একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 02
(একগুচ্ছ নামরা একঝাঁক দেওয়া হয়েছে।)
২.
—–ভাই সাফা তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি??আমার তো মনে হয় মাথায় আঘাত লাগায় তোর স্মৃতি শক্তি চলে গেছে..তা না হলে চিনসনা জানসনা একটা লোককে কিভাবে খুঁজে বের করবি বল??
.
—–অবশ্যই পারব।এটা কোন বড় ব্যাপার না।বাবা বলেছে যে অন্যায় করে এবং অন্যায় সহে দুজনেই সমান অপরাধি..বুঝলি ঝুমা??আমিও সেই মাক্স আলাকে ছাড়বোনা।বিনা করনে আমার মাথা ফাটিয়ে ১৫ দিন আমার সবচাইতে অপছন্দের জায়গায় থাকতে হয়েছে ওকে কি আমি ছেড়ে দিব ভেবেছিসস?? নো নেভার.. ইম্পসিবল… এবার এক কাজ কর অভি ভাইয়াকে কল দে…
.
—-আবার অভি ভাইয়া কেন??
.
—-আরে উনিইত ভালো স্কেচ করতে পারে।তাকে দিয়ে ওই মাক্স আলার ছবি আঁকাবো.. আরে সিআইডিতে দেখস নাই ওরা কিভাবে স্কেচ দিয়ে মানুষ মানে খুনি দের খুঁজে বের করে.. আমিও ওই লোকটাকে খুজে বের করবো..হাহা হাহা..
.
.
হসপিটাল থেকে আসার পর থেকেই ঝুমার মাথা নষ্ট.. বেচারি ভেবে পাচ্ছে না এই পাগলকে কিভাবে শান্ত করবে।আর সাফা তো সেই হসপিটালে থাকা কালিন থেকেই মাক্স আলার থেকে নিজের প্রতিশোধ নেওয়ার প্ল্যানিং করছে।ঝুমা চট করে একটা কথা ভেবে আবার বলে উঠে….
.
—–সাফা দেখ যদি উনি নিভ্রনীল হয় তবে??
.
—-আরে নিভ্রনীল খুব ভালো আর শান্ত প্রকৃতির মানুষ সে কেন এমন গুন্ডাপান্ডার মত মারা মারি করবে বল?? আমি জানি বুঝলি ওই লোক পাক্কা গ্যাঙ্গস্টার টাইপের কিছু তা না হলে এত লোক নিয়ে কেনো ঘুড়বে বল….??
.
—-হতেও পারে…
.
ঝুমা নিরাশ গলায় বলে উঠে।নিভ্রনীল দেশের নাম করা মডেল হওয়াই প্রতি পেপারে, ম্যাগাজিনে তার ছবি দিয়ে ভরানো থাকে।সাফা তাকে প্রথম দেখে ছোটো মোটো ক্রাশ খেয়েচ্ছে তাই ঝুমা ভেবেছে এর কথা বলে যদি কাজ হয়। যদিও সে জানে তার এই বান্ধবীর এই ক্রাশ খাওয়া কতটা ফাউ।ঝুমা তো নিভ্রনীল বলতেই অজ্ঞান আর এখানে এই মেয়ে বলে চলবে.. এর কোনো ঠিকঠিকানা নাই……
.
বাসায় আশতে আশতে বেস রাত হয়েগেছে আজ নিভ্রর।আজ কিছু বিদেশি ব্যান্ডের ব্যান্ড এম্বাসেডর হিসেবে তার কাজ ছিল আবার হসপিটালেও যেতে হয়েছে।কলিং বেল বাজাতেই মিসস্ ইফতেখার দরজা খুলে দেয়।মাকে এত রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে দেখে একটু অবাক হয় নিভ্র কিন্তু কিছু না বলেই হনহনিয়ে ভিতরে ডুকে পড়ে।সোজা ছাদে তার নিজের আলাদা বাসায় চলে যায়।ব্যাপাটায় ইফতেখার একটু মনখারাপ করলেও সে অভ্যস্ত। তার একমাএ ছেলে আজ বহু বছর তার সাথে কথা বলে না যদিও এর জন্যে সে নিজেই দায়ি..কথাটা ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন ইফতেখার। অভ্রনীল পানি নিতে এসে কাকিমাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে বলে উঠে…..
.
—জানেমান কাকিমা কি করো এত রাতে??নাকি চোর খুজে বেড়াচ্ছ??
.
অভ্রর এমন মজার কথায় ইফতেখার একটু হাসল।অভ্র ওতো ছেলে কত হাসি খুশি থাকে ও আর সবার সাথেই কত মজায় মেতে থাকে কিন্তু তার ছেলেটা যে কেন এত গম্ভীর হয়ে থাকে কে যানে।তার তো জানা মতে ছোট ছেলেরা বেশি মজায় থাকে দুষ্টু প্রকৃতির হয় কিন্তু তার ছেলে… বাকিটা মনে পড়তেই ইফতেখারের চোখে পানি চলে আসে।এই সব কিছুর জন্যেই উনি দায়ি এটা সে ভালো ভাবে বুঝতে পারছে…কাকির চোখে একরাশ হতাশা আর পানি দেখে অভ্র একটু সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়ে ব্যাপারটা সে ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে তাই প্রিয় কাকিমার মুখে হাসি ফুটাতে সে একমজার বাক্য খুঁজতে শুরু করে……
.
—-কাকিমা তোমার রানগরুরের ছানা হাসতে তার মানা সেই সুপার্স্টার এসে পড়েছে বুঝি??
.
ইফতেখার আবার অশ্রুসিক্ত চোখে হেসেঁ উঠে বলে….
—হুম চলে এসেছে…যা খাবার নিয়ে আমি বেরে দিচ্ছি তুইও খাসনি না.. এত কেন ভালোবাসিস ওই আকড়ুটারে..
.
—ও ভালোবাসার মানুষ তাই এত ভালোবাসি বুঝলে…
.
.
—-হেই ডাক্তার নিভ্রনীল সাথে আবার সুপার্স্টার এত বই পড়ে কি করবি ভাই একদিনতো মরেই যাবি বল??
.
অভ্রর কথায় বুকশেলফ থেকে মাথা কাত করে একবার অভ্রকে দেখে নেয় কালো টাউজার, লাল টিশার্ট পরে হাতে দুটি খাবার প্লেট নিয়ে দাতঁ বের করে দাড়িয়ে আছে অভ্র..এই বাসার সবার মাজে এই একটা লোকই তার সবচাইতে প্রিয়। আর ভরসার মানুষ যদিও দাদা , বাবা,বড় বাবা বড় মা,রাফা সবাইকেই সে মোটামুটি পছন্দ করে তবে এই একটা ছেলে ছাড়া তাকে ঠান্ডা করা মুশকিল… অভ্রর দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে….
.
—-ওই শালা আর কতক্ষণ তোর প্লেট নিয়ে দাড়িয়ে থাকবো। চাকর পেয়েছিস নাকি..বই রাখ আর আমার কাছে এসে এই গাডা গাডা খাবারের প্লেট নে তাড়াতাড়ি.. হাড়িআপ…
.
অভ্র এবার মুচকি হেসেঁ বই রেখে সামনে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠে….
.
—তুই তো আমার ফ্রি চাকার বুঝলি.. আমার জামা কাপড়ও ধুয়ে দিস।দেখ কত ময়লা হয়েছে..ইশশ্ ঘৃনা লাগছে..তোর মত এমন স্মার্ট আর প্রফেসর চাকর থাকতেও আমার এমন অবস্থা কি আর করবো বল??
.
—-তাই নাকি।তা দিস কালকে ধুয়ে দিবো।(বলে হেসেঁ উঠে)
—-এই কালকে তো তোর ফার্স্ট ডে এট কলেজ..
–এই এগুলো কেমন কথা??ফার্স্ট ডে এট কলেজ বহু আগেই পার করে এসেছি কালকে তো..প্রফেসার হিসেবে যাবো।
—যাই হোক তুই এত পেশা থাকতে ওই পেশায় কেন গেলি আমি বুঝতে পারছিনা???একটু বুঝিয়ে বলবি??
—আরে বুঝস না কা প্রফেসারদের বউ সুন্দর হয় বুঝলি।তার উপড় ফাস্ট এয়ারের মেয়েরা তো মাসআল্লাহ্ সেই হয়।ওদের পটাতে যাবো..বুঝলি..
—তুই যাবি মেয়ে পটাতে এটাও বিশ্বাস জঘ্য। তোর পিছনে তো অল মোস্ট সুন্দরীদের লাইন লেগে আছে।তুই যে মেয়েদের মাঝে সৌন্দর্য খুজোস না তা আমার জানা আছে তবে যেটা খুজোস সেটা বল??
—-মায়া খুজি বুঝলি।আমার জন্যে লাইন লেগে থাকলে তোর জন্যে তো সুইসাইডও করেছে তবুও ত তুই ফিড়েই তাকাস না।তোর আর আমার সব যখন মিলে তবে মেয়ের ব্যাপারেও স্যাম অবস্থা হবে বুঝলি..
—-না আমার জীবনে আর যাই হোক মেয়েদের এন্ট্রি নিষেধ।
—এসব বলে লাভ নেই বিধাতা যা কপালে রেখেছে তাই হবে বুঝলি।আচ্ছা এটা সেটা বাদ তোকে একটা ইম্পরট্যান্ট কথা বলার ছিল…
—-বল..
—কাকিমার সাথে এভাবে বাজে বিহেব করা ছেড়ে দে প্লিজজ..
.
কথাট শুনে খাবার মুখে দিতে গেয়েও দিল না নিভ্র। খাবারটা প্লেটে রেখে কিছুক্ষণ চোখ বুজে থেকে বলে উঠে….
—উনার কথা আমি শুনতে চাইনা প্লিজজ.. অন্য কথা বল তা না হলে রুম থেকে যেতে পারসস…
.
অভ্র আর কথা বাড়ালো না। সে জানে এই ছেলেকে আর যাই হোক এই কথাগুলো বলে লাভ হবে না।শুধু শুধু খাওয়াটা মাটি হয়ে যাবে।দুই ভাই চুপ মেরে খাওয়ায় মনযোগ দিল…
.
…..🍁
.
ছাফা তার বাহিনি নিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।কপালে তার চিন্তার ভাজঁ। এই ভাঁজেরও কারণ রয়েছে।কারনটা হল ভার্সিটির গুণ্ডাপাণ্ডা স্টুডেন্ট। এই গুন্ডা পান্ডার লিডার শাহিন নামের এক ছেলে ভার্সিটির প্রথম দিন থেকেই ছাফার পিছনে পড়ে আছে।আজ এর একরা শায়েস্তার ব্যবস্থা করেছে সে। সাফা নিজের হাতের মার্বেল গুলো ঝুমাকে দেখিয়ে বলে উঠে..
—এই গুলো ফ্লোরে ছুড়ে দিব। ওই বদমাইশ যখন ধাপাং করে পড়বে সাব্বির তুই পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় এই লাঠি দিয়ে পিছনে বাড়ি দিবি বুঝলি…
.
সাব্বির নিজের মাথা ঝাঁকিয়ে বলে উঠে
—-ঠিক আছে
.
সাফা ঘড়ি দেখছে আর মার্বেল গুলো হাতের মুঠোয় জড়ো করে করে রেখেছে।কেউ আসার সাউন্ড শুনতে পাওয়া মাএ দেওয়ালের কোনা থেকে সাফা বেড়িয়ে এসে ফ্লোরে মার্বেল গুলো ছড়িয়ে দিল।সামনে থাকা ব্যক্তি সাথে সাথেই দাম করে পোড়ে
–আউচচচ
করে শব্দ করে উঠে..
.
সাফা এবার উপরে তাকাতেই হা হয়ে গেল। এটা কি হল। আর এই লোকটাই বা কে??সে যাকে ফেলতে চেয়েছে এতো সে না।তবে এই আবাল আবার কে??নতুন ইংলিশ স্যার নয়ত??কথাটা ভাবতেই সাফা জিহ্বায় কামড় দিয়ে নিজের মাথায় নিজেই হাত দিয়েএকটা বড় ঝাকা দেয়।সাব্বির এবার লাঠি নিয়ে পিছন থেকে মারতে যাবে তার আগেই সাফা মাথা ঝাঁকিয়ে মারতে না নিষেধ করে কিন্তু সাব্বির বুঝতে পারছেনা কি ইশারা করছে। তাই আবার লাঠি তুলে মারতে যাবে তার আগেই সাফা চেঁচিয়ে বলে উঠে….
—মারিস না। উনি সেই অসভ্যটা না…
.
বলে এগিয়ে এসে অভ্রর পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে।আজ প্রথম দিন ছিল ভার্সিটির ক্লাস নেওয়ার। প্রথম ক্লাস ছিল ফাইনআর্টের ফ্যাশন ডিজাইনিং ডিপার্টমেন্টের ইংলিশ ক্লাস।আর প্রথম দিনেই এমন ভায়াবহ একটা ঘটনা হবে অভ্র ভাবতেও পারেনি।কিভাবে ভাববে এটা তো নার্সারির বা ওয়ান দুর ক্লাস না এটা ভার্সিটির ক্লাস।আর ভার্সিটিতে তো বাচ্চারা পরে না যে এগুলো করবে।অভ্র নিজের কোমড়ে হাত দিয়ে এখনো চোখ বুজে আছে।কুল মেজাজের ছেলে হলেও একবার রাগ উঠলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা সে।এখন তার রাগ উঠছে তাও প্রচণ্ড ভাবে।আজ যে এই কাজ করেছে তার কপালে খুব বড় ঝড় আছে।আজ যে কি হবে এটা ভেবেই অভ্রর মাথা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা অনুশোচনা ভড়া মিষ্টি কন্ঠ কানে আসতেই অন্ত চোখ খুলে তাকিয়েই স্তব্ধ। তার ২৭বছরের ক্যারিয়ারে এই প্রথম সে এত সুন্দর কাউকে দেখেছে।এত কিউট মেয়ে হয় নাকি??ফুলাফুলা গাল গুলো আরো ফুলিয়ে হাতটা বাড়িয়ে সাফা বলে উঠে……
—-আম সরি।আসলে এমনটা হবে ভাবতে পারিনি।এটা আপনার জন্য ছিল না।কিন্তু আপনি হুট করে লাফিয়ে কথা থেকে যে এলেন। সরি আবার…..(মাথা নিচু করে হাত বাড়িয়ে বলে উঠে)
.
অভ্র তাকিয়ে আছে।আশ্চর্য মায়ায় গড়া এ মেয়ে। সে নিজের চশমাটা পাশ থেকে তুলে দেখে তা এক সাইডে ভেঙে গেছে তবুও সেটা হাতে নিয়ে আর একহাত বাড়িয়ে উঠে দাড়ায়।সাফার হাত ধরেই উঠে দাঁড়িয়েছে সে।অভ্র এবার কোমড় হালকা ঝাকি দিয়েতেই সাফা নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে উঠে…..
—আল্লাহ এত ভাড়ি কেন আপনি??কি খান বলেন তো??হাত পুরাই ব্যাথা হয়েগেছে।
.
অভ্র এবার পুরাই হা।বলে কি এই মেয়ে!!আমাকে ফেলে যে বারোটা বাজিয়েছে সে দিকে তার খবরই নেই। এতক্ষণ এই মেয়েকে শান্ত মনে হয়েছে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না ভয়ঙ্কর হবে এই মেয়ে। তাই সেও একটু টিচারের মত ভাব নিয়ে বলে উঠে…
—ইউ নো হু এম আই???
—ইয়েস..এত যখন ইংলিশ ঠেলছেন নিশ্চুই আমাদের নিউ ইংলিশ টিচার।তো স্যার আপনাকে সাগতম। আর হ্যাঁ এইটার কথা কাউকে বলবেন না।আপনি একটা পেইন কিলার খেয়ে নিবেন।আর কালকে এসে দাম বলে যাবেন কত আর হবে দুইশ বা তিনশ টাকাই হবে আমি বরং দিয়ে দিব কেমন।আর ভুলেও ক্লাসে পানিশমেন্ট দিয়ে এই ঘটনার শোধ নিবেন না প্লিজজ।এটা ভুল করে হয়ে গেছে।আমার আপনাকে এভাবে ফেলার ইচ্ছে ছিলনা।আপনার নিয়তিতেই পরাটা ছিল এখন আর কি করার আছে।তবুও আমি কিন্তু সরি বলেছি মাফ করে দিয়েন।
.
অভ্রর চোখ বড় বড় হয়ে আছে।মুখের হা আরো প্রশারিত হয়েগেছে।কি ডেয়ারি মেয়েরে বাবা।ভাবা যায়।অভ্রকে নাকানি চুবানি খাইয়ে চলে গেল।সাফা এক দৌড়ে ক্লাসে ডুকে গেছে।বুকে দুই তিনবার থু থুও দিয়েছে।ক্লাস চলা কালিন সাফার ভাবটা এমন যে সে অভ্রকে আগে কখনো দেখেইনি।অভ্রর কোমড়কে যে আধমরা করে দিয়েছে এটাতো তার কল্পনাতেও নেই।সাফার ভাব দেখে অভ্র আরো অবাক।
.
.
#চলবে……………….🍁