00

এই সাঁঝবেলাতে তুমি আমি !! Part- 12

ছাদে দাঁড়ীয়ে কান্না করে যাচ্ছে মুসকান। আজকে সকালে সুমনাও নিজ বাসায় চলে গিয়েছে। তাকে শান্ত করার মতো কেউই নেই এখন পাশে।
বেশ কিছুক্ষন কান্না করার পর সে বুঝতে পারলো কেউ তার পিছনে দাঁড়ীয়ে আছে।মুসকান পিছনে ফিরে দেখলো আকাশ দাঁড়ীয়ে আছে।
আকাশকে দেখে সে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলো।
আকাশ মুসকানে পাশে এসে দাঁড়ালো।
“কান্না করছিলে কেনো??”
“মুসকান অন্যদিকো তাকিয়ে বললো,
“কই না তো।”
“মিথ্যা বলবে না। কান্না করে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছো আর বলছো কান্না করোনি।
কি কারনে কান্না করছিলে??”
চোখের পাশে হালকা পানি থাকায় সেটা মুছে বললো,
“তেমন কিছু না। আপু চলে গিয়েছে তো তাই।’
আকাশ মুসকানের দিকে আবার তাকিয়ে বললো,
“আফনানের চলে যাওয়ায় মন খারাপ তাই তো??এই জন্যই কান্না করছিলে।ঠিক বলছি না আমি??”
আকাশের কথা শুনে মুসকান মাথা নিচু করে দাঁড়ীয়ে থাকে। সত্যিই তো সে আফনানের জন্য কাঁদছিলো।আফনানের এভাবে চলে যাওয়াটা একদমই সহ্য হয়নি তার।আফনান কি পারতো না তার সব কথা শুনে যেতে??তাহলে তো তাকে এতো কষ্ট পেতে হতো না। কখনো ভাবেওনি সে যে একটা বাইরের মানুষের জন্য এতোটা কাঁদবে।এতোটা ভালোবাসবে তাকে।
মুসকান কথা পাল্টে বললো,
“আকাশ ভাইয়া আপনি এখানে কোনো কাজে এসেছিলেন??”
মুসকানের কথা শুনে আকাশ ভাবলো,মুসকান হয়তো তাকে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইছে না। বা কোনো কিছু শেয়ার করতে চাইছে না। তাহলে সে কেনো জোর করে জানতে চাইবে??যে বলতে চাইছে না তার কাছে এভাবে জোর করে জেনে নেওয়া উচিত নয়।
আকাশ বললো,
“আমি আসলে ২দিনের জন্য সিলেট যাচ্ছি কিছু কাজে। তাই তোমার সাথে দেখা করতে এলাম। ”
“ওহ।”
“আচ্ছা আমি তাহলে আসি।”
“হুম।”
মুসকানের এ ছোটো ছোটো জবাব যেনো অনেক বড় কিছু বলে যাচ্ছে।
আকাশ আর কিছু না বলে চলে আসে ছাদ থেকে।

বারান্দায় দাঁড়ীয়ে কফি খাচ্ছে আফনান। একহাত পকেটে গুঁজে দাঁড়ীয়ে আছে আর আরেক হাতে কফির মগ।
বিকালের হালকা স্নিগ্ধ হাওয়া যেনো হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে আফনানের।ইচ্ছা করছে এ সময়টাতে মুসকানকে অনুভব করতে।কিন্তু না। সে করবে না। বারবার মুসকানের চেহারা মনে পরছে কিন্তু সে মনে করতে চাইছে না। চাইছে না সব মিথ্যার বেড়াজালে নিজেকে ফাঁসাতে।
হঠাৎ করে নিজের রুমের দরজা খুলার আওয়াজ পেয়ে তাড়াহুড়া করে রুম গেলো আফনান। রুমে আসতেই সে অবাক।এ কাকে দেখছে সে!!!মুসকান!!মুসকান এখানে কেনো?আর কিভাবে??
আফনান তাড়াতাড়ি মুসকানের কাছে গেলো।মেয়েটার চোখ দুটো বেশ ফুলে গিয়েছে। বুঝাই যাচ্ছে।হয়তো কান্না করেছে খুব। কিন্তু কেনো???
আফনান মুসকানকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই জিজ্ঞাস করলো,
“এখানে কেনো তুমি??কিভাবে এলে??”
মুসকানের চোখের কোনায় হালকা পানি ছিলো।সেটা মুছে সে আফনানের দিকে এগুতে এগুতে বলে,
“আপনি গতকাল ওভাবে চলে এলেন কেনো??আর আজকে সকালে কি একটু সময় অপেক্ষা করা যেতো না???আমার কথা কি একটু শোনা যেতো না??”
আফনান জানালার কাছে গিয়ে বললো,
“তুমি কি যাবে এখান থেকে??তোমার কোনো কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই আমার। “”কেনো ইচ্ছা নেই?আমি এমন করেছি টা কি শুনি।”
“অনেক কিছুই করেছো।না জানি এখন আবার কি খেলা খেলবে আমার সাথে। হয়তো আবারো কিছু মিথ্যা বলবে।”
মুসকানের চোখ দিয়ে এখন অঝোর ধারায় পানি পরছে । এই কয়দিনে আর কিছু না হোক, চোখের জলটা নিত্যদিনের একটা সঙ্গী হয়ে গিয়েছে।
মুসকানের চোখের জল দেখে আফনানের ইচ্ছা করছে মুছে দিতে। বারবার যেনো হাতটা সেই চোখের পানি মুছতে চলে যেতে চাইছে।কিন্তু আফনান জিদ ধরে তা করলো না।
মুসকান নিজেই চোখের জল মুছে বললো,
“আমি সেদিন ডেয়ারটা করেছিলাম ঠিকই।কিন্তু মনের মধ্যে আপনাকে নিয়ে একটা চাপা অনুভুতি ছিলো।আপনাকে ডেয়ারের জন্য ‘আই লাভ ইউ’বলেছিলাম ঠিকই কিন্তু আমার মনে কাজ করছিলো এটা ডেয়ার না এটা সত্যি।সত্য অনুভুতি যেটা আমি হয়তো স্বীকার করতে চাইছিলাম না।আমাকে বিশ্বাস করুন,আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি।”
আফনান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
“ওহ তাই!!আমি এসব বিশ্বাস করবো ভাবলে কিভাবে তুমি??আবার হয়তো নতুন কোনো খেলা নিয়ে হাজির হয়েছো এখানে।”
এবার মুসকান একটু জোরেই কেঁদে উঠলো,
“আপনার কেনো মনে হয় এগুলো মিথ্যা??আচ্ছা গতকালকে আপনার এক্সিডেন্ট এর পর আমার চোখে যে পানি এসেছিলো সেটাও মিথ্যা বলবেন??আপনার প্রতি আমার যে কনসার্ন ছিলো তাও মিথ্যা বলবেন??বলুন।”
এবার আফনান চুপ হয়ে যায়।কি বলবে সে। আসলেই গতকালকের সব দেখেই তো সে একদম শিওর হয়েছিলো মুসকান তাকে ভালোবাসে।এজন্যই তো সে প্রপোজ ও করতে চাইলো।কিন্তু মুসকানের ভালোবাসা বলাটা মিথ্যা মনে হলো কেনো??খেলা ছিলো বলে??
মুসকান আবারো বললো,

“আপুর বিয়ের দিন আপনার পাশে যে মেয়েটা বসেছিলো তাকে আমার একদমই সহ্য হয়নি। সে কেনো আপনার পাশে বসবে।আপনার পাশে বসা অধিকার শুধুই আমার।সে কেনো আপনার সাথে হেসে কথা বলবে??আপনার সাথে হেসে কথা বলার অধিকার শুধু আমার।”
আফনান কি বলবে বুঝতে পারছে না।মেয়েটার সব কথাতেই তার বিশ্বাস করতে মন চাইছে।
মুসকান আফনানকে এবার জিজ্ঞাসা করলো,
“আচ্ছা, আপনি কি আমাকে ভালোবাসেনা??একটু সময়ের জন্যও কি আপনার মনে আমার জন্য ভালোবাসার অনুভুতিটা কাক করে নি??”
আফনান আর চুপ থাকতে পারলো না।আর পারছে না সে অভিমান করে থাকতে। ভালোবাসার মানুষকে তো বিশ্বাস করতেই হয়। তো সে কেনো করবে না??আর সামান্য একটা খেলার জন্য সে মুসকানের ভালোবাসাকে ভুল বুঝবে কেনো!!!
এদিকে মুসকান নিরবে মাথা নিচু করে দাঁড়ীয়ে কান্না করে যাচ্ছে।
আফনান কিছু একটা ভেবে পাশের টেবিলে রেখে দেওয়া কফির মগটা এক হাতে মুসকানের সামনে এগিয়ে ধরলো আর এক হাঁটু গেড়ে মুসকানের সামনে বসে পরলো।
হঠাৎ আফনানের এমন কাজে মুসকান অবাক হয়ে গেলো। সে ভাবছে আফনান কি পাগলে হয়ে গেলো নাকি??সে এভাবে কান্না করছে আর আফনান একটু পানি না দিয়ে এভাবে কফির মগটা সামনে ধরেছে!!মুসকান কিছু বলতে যাবে তার আগেই আফনান কফির মগটা সেভাবেই ধরে রেখে বললো,
“তুমি কি প্রতিদিন আমার বিকালবেলার ধোঁয়া উঠা এক মগ কফি খাওয়ার সঙ্গী হবে??তুমি কি বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় আমাদের দুজনের জন্য শুধু একমগ কফি বানাবে??যে একমগে আমরা দুজনেই কফি খাবো।ক্লান্ত সন্ধ্যায় আমার ক্লান্ত দূর করার জন্য আমার মাথায় তোমার নরম হাতের পরশ দিবে??প্রতিটা স্নিগ্ধ সকালে তোমার ভেজা চুলের পরশে আমার ঘুম ভাঙাবে???বলো সেনোরিটা???রাজি তো??”
আফনানের এ কান্ড দেখে মুসকান হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। বেশ কনফিউজড সে। তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা মানুষটাও বেশ আজব।আজকের এমন কাজে পুরো ভিনগ্রহের একটা প্রানি মনে হচ্ছে একে।এমন আজগুবি স্টাইলে কোন বান্দা প্রপোজ করে!!!
মুসকানের চুপ থাকা দেখে আফনান ভ্রু কুঁচকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“কি হলো সেনোরিটা??আমার জবাব টা পেলাম না তো।
এতো ইউনিক স্টাইলে প্রপোজ করলাম ‘হ্যাঁ’ বলা মাস্ট কিন্তু।”
আফনানের কান্ড দেখে চোখের জল নিয়েও ফিক করে হেস উঠলো মুসকান। আর জবাব দিলো।”
“হুম হুম হুম। আপনার প্রতিটা মূহুর্তের সাথি হতে চাই আমি। একই মগে দুজনে কফি খেতে চাই। আর হ্যাঁ কখনো কখনো কিন্তু আপনাকে কফি বানাতে।অলওয়েজ আমি কেনো কষ্ট করবো??”বলে আফনানের হাত থেকে কফির মগটা নিজের হাতে নিলো মুসকান।
আফনানও ঠিকভাবে দাঁড়ীয়ে বললো,

“ভালোবাসি তোমাকে। খুব ভালোবাসি।আমার এ অবুঝ মনটায় একমাত্র তুমিই ঠাই হবে। আমার প্রেয়সী, প্রিয়তমা তুমিই হবে। আমার এ হৃদয়টাতে শুধু তোমারই স্থান। আমার মায়ের পর তুমিই একমাত্র মেয়ে যাকে আমি এতোটা ভালোবাসি।আমার ভালোবাসাকে কি একসেপ্ট করা যায় সেনোরিটা???”
মুসকান মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,
“হুম যায়। হাজারবার যায়।লক্ষবার যায়।কোটিবার যায়। মিস্টার খাম্বা।”
মুসকানের মুখে ‘খাম্বা’ নাম শুনে মুখটা ছোটো হয়ে গেলো আফনানের।তা দেখে মুসকান বললো,
“আরে আরে কি হলো!!”
“আমি তোমাকে এতো কিউট,সুইট একটা নাম দিলাম। আর তুমি আমাকে এমন নাম দিলে কেনো সেনোরিটা??”
মুসকান কিউট করে বললো,
“ওলে ওলে,এই নামটা পছন্দ হয়নি আপনার??কিম্তু আমার তো এ নামটা বেশ ভালো লাগে।”
আফনান একটা হাসি দিয়ে বললো,
“আচ্ছা ঠিক আছে তোমার যখন পছন্দ তাহলে এ নামেই ডেকো।”
“দ্যাটস লাইক এ গুস বয়।
তো বলুন মিস্টার খাম্বা এমন স্টাইলে প্রপোজের আইডিয়া পেলেন কোথায়??”
আফনান একটু ভাব নিয়ে বললো,
“কোথায় আর পাবো।এই সেনোরিটার উড বি হাসবেন্ডের মস্তিষ্ক থেকেই বের হয়েছে এই আইডিয়া।”
“বাহ বাহ।তো এমন স্টাইলে কে প্রপোজ করে শুনি??আমি তো পুরাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।”
“আমিই এমন স্টাইলে প্রপোজ করি সেনোরিটা।আফটার অল সেনোরিটার বরটাকে তো একটু ইউনিক হতেই হয়।”
বলে একইসাথে দুজন হেসে উঠলো।
আফনান আবারো বললো,
“সেনোরিটা আই এম সরি এভাবে প্রপোজ করার জন্য।কারন এভাবে হুট করে প্রপোজ করেছি তো আর আশেপাশে তো কোনো ফুল বা চকলেটও নেই।
আমি সবার সামনে তোমাকে একদম গ্র্যান্ড ওয়েতে বিয়ের জন্য প্রপোজ করবো।ওকে??”
“কোনো সমস্যা নেই।আমার তো এমন স্টাইলে প্রপোজ করাটা খুব ভালো লেগেছে।কখনো ভাবিওনি যে এভাবে আমার জীবনের প্রথম প্রপোজাল টা পাবো।”
মুসকানের চোখে এখনও পানি লেগে আছে। আফনান তা দেখে এগিয়ে গিয়ে মুসকানের চোখের পানি মুছে দিলো।আর বললো,
“জানো, প্রথম থেকেই আমার এ হাত দুটো তোমার চোখের জল মুছাতে চাইছিলো।কিন্তু তোমার উপর রাগের জন্য আমি জিদ ধরে সেটা করেনি।”
এ কথা শুনে মুসকানের মুখটা ছোটো হয়ে যায়।
এ দেখে আফনান বলে,

“আচ্ছা সেসব বাদ দাও। একটু হাসি দাও না প্লিজ।ভারি মিষ্টি লাগে তোমার মুখের ঐ হাসিটা।”
আফনানের কথায় মুসকান মুচকি একটা হাসি দেয়।এটা দেখে আফনান দুইহাত দিয়ে নিজের বুকের বাম পাশে ধরে আর বলে,
“ইশশশ,আমি শেষ একদম।পাক্কা মেরি জান লে লেগি ইয়ে খুবসুরাত হাছি।”
আফনানের কথা শুনে মুসকান হালকা করে হাতে মারে।আফনান বললো,
“ইশশ এতো জোরে কে মারে!!”
মুসকান অবাক হয়ে বললো,
“আমি এতো জোরে কখন মারলাম??”
“কেবলই তো মারলে।
আচ্ছা, লজিক অনুসারে তোমাদের বাসায় তো আমার যাওয়ার কথা।ভালোবাসি কথাটা আমাী আগে বলার কথা।”
“কেনো কেনো??মেয়ে হয়েছি বলে এমন করা যাবে না??আর দোষটা আমারই ছিলো।সো আমিই এগিয়ে আসলাম ভুল ভাঙাতে।
আর এ অভিমান ভাঙাতেই হবে। সে যেই হোক। সম্পর্ক বাঁচাতে একজন না একজনকে তো এগিয়ে আসতেই হবে। সো সেটা এবার আমিই করলাম।পরেরবার নাহয় আপনি এগিয়ে আসবেন।”
“পরেরবার সে অভিমানের সুযোগটুকুও আমি দিবো না দেখে নিও।”
“আমি তা চাই।”
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ।একদম নিশ্চুপ পরিবেশ।যে নিশ্চুপ পরিবেশটা সাক্ষী হয়ে আছে দুটো ভালোবাসার মানুষের ভুল ভাঙার ঘটনা দেখে।দুটো ভালোবাসার মানুষের এক হওয়া দেখে।
কিছুক্ষণ পর আফনান বলে উঠলো,
“আচ্ছা তুমি আমার বাসার ঠিকানা পেলে কিভাবে??”
মুসকান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেেল বললো,
“সে অনেক বড় কাহিনি গো খাম্বাজান।”
“সে বর কাহিনিটাই বলো গো সেনোরিটাজান।”
#চলবে