একঝাঁক জোনাকির আলো

একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 10

১০.
.
—আর কত সময় নষ্ট করবে জোনাকির পিছনে ঘুড়ে??(নিভ্রর সরু চোখে বাঁকা প্রশ্ন)
—সময় নষ্টের কি আছে??আপনার ভালো না লাগলে যেতে পারেন।আমি এখানে আরো কিছুক্ষণ থাকবো।(জোনাকির দিকে তাকিয়ে বলে সাফা)
.
নিভ্র প্রতিবারের মত এবার আর বিরক্ত হয় না।সে পাশে থাকা দেয়ালটাতে ঠেস দিয়ে দাড়ায়।রাত একটু বেড়েছে।তবে এখনো ঘন কালো রাত হয়নি।এই বোদ হয় ৮টা বাজবে।সাফা সেই সন্ধ্যা থেকেই জোনাকি নিয়ে পরে আছে।নিভ্র তখন থেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাফাকে দেখছে।ইদানীং তার সাথে কি হচ্ছে এটা সে নিজেই বুঝতে পারছে না।কেনো যে মেয়েটাকে দেখলেই তার মনের সেই ভয়ঙ্কর শব্দ গুলো দ্রুত থেকে দ্রুত গতিবেগে চলতে থাকে।মনের মাঝে অনেক কেনোর জন্ম হয়।কিন্তু সে উত্তর খুঁজে পায় না।তবে সে এটা যানে কোনো এক ভয়ঙ্কর মাতালতায় সে ডুবছে।তার অন্ধকারে অচ্ছন্ন জীবনে এক বিস্তর আলোর অগমন হচ্ছে।যেটা তার মত তুখড় ব্যক্তি বুঝতে পারছে না।তবে কেনো যেনো সে বুঝতেও চাইছে না।ভালোই লাগছে তার।মনে হয় বিষন্নতার চাদর ঠেলে মুগ্ধতা ডুকতে চাইছে।
.
সাফার বাবার কলে তার হুশ হয়।এত সময় সে জোনাকির আলো দেখতে এতটাই মুগ্ধ ছিল যে ভুলেই গেছে ঘড়িতে কয়টা বাজে।বাবার কল রিসিভ করে ফোন কানে নিতেই অপর পাশ থেকে চিন্তিত কন্ঠে তার বাবা বলে উঠে…….
—মা কোথায় তুমি?? আসবা কখন?এত রাতে তুমি বাইরে থাকার মেয়েনা!!কোনো কি বিপদ হয়েছে??আমি নিতে আসি??কোথায় তুমি বাবাকে বলো??
.
বাবার চিন্তায় ডালা ডালা প্রশ্ন শুনে সাফা মোবাইল কান থেকে সরিয়ে টাইম দেখে।এত রাত হয়েগেছে দেখে সে জিহ্বায় কামড় দেয়।বিড়বিড় করে কি সব বলে।তারপর আবার বাবাকে উত্তর দেয়…..
—না বাবা আসতে হবে না।একটা কাজে এসেছি। তাড়াতাড়ি আসছি চিন্তা করোনা।
.
সাফা মোবাইলটা ব্যাগে নিয়ে নিভ্রর সামনে দাড়ায়।নিভ্র ফোন নিয়ে বিজি এমন একটা ভাব দেখায়।সাফা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।নিভ্র একটা ভ্রু তুলে বলে…..
—কি হয়েছে??জোনাকি দেখা এত তাড়াতাড়ি শেষ??
—না। দেখার তো অনেক ইচ্ছে তাও অনেক্ষন পর্যন্ত। কিন্তু এখন বাসায় যেতে হবে।তবে আমার একটা কাজ আছে।যদি একটু হ্যাল্প করতেন??
নিভ্র এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ফোন পকেটে নিতে নিতে বলে…..
—তা কি হ্যাল্প লাগবে তোমার??
—একটা কাঁচের বোতল লাগবে??প্লিজজ এনে দেন।
—কেনো??
—আগে যোগার করেন তারপরই দেখবেন কেনো।প্লিজজজ প্লিজজজ..
নিভ্র মুখটা কুঁচকে নিল।তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে এবার বিরক্ত এবং সন্দেহ নিয়ে ভাবছে কি করবে।তবুও সোজা হাটাঁ দেয়।সেও দেখতে চায় কি করবে এই সাফা কাঁচের বোতল দিয়ে।
.
কিছুক্ষণ পরেই নিভ্র একটা ছোট কাঁচের বক্স নিয়ে আসে।সাফার হাত টেনে বক্সটা ধড়িয়ে দিয়ে বলে…..
—বোতল পাইনি।এটা ঢাকটা যুক্ত বক্স এটা দিয়ে কি করতে চাও করো।
.
সাফা বক্সে মুখ খুলে নিভ্রর হাতেই রাখে।আর বলে….
—আমি কিছু জোনাকি ধরে এতে জমা করবো।আপনি কিন্তু ঢাকনাটা ঠিক ভাবে লাগিয়ে দিবেন।ঠিক আছে।
.
নিভ্র আহাম্মকের মত তাকিয়ে আছে।সাফা তার হাতে একটা চিমটি কেটেঁ হাত বাড়িয়ে জোনাকি ধরছে।
.
নিভ্র গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে।সাফা গাড়ির একপাশে বক্সটা ধরে তাকিয়ে তাকিয়ে জোনাকি গুলো দেখছে।মাঝে মাঝে রিক্স বা সিএনজি আসলে ডাক দিচ্ছে। নিভ্র গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে বলে……
—আমি দিয়ে আসব।গাড়িতে উঠে বসো।
.
সাফা যেনো এই সুযোগটাই খুজছিলো তবুও ভাব নিয়ে বলে…
—লাগবে না। আমি নিজে নিজেই যেতে পারবো।
—তাহলে আর কি করার যাও..
.
সাফা ভাবতে পারেনি এমন করে বলবে নিভ্র।নিভ্র গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে সাফা দৌড়ে এসে সামনে দাড়িয়ে বলে….
—আপনি এমন কেনো বলেন তো??মেয়েদের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে??বলে??
—তাহলে কিভাবে কথা বলে।(চোখ বাঁকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে নিভ্র)
—আরে মেয়েদের সাথে সুন্দর করে কথা বলতে হয়।মন থেকে কথা বলতে হয়।সবচাইতে বড় কথা এত পার্ট দেখিয়ে কথা বলতে নেই।বুঝলেন??
—বুঝলাম।এবার কি তুমি যাবে??
—অবশ্যই এত রাতে আমি একা কি ভাবে যাব বলেন??আমার ভয় করে না বুঝি??
—আমাকে ভয় পাওনা তুমি??(গম্ভীর হয়ে বলে নিভ্র)
—আরে আপনাকে ভয় কেনো পাবো।আমার তো আপনাকে একটুও ভয় লাগে না।উল্ট আমার মনে হয় আপনি আমাকে ভয় পান।
.
কথাট বলেই সাফা ভ্রু নাচাতে লাগে।নিভ্র একবার সাফার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়।গটগট করে হেঁটে গাড়িতে বসে পরে।বিপরিত পাশের দরজাটা খুলে দেয়।সাফা বক্সটা কোলে নিয়ে বসে পড়ে।নিভ্র গাড়ি স্টাট দেয়।নিভ্র গাড়ি চালাচ্ছে। সাফা বক্স ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জোনাকি দেখছে।কিছুক্ষণ পরে নিভ্র সাফার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।সে মনে মনে ভাবে……..
—এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলো??কিভাবে??
.
নিভ্র গাড়ি থামায়।বক্সটা সাফার হাত থেকে নিয়ে গাড়ির পিছনে রাখে।ব্যাগটাও পিছনে রাখে তা না হলে পরে যাবে।যত্নের সাথে সাফার উড়ন্ত উড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে দেয়।জানালা দিয়ে হালকা বাতাস আসছে।নিভ্র অপলক সাফার দিকে তাকিয়ে আছে।সাফার মুখে উপর ছোটছোট চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পরে আছে।নিভ্র মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সেই চুলগুলোকে তার গাল থেকে সরিয়ে দিলো।কানের এক পাশে গুঁচে দিয়ে বিড়বিড় করে বলে…………
—-তুমি আমার কাছে আগুলের মত।আগুন যেভাবে এসে জ্বালিয়ে দেয় তুমিও জ্বালাচ্ছ। আর আগুন চলে গেলে যেমন পোড়া কয়লার ধোঁয়া উড়ে তুমি চলে গেলেও মনে অবস্থা তেমন হয়। কেনো??
.
নিভ্র দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গাড়ি চালায়।মাঝে মাঝে আড়চোখে সাফাকে দেখে।আবার বাতাসে উড়না উড়ে এলোমেলো হলে তা ঠিক করে দেয়।সাফার ঘরের সামনে গাড়ি থামায়।নিভ্র সাফাকে ডাকতে চাইছে না।মনের মাঝে যেনো তার দুই সত্তা কাজ করছে।একটা বলছে এটা সাধারন একটা মেয়ে।এত দরদ দেখানোর কি আছে।না চাইতেও তার প্রতি যত্ন, দরদ হচ্ছে কেনো এটা নিভ্রর অজানা।আর একটা বলছে এটা একটা ভয়ঙ্কর অনুভতি।যা এই মেয়েই তোমার মনে জাগিয়েছে।নিভ্র দুই সত্তাকে উপেক্ষা করে সাফাকে ডাকে…..
—সাফা… সাফা….
.
সাফার এমন কঠিন ঘুম দেখে নিভ্র হতবাগ।এত গভীর ঘুম কিভবে তাও এত কম সময়ে??নিভ্র সাফার উড়নাটা হালকা নাড়ায়।সাফা সাথে সাথে ধড়ফড়িয়ে উঠে।নিভ্রকে দেখে কিছুক্ষণ ভাবে সে।তারপর বলে…..
—স্যরি আসলে বেশি বাতাসে আমার ঘুম চলে আসে তাই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।
—ইটস্ ওকে।যাও তোমার বাসা চলে এসেছে।
—আপনাকে ধন্যবাদ পৌছে দেওয়ার জন্য।
—তুমি আবার ধন্যবাদও দিতে পারো??(ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে নিভ্র)
—এভাবে বলেন কেনো??(মুখ গোমড়া করে বলে সাফা)
.
নিভ্র জবাব দিলোনা।সামনের দিকে তাকায়।সাফা ঠাস করে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে ঠুসস করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।জানালার কাছে মাথা দিয়ে বলে…..
—আপনি কখনই বউ খুঁজে পাবেন না।বুঝলেন??বউ যদি পেতে চান তিতা করলার মত কথা বাদ দিয়ে মেয়েদের সাথে কিউট করে কথা বলতে শিখেন বুঝলেন ডা.সাহেব?
.
সাফা সোজা হেঁটে গেট দিয়ে ডুকে যায়।নিভ্র মুচকি হেসে তাকায়।আর মনে মনে বলে…..
—সত্যিই পোড়া কয়লার মত ধোঁয়া উঠছে।কিন্তু কেনো???
.
.
নিভ্র নিজের বাসার সামনে গাড়ি দাড় করিয়ে গাড়ি থেকে নামতে যাবে এমন সময় সাফার জোনাকির বক্সটা আর তার ব্যাগটা চোখে পরে।নিভ্র সেগুলো হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবে কি করবে এগুলো। তারপর এগুলো নিয়েই ঘরের দরজার সামনে দাড়ায়।….
.
রিং রিং কলিং বেল বাজার শব্দে রাফা কান খাড়া করে।তার দৃষ্টি এখনো টিভির দিকে।হাতের রিমোটা টিপতেই আবার কলিং বেল বেজে উঠল।রাফা কিঞ্চিত বিরক্ত হল।এদিক ওদিক তাকিয়ে কাজের লোক গুলোকে খুঁজল। না পেয়ে সে আরো রেগে গেল।বাসায় পাঁচটা কাজের লোক কিন্তু প্রয়োজনের সময় একটাও কাজে আসেনা।সারা দিন এদিক ওদিক ছুটোছুটি।রাফ একরাশ বিরক্তি নিয়ে রিমোটটা টিটেবিলের উপড় রাখল।বড় বড় পা ফেলে দরজার সামনে দাড়াল।পিতলের কাজ খজ্জিত বিশাল দরজা।রাফা দরজার হেন্ডেল দুটিতে হাত রেখে টেনে তা খুলল।সামনের ব্যক্তিকে দেখে তার এত এত বিরক্তি আর রাগ নিমিষেই উদাউ হয়ে গেল।নিভ্র কানে ফোন নিয়ে কথা বলছে।তার এক হাতে সাফার জিনিস গুলো।রাফা অবাক হল।নিভ্রর প্রতি তার যে আলাদা ফিলিংস আছে তা ভাই বোনের মতই।আসল কথা নিভ্র ভাইয়াকে রাফার খুব অদ্ভুত লাগে।তার সব সময় কার ইচ্ছে সে নিভ্রের সাথে দুকাপ কফি হাতে বারান্দায় গল্পগুজব করবে।আর নিভ্র ভাইয়া উচ্চ শব্দে হেঁসে উঠবে।কিন্তু নিভ্র তেমন না।সে সব সময় এত গম্ভীর কেনো হয়ে থাকে এটা তার যানা নেই।তবে তার নিভ্র ভাইয়াকে দারূন লাগে।বান্ধবীরা যখন ডায়রির ভাঁজে তার ভাইয়ার ছবি লুকিয়ে রাখে আর মাঝে মাঝে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখে তখন তো তার আরো ভালো লাগে।সবাই কিছুক্ষণ পরপর তার ভাইয়া সম্পর্কে যানতে চায়।আর সে মুড নিয়ে বলে…..
—এখন অত সময় নেই।আর ভাইয়া ইদানিং কাজে বিজি থাকে তাই তার সাথে তেমন গল্প করা হয় না।
.
যদিও নিভ্রর সাথে তার মোটেও গল্প করা হয় না।তবুও সবাইকে ইনিয়েবিনিয়ে কত কত কথা যে সে বানিয়ে বলে তার কোন ইয়াতা নেই।নিভ্র এক ভ্রু তুলে বলে উঠে…..
—হা করে তাকিয়ে কি দেখছিস??দরজার সামনে থেকে সর আমি ভিতরে যাব।
.
রাফা নিজের ভাবনার সুত ছিড়ে এক পাশে হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।নিভ্র ডুকতে ডুকতে বলে উঠে…..
—একটা গরম হট কফি পাঠাতে বল।
.
রাফা দৌড়ে রান্না ঘরে গিয়ে কফি পাঠাতে বলে নিভ্রর রুমে।
.
.
নিভ্র নিজের এ্যাফ্রোনটা সোফায় মেলে দিয়ে জিনিস গুলো বেড রুমের চেয়ারের উপড় রাখতেই তার মনে হচ্ছে তার রুমে কেউ আছে।সাথে সাথে তার মেজাজ বখে যায়।রাগী চোখে এদিক ওদিক তাকায়।তারপর সে তার বিছানার দিকে তাকাতেই তার রাগ নূনে যায়।বিছানার লোকটি বলে উঠে….
—হ্যায় চ্যাম্প।এদিকে এসো।
.
নিভ্র মুখে হাসির রেখা টেনে তার পাশে বসে পড়ে।মুখে বলে উঠে…….
—-তা দাদাজান কি মনে করে আমার রুমে এলেন???
—-জড়ুরি একটা কথা ছিলল??
—বলেন??
—তোমার ওই দিনের অ্যাটাক কারী কে??আমি যানতে চাই কার এত বড় সাহস আমার নাতি নিভ্রনীলের মাথায় আঘাত করে??কার??
.
নিভ্র এবার চিন্তায় মগ্ন হয়।তার মনে পরে যায় সাফার কথা।একবার চোখের পাতা ফেলতেই তার চোখে সাফার প্রতিবিম্ব ফুটে উঠে।সাথে সাথে সে আবার চোখ খুলে তাকায়।আবার কি ভেবে বাকা হাসে।সে মনে করেছিল মেয়েটা ভয়ঙ্কর সাহসি হবে কিন্তু তাকে ভুল প্রমান করেছে সাফা।যে মেয়ে গুলির শব্দেই হকচোটিয়ে যায়,সুইকে ভয় পায়,কানে হাত দিয়ে চোখ বুজে থাকে।আবার তো রক্ত দেখে কাঁপাকাঁপি করে, সেন্সলেস হয়ে যায় সে আর যাই হোক সাহসি হতে পারেনা।তবে নিভ্রকে কেনো যেন সে ভয় পায় না।এই কেনো তার জানা নেই।দাদার কথায় সে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসল….
—কি হল বলছনা যে??
—তেমন কেউনা।মারামারি করতে গিয়েই হাতাহাতি হয়েছে।ইটস্ নট এ বিগ ম্যাটার।তুমি বল কি খবর তোমার???
—-আমার আর কি?? এই বুড়া বয়সে এসে রাজনীতির মত কাজ করলে যা হয় আর কি??কাল একটা মিটিংও আছে।তোমার চাচাকে যেতে বলেছি কিন্তু সে যাবে না আমাকেই যেতে হবে।আমি কি ভাবছি দাদুভাই পরের ইলেকশনে তোমাকে দাড় করাবো।তুমি এমনেই সেলিব্রেটি আবার নেতা হিসেবেও ভালো।আর ডাক্তারি পেশার কথা না হয় নাই বলি???কি বল??
—এত কিছু এখনো ভাবি নি??
—ভাবো দাদুভাই। তুমি আমার জায়গায় দাঁড়াবে। অভ্রটাতো রাজিই হচ্ছে না।যাই হক।ওকে ওর মত থাকতে দেওয়াই উত্তম।
—ওকে আজ দেখলাম না যে কোথায় গেছে???
—আমি কি অত অত সেলিব্রেটি নাকি??আর আমি দশভুজা না যে এক হাতে তোর মত হাজার কাজ করব।কি বল দাদু??
.
অভ্র নিজের চশমাটা ঠিক করতে করতে রুমে এগিয়ে এল।নিভ্র এক পলক তাকাল।দাদাও একবার তাকাল।অভ্রর গায়ের রং ফর্সা যদিও নিভ্রর চাইতে একটু চাপা তবে তার গোলগোল চোখগুলো দারূন যদিও এই দারূন চোখ সে চশমার মাঝে ডেকে রাখে।মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি।চোখ কাড়া সুঠাম দেহ।নিভ্র যেমন হিট সেও কম নয়।মেয়েরা যে রাজিবের ছেলে অভ্রনীল রাজিব চৌধুরী বলতে অজ্ঞান এটা সবার জানা।মেয়েদের থেকে দূরে থাকে না তবে প্রেমের প্যারায় পড়তে চায় না বলেই মেয়েদের রিজেক্ট করে আসে।অভ্র একগাল হেঁসে নিভ্রর কাধ চাপড়ে বসে পড়ে।আবার হেঁসে বলে উঠে……
—নে দেখে নে মনের মত করে।কেমন লাগছে আমাকে বল??
.
নিভ্র ভ্রু জোড়া তুলে ঠোঁট কামড়ে হাসে।অভ্র এই হাসি দেখে বলে…….
—ভাই তুই বেঁচে গেলি আমি ছেলে বলে।তা না হলে তোকে তুলে নিয়ে যেতাম।
—তা তুলে নিয়ে কি করতি??বিয়ে??তুই যে দিন দিন বলদ হয়ে যাচ্ছিস আমার জানা আছে।তুমিও যেনে নেও দাদু।এই ছেলের কথা বর্তা আমার মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না??
—শালা তোকে যত ভালো ভাবি অতটাও ভালো তুই না??
.
কথাটা বলেই অভ্র বালিশ দিয়ে মারা শুরু করে।মাহবুব হাসে।তার হাসির তালে ঝুলে পড়া গালটাও লড়ে লড়ে উঠে।মনে মনে দোয়া করে এদের ভালোবাসায় যেন নজর না লাগে।
.
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে অভ্র নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে…..
—ভাই যে মেয়েটা আমার কোমড় ভেঙেছে না?? ও আমাকে পেইন কিলারের দাম জিগ্যেস করছে।তা দামটা কত রে??
নিভ্র চোখ বাঁকিয়ে তাকায়।ডান হাত দিয়ে সামনে আশা চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলে উঠে….
—মেয়েদের চক্করে পড়েছিস মনে হয়??
—মোটেও তেমন কিছুনা।তবে মেয়েটা এটু ভিন্ন ধাজের বুঝলি?? ইংলিশ নিয়ে তার ভয়ঙ্কর অবজেক্সান।কি কি বলে সবই অদ্ভুত…
.
বলে হেঁসে উঠে অভ্র।নিভ্র কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাবনায় ডুব দেয়।সাফাও যে তাকে পাচঁ টাকা দিতে চেয়েছে কথাট ভেবে সে মৃদূ ঠোঁট বাঁকায়।মুগ্ধ হয়ে সে চোখ বুঝে সাফার কানে হাত দিয়ে চোখ বুজে দৃশ্যটা দেখে নেয়।জোনাকির আলোতে চকচক করা সেই মুখ আর সেই টোল পড়া হাসি।চোখবুজেই হাসে নিভ্র।এবার সে কিছুক্ষণ চোখ বুজেই ছিল।ভালোই লাগছে তার।কেমন যেন স্নিগ্ধ অনুভুতি কাজ করছে।অভ্র নিজের ফোনটা পকেট থেকে বের করে ফোনটা অন করল।গ্যালারিতে ডুকতেই ক্যামেরা ফোল্ডারে একটা ঘুমন্ত মেয়ের ছবি ফুটে উঠে। তাতে ক্লিক করতেই তা সম্পূর্ন স্কিনে জুড়ে ভাসে।অভ্র অপলক তাকিয়ে দেখে। সাফাকে টেবিলে মাথা ফেলে ঘুমাতে দেখে তখনই মনের অজান্তেই ছবিটা তুলে নিয়েছে সে।অভ্র কিছুক্ষণ তাকাতেই তার কেমন যেন লেগে উঠে তাই আবার মোবাইল পকেটে রেখে দেয়।নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে……
—নিচে যাচ্ছি। তুইত কাজ ছাড়া যাবি না।থাক এখানেই পড়ে।
.
বলেই বড় বড় পা ফেলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।নিভ্র কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে।
.
সাফা তার বাবার সাথে বসে কথা বলছে।সে প্রচণ্ড রেগে আছে।তার একটাই কথা……
—বাবা প্লিজজ না গেলে হয় না??
—না মা কেইসটা অনেক ইম্পরট্যান্ট। তাই যেতেই হবে।আমি যদি পাড়তাম তাহলে কখনোই যেতে চাইতাম না।তুমি চিন্তা কর না। সাখাওত খুবই ভালো মানুষ।যদিও তোমাকে সে এই প্রথম দেখবে।তবে তোমাকে মেয়ের মত রাখবে।তাই চিন্তার কারন নেই।হলের জন্য এপ্লাই করেছ???
—না বাবা।কাল করে দিবো।
.
সাফা দীর্ঘনিশ্বাস নিল।চোখে তার পানি চিকচিক করছে।যে কোনো সময় এক ফোটা গড়িয়ে পড়তে পারে।তার বাবার সিলেটে পুস্টিং হয়েছে।তাই তাকে ঢাকা ছেড়ে যেতে হবে কিন্তু সে চায় না বাবাকে ছাড়া থাকতে।তবে না চাইতেও এখন তাকে থাকতে হবে।বাবা মাকে ছাড়া সে একদিনও কোথাও কাটায় নি।এখন কিভাবে থাকবে ভাবতেই তার ভয় লাগছে।সাফা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।রাতের আকাশটা সুন্দর।মনে হয় কাল রোদ হবে ভালো।তারা গুলো চিকচিক করে জ্বলছে।হঠাৎ নিজের ব্যগ আর জোনাকির বক্সের কথা মনে পড়তেই সে তার বাবার মোবাইল দিয়ে তার মোবাইলে কল করে………
.
একটা সুন্দর রিংটোনে নিভ্র চোখ খুলে তাকায়।এটা তার ফোনের রিংটোন না।সে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে সাফার ব্যাগ দেখতে পায় টেবিলের এক সাইডে চেয়ারের উপড় রাখা।ভাগ্যিস দাদা আর অভ্র দেখেনি।দেখলে তাকে কি ভাব তো কে যানে।নিভ্র ভাবতেও পারছে না তার কি হয়েছে।নিজেকে কেমন চোর চোর লাগছে।নিভ্র সাফার ব্যাগ থেকে ফোনটা হাতে নিতেই রিং বেজে উঠে।একটা লোক আর সাফার ছবি দেখে নিভ্র বুঝতে পাড়ছে এটা সাফার বাবা।স্কিনে বাবা নামটা ভেসে উঠছে বারবার। নিভ্র ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে। সাফা ওই পাশ থেকে বলে…..
—আপনাকে তো ভালো মানুষ মনে করেছি শেষ মেষ আপনি আমার জোনাকি আর ব্যগ চুরি করেছেন??আল্লাহ আল্লাহ।
—ফালতু কথা রাখ।একেতো মরার মত ঘুমিয়ে ছিলে তার উপর এই সব আমার গাড়িতে রেখে দিয়েছ।তাই ফালতু কথা রাখ।আমার হসপিটালে এসে এগুলো নিয়ে যাবে।তোমার এই সব জিনিসে আমার বিন্দু মাত্রও ইন্টারেস্ট নেই।সো ফালতু বকা বন্ধ কর।আর এখন রাখ।
.
নিভ্র কল কেটেঁ দিয়ে বুকে হাত দেয়।মেয়েটার ভয়েস শুনলেও তার বুক ধাকধাক করে সাউন্ড করে।দম আটকে আসে।সাফার ব্যাগে একটা সাদা রুমাল দেখতে পায় নিভ্র।হাত বাড়িয়ে রুমালটা নেয়।সে জানে একজনের অনুমতি ছাড়া তার ব্যাগে হাত দেওয়া উচিত না তবুও সে রুমালটা নিল।রুমালটা নাকে ধরতেই এক মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে আসে।নিভ্রর যেনো মুহূর্তে অদ্ভুত অনুভুতি হয়।শরীর যেন শিহরিত হচ্ছে।
.
সাফা হাবার মত তাকিয়ে আছে মোবাইলের দিকে।কি অদ্ভুত লোক।…..
.
.
.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *