলে।”
ইফতেখার অবাক হলেন না।সাফা যে নিভ্রর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে এটা তিনি জানে।সাফা একদিন কথায় কথায় বলে দিয়েছিলো।আর আরিফ তো আছেই।নিভ্র বলে,
——” ওর রূপে নয় মনের চাঞ্চল্যতায় নিভ্রনীল ভয়ংকর ভাবে আঁটকে পরেছে আম্মু। সে এক ভয়ংকর অনুভুতি। ”
—-” নিজের করে চাও??”
নিভ্র মায়ের দিকে কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে ছিলো।তারপর মুখে এক রাশ হাঁসি টেনে আনে।ইফতেখার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
—–” হলুদের দিন সাফার বাবা আসবে আমরা কথা বলবো।ভালো হবে না??
নিভ্র নিজের রূপ ছেড়ে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে ফেলে,
—–” ভালো হবে না মানে??অনেক ভালো হবে।আমিও এটাই বলতে চেয়েছি আম্মু। কালই বলবো ভেবেছি।”
ইফতেখার হাঁসে। এই মেয়ে তার গোমড়া মুখ নিভ্রকে পাগল বানিয়ে ছেড়েছে।ভালোবাসা মনে হয় এমনই।তাই তো এত ভুল করার পরেও সাখাওত তার হাত ছাড়েনি।এটাই ভয়ংকর ভালোবাসা। ইফতেখার আরো কিছুক্ষণ ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।আর নিভ্র মায়ের কোলে মাথা রেখে সাফার দিকে চোখ রাখে।
_________________
রোদের প্রথম ছোঁয়ায় সাফার ঘুম ভাঙে।এতটা গভীর ঘুম তার আগে কখনোই হয়নি।সাফা উঠে বসে হাই তুলতে তুলতে।নিজেকে বিছানায় দেখে সাফা চমকায়।সে তো গাড়ির উপড়ে নিভ্রর বুকে ছিলো তবে বাসায় কখনো এলো আর রুমে..সাফার কিছুই মনে নেই।নিভ্রর বুকে মাথা রাখার পরেই তার মন শীতল হয়ে আসে।তার সব জুড়ে ভালোবাসায় মাখামাখি হতে শুরু করে।মনের শীতলায় পরে সে কখন যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে এটা তার জানা নেই।সাফা উঠে দাঁড়ায়। শাড়ি কে পালটে দিলো??সাফা ভারী অবাক নিজেকে দেখে।চোখজোড়া বড় হয়ে আসে তার।চিৎকার দিবে দিবে ভাব তার আগেই রাফা এগিয়ে এসে বলে,
—–” আমি চেঞ্জ করে দিয়েছি।কিছু মনে করেছ মিষ্টির দোকান??”
সাফা জোড়ে কয়েকটা শ্বাস ফেলে।রাফার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,
—-” না আপু।”
—-” ভিঁজে চুপচুপ হয়েছিলে।কাকীমা বলেছে জামা পাল্টে দিতে তাই দিলাম।চলো ফ্রেশ হয়ে খেতে চলো।কল তো আমাদের একটা বড় ধোঁকা দিয়ে চলে গেলে।”
সাফা লজ্জায় মাথা নিচু করে।রাফা হাসতে হাসতে রুমের বাইরে চলে যায়।
নিচে নেমেই সাফা চার দিকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে নিভ্রকে খুঁজে।নিভ্র সোফায় বসে বই পড়ছে।এটা দেখে সাফা মুখ ভেংচি দেয়।বই পড়ছে তো পড়ছে তাও হৃৎপিন্ডের।আজব।সাফার এমদম এই ধরনের ঘাসপুস টাইপের বই পছন্দ না।নিভ্রর আশেপাশে তার বন্ধু মহল। সবাই প্ল্যানিং করছে কালকে কি কি করবে।কাল রাফার হলুদ।সাফা হেঁটে রাফার পাশে বসে।নিভ্রর বন্ধুরা এক এক করে তার সাথে পরিচিত হয়।অভ্র বিপরিত পাশে বসে আছে।সাফার হুট করেই নিজের লেখাপড়ার কথা মনে পড়ে যায়।তাই অভ্রকে বলে,
—-” স্যার আপনার সাথে আমার কথা ছিলো??”
অভ্রর সাথে নিভ্রও চমকে তাকায়।নিভ্র বইয়ের ভাঁজ থেকে সাফার দিকে একবার আর অভ্রর দিকে একবার তাকায়।সাফা বলে,
—–” আরে স্যার এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো??আমি কি আপনাকে মারবো বলেছি নাকি আপনার বউ পালিয়ে গেছে বলেছি??হুম??”
অভ্র চোখ সহজ করে।মেয়েটা তাকে আধো টিচার মানে কিনা অভ্রর সাথে বাকি সবার সন্দেহ হচ্ছে।অভ্র গলা ঠিক করে বলে,
—-” হুম বলো??”
সাফা একটা ঝুঁকে বলে,
—-” স্যার আমার তো পরীক্ষা আছে মনে হয় কিছু দিন পরে??তাই না??
—-” হুম।কিন্তু তুমি পড় বলে তো আমার মনে হয় না।”
—-” এভাবে বলবে না স্যার।বাসায় থাকলে তো পড়তাম।কিন্তু বিয়ে খেতে এসে আর পড়া হয় না।এই আর কি!!
নিভ্র চট করেই মুখ থেকে বই নামিয়ে বলে,
—-” বিয়ে খাওয়া যায় না সাফা উপভোগ করা যায়।”
সাফা চোখ গড়ম করে তাকায়।নিভ্র সহ সবাই মুখ টিপে হাঁসে। সাফা আবার অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
—-” স্যার আপনি বলেছেন আপনাকে যাতে বাসায় স্যার না বলি তাই আপনি আমার ভাইয়া আর ভাইয়া মানে আমি আপনার বোন সে হিসেবে আপনি আমাকে কিছু নাম্বার বেশি দিয়ে দিয়েন পরীক্ষায়।মানে ইংলিশে।”
সাফার কথা অভ্রর ভালো লাগলো না।বোন শব্দটা তার পছন্দ হলো না।তবুও হেঁসে উঠে।সবাই সাফার কথা শুনে হু হা করে হেঁসে দেয়।সাফা বেকুবের মত তাকিয়ে থাকে।নিভ্র হাঁসতে হাঁসতে বলে,
—-” আমার ভাই দু্র্নীতি মুক্ত।লাভ নেই।০.০১%ও বেশি দিবে না।তুমি বরং পড়ায় মনযোগী হও।তাহলেই ভালো রেজাল্ট কপালে জুটবে।”
সাফা মুখ বাঁকিয়ে নিভ্রর দিকে তাকায়।তারপর সবার সাথে গল্পে মাতে।নিভ্র মুখে হাসলেও অভ্রর দিকে তাকায়।অভ্র চোখ তখনো সাফাতে বন্ধি।নিভ্র চোখ ছোট করে অভ্রকে দেখতে থাকে।অভ্রর হঠাৎ এত চুপচাপ হয়ে যাওয়া তাকে অবাক করছে সাথে ভাবাচ্ছে অনেক কিছু।
রাফা আর তার বান্ধবিরা মিলে আজ পার্টি করবে।সাথে সাফাকেও রাখতে চায়।সাফা না বললেও রাফা তাকে রাখবেই। মাহি তার বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছে।মনে মনে সে এখন খুবি খুশি।তার বাবা যেহেতু বলেছে নিভ্রর সাথে তার বিয়ে হবে তবে হবেই।কিন্তু সে সাফাকে অপদস্থ করার ফন্দি আঁটছে ভালো করে।
__________________
নিভ্র নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।হঠাৎ করেই দরজা খুলে সাফা এগিয়ে আসে।নিভ্র অবাক হয়।এভাবে সাফা তার রুমে আসার কথা না।সাফা নিভ্রকে আরো অবাক করে দিয়ে নিভ্রর গালে চুমু বসিয়ে দেয়।
নিভ্র হকচকিয়ে ঘুম থেকে উঠে।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রাত ১টা ছুঁই ছুঁই। এত অদ্ভুত স্বপ্ন কেনো যে সে দেখে বুঝে উঠতে পাড়ছেনা। কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে ছিলো।সাফার একটা চুমু খেয়ে নিভ্রর অবস্থা ভায়াবহ। চোখ বুজলেই সেই দৃশ্য জ্বলজ্বল করে চোখের সামনে ভেসে উঠে।তার প্রেম দিন দিন ভয়ংকর আঁকার ধারন করছে।সাফাকে না দেখলে তার দম বন্ধ দম বন্ধ অবস্থা হচ্ছে। সাফা ছাড়া পাগল হবে সে নিশ্চিত।
.
.
#চলবে___________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *